Tuesday, July 14, 2020

তরিকতে আদব

মুসলিম জীবনের আদব-কায়দা পর্ব -১
sotterdikeahobban / June 27, 2016
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
রহমান রহীম আল্লাহ্ তায়ালার নামে-
লেখক: ড. মো: আমিনুল ইসলাম
| সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
আদব-কায়দা’র পরিচয়, গুরুত্ব ও তাৎপর্য
১. আদব-কায়দা’র পরিচয়:
আদব শব্দটি আরবি ” ﺃﺩﺏ “ শব্দ থেকে বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত ও প্রচলিত শব্দ; যার অর্থ হলো: বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সুশিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনতা, শিষ্টাচার।[1] আবার
” ﺃﺩﺏ “ শব্দের অর্থ: নিয়মনীতি, পদ্ধতি ইত্যাদি। আর আদব-কায়দা মানে— ভদ্র সমাজের রীতি-পদ্ধতি; ভদ্র ব্যবহার। অন্যভাবে বলা যায়: আদব-কায়দা মানে কাঙ্খিত শিক্ষা, সভ্যতা ও মার্জিত সংস্কৃতির দ্বারা আত্মগঠনের অনুশীলন করা।[2]
ইবনু হাজার ‘আসকালানী রহ. বলেন:
« ﺍﻷﺩﺏ : ﺍﺳﺘﻌﻤﺎﻝ ﻣﺎ ﻳﺤﻤﺪ ﻗﻮﻻً ﻭﻓﻌﻼً » .
“কথায় ও কাজে প্রশংসনীয় ব্যবহারকে আদব বলে।”[3]
আবার কেউ বলেন:
« ﺍﻷﺧﺬ ﺑﻤﻜﺎﺭﻡ ﺍﻷﺧﻼﻕ » .
“উত্তম চরিত্র লালন করাকে আদব বলে।”[4]
আবার কেউ কেউ বলেন:
« ﻫﻮ ﺗﻌﻈﻴﻢ ﻣﻦ ﻓﻮﻗﻚ ﻭﺍﻟﺮﻓﻖ ﺑﻤﻦ ﺩﻭﻧﻚ » .
“আদব হলো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিকে সম্মান করা এবং অধস্তনকে স্নেহ করা।”[5]
কেউ কেউ বলেন:
« ﺍﻷﺩﺏ ﻫﻮ ﺣﺴﻦ ﺍﻷﺧﻼﻕ ﻭﻓﻌﻞ ﺍﻟﻤﻜﺎﺭﻡ
» .
“আদব মানে উত্তম চরিত্র এবং ভালো কাজ।”[6]
আর ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন:
« ﺍﻷﺩﺏ ﺍﺟﺘﻤﺎﻉ ﺧﺼﺎﻝ ﺍﻟﺨﻴﺮ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺒﺪ » .
“বান্দার মধ্যে উত্তম বৈশিষ্ট্যের সমাবেশ ঘটানোকে আদব বলে।”[7]
আবার কেউ কেউ বলেন:
« ﻭﺍﻷﺩﺏ ﻫﻮ ﺍﻟﺨﺼﺎﻝ ﺍﻟﺤﻤﻴﺪﺓ » .
“প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্যসমূহকেই আদব বলে।”[8]
আর আমাদের দেশীয় ভাষায় বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, কৃষ্টি, সুশিক্ষা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনতা ইত্যাদি গুণাবলী যে ব্যক্তির মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তাকে
‘মুয়াদ্দাব’ (শালীন, ভদ্র ও সুশিক্ষিত) বলে। আর এসব গুণাবলী যার মধ্যে বিদ্যমান নেই, তাকে
‘বেয়াদব’ (অশালীন, অভদ্র, অসভ্য) বলে।
২. আদব-কায়দা’র গুরুত্ব ও তাৎপর্য:
মানবজীবন তথা মুসলিম ব্যক্তির জীবনে আদব-কায়দার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহুল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
« ﺇِﻥَّ ﺍﻟْﻬَﺪْﻯَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺢَ ، ﻭَﺍﻟﺴَّﻤْﺖَ ﺍﻟﺼَّﺎﻟِﺢَ ، ﻭَﺍﻻِﻗْﺘِﺼَﺎﺩَ ﺟُﺰْﺀٌ ﻣِﻦْ ﺧَﻤْﺴَﺔٍ ﻭَﻋِﺸْﺮِﻳﻦَ ﺟُﺰْﺀًﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨُّﺒُﻮَّﺓِ ‏» . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ).
“নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়্যাতের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ সমতুল্য।”[9]
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন:
« ﺍُﻃْﻠُﺐْ ﺍﻟْﺄَﺩَﺏَ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﺯِﻳَﺎﺩَﺓٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌَﻘْﻞِ ، ﻭَﺩَﻟِﻴﻞٌ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻤُﺮُﻭﺀَﺓِ ، ﻣُﺆْﻧِﺲٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻮَﺣْﺪَﺓِ ، ﻭَﺻَﺎﺣِﺐٌ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻐُﺮْﺑَﺔِ ، ﻭَﻣَﺎﻝٌ ﻋِﻨْﺪَ ﺍﻟْﻘِﻠَّﺔِ ‏» .
‏( ﺫَﻛَﺮَﻩُ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓِﻲ ﺗَﺎﺭِﻳﺨِﻪِ ).
“তুমি আদব অন্বেষণ কর; কারণ, আদব হলো বুদ্ধির পরিপুরক, ব্যক্তিত্বের দলীল, নিঃসঙ্গতায় ঘনিষ্ঠ বন্ধু, প্রবাসজীবনের সাথী এবং অভাবের সময়ে সম্পদ।”[10]
আর আদব বা শিষ্টাচার এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার দ্বারা ব্যক্তির জীবন পরিশুদ্ধ ও পরিপাটি হয়; আর এ আদব হলো দীন ইসলামের সারবস্তু; সুতরাং মুসলিম ব্যক্তির জন্য জরুরি হলো আল্লাহ তা‘আলার সাথে, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এবং সাধরণ মানুষসহ সকল সৃষ্টির সাথে আদব রক্ষা করে চলা; আর এ আদবের মাধ্যমেই একজন মুসলিম জানতে পারবে তার খাবার ও পানীয় গ্রহণের সময় তার অবস্থা কেমন হওয়া উচিৎ; কিভাবে তার সালাম প্রদান, অনুমতি গ্রহণ, বসা, কথা বলা, আনন্দ ও শোক প্রকাশ করা, হাঁচি দেওয়া ও হাই তোলার মত বিবিধ কাজ সম্পন্ন হবে; আর কেমন ব্যবহার হবে তার পিতামাতা, ভাইবোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে। এক কথায় এ আদব-কায়দা রক্ষা করে চলার মাধ্যমেই একজন মুসলিম কাঙ্খিত মানের ভদ্র ও সভ্য মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং নিজেকে অন্যান্য জাতির চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে; ফলে দীন ইসলামের সৌন্দর্য ছড়িয়ে যাবে সমাজ, রাষ্ট্র ও দুনিয়ার দিক দিগন্তে। তাইতো কেউ কেউ শিক্ষার চেয়ে আদব বা শিষ্টাচারের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন; ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:
« ﺗَﺄَﺩَّﺑُﻮﺍ ﺛُﻢَّ ﺗَﻌَﻠَّﻤُﻮﺍ » .
“তোমরা আগে সুসভ্য হও, তারপর জ্ঞান অর্জন কর।”[11]
আল-কারাফী তাঁর ‘আল-ফারুক’ গ্রন্থে বলেন:
« ﻭَﺍﻋْﻠَﻢْ ﺃَﻥَّ ﻗَﻠِﻴﻞَ ﺍﻟْﺄَﺩَﺏِ ﺧَﻴْﺮٌ ﻣِﻦْ ﻛَﺜِﻴﺮٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌَﻤَﻞِ » .
“আর জেনে রাখবে, অনেক বেশি কাজের চেয়ে অল্প আদব অনেক বেশি উত্তম।”[12]
আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেন:
« ﻟَﺎ ﻳَﻨْﺒُﻞُ ﺍﻟﺮَّﺟُﻞُ ﺑِﻨَﻮْﻉٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ ﻣَﺎ ﻟَﻢْ ﻳُﺰَﻳِّﻦْ ﻋِﻠْﻤَﻪُ ﺑِﺎﻟْﺄَﺩَﺏِ » .
“ব্যক্তি কোনো প্রকার জ্ঞান দ্বারা মহৎ হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার জ্ঞানকে আদব দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত করবে।”[13]
তিনি আরও বলেন:
« ﻧَﺤْﻦُ ﺇﻟَﻰ ﻗَﻠِﻴﻞٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺄَﺩَﺏِ ﺃَﺣْﻮَﺝُ ﻣِﻨَّﺎ ﺇﻟَﻰ ﻛَﺜِﻴﺮٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌِﻠْﻢِ » .
“আমরা অনেক বেশি জ্ঞানের চেয়ে কম আদবকে অনেক বেশি জরুরি বা প্রয়োজন মনে করতাম।”[14]
কোনো কোনো দার্শনিক বলেন:
« ﻟَﺎ ﺃَﺩَﺏَ ﺇﻟَّﺎ ﺑِﻌَﻘْﻞٍ ، ﻭَﻟَﺎ ﻋَﻘْﻞَ ﺇﻟَّﺎ ﺑِﺄَﺩَﺏٍ » .
“আকল (বুদ্ধি) ছাড়া আদব হয় না; আবার আদব ছাড়া আকলও হয় না।”[15]
অর্থাৎ একটি আরেকটির পূরিপূরক। আর জনৈক সৎব্যক্তি তার ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন:
« ﺍﺟْﻌَﻞْ ﻋَﻤَﻠَﻚ ﻣِﻠْﺤًﺎ ﻭَﺃَﺩَﺑَﻚ ﺩَﻗِﻴﻘًﺎ » .
“তুমি তোমার আমলকে মনে করবে লবণ, আর তোমার আদবকে মনে করবে ময়দা।”[16]
অর্থাৎ তুমি আমলের চেয়ে আদবকে এত বেশি গুরুত্ব দিবে, লবণ ও ময়দার স্বাভাবিক মিশ্রণে উভয়ের অনুপাত যেভাবে কম বেশি হয়।
[1] ড. মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, আল মুনীর আরবী-বাংলা অভিধান, দারুল হিকমা বাংলাদেশ, প্রকাশকাল: জুলাই ২০১০ খ্রি., পৃ. ১৫; বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান, পরিমার্জিত সংষ্করণ: ডিসেম্বর ২০০০, পৃ. ১০৩
[2] আল-মু‘জাম আল-অসীত, দ্র: ” ﺃﺩﺏ ”
‏[ 3 ] ‘মাউসু‘য়াতুল বাহুছ ওয়াল মাকালাতুল ‘ইলমিয়্যা’ ( ﻣﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﺒﺤﻮﺙ ﻭ ﺍﻟﻤﻘﺎﻻﺕ ﺍﻟﻌﻠﻤﻴﺔ ), পৃ. ১ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)। ”
[4] প্রাগুক্ত।
[5] প্রাগুক্ত।
[6] প্রাগুক্ত।
[7] প্রাগুক্ত।
[8] প্রাগুক্ত।
[9] আবূ দাউদ, হাদিস নং- ৪৭৭৮; আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
[10] হাকেম রহ. তাঁর ‘আত-তারীখ’ গ্রন্থে বর্ণনটি উল্লেখ করেছেন।
[11] উদ্ধৃত, গিযাউল আলবাব ( ﻏﺬﺍﺀ ﺍﻷﻟﺒﺎﺏ ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)। ”
[12] উদ্ধৃত, ‘মাউসু‘য়াতুল বাহুছ ওয়াল মাকালাতুল ‘ইলমিয়্যা’ ( ﻣﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﺒﺤﻮﺙ ﻭ ﺍﻟﻤﻘﺎﻻﺕ ﺍﻟﻌﻠﻤﻴﺔ ), পৃ. ১ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)। ”
[13] উদ্ধৃত, গিযাউল আলবাব ( ﻏﺬﺍﺀ ﺍﻷﻟﺒﺎﺏ ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)। ”
[14] উদ্ধৃত, ‘মাউসু‘য়াতুল বাহুছ ওয়াল মাকালাতুল ‘ইলমিয়্যা’ ( ﻣﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﺒﺤﻮﺙ ﻭ ﺍﻟﻤﻘﺎﻻﺕ ﺍﻟﻌﻠﻤﻴﺔ ), পৃ. ১ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)। ”
[15] উদ্ধৃত, গিযাউল আলবাব ( ﻏﺬﺍﺀ ﺍﻷﻟﺒﺎﺏ ), ১ম খণ্ড, পৃ. ৪৫ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)। ”
[16] উদ্ধৃত, ‘মাউসু‘য়াতুল বাহুছ ওয়াল মাকালাতুল ‘ইলমিয়্যা’ ( ﻣﻮﺳﻮﻋﺔ ﺍﻟﺒﺤﻮﺙ ﻭ ﺍﻟﻤﻘﺎﻻﺕ ﺍﻟﻌﻠﻤﻴﺔ ), পৃ. ১ (আল-মাকতাবা আশ-শামেলা, আল-ইসদার আস-সানী)।

Wednesday, July 1, 2020

জিলকদ মাসের ২য় জুময়া - বিষয় - হজ্জ

ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের পঞ্চমটি হল হজ্বেবায়তুল্লাহ। ঈমাননামাযযাকাত  রোযার পরইহজ্বের অবস্থান। হজ্ব মূলত কায়িক  আর্থিকউভয়ের সমন্বিত একটি ইবাদত। তাই উভয় দিকথেকে সামর্থ্যবান মুসলিমের উপর হজ্ব পালন করাফরয। অর্থাৎ হজ্ব আদায়ে সক্ষম এমন শারীরিকসুস্থতার পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচাপাতি আসবাবপত্রের অতিরিক্ত হজ্বে যাওয়া-আসার ব্যয়এবং হজ্ব আদায়কালীন সাংসারিক ব্যয় নির্বাহেসক্ষম এমন সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর হজ্ব আদায়করা ফরয।

আল কোরআনের আলোকে হজ্জ:


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
ولله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا، ومن كفر فان الله غنى عن العلمين.
 (তরজমামানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহপৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহরউদ্দেশ্যে  গৃহের হজ্ব করা ফরয। আর কেউ যদিঅস্বীকার করে তাহলে তোমাদের জেনে রাখা উচিতযেআল্লাহ তাআলা সৃষ্টিজগতের প্রতি মুখাপেক্ষীনন।-সূরা আলে ইমরান () : ৯৭

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
الحج اشهر معلومات فمن فرض فيهن الحج فلا رفث ولا فسوق ولا جدال في الحج، وما تفعلوا من خير يعلمه الله.
 (তরজমাহজ্বের নির্দিষ্ট কয়েকটি মাস আছে। যেব্যক্তি সেসব মাসে (ইহরাম বেঁধেনিজের উপরহজ্ব অবধারিত করে নেয় সে হজ্বের সময় কোনোঅশ্লীল কথা বলবে নাকোনো গুনাহ করবে না এবংঝগড়া করবে না। তোমরা যা কিছু সৎকর্ম করবেআল্লাহ তা জানেন।-সূরা বাকারা () : ১৯৭




হজ্জ সম্পর্কে সহীহ বোখারীর হাদীস :

حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ عَنْ الزُّهْرِيِّ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হল , অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হল, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হজ্জ)।


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫১৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদীস

حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ الْمُبَارَكِ حَدَّثَنَا خَالِدٌ أَخْبَرَنَا حَبِيبُ بْنُ أَبِي عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ بِنْتِ طَلْحَةَ عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَرَى الْجِهَادَ أَفْضَلَ الْعَمَلِ أَفَلاَ نُجَاهِدُ قَالَ لاَ لَكِنَّ أَفْضَلَ الْجِهَادِ حَجٌّ مَبْرُورٌ

উম্মুল মু‘মিনীন ‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন। হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! জিহাদকে আমরা সর্বোত্তম ‘আমল মনে করি। কাজেই আমরা কি জিহাদ করবো না? তিনি বললেনঃ না, বরং তোমাদের জন্য সর্বোত্তম জিহাদ হল,  হজ্জে মাবরূর।


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫২০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

حَدَّثَنَا آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا سَيَّارٌ أَبُو الْحَكَمِ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا حَازِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ حَجَّ للهِ÷ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ

আবূ  হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তার মা জন্ম দিয়েছিল।


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫২১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ قَالَ سَأَلْنَا ابْنَ عُمَرَ عَنْ رَجُلٍ طَافَ بِالْبَيْتِ فِي عُمْرَةٍ وَلَمْ يَطُفْ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ أَيَأْتِي امْرَأَتَهُ فَقَالَ قَدِمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَطَافَ بِالْبَيْتِ سَبْعًا وَصَلَّى خَلْفَ الْمَقَامِ رَكْعَتَيْنِ فَطَافَ بَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ سَبْعًا {لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ}

‘আমর ইব্‌নু দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমরা ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ)-এর নিকট জিজ্জেস করলাম, কোন ব্যক্তি ‘উমরাহ করতে গিয়ে শুধু বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করে, আর সাফা ও মারওয়া সা’ঈ না করে, তার পক্ষে কি স্ত্রী সহবাস বৈধ হবে? তখন তিনি বললেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (মক্কায়) উপনীত হয়ে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ সাত চক্করে সমাধা করে মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে দু’ রাক’আত সালাত আদায় করলেন, এরপর সাত চক্করে সাফা ও মারওয়া সা’য়ী করলেন। [এতটুকু বলে ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) বলেন] “তোমাদের জন্য রসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ”-(আল-আহযাবঃ ২১)।(৩৯৫)(আঃপ্রঃ ১৫৩৪, ইঃফাঃ ১৫৪০)


সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৬৪৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

___________________________________

সুনানে নাসয়ীর হাদীস :

أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْمُبَارَكِ الْمُخَرِّمِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو هِشَامٍ وَاسْمُهُ الْمُغِيرَةُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ: حَدَّثَنَا الرَّبِيعُ بْنُ مُسْلِمٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ زِيَادٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: خَطَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ، فَقَالَ: «إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، قَدْ فَرَضَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ» فَقَالَ رَجُلٌ: فِي كُلِّ عَامٍ؟ فَسَكَتَ عَنْهُ حَتَّى أَعَادَهُ ثَلَاثًا، فَقَالَ: «لَوْ قُلْتُ نَعَمْ، لَوَجَبَتْ، وَلَوْ وَجَبَتْ، مَا قُمْتُمْ بِهَا، ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ، فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ، وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ، فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِالشَّيْءِ فَخُذُوا بِهِ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ، فَاجْتَنِبُوهُ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। তিনি বললেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, তখন এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তা কি) প্রতি বছরে? তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তার উত্তর দেয়া থেকে নীরব রইলেন। লোকটি তিনবার এর পুনরাবৃত্তি করলো। পরে তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ, তা হলে অবশ্যই তা (প্রতি বছরের জন্য) ফরয হয়ে যেতো। আর যদি ফরয হয়েই যেতো, তাহলে তোমরা তা আদায় করতে পারতে না। আমি যা বলি তা বলতে দাও, (প্রশ্ন করে সহজ কাজকে জটিল করো না।) কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা অধিক প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। আমি যখন তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেই তখন তা তোমরা সাধ্যানুযায়ী পালন করো। আর যখন কোন কাজ করতে নিষেধ করি, তখন তা পরিত্যাগ করো।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬১৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ عَبْدِ اللَّهِ النَّيْسَابُورِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ أَبِي مَرْيَمَ، قَالَ: أَنْبَأَنَا مُوسَى بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ: حَدَّثَنِي عَبْدُ الْجَلِيلِ بْنُ حُمَيْدٍ، عَنْ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سِنَانٍ الدُّؤَلِيِّ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ، فَقَالَ: «إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى كَتَبَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ» فَقَالَ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ كُلُّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَسَكَتَ، فَقَالَ: «لَوْ قُلْتُ نَعَمْ، لَوَجَبَتْ، ثُمَّ إِذًا لَا تَسْمَعُونَ، وَلَا تُطِيعُونَ، وَلَكِنَّهُ حَجَّةٌ وَاحِدَةٌ»

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

(একবার) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ভাষণ দিতে) দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। তখন আকরা ইবন হাবিস তামীমী (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তা কি) প্রতি বছরের জন্য? (তিনি) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন। তারপর বললেনঃ আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ, তবে তা ফরয হয়ে যেতো। তখন তোমরা তা শুনতেও না এবং মানতেও না। কিন্তু (তোমরা জেনে রাখ) হজ্জ তা একটিই, হজ্জ একবারই ফরয।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْأَعْلَى، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ النُّعْمَانَ بْنَ سَالِمٍ، قَالَ: سَمِعْتُ عَمْرَو بْنَ أَوْسٍ، يُحَدِّثُ عَنْ أَبِي رَزِينٍ، أَنَّهُ قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ، لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ، وَلَا الْعُمْرَةَ، وَلَا الظَّعْنَ، قَالَ: «فَحُجَّ، عَنْ أَبِيكَ، وَاعْتَمِرْ»

আবূ  রুযাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা একজন অতিবৃদ্ধ লোক, হজ্জ ও উমরা করার এবং বাহনে আরোহণেরও ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ তাহলে তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা আদায় কর।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২১
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا عَبْدَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الصَّفَّارِ الْبَصْرِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُوَيْدٌ وَهُوَ ابْنُ عَمْرٍو الْكَلْبِيُّ، عَنْ زُهَيْرٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُهَيْلٌ، عَنْ سُمَيٍّ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " الْحَجَّةُ الْمَبْرُورَةُ: لَيْسَ لَهَا جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ، وَالْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا "

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মাবরূর’ (কবুল হওয়া) হজ্জের জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই। আর এক উমরা অন্য উমরার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহর কাফফারা হয়।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، قَالَ: أَنْبَأَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ الزُّهْرِيِّ، عَنْ ابْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: سَأَلَ رَجُلٌ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ: أَيُّ الْأَعْمَالِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: «الْإِيمَانُ بِاللَّهِ» قَالَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ» قَالَ: ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ: «ثُمَّ الْحَجُّ الْمَبْرُورُ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কোন্ আমল সর্বোত্তম? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র প্রতি ঈমান আনা। সে বললেনঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ্‌র রাস্তায় জিহাদ করা। ঐ ব্যক্তি আবার বললঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মাবরূর হজ্জ। [১]


ফুটনোটঃ
[১] যে হজ্জের মধ্যে পাপ ও হজ্জ ক্ষুণ্ণকারী কোন কাজ সংঘটিত হয় না। মতান্তরে যে হজ্জ আল্লাহ্‌র নিকট কবূল হয়, তাকে ‘মাবরূর’ হজ্জ বলে।

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



أَخْبَرَنَا عِيسَى بْنُ إِبْرَاهِيمَ بْنِ مَثْرُودٍ، قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، عَنْ مَخْرَمَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ سُهَيْلَ بْنَ أَبِي صَالِحٍ، قَالَ: سَمِعْتُ أَبِي يَقُولُ: سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " وَفْدُ اللَّهِ ثَلَاثَةٌ: الْغَازِي، وَالْحَاجُّ، وَالْمُعْتَمِرُ "

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্‌র প্রতিনিধি তিন ব্যক্তি; গাযী (মুজাহিদ), হাজী ও উমরা আদায়কারী।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২৫
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

أَخْبَرَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْحَكَمِ، عَنْ شُعَيْبٍ، عَنْ اللَّيْثِ، قَالَ: حَدَّثَنَا خَالِدٌ، عَنْ ابْنِ أَبِي هِلَالٍ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " جِهَادُ الْكَبِيرِ، وَالصَّغِيرِ، وَالضَّعِيفِ، وَالْمَرْأَةِ: الْحَجُّ، وَالْعُمْرَةُ "
---
[حكم الألباني] حسن وفقرة المرأة صحيحة من حديث عائشة

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ বৃদ্ধ, অল্প বয়স্ক, দুর্বল এবং নারীদের জিহাদ হলো হজ্জ ও উমরা।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২৬
হাদিসের মান: অন্যান্য


أَخْبَرَنَا أَبُو عَمَّارٍ الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ الْمَرْوَزِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْفُضَيْلُ وَهُوَ ابْنُ عِيَاضٍ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ حَجَّ هَذَا الْبَيْتَ فَلَمْ يَرْفُثْ، وَلَمْ يَفْسُقْ، رَجَعَ كَمَا وَلَدَتْهُ أُمُّهُ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এই ঘরের (বায়তুল্লাহর) হজ্জ করলো এবং অশ্লীল কথা বললো না ও কোন পাপ করলো না সে সদ্যজাত শিশুর মত (নিষ্পাপ) হয়ে প্রত্যাবর্তন করলো।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا إِسْحَقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، قَالَ: أَنْبَأَنَا جَرِيرٌ، عَنْ حَبِيبٍ وَهُوَ ابْنُ أَبِي عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ بِنْتِ طَلْحَةَ، قَالَتْ: أَخْبَرَتْنِي أُمُّ الْمُؤْمِنِينَ عَائِشَةُ قَالَتْ: قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَلَا نَخْرُجُ فَنُجَاهِدَ مَعَكَ، فَإِنِّي لَا أَرَى عَمَلًا فِي الْقُرْآنِ، أَفْضَلَ مِنَ الْجِهَادِ، قَالَ: «لَا، وَلَكُنَّ أَحْسَنُ الْجِهَادِ وَأَجْمَلُهُ، حَجُّ الْبَيْتِ، حَجٌّ مَبْرُورٌ»

আয়েশা বিনত তালহা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, আমি বললামঃ ইয়া রাসূ্লুল্লাহ্! আমরা কি আপনার সাথে জিহাদে যোগদান করবো না? আমি কুরআনে জিহাদ অপেক্ষা উত্তম কোন আমলই দেখছি না। তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ না, বরং তোমাদের (নারীদের) জন্য অতি সুন্দর ও অতি উত্তম জিহাদ হলো বায়তুল্লাহর হজ্জ (অর্থাৎ) ‘মাবরূর’ হজ্জ।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ سُمَيٍّ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالْحَجُّ الْمَبْرُورُ، لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ»

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ এক উমরা হতে অন্য উমরা পর্যন্ত উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা। আর ‘মাবরূর’ হজ্জের বিনিময় জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا أَبُو دَاوُدَ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو عَتَّابٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَزْرَةُ بْنُ ثَابِتٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ دِينَارٍ، قَالَ: قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ، فَإِنَّهُمَا: يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ، وَالذُّنُوبَ، كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ "

আমর ইবন দীনার (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরস্পর পালন (হজ্জ সমাপনের পর উমরা এবং উমরার পর হজ্জ) করবে, কেননা তা (এ দু’টি) অভাব অনটন ও পাপকে দূর করে দেয় যেমন (কামারের) হাপর লোহার মরিচা দূর করে থাকে।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩০
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى بْنِ أَيُّوبَ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَيَّانَ أَبُو خَالِدٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ قَيْسٍ، عَنْ عَاصِمٍ، عَنْ شَقِيقٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ، فَإِنَّهُمَا: يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ، كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ: خَبَثَ الْحَدِيدِ وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجِّ الْمَبْرُورِ ثَوَابٌ دُونَ الْجَنَّةِ "
---
[حكم الألباني] حسن صحيح

আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা হজ্জ ও উমরা পরস্পর (হজ্জ সমাপনের পর উমরা এবং উমরার পর হজ্জ) আদায় করবে, কেননা তা অভাব ও পাপ এরূপ দূর করে দেয়, যেরূপ হাপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে থাকে। আর ‘মাবরূর’ হজ্জের বিনিময় জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩১
হাদিসের মান: হাসান সহিহ


أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ أَبِي بِشْرٍ، قَالَ: سَمِعْتُ سَعِيدَ بْنَ جُبَيْرٍ، يُحَدِّثُ عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ، فَمَاتَتْ، فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلَهُ عَنْ ذَلِكَ؟ فَقَالَ: «أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ عَلَى أُخْتِكَ دَيْنٌ أَكُنْتَ قَاضِيَهُ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: «فَاقْضُوا اللَّهَ، فَهُوَ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ»

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

একজন মহিলা হজ্জ মান্নত করেছিল। সে মৃত্যুবরণ করলো (হজ্জ করতে পারলো না)। এরপর তার ভাই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –এর নিকট এসে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর, যদি তোমার বোনের দেনা থাকতো তুমি কি তা আদায় করতে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে, আল্লাহ্‌র হকও আদায় কর; কেননা তা আদায় করার অধিক উপযোগী।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنَا عِمْرَانُ بْنُ مُوسَى، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو التَّيَّاحِ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُوسَى بْنُ سَلَمَةَ الْهُذَلِيُّ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، قَالَ: أَمَرَتِ امْرَأَةٌ سِنَانَ بْنَ سَلَمَةَ الْجُهَنِيَّ أَنْ يَسْأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّ أُمَّهَا مَاتَتْ وَلَمْ تَحُجَّ، أَفَيُجْزِئُ عَنْ أُمِّهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا؟ قَالَ: «نَعَمْ، لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّهَا دَيْنٌ فَقَضَتْهُ عَنْهَا، أَلَمْ يَكُنْ يُجْزِئُ عَنْهَا فَلْتَحُجَّ عَنْ أُمِّهَا»

মূসা ইবন সালামা হুযালী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সিনান ইবন সালামা জুহানী (রাঃ)-এর স্ত্রী তাকে বললেন, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করেন যে, তার মা হজ্জ না করেই ইনতিকাল করেছেন। তার মায়ের পক্ষ থেকে সে হজ্জ করলে তা যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যদি তার মায়ের কোন দেনা থাকতো আর তার পক্ষ হতে সে আদায় করতো, তা হলে কি তার মায়ের পক্ষ থেকে তা আদায় হতো না? অতএব সে যেন তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে।


সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস


أَخْبَرَنِي عُثْمَانُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَكِيمٍ الْأَوْدِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا حُمَيْدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الرُّؤَاسِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا حَمَّادُ ابْنُ زَيْدٍ، عَنْ أَيُّوبَ السَّخْتِيَانِيِّ، عَنْ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ يَسَارٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَبِيهَا، مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ؟ قَالَ: «حُجِّي عَنْ أَبِيكِ»

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেনঃ এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলো যে, তিনি হজ্জ না করে ইনতিকাল করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর।


ফুটনোটঃ
বাহনে স্থির থাকতে অসমর্থ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ হতে হজ্জ করা

সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩৪
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস



Monday, March 16, 2020

আল্লাহর অস্তিত্ব

সবকিছুই যদি আল্লাহ্ তৈরী করে থাকেন তো আল্লাহ্কে কে তৈরী করলো?
অগাষ্ট 6, 2013 / আদনান ফায়সাল
[Note: এই লেখায় আল্লাহ্ / ঈশ্বর / সৃষ্টিকর্তা / God সমার্থকরূপে ব্যবহার করা হয়েছে ]
প্রশ্ন ১। বিভিন্ন সময় নাস্তিকদের বলতে শুনেছি যে আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করা অন্ধবিশ্বাস মাত্র। ঈশ্বর বিশ্বাস কি আসলেই একটা আবেগীয় ব্যাপার,
নাকি ঈশ্বরের অস্তিত্বের যৌক্তিক প্রমান আছে?
উত্তর: নাস্তিকেরা বলে থাকে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস একটি অন্ধবিশ্বাস। তারা বলে, যেহেতু আল্লাহকে দেখা যায়না, ধরা যায় না, শুনা যায় না, লজিক দিয়ে প্রমাণ করে যায় না – কাজেই আল্লাহ্ বলে কিছু নেই। কিন্তু, বাস্তব হলো সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিশ্বাস এবং সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। আর যদিও নাস্তিকেরা নিজেদেরকে যুক্তিবাদী বলে দাবী করে, কিন্তু সত্য হলো সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব যুক্তি বা লজিক দিয়ে প্রাচীণ কাল থেকেই প্রমাণিত হয়ে এসেছে।
বর্তমানে আমরা যে লজিক বা যুক্তিবিদ্যা পড়ি, তার আবিষ্কারক হলো প্রাচীণ গ্রীকের পন্ডিতগণ। গ্রীকের ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত লজিশিয়ান বা যুক্তিবিজ্ঞানী ছিলেন প্লেটো এবং তার ছাত্র এরিস্টোটল, যারা লজিককে formal discipline হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। আপনি জানেন কি এরা দুজনেই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব (তাদের ভাষায় ‘unmoved mover’) বিশ্বাস করতেন? এরা দু’জনেই যুক্তি দিয়েই সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রমাণ করে গেছেন। এর মাধ্যমে এটুকু বোঝা গেল, যুক্তিবাদী(?) নাস্তিকেরা যুক্তিবিদ্যার পিতা / পিতাতুল্যদেরকে নিজেরাই বিশ্বাস করে না।
এবার আসুন দেখি প্লেটোর যুক্তি কি ছিল। প্লেটো যে যুক্তিটি ব্যবহার করেছিলেন সেটা হলো, Design Indicates Designer, অর্থাৎ – প্রতিটি নকশারই নকশাকারী আছে। মহাগ্রন্থ কোরআনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এই একই যুক্তি দিয়ে বার বার অবিশ্বাসীদের নিকট স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করেছেন (যেমনঃ সূরা আন’আম ৬:৯৯, সূরা রুম ৩০:২০-২৭)। উদাহরন দিয়ে বুঝানো যাক। আপনি যদি সমুদ্র পারে একটা বালির ঘর দেখেন, আপনি কি চিন্তা করবেন – বাহ কি সুন্দর একটা ঢেউ এসেছিল যেটা একটা বালির ঘর তৈরি করে চলে গেছে? নাকি এটি চিন্তা করবেন, নিশ্চয়ই এখানে কোন মানুষ এসে এটা বানিয়েছিল? কাকে আপনার যুক্তিবাদী মনে হয়? এটা সম্পূর্ণই অযৌক্তিক হবে যদি কেউ বলে, যে ঐ বালির ঘর ভাগ্যক্রমে বা হাজার হাজার ঢেঊ এর মিশ্রনে হয়েছে। বরং সাধারণ বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন যেকোন মানুষই বলবে যে ঐ বালির ঘরটি নিশ্চয়ই কেউ না কেউ তৈরী করেছে। কারন, প্রতিটা সৃষ্টির পেছনেই স্রষ্টা থাকে। ঠিক একইভাবে, এই মহাবিশ্ব এবং এর ভিতরের সবকিছুর অবশ্যই একজন স্রষ্টা আছে।
একটা কলম নিজে নিজে তৈরি হতে পারে না, ফেইসবুক নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না, আইফেল টাওয়ার থেকে মোনালিসা কোন কিছুই নিজে নিজে তৈরী হতে পারে না, তাহলে এত নিয়মতান্ত্রিক, নিঁখুত মহাবিশ্ব ও মানবজাতি কিভাবে নিজে নিজে তৈরী হতে পারে? একটা অণুর ভিতর তাকান, আপনি ডিজাইন দেখতে পাবেন, মহাকাশের দিকে তাকান আপনি ডিজাইন দেখতে পাবেন। সূর্য যদি পৃথিবীর আরো কাছে থাকতো তাহলে পৃথিবী অনেক বেশী গরম হয়ে যেতো, পৃথিবী থেকে সূর্য আরো দূরে থাকলে পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে যেতো, সূর্য পৃথিবী থেকে ঠিক ততটুকুই দূরে আছে যতটুকু দূরে থাকলে পৃথিবীটা প্রাণের টিকে থাকার উপযুক্ত হবে, সৃষ্টিজগতের এই নিঁখুত স্থাপত্য এটা প্রমান করে যে এই সৃষ্টি জগত র্যান্ডমলি সৃষ্টি হতে পারে না, এর পেছনে অবশ্যই একজন প্রবল পরাক্রমশালী, অসীম ক্ষমতাধর, প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা আছেন। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কোরআন মাজিদে প্রশ্ন করেন:
তারা কি স্রষ্টাহীন সৃষ্টি? না তারা নিজেরা নিজেদের সৃষ্টি করেছে? না তারা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছে? বরং তারা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখে না । – সূরা তুর (৫২:৩৫-৩৬)
প্রত্যেকটি মানুষই এক আল্লাহ্র অস্তিত্বের স্বাভাবিক অনুভূতি নিয়ে জন্মায়, জন্ম থেকেই মানুষ জানে যে আল্লাহ্ এক এবং আল্লাহ্ চান আমি তার ইবাদত করি – ইসলামের ভাষায় এই অনুভূতিকে ‘ফিতরাহ’ বলে।
কি, ‘ফিতরাহ’ এর ব্যাপারটা বিশ্বাস হচ্ছে না? বৈজ্ঞানিক প্রমান লাগবে? তাহলে শুনুন। University of Oxford এর Centre for Anthropology and Mind বিভাগের সিনিয়র রিসার্চার Dr. Justin Berrett দীর্ঘ ১০ বছর শিশুদের উপর বৈজ্ঞানিক গবেষনা করে বলেছেন:
“Young people have a predisposition to believe in a supreme being because they assume that everything in the world was created with a purpose.”
“If we threw a handful (of babies) on an island and they raised themselves I think they would believe in God.”

প্রশ্ন ২। আচ্ছা বুঝলাম এই সৃষ্টিজগত একজন স্রষ্টা তৈরী করেছেন, কিন্তু তাহলে সেই স্রষ্টার স্রষ্টা কে?
উত্তর: স্রষ্টা কে কেউ সৃষ্টি করতে পারে কিনা – আসুন ব্যাপারটা একটু তলিয়ে দেখি।
কখনো ডমিনোর খেলা দেখেছেন? ডমিনোগুলোকে একটার পর একটা সাজিয়ে বাইরে থেকে ধাক্কা দেয়া হয় আর তার effect শুরু হয়, একটার পর একটা ডমিনো পড়তে থাকে। সৃষ্টির ব্যাপারটাও একইরকম। একটা সৃষ্টি আরেকটা সৃষ্টির কারণ ঘটায়। এখন, আমি যদি আপনাকে বলি, কোন বাতাস ছিল না, কেউ ধাক্কা দেই নাই, অনেকগুলো ডমিনো সাজানো ছিল এবং কোন বাহ্যিক বল ছাড়া এমনি এমনি ডমিনো একটার উপর আরেকটা পড়তে শুরু করল, আপনি কি বিশ্বাস করবেন? করবেন না (নিউটনের ১ম সূত্র) । এবং যে এই বাহ্যিক বল প্রয়োগ করবে সে অবশ্যই ডমিনো হতে পারে না। কারণ সে ডমিনো হলে, অর্থাৎ সে process of creation এর অন্তর্ভুক্ত হলে তাকে push করার জন্য, অন্য কথায় তাকে সৃষ্টি করার জন্য অন্য কাউকে লাগবে। অর্থাৎ, এই বাহ্যিক বল প্রয়োগকারী স্রষ্টাকে সৃষ্টি থেকে ভিন্ন প্রকৃতির হতে হবে। সৃষ্টি যদি সসীম হয়, স্রষ্টা হবেন অসীম; সৃষ্টি যদি অন্য সৃষ্টির প্রয়োজন অনুভব করে, স্রষ্টা হবেন চাহিদার উর্দ্ধে; সৃষ্টি যদি ভুল প্রবণ হয়, স্রষ্টা হবেন ভুলের উর্দ্ধে; সৃষ্টি যদি ক্ষণস্থায়ী হয়, স্রষ্টা হবেন চিরস্থায়ী। আর এই স্রষ্টা যেহেতু অসীম ক্ষমতাশীল, অনাদি, অনন্ত, কাজেই এই রকম স্রষ্টা মাত্র একজনই থাকবেন। কারণ, একাধিক অসীম ক্ষমতাশীল, অনাদি, অনন্ত স্রষ্টার সহাবস্থান অসম্ভব।
বলুন – তিনিই আল্লাহ্, এক ও অদ্বিতীয়। সবাই তার মুখাপেক্ষী, তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। এবং কেউই তার সমকক্ষ নয়। – সূরা ইখলাস (১১২:১-৪)
সুতরাং, মহাবিশ্বের অস্তিত্বই প্রমাণ করে যে স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করে নাই। কারণ, মহাবিশ্বকে যে স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন সেই স্রষ্টাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে, তাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে, তাকে সৃষ্টি করতে যদি স্রষ্টা লাগে – এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে এবং কোনদিনই মহাবিশ্ব সৃষ্টি হত না। এই ধাঁধার একমাত্র সমাধান হলঃ স্রষ্টাকে কেউ সৃষ্টি করেন নাই, এবং তিনি সবসময়ই ছিলেন। এই কথাই বলে মহাগ্রন্থ কোরআন:
আল্লাহ্ – তিনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নাই। তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি। তাঁকে তন্দ্রা বা নিদ্রা স্পর্শ করে না। আকাশ ও পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের (মানুষের) সামনে ও পেছনে যা-কিছু আছে তিনি তা জানেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী তাঁর আসন, আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি অত্যুচ্চ মহামহিম। – সূরা বাক্বারাহ্ (২:২৫৫ – আয়াতুল কুরসী)

প্রশ্ন ৩। আমার কাছে মহাবিশ্ব নিজেই
স্রষ্টা। এতে কোনও সমস্যা আছে?
উত্তর: আপনি নিশ্চয়ই বিগ ব্যাং থিউরী তে বিশ্বাস করেন। বিগ ব্যাং থিউরী মতে এই মহাবিশ্বের একটা শুরু আছে। পৃথিবীর অন্যতম বড় পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং নিজেও তার ওয়েবসাইটে এই সম্পর্কে লিখেছেন:
The conclusion of this lecture is that the universe has not existed forever. Rather, the universe, and time itself, had a beginning in the Big Bang, about 15 billion years ago. – The Beginning of Time, Stephen Hawking
যার শুরু থাকে তার সৃষ্টি হওয়ারও একটা কাল থাকে, আর যে সৃষ্টি হয় – তার অবশ্যই একজন স্রষ্টা থাকে। কাজেই মহাবিশ্ব নিজে কখনই স্রষ্টা হতে পারে না। মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করার জন্য একজন অনন্ত-অসীম, পরম ক্ষমতাশীল স্রষ্টা লাগবে – আর সেই পরম ক্ষমতাশীল স্রষ্টাই হলেন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা।
অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশ ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল? তারপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং প্রাণবান সবকিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। তবুও কি ওরা বিশ্বাস করবে না? – সূরা আম্বিয়া (২১:৩০)

_______________________________________


Monday, October 22, 2018

প্রিয়নবি_কেন_সুরমা_ব্যবহার_করতেন

#প্রিয়নবি_কেন_সুরমা_ব্যবহার_করতেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ব মানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাইতো মুসলিম উম্মাহসহ ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি বিষয়ই জানতে চায়। প্রিয়নবির প্রতিটি কাজ ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত হয়েছে গবেষণায়।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুরমা ব্যবহারও বাদ যায়নি এ গবেষণা থেকে। ইমাম বায়হাকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সুরমা ব্যবহার, হুকুম ও পদ্ধতি সম্পর্কে একটি হাদিস ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করো। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বাড়ায়, চোখ পরিস্কার রাখে এবং অধিক ভ্রু উৎপন্ন করে।

তিনি (ইবনে আব্বাস) আরো বলেন, ‘প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুরমাদানি (সুরমা রাখার পাত্র) ছিল। প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে ডোন চোখে ৩বার এবঙ বাম চোখে ৩বার সুরমা লাগাতেন।’
(সুনানে বায়হাকি)

#সুরমা_ব্যবহারের_হুকুম_ও_পদ্ধতি

সুরমা ব্যবহার চোখের জন্য অনেক উপকারি। উল্লেখিত হাদিসে সুরমা ব্যবহারের হুকুম ও পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। আর তা লাগানো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতিতে সুরমা ব্যবহারে রয়েছে সাওয়াব।

সুরমা ব্যবহারের উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণায়ও প্রমাণিত। হাদিস ও বিজ্ঞানের গবেষণায় সুরমা ব্যবহারে চোখের বড় উপকারিতাগুলো হলো-

> সুরমা চোখের জন্য ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
> চোখের প্রবেশকৃত ধূলা ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
> চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক জীবাণুকে ধ্বংস করে।
> চোখে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে।

#সুরমা_ব্যবহারে_করণীয়

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন এবং তার উপকার বর্ণনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-

– হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ঘুমের সময় অবশ্যই ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ, তা ব্যবহারে চোখের জ্যোতি বাড়ে এবং অধিক ভ্রূ জন্মে।’
(ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আবু ইয়ালা)

– হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের জন্য ইছমিদ সুরমা সর্বোত্তম। কারণ তা (ইছমিদ সুরমা) ব্যবহারে দৃষ্টি বাড়ায় এবং অধিক ভ্রূ জন্মায়।’
(ইবনে মাজাহ,
ইবনে হিব্বান,
মুসতাদরেকে হাকেম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চোখের যাবতীয় কল্যাণে প্রিয়নবির অনুসরণ ও অনুকরণের তাওফিক দান করুন।

Tuesday, October 16, 2018

মাইজভাণ্ডারী তরিকা

তরিকত’ মানে আল্লাহর দিকে বান্দার প্রত্যাবর্তনের পথ। এ পথের দুটি দিক রয়েছে। জাহের ও বাতেন। বাহ্যিক শরিয়ত পালনের মাধ্যমে বান্দা তার জাহেরকে পবিত্র করে আর সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে হাকিকত, শরিয়ত ও ধর্ম পালনের নিগূঢ়তম উদ্দেশ্য সাধনে ব্রতী হয়। এই চর্চাই সুফি তরিকার মৌলিক ভাব।
‘তরিকত’ ইসলাম ধর্মে কোনো নব আবিষ্কার নয়। ইসলামের প্রথম যুগে আধ্যাত্মিক সাধনার ছায়ায় তরিকতের হাকিকত বর্তমান ছিল। হজরত রাসুল (সা.) সাহাবাদের ধর্মীয় দিকনির্দেশনার অংশ হিসেবে আধ্যাত্মিক সাধনার তালিম ও তরবিয়াত দিয়েছেন। এমনকি ‘বাইয়াতে ইসলাম’ গ্রহণের পরও সাহাবাদের কাছ থেকে হজরত রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাপারে আবার বায়াত গ্রহণ করেছেন।
আল কোরআনে তরিকত চর্চার হাকিকত
রুহানি উৎকর্ষ সাধনের ভিন্ন ভিন্ন পথ ও পন্থার অস্তিত্বের ইঙ্গিত পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘যারা আমার পথে সাধনা করে, অবশ্যই আমি তাদের আমার অনেক পথ প্রদর্শন করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ইহসানকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনকাবুত : ৬৯)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অনেক পথ প্রদর্শন করার কথা বলেছেন।
মাইজভাণ্ডারী তরিকা
ইসলাম ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোরআন ও হাদিসের মৌলিক শিক্ষাকে আশ্রয় ও আত্মস্থ করে অনেক তরিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। যেমন কাদেরিয়া, মুজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দিয়া, চিশতিয়া ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষাকে অনুসরণ করে গাউসুল আজম হজরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)-এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও শিক্ষাকে ধারণ করে একটি তরিকা প্রচারের সূচনা হয়।
এই তরিকার প্রথম বুজর্গ ও প্রচারক গাউছুল আজম হজরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) নিজগ্রাম ‘মাইজভাণ্ডার’-এর কারণে ‘মাইজভাণ্ডারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই তাঁর অনুসৃত ও প্রচারিত আধ্যাত্মিক সাধন-পদ্ধতি বা তরিকা ‘মাইজভাণ্ডারী তরিকা’ হিসেবে জনসমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার মানবকল্যাণকামী বৈশিষ্ট্য
এই তরিকা ছিলছিলার দৃষ্টিকোনে কাদেরিয়া তরিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যান্য তরিকার আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যগুলো মাইজভাণ্ডারী তরিকায় একত্রিত হয়েছে।
এই তরিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ তরিকা ইসলামী ভাবাদর্শকে পরিপূর্ণভাবে আত্মস্থ করার পাশাপাশি একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক, উদার ও সংস্কারমুক্ত, নৈতিক ধর্ম-প্রাধান্যসম্পন্ন, শ্রেণী-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার কর্মনীতি ও শিক্ষা
ইসলাম ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন মাইজভাণ্ডারী তরিকার মূল লক্ষ্য। এ তরিকার কর্মনীতির অন্যতম হচ্ছে খেলাফতপ্রাপ্ত পীরে তরিকতের হাতে বায়াত গ্রহণের পর জিকির চর্চার মাধ্যমে নিজ কলবকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। মানুষের মনে ঐশী প্রেম জাগ্রত করে সুন্দর ও ন্যায়ের পথে জীবন যাপনে মানবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে মানবতার ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার অনুসারীদের প্রতি বর্তমান সাজ্জাদানশীনের দিকনির্দেশনা
বর্তমান আধ্যাত্মিক সাধনায় সফলতা লাভের জন্য শরিয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরারোপ । মুরিদদের সব সময় জানা দরকার , ‘শরিয়তকে বাদ দিয়ে তরিকত নাই।’ তা হচ্ছে নিয়মিত নামাজ পড়া; রোজা রাখা; সামর্থ্য থাকলে হজ-জাকাত আদায় করা অর্থাৎ শরিয়ত পালন করা।
পরিশিষ্ট : ইসলামী সভ্যতার বিকাশে তাসাউফ চর্চা ও তৎসংশ্লিষ্ট ধ্যান-ধারণার অবদান অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে সুফি তরিকাগুলো ইসলামী চরিত্র গড়ার একেকটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাইজভাণ্ডারী তরিকা জনসমাজকে ধর্মের মূল সৌন্দর্য্য অবলোকন করিয়ে এর অন্তর্নিহিত শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই কার্যক্রমে ইসলামী চরিত্র অর্জনে যেমন সাহায্য করা হচ্ছে, তেমনি অন্য ধর্মের অনুসারীদের সামনে ইসলামের প্রকৃত আহ্বান ও নীতি তুলে ধরার পথ উন্মোচিত হচ্ছে।

Sunday, October 14, 2018

কুরআন তেলাওয়াতের আদব

হাদিস শরিফে আছে, ‘যে কুরআনের একটি হরফ উচ্চারণ করবে, সে দশ নেকি পাবে।’ রাসূলুল্লাহ সা: এটাও বলে দিয়েছেন, ‘আমি বলি না আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মিম একটি হরফ।’ কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমরা এত বড় সাওয়াবের একটি ইবাদতকে অত্যন্ত গুরুত্বহীনতার সাথে আদায় করে থাকি। কুরআন তেলাওয়াতের সাধারণ নিয়মাবলি ও আদবের প্রতি লক্ষ্য করি না। বরং কুরআনের সাথে চরম বেয়াদবি করে থাকি।

কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত পূর্ণ আদব ও আজমতের সাথে, আল্লাহ তায়ালাকে হাজির-নাজির জেনে এবং কুরআনে কারিম তেলাওয়াতের সাধারণ যে নিয়মাবলি রয়েছে, তার প্রতি লক্ষ রেখে।

কুরআনে কারিমে সূরা মুজ্জাম্মিলের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি কুরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে।’ এই আয়াতে ‘তারতিল’ শব্দটির উল্লেখ আছে। তারতিল অর্থ হলো অন্তর্নিহিত অর্থের প্রতি খেয়াল করে, স্পষ্ট উচ্চারণে ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করা। রাতের নামাজে রাসূলুল্লাহ সা:-এর তেলাওয়াত কেমন ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে নবীপত্নী হজরত উম্মে সালমা রা: নবীজীর অনুকরণে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান। তাতে প্রতিটি হরফ স্পষ্ট ছিল। (জামে তিরমিজি)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত উম্মে সালমা রা: নবীজীর তেলাওয়াতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে যে, তার তেলাওয়াত ছিল : হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত।
(সুনানে আবু দাউদ ১৪৬৬, জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৯২৩, সহি ইবনে খুজায়মা, হাদিস নম্বর ১১৫৮)

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস রা:কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তার তেলাওয়াত ছিল (মদের স্থানগুলো) টেনে পড়া। এরপর তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করে শুনান এবং তাতে বিসমিল্লাহ, আর রাহমান ও রাহিমের মদগুলো টেনে উচ্চারণ করে দেখান
(সহি বুখারি, হাদিস নম্বর ৫০৪৬)।

এক ব্যক্তি হজরত ইবনে মাসউদ রা:কে বলল, আমি নামাজের এক রাকাতে মুফাসসাল সূরা পাঠ করি। উত্তরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বললেন, সে তো কবিতা আওড়ানোর মতো পাঠ করা। (সহি বুখারি, হাদিস নম্বর ৭৭৫, সহি মুসলিম, হাদিস নম্বর ৮২২) একটি হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘কুরআন তেলাওয়াতকারী বা হাফেজকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, তুমি তেলাওয়াত করতে থাকো আর ওপরে উঠতে থাকো। তুমি ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করো, যেভাবে তুমি ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে, যা তুমি তেলাওয়াত করতে।’ হাদিসটি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪৬৪, জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৯১৪, সহি ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ৭৬৬)।

ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, খুব দ্রুত তেলাওয়াত করা যাতে উচ্চারণ বিঘিœত হয়Ñ মাকরুহ। তারতিলের সাথে এক পারা তেলাওয়াত করা সমপরিমাণ সময়ে তারতিল ব্যতীত দুই পারা পড়ার চেয়ে উত্তম। কয়েকটি কারণে তারতিলের সাথে তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব।

তারতিলের সাথে তেলাওয়াত করা হলে কুরআনের বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা যায়।
আল্লাহর কালামের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
অন্তরে অধিক ক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সুতরাং যে কুরআনের অর্থ বোঝে না, তার জন্যও তারতিলের সাথে তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব।

আল্লামা জারকাশি রহ: বলেন, পরিপূর্ণ তারতিল মানে কুরআনের শব্দগুলো ভরাট উচ্চারণে পাঠ করা এবং হরফগুলোকে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করা। অন্যথায় এক হরফ আরেক হরফের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। কারো কারো মতে, এটা হলো তারতিলের সর্বনি¤œ মাত্রা। পরিপূর্ণ তারতিল হলো, কুরআন বর্ণিত বিষয়বস্তুর বর্ণনাভঙ্গির প্রতি লক্ষ রেখে তেলাওয়াত করা। যেমনÑ শাসনবাণী বিষয়ক আয়াত তোলাওয়াতের সময় শাসনবাণী উচ্চারণকারীর মতো উচ্চারণ করা এবং সম্মান প্রদর্শনবিষয়ক আয়াতের তেলাওয়াতের সময় সম্মান প্রকাশ করার ভঙ্গিতে উচ্চারণ করা ইত্যাদি। (আল বুরহান ফি উলুমিল কুরআন, ১/৬৩৫, আল ইতকান ১/৩১০) ইমাম নববী রহ: তার লিখিত কিতাব আত-তিবইয়ানে বলেন, ‘উচিত হলো কুরআনকে তারতিলের সাথে পড়া।

ওলামায়ে কেরাম তারতিল মুস্তাহাব হওয়ার ওপর ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী! আপনি কুরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে। হজরত উম্মে সালমা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নবীজীর তেলাওয়াতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- তার তেলাওয়াত ছিল ‘প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত।’ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ সুনানে আবু দাউদ শরিফে, (হাদিস নম্বর ১৪৬৬) এবং ইমাম তিরমিজি তার লিখিত হাদিস গ্রন্থ জামে তিরমিজিতে, (হাদিস নম্বর ২৯২৩) ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান সহি।

ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, তেলাওয়াতে অর্থ অনুধাবনের জন্য তারতিল মুস্তাহাব। ওলামায়ে কেরাম আরো বলেন, আজমি, যারা কুরআনের অর্থ বোঝে না, তাদের জন্য তারতিল মুস্তাহাব। কেননা তা সম্মানের অধিক নিকটবর্তী এবং অন্তরে অধিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী।

হজরত আলকামা রা: একবার এক ব্যক্তিকে কুরআন তেলাওয়াত করতে শুনে বলেন, ‘লাকাদ রাত্তালাল কুরআনা, ফিদাহু আবি ও উম্মি।’ অর্থাৎ লোকটি তারতিলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তার প্রতি আমার বাবা-মা উৎসর্গ হোক।

কুরআন যথাসাধ্য সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা উচিত। সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াতের প্রতি ইসলামি শরিয়ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং তা সুন্নত। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা শ্রুতিমধুর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করো।’
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪৬৮, সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর ১০১৫, সহি ইবনে খুজায়মা, হাদিস নম্বর ১৫৫১, সহি ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ৭৪৯)

অপর এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করো। কেননা সুন্দর আওয়াজ কেরাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।’
(সুনানে দারেমি, হাদিস নম্বর ৩৭৭৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নম্বর ২১২৫)

সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে অনেক সহি হাদিস রয়েছে। সুতরাং তেলাওয়াতকারী যদি সুন্দর আওয়াজের অধিকারী না-ও হয়, তবুও যথাসম্ভব সুন্দর করার চেষ্টা করবে। তবে সুন্দর করতে গিয়ে দৃষ্টিকটু পর্যায়ের টানাটানি করবে না। সুর করে তেলাওয়াত করা, যদি তাতে উচ্চারণ-বিকৃতি না ঘটে, তবে তাতে আপত্তির কিছু নেই। আর উচ্চারণ-বিকৃতি ঘটলে নাজায়েজ। ইমাম নববী রহ: বলেন, সুন্দর আওয়াজের অধিকারী কুরআন তেলাওয়াতকারীর কাছে তেলাওয়াত শুনতে চাওয়া এবং মনোযোগের সাথে তা শোনা মুস্তাহাব। সহি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: সুন্দর আওয়াজে তেলাওয়াতকারী সাহাবিদের থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনেছেন। (আত-তিবইয়ান, পৃ: ১৩০)

সুতরাং কুরআনকে তারতিলের সাথে ও সুন্দর আওয়াজে পড়া সুন্নত। আমাদের দেশে তারাবির নামাজে যেভাবে কুরআন পড়া হয়, তা বলা যায় একটি অপসংস্কৃতি। এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। হাফেজ সাহেবকে ভাবতে হবে যে, তারাবির রূহ বা প্রাণ হলো কুরআন তেলাওয়াত। এভাবে কুরআন তেলাওয়াতের দ্বারা কুরআনের আজমত তো রক্ষা হয়ই না, বরং কুরআনের সাথে চরম বেয়াদবি ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়। তাই এত দ্রুত তেলাওয়াত করা যাবে না যে, তেলাওয়াতের কিছুই বুঝা যায় না। আবার এত ধীরেও পড়া যাবে না যে, মুসল্লিদের কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে হাফেজ সাহেবরা বায়তুল্লাহ শরিফ ও মসজিদে নববীর তেলাওয়াতের অনুকরণ করতে পারেন।

মসজিদ কমিটিকে ভাবতে হবে, এত কষ্ট করে নামাজ পড়ে সামান্য একটু সময়ের সাশ্রয় করতে গিয়ে পুরো নামাজের সাওয়াবই বিনষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আমার সব কাজ ঠিক থাকবে, আবার আল্লাহ তায়ালার কাছে অফুরন্ত পুণ্যের আশা করব, এটা তো হতে পারে না। যেখানে এত দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম, সেখানে সামান্য সময়ের জন্য এমন কী আহামরি ক্ষতি হয়ে যাবে! বরং এটা হচ্ছে শয়তানের ধোঁকা। আমরা যদি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেই তাহলে ধীরস্থীরভাবে নামাজ পড়া অসম্ভব কিছু নয়। তা ছাড়া এতে সময় খুব বেশি সাশ্রয় হয় না। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, তারতিলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত আর দ্রুততার সাথে তেলাওয়াতের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য হয় না। সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের কম-বেশি হয়। তাই মসজিদ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের উচিত, একটু বিলম্ব হলে বিরক্তি প্রকাশ না করে বরং ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে হাফেজ সাহেবদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করা। কারণ হাফেজ সাহেবরা নির্বিঘেœ নামাজ পড়ানোর জন্য তাদের সহযোগিতা একান্ত জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।