Monday, October 22, 2018

প্রিয়নবি_কেন_সুরমা_ব্যবহার_করতেন

#প্রিয়নবি_কেন_সুরমা_ব্যবহার_করতেন?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিশ্ব মানবতার জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তাইতো মুসলিম উম্মাহসহ ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সবাই প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের প্রতিটি বিষয়ই জানতে চায়। প্রিয়নবির প্রতিটি কাজ ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে নিয়োজিত হয়েছে গবেষণায়।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুরমা ব্যবহারও বাদ যায়নি এ গবেষণা থেকে। ইমাম বায়হাকি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি সুরমা ব্যবহার, হুকুম ও পদ্ধতি সম্পর্কে একটি হাদিস ও বক্তব্য তুলে ধরেছেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করো। কারণ, তা চোখের জ্যোতি বাড়ায়, চোখ পরিস্কার রাখে এবং অধিক ভ্রু উৎপন্ন করে।

তিনি (ইবনে আব্বাস) আরো বলেন, ‘প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুরমাদানি (সুরমা রাখার পাত্র) ছিল। প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর আগে ডোন চোখে ৩বার এবঙ বাম চোখে ৩বার সুরমা লাগাতেন।’
(সুনানে বায়হাকি)

#সুরমা_ব্যবহারের_হুকুম_ও_পদ্ধতি

সুরমা ব্যবহার চোখের জন্য অনেক উপকারি। উল্লেখিত হাদিসে সুরমা ব্যবহারের হুকুম ও পদ্ধতি বর্ণিত হয়েছে। আর তা লাগানো প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত। বিশেষ করে হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতিতে সুরমা ব্যবহারে রয়েছে সাওয়াব।

সুরমা ব্যবহারের উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণায়ও প্রমাণিত। হাদিস ও বিজ্ঞানের গবেষণায় সুরমা ব্যবহারে চোখের বড় উপকারিতাগুলো হলো-

> সুরমা চোখের জন্য ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে।
> চোখের প্রবেশকৃত ধূলা ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
> চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক জীবাণুকে ধ্বংস করে।
> চোখে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে।

#সুরমা_ব্যবহারে_করণীয়

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদেরকে ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহারের উপদেশ দিয়েছেন এবং তার উপকার বর্ণনা করেছেন। হাদিসে এসেছে-

– হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা ঘুমের সময় অবশ্যই ‘ইছমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ, তা ব্যবহারে চোখের জ্যোতি বাড়ে এবং অধিক ভ্রূ জন্মে।’
(ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আবু ইয়ালা)

– হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের জন্য ইছমিদ সুরমা সর্বোত্তম। কারণ তা (ইছমিদ সুরমা) ব্যবহারে দৃষ্টি বাড়ায় এবং অধিক ভ্রূ জন্মায়।’
(ইবনে মাজাহ,
ইবনে হিব্বান,
মুসতাদরেকে হাকেম)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে চোখের যাবতীয় কল্যাণে প্রিয়নবির অনুসরণ ও অনুকরণের তাওফিক দান করুন।

Tuesday, October 16, 2018

মাইজভাণ্ডারী তরিকা

তরিকত’ মানে আল্লাহর দিকে বান্দার প্রত্যাবর্তনের পথ। এ পথের দুটি দিক রয়েছে। জাহের ও বাতেন। বাহ্যিক শরিয়ত পালনের মাধ্যমে বান্দা তার জাহেরকে পবিত্র করে আর সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে হাকিকত, শরিয়ত ও ধর্ম পালনের নিগূঢ়তম উদ্দেশ্য সাধনে ব্রতী হয়। এই চর্চাই সুফি তরিকার মৌলিক ভাব।
‘তরিকত’ ইসলাম ধর্মে কোনো নব আবিষ্কার নয়। ইসলামের প্রথম যুগে আধ্যাত্মিক সাধনার ছায়ায় তরিকতের হাকিকত বর্তমান ছিল। হজরত রাসুল (সা.) সাহাবাদের ধর্মীয় দিকনির্দেশনার অংশ হিসেবে আধ্যাত্মিক সাধনার তালিম ও তরবিয়াত দিয়েছেন। এমনকি ‘বাইয়াতে ইসলাম’ গ্রহণের পরও সাহাবাদের কাছ থেকে হজরত রাসুল (সা.) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাপারে আবার বায়াত গ্রহণ করেছেন।
আল কোরআনে তরিকত চর্চার হাকিকত
রুহানি উৎকর্ষ সাধনের ভিন্ন ভিন্ন পথ ও পন্থার অস্তিত্বের ইঙ্গিত পবিত্র কোরআনেই রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘যারা আমার পথে সাধনা করে, অবশ্যই আমি তাদের আমার অনেক পথ প্রদর্শন করব। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ইহসানকারীদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা আনকাবুত : ৬৯)। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা অনেক পথ প্রদর্শন করার কথা বলেছেন।
মাইজভাণ্ডারী তরিকা
ইসলাম ধর্মে আধ্যাত্মিক সাধনার সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কোরআন ও হাদিসের মৌলিক শিক্ষাকে আশ্রয় ও আত্মস্থ করে অনেক তরিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। যেমন কাদেরিয়া, মুজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দিয়া, চিশতিয়া ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে কোরআন ও হাদিসের শিক্ষাকে অনুসরণ করে গাউসুল আজম হজরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী (কঃ)-এর আধ্যাত্মিক শক্তি ও শিক্ষাকে ধারণ করে একটি তরিকা প্রচারের সূচনা হয়।
এই তরিকার প্রথম বুজর্গ ও প্রচারক গাউছুল আজম হজরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (কঃ) নিজগ্রাম ‘মাইজভাণ্ডার’-এর কারণে ‘মাইজভাণ্ডারী’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাই তাঁর অনুসৃত ও প্রচারিত আধ্যাত্মিক সাধন-পদ্ধতি বা তরিকা ‘মাইজভাণ্ডারী তরিকা’ হিসেবে জনসমাজে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার মানবকল্যাণকামী বৈশিষ্ট্য
এই তরিকা ছিলছিলার দৃষ্টিকোনে কাদেরিয়া তরিকার সঙ্গে সম্পর্কিত। অন্যান্য তরিকার আত্মিক ও আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্যগুলো মাইজভাণ্ডারী তরিকায় একত্রিত হয়েছে।
এই তরিকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এ তরিকা ইসলামী ভাবাদর্শকে পরিপূর্ণভাবে আত্মস্থ করার পাশাপাশি একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক, উদার ও সংস্কারমুক্ত, নৈতিক ধর্ম-প্রাধান্যসম্পন্ন, শ্রেণী-বৈষম্যহীন ও মানবদরদী।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার কর্মনীতি ও শিক্ষা
ইসলাম ধর্মের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন মাইজভাণ্ডারী তরিকার মূল লক্ষ্য। এ তরিকার কর্মনীতির অন্যতম হচ্ছে খেলাফতপ্রাপ্ত পীরে তরিকতের হাতে বায়াত গ্রহণের পর জিকির চর্চার মাধ্যমে নিজ কলবকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করা। মানুষের মনে ঐশী প্রেম জাগ্রত করে সুন্দর ও ন্যায়ের পথে জীবন যাপনে মানবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করে মানবতার ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি ও কল্যাণ নিশ্চিত করার শিক্ষা ও দীক্ষা দেয়।
মাইজভাণ্ডারী তরিকার অনুসারীদের প্রতি বর্তমান সাজ্জাদানশীনের দিকনির্দেশনা
বর্তমান আধ্যাত্মিক সাধনায় সফলতা লাভের জন্য শরিয়তের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোরারোপ । মুরিদদের সব সময় জানা দরকার , ‘শরিয়তকে বাদ দিয়ে তরিকত নাই।’ তা হচ্ছে নিয়মিত নামাজ পড়া; রোজা রাখা; সামর্থ্য থাকলে হজ-জাকাত আদায় করা অর্থাৎ শরিয়ত পালন করা।
পরিশিষ্ট : ইসলামী সভ্যতার বিকাশে তাসাউফ চর্চা ও তৎসংশ্লিষ্ট ধ্যান-ধারণার অবদান অনস্বীকার্য। যুগ যুগ ধরে সুফি তরিকাগুলো ইসলামী চরিত্র গড়ার একেকটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় মাইজভাণ্ডারী তরিকা জনসমাজকে ধর্মের মূল সৌন্দর্য্য অবলোকন করিয়ে এর অন্তর্নিহিত শক্তির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। এই কার্যক্রমে ইসলামী চরিত্র অর্জনে যেমন সাহায্য করা হচ্ছে, তেমনি অন্য ধর্মের অনুসারীদের সামনে ইসলামের প্রকৃত আহ্বান ও নীতি তুলে ধরার পথ উন্মোচিত হচ্ছে।

Sunday, October 14, 2018

কুরআন তেলাওয়াতের আদব

হাদিস শরিফে আছে, ‘যে কুরআনের একটি হরফ উচ্চারণ করবে, সে দশ নেকি পাবে।’ রাসূলুল্লাহ সা: এটাও বলে দিয়েছেন, ‘আমি বলি না আলিফ-লাম-মিম একটি হরফ; বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মিম একটি হরফ।’ কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, আমরা এত বড় সাওয়াবের একটি ইবাদতকে অত্যন্ত গুরুত্বহীনতার সাথে আদায় করে থাকি। কুরআন তেলাওয়াতের সাধারণ নিয়মাবলি ও আদবের প্রতি লক্ষ্য করি না। বরং কুরআনের সাথে চরম বেয়াদবি করে থাকি।

কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত পূর্ণ আদব ও আজমতের সাথে, আল্লাহ তায়ালাকে হাজির-নাজির জেনে এবং কুরআনে কারিম তেলাওয়াতের সাধারণ যে নিয়মাবলি রয়েছে, তার প্রতি লক্ষ রেখে।

কুরআনে কারিমে সূরা মুজ্জাম্মিলের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে নবী! আপনি কুরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে।’ এই আয়াতে ‘তারতিল’ শব্দটির উল্লেখ আছে। তারতিল অর্থ হলো অন্তর্নিহিত অর্থের প্রতি খেয়াল করে, স্পষ্ট উচ্চারণে ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করা। রাতের নামাজে রাসূলুল্লাহ সা:-এর তেলাওয়াত কেমন ছিল- এমন প্রশ্নের উত্তরে নবীপত্নী হজরত উম্মে সালমা রা: নবীজীর অনুকরণে কুরআন তেলাওয়াত করে শোনান। তাতে প্রতিটি হরফ স্পষ্ট ছিল। (জামে তিরমিজি)

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত উম্মে সালমা রা: নবীজীর তেলাওয়াতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে যে, তার তেলাওয়াত ছিল : হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত।
(সুনানে আবু দাউদ ১৪৬৬, জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৯২৩, সহি ইবনে খুজায়মা, হাদিস নম্বর ১১৫৮)

হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত আনাস রা:কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তেলাওয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, তার তেলাওয়াত ছিল (মদের স্থানগুলো) টেনে পড়া। এরপর তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পাঠ করে শুনান এবং তাতে বিসমিল্লাহ, আর রাহমান ও রাহিমের মদগুলো টেনে উচ্চারণ করে দেখান
(সহি বুখারি, হাদিস নম্বর ৫০৪৬)।

এক ব্যক্তি হজরত ইবনে মাসউদ রা:কে বলল, আমি নামাজের এক রাকাতে মুফাসসাল সূরা পাঠ করি। উত্তরে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বললেন, সে তো কবিতা আওড়ানোর মতো পাঠ করা। (সহি বুখারি, হাদিস নম্বর ৭৭৫, সহি মুসলিম, হাদিস নম্বর ৮২২) একটি হাদিসে রাসূল সা: বলেন, ‘কুরআন তেলাওয়াতকারী বা হাফেজকে (কিয়ামতের দিন) বলা হবে, তুমি তেলাওয়াত করতে থাকো আর ওপরে উঠতে থাকো। তুমি ধীরে ধীরে তেলাওয়াত করো, যেভাবে তুমি ধীরে ধীরে দুনিয়াতে তেলাওয়াত করতে। তোমার অবস্থান হবে সর্বশেষ আয়াতের স্থলে, যা তুমি তেলাওয়াত করতে।’ হাদিসটি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা: থেকে বর্ণিত। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪৬৪, জামে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ২৯১৪, সহি ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ৭৬৬)।

ওলামায়ে কেরাম এ বিষয়ে একমত যে, খুব দ্রুত তেলাওয়াত করা যাতে উচ্চারণ বিঘিœত হয়Ñ মাকরুহ। তারতিলের সাথে এক পারা তেলাওয়াত করা সমপরিমাণ সময়ে তারতিল ব্যতীত দুই পারা পড়ার চেয়ে উত্তম। কয়েকটি কারণে তারতিলের সাথে তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব।

তারতিলের সাথে তেলাওয়াত করা হলে কুরআনের বিষয়গুলোর প্রতি মনোনিবেশ করা যায়।
আল্লাহর কালামের প্রতি অধিক সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
অন্তরে অধিক ক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
সুতরাং যে কুরআনের অর্থ বোঝে না, তার জন্যও তারতিলের সাথে তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব।

আল্লামা জারকাশি রহ: বলেন, পরিপূর্ণ তারতিল মানে কুরআনের শব্দগুলো ভরাট উচ্চারণে পাঠ করা এবং হরফগুলোকে স্পষ্ট করে উচ্চারণ করা। অন্যথায় এক হরফ আরেক হরফের সাথে যুক্ত হয়ে যাবে। কারো কারো মতে, এটা হলো তারতিলের সর্বনি¤œ মাত্রা। পরিপূর্ণ তারতিল হলো, কুরআন বর্ণিত বিষয়বস্তুর বর্ণনাভঙ্গির প্রতি লক্ষ রেখে তেলাওয়াত করা। যেমনÑ শাসনবাণী বিষয়ক আয়াত তোলাওয়াতের সময় শাসনবাণী উচ্চারণকারীর মতো উচ্চারণ করা এবং সম্মান প্রদর্শনবিষয়ক আয়াতের তেলাওয়াতের সময় সম্মান প্রকাশ করার ভঙ্গিতে উচ্চারণ করা ইত্যাদি। (আল বুরহান ফি উলুমিল কুরআন, ১/৬৩৫, আল ইতকান ১/৩১০) ইমাম নববী রহ: তার লিখিত কিতাব আত-তিবইয়ানে বলেন, ‘উচিত হলো কুরআনকে তারতিলের সাথে পড়া।

ওলামায়ে কেরাম তারতিল মুস্তাহাব হওয়ার ওপর ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে নবী! আপনি কুরআন তেলাওয়াত করুন স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে। হজরত উম্মে সালমা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি নবীজীর তেলাওয়াতের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে- তার তেলাওয়াত ছিল ‘প্রতিটি হরফ পৃথক পৃথকভাবে উচ্চারিত।’ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আবু দাউদ সুনানে আবু দাউদ শরিফে, (হাদিস নম্বর ১৪৬৬) এবং ইমাম তিরমিজি তার লিখিত হাদিস গ্রন্থ জামে তিরমিজিতে, (হাদিস নম্বর ২৯২৩) ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান সহি।

ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, তেলাওয়াতে অর্থ অনুধাবনের জন্য তারতিল মুস্তাহাব। ওলামায়ে কেরাম আরো বলেন, আজমি, যারা কুরআনের অর্থ বোঝে না, তাদের জন্য তারতিল মুস্তাহাব। কেননা তা সম্মানের অধিক নিকটবর্তী এবং অন্তরে অধিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিকারী।

হজরত আলকামা রা: একবার এক ব্যক্তিকে কুরআন তেলাওয়াত করতে শুনে বলেন, ‘লাকাদ রাত্তালাল কুরআনা, ফিদাহু আবি ও উম্মি।’ অর্থাৎ লোকটি তারতিলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত করেছে। তার প্রতি আমার বাবা-মা উৎসর্গ হোক।

কুরআন যথাসাধ্য সুমিষ্ট ও সুললিত কণ্ঠে তেলাওয়াত করা উচিত। সুন্দর কণ্ঠে তেলাওয়াতের প্রতি ইসলামি শরিয়ত গুরুত্ব দিয়েছে এবং তা সুন্নত। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘তোমরা শ্রুতিমধুর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করো।’
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১৪৬৮, সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর ১০১৫, সহি ইবনে খুজায়মা, হাদিস নম্বর ১৫৫১, সহি ইবনে হিব্বান, হাদিস নম্বর ৭৪৯)

অপর এক হাদিসে আছে, ‘তোমরা সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত করো। কেননা সুন্দর আওয়াজ কেরাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।’
(সুনানে দারেমি, হাদিস নম্বর ৩৭৭৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস নম্বর ২১২৫)

সুন্দর আওয়াজে কুরআন তেলাওয়াত সম্পর্কে অনেক সহি হাদিস রয়েছে। সুতরাং তেলাওয়াতকারী যদি সুন্দর আওয়াজের অধিকারী না-ও হয়, তবুও যথাসম্ভব সুন্দর করার চেষ্টা করবে। তবে সুন্দর করতে গিয়ে দৃষ্টিকটু পর্যায়ের টানাটানি করবে না। সুর করে তেলাওয়াত করা, যদি তাতে উচ্চারণ-বিকৃতি না ঘটে, তবে তাতে আপত্তির কিছু নেই। আর উচ্চারণ-বিকৃতি ঘটলে নাজায়েজ। ইমাম নববী রহ: বলেন, সুন্দর আওয়াজের অধিকারী কুরআন তেলাওয়াতকারীর কাছে তেলাওয়াত শুনতে চাওয়া এবং মনোযোগের সাথে তা শোনা মুস্তাহাব। সহি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত রাসূল সা: সুন্দর আওয়াজে তেলাওয়াতকারী সাহাবিদের থেকে কুরআন তেলাওয়াত শুনেছেন। (আত-তিবইয়ান, পৃ: ১৩০)

সুতরাং কুরআনকে তারতিলের সাথে ও সুন্দর আওয়াজে পড়া সুন্নত। আমাদের দেশে তারাবির নামাজে যেভাবে কুরআন পড়া হয়, তা বলা যায় একটি অপসংস্কৃতি। এই অপসংস্কৃতি থেকে বের হওয়ার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। হাফেজ সাহেবকে ভাবতে হবে যে, তারাবির রূহ বা প্রাণ হলো কুরআন তেলাওয়াত। এভাবে কুরআন তেলাওয়াতের দ্বারা কুরআনের আজমত তো রক্ষা হয়ই না, বরং কুরআনের সাথে চরম বেয়াদবি ও ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়। তাই এত দ্রুত তেলাওয়াত করা যাবে না যে, তেলাওয়াতের কিছুই বুঝা যায় না। আবার এত ধীরেও পড়া যাবে না যে, মুসল্লিদের কষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে হাফেজ সাহেবরা বায়তুল্লাহ শরিফ ও মসজিদে নববীর তেলাওয়াতের অনুকরণ করতে পারেন।

মসজিদ কমিটিকে ভাবতে হবে, এত কষ্ট করে নামাজ পড়ে সামান্য একটু সময়ের সাশ্রয় করতে গিয়ে পুরো নামাজের সাওয়াবই বিনষ্ট করার কোনো মানে হয় না। আমার সব কাজ ঠিক থাকবে, আবার আল্লাহ তায়ালার কাছে অফুরন্ত পুণ্যের আশা করব, এটা তো হতে পারে না। যেখানে এত দীর্ঘ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম, সেখানে সামান্য সময়ের জন্য এমন কী আহামরি ক্ষতি হয়ে যাবে! বরং এটা হচ্ছে শয়তানের ধোঁকা। আমরা যদি মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেই তাহলে ধীরস্থীরভাবে নামাজ পড়া অসম্ভব কিছু নয়। তা ছাড়া এতে সময় খুব বেশি সাশ্রয় হয় না। অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, তারতিলের সাথে কুরআন তেলাওয়াত আর দ্রুততার সাথে তেলাওয়াতের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য হয় না। সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ মিনিটের কম-বেশি হয়। তাই মসজিদ কমিটি ও সাধারণ মুসল্লিদের উচিত, একটু বিলম্ব হলে বিরক্তি প্রকাশ না করে বরং ধীরস্থিরভাবে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে হাফেজ সাহেবদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করা। কারণ হাফেজ সাহেবরা নির্বিঘেœ নামাজ পড়ানোর জন্য তাদের সহযোগিতা একান্ত জরুরি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Friday, October 12, 2018

স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা

প্রতিটি মানুষ ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। মানুষের যেমন বৈচিত্র্য রয়েছে, তেমনি মানুষের দেখা স্বপ্নেও রয়েছে ভিন্নতা। মানুষ ভালো স্বপ্ন যেমন দেখে, তেমন দেখতে পারে ভয়ঙ্কর বা দুঃস্বপ্ন। দারুণ স্বপ্ন মানুষকে আনন্দ দিলেও কিছু স্বপ্ন মানুষকে ভাবাতুর করে রাখে। চিন্তা-ভাবনা ও অস্থিরতায় ফেলে দেয়।

জীবনের খুঁটিনাটি প্রত্যেক বিষয়ের মতো স্বপ্ন সম্পর্কেও ইসলামের বক্তব্য রয়েছে। এ বক্তব্য কোনো দার্শনিক বা বিজ্ঞানির বক্তব্যের সঙ্গে মিলতে হবে, এমনটা জরুরি নয়। তবে মিলে গেলে অসুবিধার কিছু নয়।

স্বপ্ন ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। ইসলাম স্বপ্নকে নবুয়্যতের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। স্বপ্নের ইসলামী রূপরেখা কী বা স্বপ্ন সম্পর্কে ইসলামের বক্তব্য কী—তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, স্বপ্ন তিন প্রকার। এক. রুইয়ায়ে সালেহাহ (বা ভালো স্বপ্ন। আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে কোনো সুসংবাদ হিসেবে যা বিবেচ্য)। দুই. রুইয়ায়ে শয়তানিয়্যাহ (বা শয়তানকর্তৃক প্ররোচনামূলক প্রদর্শিত স্বপ্ন)। তিন. রুইয়ায়ে নাফসানিয়্যা (বা মানুষের চিন্তা-চেতনার কল্পচিত্র)। এরপর রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি কেউ অপছন্দনীয়, ভয় বা খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন তাড়াতাড়ি অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে যায় এবং সে স্বপ্নের ব্যাপারে অনভিজ্ঞ কাউকে কিছু না বলে। (আবু দাউদ)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) ফজরের নামাজের পর সাহাবিদের জিজ্ঞেস করতেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো স্বপ্ন দেখেছ কি? অতঃপর রাসুল (সা.) নিজে এগুলোর ব্যাখ্যা করতেন।

চিরসত্যের ধারক মহানবী (সা.)-এর বাণীর আলোকে আমরা বিশ্বাস করি যে, কিছু ভালো স্বপ্ন আল্লাহ মহান তার প্রিয় ও নেক বান্দাদের দেখান। আর কিছু স্বপ্ন শয়তানের প্ররোচনায় হয়ে থাকে এবং সেগুলো মানুষের চিন্তা ও ধারণার ফল।

জরুরি জ্ঞাতব্য যে, নবি-রাসুলদের স্বপ্ন ওহি। এ জন্যই স্বপ্নযোগে আদিষ্ট হয়ে হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজের ছেলে ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দিতে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। জাতীয় কোনো স্বপ্ন দেখলে, কোনো ব্যক্তির জন্য এভাবে কোরবানি করতে উদ্যত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

স্বপ্নের ব্যাপারে সবচেয়ে গুরুত্বপূণ কথা হলো স্বপ্ন কাউকে না বলা। স্বপ্ন-ব্যাখ্যা খুবই কঠিন এবং জ্ঞানতাত্ত্বিক একটি বিষয়। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এই কাজটি করতে পারেন না। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।

কোরআন ও হাদিসের আলোকে স্বপ্ন ও স্বপ্নে ব্যাখ্যার কিছু মৌলিক ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে কি স্বপ্ন দেখলে কি হয়, তা এখানে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে না । এটা নির্দিষ্ট করে আলোচনা করা সম্ভবও নয়। কারণ স্বপ্নদ্রষ্টার অবস্থা ভেদে একই স্বপ্নের ব্যাখ্যা বিভিন্ন রকম হতে পারে।

স্বপ্ন নিয়ে কিছু কথা

হাদিসে এসেছে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নবুয়্যতে আর কিছু অবশিষ্ট নেই, আছে কেবল মুবাশশিরাত (সুসংবাদ)। সাহাবারা প্রশ্ন করলেন, মুবাশশিরাত কী? তিনি বললেন, ভালো স্বপ্ন। (বুখারি শরিফ)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, দিন যত যেতে থাকবে, কিয়ামত নিকটে হবে। মুমিনদের স্বপ্নগুলো তত মিথ্যা হতে দূরে থাকবে। ঈমানদারের স্বপ্ন হলো নবুয়্যতের ছিচল্লিশ ভাগের একভাগ। (বুখারি ও মুসলিম)

একটি বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে লোক যত বেশি সত্যবাদী হবে তার স্বপ্ন তত বেশি সত্যে পরিণত হবে।’

স্বপ্ন দেখলে করণীয়

আবু সায়িদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছেন, তোমাদের কেউ যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে, তাহলে সে যেন জানে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাকে স্বপ্নটি দেখানো হয়েছে। তখন সে যেন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করে ও অন্যদের কাছে বর্ণনা করে।

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, এ স্বপ্নের কথা শুধু তাকে বলবে, যে তাকে ভালোবাসে। আর যদি স্বপ্ন অপছন্দের হয়, তাহলে বুঝে নেবে এটা শয়তানের পক্ষ থেকে হয়েছে। তখন সে শয়তানের ক্ষতি থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। আর এ স্বপ্নের কথা কারো কাছে বলবে না। কারণ খারাপ স্বপ্ন তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম)

আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি (সা.) বলেছেন, সুন্দর স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে। আর খারাপ স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে। কেউ স্বপ্নে খারাপ কিছু দেখলে বাম পাশে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করবে আর শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করবে। (এভাবে বলবে, আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম) তাহলে এ স্বপ্ন তাকে ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারি ও মুসলিম)

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাইবে। (আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম বলবে) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)। (মুসলিম)

কে দেবে স্বপ্নের ব্যাখ্যা

স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেবে কে? সবাই কি স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার যোগ্যতা রাখে? মূলত স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেয়ার অধিকার রাখেন ওই ব্যক্তি, যিনি কোরআন ও হাদিস সম্পর্কে বেশ অভিজ্ঞ এবং স্বপ্ন-ব্যাখ্যার মূলনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মানব-দরদী ও সবার প্রতি কল্যাণকামী মনোভাবের অধিকারী হতে হবে। কারণ স্বপ্নের ব্যাখ্যা একটি শরয়ি বিদ্যা। স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবেই তা সংঘটিত হয়।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, স্বপ্নের ব্যাখ্যা যেভাবে করা হয়, সেভাবে তা বাস্তবায়িত হয়। যখন তোমাদের কেউ স্বপ্ন দেখবে, তখন আলেম অথবা কল্যাণকামী ব্যতীত কারো কাছে তা বর্ণনা করবে না। (মুসতাদরাক, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ)

স্বপ্ন তাবির বা ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। ইমাম বগভী রহ. বলেন: ব্যাখ্যা করার দিক থেকে স্বপ্ন কয়েক প্রকার হতে পারে। প্রথমত কোরআনের আয়াত দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত রাসুল (সা.)-এর হাদিস দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা। তৃতীয়ত মানুষের মধ্যে প্রচলিত বিভিন্ন প্রসিদ্ধ উক্তি দিয়ে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা। চতুর্থত: কখনো বিপরীত অর্থ গ্রহণের নীতির আলোকে স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা।

গাঊছে ছাকালাঈন

গাঊছে ছাকালান বা গাঊছে ছাকালাঈন। ‘গাঊছ’ অর্থ সাহায্যকারী। ছাকালান অর্থ বড় দুটি সম্মানিত দল, কর্মরূপে এটি ছাকালাঈন হয়। ছাকালান বা ছাকালাইন বলে জিন-ইনসানকেই বোঝানো হয়। শব্দটি দ্বি-বচন, কখনও দ্বি-বচন দ্বারা বহুবচনও বোঝানো হয়; তখন এর অর্থ হয় সৃষ্টিসকল। এই শব্দটি কোরআনেও রয়েছে : ‘হে জিন ও মানব জাতি! অচিরেই আমি তোমাদের প্রতি মনোবিবেশ করব।’ (সূরা-৫৫ আর-রহমান, আয়াত : ৩১)। যেহেতু জিন ও ইনসান সৃষ্টির মধ্যে সম্মানিত ও পরকালে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ও জাহান্নাম, তাই এদের আলাদা করে ছাকালান বা ছাকালাঈন অর্থাৎ বড় দুটি দল নামে অভিহিত করা হয়। (লিসানুল আরব, ইবনে মানযূর রহ., খ-: ২, পৃষ্ঠা : ১১২-১১৫, অধ্যায় : ছা)।
সাধারণ আরবিতে ছাকালান এবং উর্দু-ফারসিতে ছাকালাঈন ব্যবহৃত হয়। গাঊছে ছাকালান বা গাঊছে ছাকালাঈন অর্থ দুই দলের সাহায্যকারী বা সবার সহায্যকারী। এর আরবি রূপ হলো ‘গাঊছুছ ছাকালাঈন’; ফারসি, উর্দু ও বাংলায় গাউছে ছাকালাঈন। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বানানে ও উচ্চারণে বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমনÑ গঊছে ছাকলাঈন, গাউসে সাকলাঈন; গঊছে ছাকলাইন, গাউসে সাকলাইন, গঊছে ছাকলায়েন, গাউসে সাকলায়ন ইত্যাদি।
যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে জিন ও ইনসানের প্রতি এবং ক্ষেত্র বিশেষ এর বাইরেও অন্যান্য সৃষ্টির প্রতি গাউছের দায়িত্ব পালন করেন, তারা এই সম্মানজনক অভিধায় অভিহিত হন। তরিকতের পরিভাষায় ‘গাঊছে ছাকালাঈন’ হলেন মারিফাত ও তাসাউফের সালিকীনদের সাতাশ বা ঊনত্রিশ স্তরের অন্যতম এবং মাজমুআয়ে উছমানীতে বর্ণিত ইনছানের বিয়াল্লিশ পর্বের অন্তর্গত বিলায়াত ও খিলাফাতের পঞ্চবিংশতিতম ধাপ বা বিশেষ স্তর। এই পর্যায়ের ওলি-আউলিয়গণ আল্লাহর পক্ষ থেকে ‘গাউছুল আযম’ এর অধীনে বিশেষ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন। গাঊছে ছাকালাঈনও মূলত কুতবুল আকতাবের সমপর্যায়ের হয়ে থাকেন। এই ওলি-আউলিয়াগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে কারামাত ও তাছাররুফাতের অধিকারীও হন। একই সময়ে একাধিক গাঊছে ছাকালাঈন হতেও পারেন। (মাজমুআয়ে উছমানী)।

আরশের ধনভাণ্ডার থেকে নাজিল হয়েছে যে দোয়া- সুরা বাকারার সর্বশেষ আয়াত

সুরা বাকারার সর্বশেষ আয়াতে এ কথার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে যে কোনো ব্যক্তিকে তার সাধ্যাতীত কষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আল্লাহ তাআলার নেই। সাধ্যাতীত কাজ দ্বারা কাউকে কষ্ট দেয়া মহান আল্লাহ তাআলার নীতি বিরোধী কাজ। আর তা তিনি আয়াত নাজিল করে বান্দাকে আশ্বস্ত করেছেন।
পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছিলেন যে, বান্দার অন্তরে যা আছে, তা প্রকাশ করুক কিংবা গোপন রাখুক; সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলা বান্দার কাছ থেকে হিসাব নেবেন। আর তা শুনে সাহাবায়ে কেরাম পেরেশান হয়ে যান।
মূলত আয়াতের উদ্দেশ্য ছিল যে, বান্দা স্বেচ্ছায় যেসব কাজ করবে, আল্লাহ তাআলা তার হিসাব নেবেন। অনিচ্ছাকৃত কু-চিন্তা ও ত্রুটি বিচ্যুতি এর অন্তর্ভূক্ত ছিল না।
সাহাবায়ে কেরামের পেরেশানিতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়াতের ভাব-ভাষা জানা সত্ত্বেও আল্লাহর ওহির অপেক্ষায় ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করেন-
আয়াতের অনুবাদ
সুরায়ে বাকারার ২৮৬নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে এ নিশ্চয়তা প্রদান করেন যে, তিনি কোনো বান্দাকে তার সাধ্যের বাইরে কোনো অতিরিক্ত দায়িত্ব দেন না। এটা আল্লাহর নীতি বিরোধী কাজ। আর এ আয়াতের মাধ্যমেই শেষ হয় সুরা বাকারা।
এ আয়াতের শেষে বান্দাকে তার কাছে ক্ষমা ও দয়া প্রার্থনা ভাব-ভঙ্গি শিখিয়েছেন। আর এ আয়াতসহ আগের আয়াতের রয়েছে অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত।
সুরা বাকারার সর্বশেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা মুসলিমদেরকে একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন। যাতে ভুল-ভ্রান্তিবশতঃ কোনো কাজ হয়ে যাওয়ার পর তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনার পদ্ধতি রয়েছে। যাতে ভুল-ভ্রান্তির কারণে পূর্ববর্তী নবিদের উম্মতের মতো শাস্তিতে পতিত হতে না হয়। আর দোয়াটি হলো-
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻻَ ﺗُﺆَﺍﺧِﺬْﻧَﺎ ﺇِﻥ ﻧَّﺴِﻴﻨَﺎ ﺃَﻭْ ﺃَﺧْﻄَﺄْﻧَﺎ
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﺤْﻤِﻞْ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺇِﺻْﺮًﺍ ﻛَﻤَﺎ ﺣَﻤَﻠْﺘَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻣِﻦ ﻗَﺒْﻠِﻨَﺎ
ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﻻَ ﺗُﺤَﻤِّﻠْﻨَﺎ ﻣَﺎ ﻻَ ﻃَﺎﻗَﺔَ ﻟَﻨَﺎ ﺑِﻪِ
ﻭَﺍﻋْﻒُ ﻋَﻨَّﺎ ﻭَﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟَﻨَﺎ ﻭَﺍﺭْﺣَﻤْﻨَﺎ
ﺃَﻧﺖَ ﻣَﻮْﻻَﻧَﺎ ﻓَﺎﻧﺼُﺮْﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡِ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ
সুরা বাকারার ২৮৫ ও ২৮৬ আয়াতদ্বরে ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেউ রাতের বেলায় এ আয়াত দু’টি পাঠ করলে তা তার জন্য যথেষ্ট।’ (বুখারি, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)
অন্য হাদিসে প্রিয়নবি ঘোষণা করেন, ‘সুরাহ বাকারার শেষ আয়াতগুলো আমাকে আরশের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার আগে আর কোনো নবিকে এগুলো দেয়া হয়নি।’ (মুসনাদে আহমদ, বায়হাকি)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘মিরাজের সময় আল্লাহ তাআলা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তিনটি জিনিস দেয়া হয়-
– ৫ ওয়াক্ত নামাজ;
– সুরাহ বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং
– তাওহিদের অনুসারীদের সব পাপের ক্ষমা।’ (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)
হজরত নোমান ইবনে বশির রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আসমান জমিন সৃষ্টির দু’হাজার বছর আগে আল্লাহ তাআলা লিখে রেখেছেন যে, সুরা বাকারার শেষ দু’আয়াত যে ঘরে ৩দিন পাঠ করা হবে, সে ঘরের কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’ (বাগবি- তাফসিরে মাজহারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নিয়মিত আমল করার পাশাপাশি আয়াতের ভাব ও শিক্ষা নিজেদের জীবনে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Wednesday, October 10, 2018

পানি আল্লাহপাকের পবিত্র নিয়ামত

আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য বিশাল একটি নিয়ামত। দুনিয়ার জমীনে এবং আখিরাতে পানির বিশিষ্ট ভূমিকা থাকায় পবিত্র কোরআনে পানিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ৪৬টি স্থানে পানির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। আকাশ, মাটি সৃষ্টি করার পর মহান আল্লাহ তায়ালা পানি সৃষ্টি করেছেন। পানি থেকেই মহান আল্লাহ তায়ালা সব প্রানবন্ত বস্তুকে সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
 “আর আমি তো পানি থেকেই সব প্রাণবন্ত বস্তুকে সৃষ্টি করেছি’। (সূরা আম্বিয়া-৩০)
পানি শুধু জীবনের উৎস নয়, মহান আল্লাহ তায়ালা যে ইবাদত করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন তার প্রথম ও প্রধান শর্ত হল পবিত্রতা, পবিত্রতার প্রথম ও প্রধান উপকরন হল পানি। এই পানি আল্লাহ মানুষের প্রশান্তির জন্য আকাশ থেকে অবতরন করেন যাতে মানুষ পবিত্র হতে পারে।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“যখন তিনি আরোপ করেন তোমাদের উপর তন্দ্রাচ্ছন্ন তা নিজের পক্ষ থেকে তোমাদের প্রশান্তির জন্য এবং তোমাদের উপর আকাশ থেকে পানি অবতরন করেন যাতে তোমাদিগকে পবিত্র করে দেন এবং যাতে তোমাদের থেকে অপসারিত করে দেন শয়তানের পবিত্রতা”। (সূরা আনফাল-১১)
পানি ব্যতিত এই সুন্দর বায়ুম-ল অস্তিত্বহীন হয়ে যেতো। তাই পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে পানি অবদান অনস্বীকার্য। পানির মাধ্যমে বৃক্ষ জন্মে এবং যার মাধ্যমে আমরা পশুচরন করে থাকি।
 মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনিই আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করেন ওতে তোমাদের জন্য রয়েছে পানীয় এবং তা হতে বৃক্ষ জন্মে যাতে তোমরা পশুচারন করে থাক”। (সূরা নাহল-১০)
পানি জান্নাত বাসীদের উপহার দেওয়া হবে ও জাহান্নাম বাসীদের পানি থেকে বঞ্চিত করা হবে।
জাহান্নাম বাসীরা তাদের অত্যাচারের কষ্টে পানির পিপাসায় পরে জান্নাতি ব্যক্তিদের নিকট পানি চাইবে, কিন্তু তারা যেহেতু অবিশ্বাসী তাই তাদের পানি দেওয়া হবে না।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ডেকে বলবে দোযখবাসীরা জান্নাত বাসীদেরকে, আমাদের উপর কিছু পানি বা খাদ্য ফেলে দাও বা আল্লাহ তায়ালা তোমাদের যা দিয়েছেন তা হতে, তারা বলবে আল্লাহ তায়ালা এই দুটি অবিশ্বাসীদের জন্য নিষিদ্ধ করেছেন”। (সূরা আরাফ-৫০)
পানি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপকভাবে অপচয় হচ্ছে। পানি আমাদের জন্য বিশাল এক নিয়ামত এজন্য পানি অপচয় করা মহান আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন। পানি অপচয় করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি মারাত্মক গর্হিত কাজ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা আহার করো ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না, তিনি অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না”। (সূরা আরাফ-৩১) রাসুল (সা:) পরিমানমত পানি ব্যবহারের নির্দেশে দিয়েছেন।
পরিমান মত পানি ব্যবহার করা, ওজু, গোসল কিংবা বিভন্ন ধরনের কাজ করতে হবে। গোসল করার সময় আমরা মাত্রাতিরিক্ত পানি ব্যবহার করি, আবার মসজিদের ওজু করতে গিয়ে পানির ট্যাপ ছেড়ে দীর্ঘ সময় লাগিয়ে ওজু করি, মাথা কান গর্দান মাসেহ করার সময় যদি পানির ট্যাপ বন্ধ রাখি এবং স্বাভাবিক ভাবে ট্যাপ ছেড়ে ওজু করলে পানির অপচয় থেকে রা পাওয়া যাবে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা:) থেকে বর্ণিত, “রাসুল (সা:) একসময় হজরত সাদ (রা:) এর কাছে দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। হজরত সাদ (রা:) তখন অজু করেছিলেন। রাসুল (সা:) বললেন, পানি অপব্যয় করছ কেন? হজরত সাদ (রা:) বললেন, ওজুতেও পানি কি অপব্যয় হয়, রাসুল (সা:) বললেন, প্রবহমান নদীতেও যদি তুমি অজু কর তবুও অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করা যাবে না”। (মুসনাদ আহমদ)
কিয়ামতের মাঠে আল্লাহ তায়ালা সব নেয়ামত সম্পর্কে একে এক করে হিসাব নিবেন এবং পানির ব্যবহার সম্পর্কে হিসাব চাওয়া হবে। আল্লাহর নিয়োজিত ফেরেশতারা এই পানি ব্যবহার সম্পর্কে লিখে রাখছেন, সামান্য অপচয় করলেও সেদিন হিসাব দিতে হবে। যেহেতু প্রতিিিট বিষয় আল্লাহর দেওয়া ফেরেশতারা লিপিবদ্ধ করে রাখছে তাই আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধ মেনে চলে তার প্রদত্ত রিজিক থেকে খেয়ে ও পান করতে হবে। এই পৃথিবীর জমীনে কোনো অবস্থাতে কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না। মহান আল্লাহ পাক আমাদের আদেশ করেছেন, তোমরা আল্লাহর রিজিক থেকে খাও এবং পান করো কিন্তু পৃথিবীর বুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না”।
পানি কিভাবে পান করতে হবে সেই আদব প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা:) শিক্ষা দিয়েছেন। বসে ডান হাত দিয়ে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বলে পানি পান করা রাসুল (সা:) এর সুন্নাত। তিন শ্বাসে পানি পান করা উত্তম ও প্রত্যেক বার পাত্র থেকে মুখ পৃথক করা পাত্রের ভিতরে শ্বাস কিংবা ফুঁক না দেওয়া, পানি পান করার পর দোয়া পড়তে হবে, পানি পান করার শেষ হলে পড়তে হবে আলহামদুলিল্লাহীল্লাজী জা আলাহু আ জবান ফরাতান ওয়ালাম ইয়াজ আলাহু মিলহান উজাজান। চা, কফি কিংবা পানীয় জাতীয় পান করলে পড়বে আল্লাহুম্মা বারিকলানা ফীহী ওয়াজিদনা মিনহু। রাসুল (সা:) পানি সম্পর্কে যে শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো শুধু সুন্নত নয় বরং এর প্রতিটিতে রয়েছে শরীর সুস্থ্য রাখার নিদর্শন। রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘তোমরা পানির পাত্রকে ঢেকে রাখ এবং বাসনগুলোকে উল্টে রাখো’। (মুসলিম শরীফ)

Monday, October 8, 2018

আল্লাহর ওলি মালেক দীনারের ঘটনা

#ঘটনা_টি_পড়ে_দেখুন_জানার_আছে_অনেক_কিছুই।
★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★

"মালেক বিন দীনার ছিলেন ইরাকের বিখ্যাত এক আলেম। একবার তিনি বিশাল এক মাহফিলে ভক্তব্য দিতে দাঁড়াতেই এক শ্রোতা বললেন, আপনার ভক্তব্য শুরু করার আগে একটি প্রশ্নের জবাব দিন।

মালেক বিন দীনার প্রশ্ন করার অনুমতি দিলেন।বয়স্ক শ্রোতা বললেন প্রায় দশ বছর আগেআপনাকে মাতাল অবস্হায় পড়ে থাকতে দেখেছি। আপনি সে অবস্হা থেকে কিভাবে
ফিরে এলেন? এবং ওয়াজ করার জন্য এখানে এলেন ?

মালেক বিন দীনার কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে রইলেন। তারপর বললেন। ঠিক বলেছেন, আমিই সেই ব্যক্তি। শুনুন তাহলে আমার কাহিনী-

এক কদরের রাতে মদের দোকান বন্ধ ছিলো । দোকানীকে অনুরোধ করে এক বোতল মদ
কিনলাম বাসায় খাবো এই শর্তে। বাসায় ঢুকলাম। ঢুকেই দেখি আমার স্ত্রী নামায পড়ছে।
আমি আমারঘরে চলে গেলাম। টেবিলে বোতলটা রাখলাম।আমার তিন বছরের শিশু মেয়েটা দৌড়ে এলো। টেবিলের সাথে ধাক্কা খেলো আর মদের বোতলটি পড়ে ভেঙে গেলো। অবুঝ মেয়েটি খিলখিল করে হাসতে লাগলো।

ভাঙা বোতল ফেলে দিয়ে আমি ঘুমিয়ে গেলাম। সেরাতে আর মদ খাওয়া হলোনা। পরের বছর আবার লাইলাতুল ক্বদর এলো। আমি আবার মদ নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।বোতলটা টেবিলে রাখলাম। হঠাৎ বোতলের দিকে তাকাতেই বুক ভেঙে কান্না এলো। তিন মাস হলো আমার শিশু কন্যাটি মারা গেছে । বোতলটা বাইরে ফেলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। স্বপ্নে দেখছি এক বিরাট সাপ আমায় তাড়া করছে। এতে বড়ো মোটা সাপ আমি জীবনে দেখিনি। আমি ভয়ে দৌড়াচ্ছি। এমন সময় এক দুর্বল বৃদ্ধকে দেখলাম। বৃদ্ধ বলল, আমি খুব দুর্বল এবং ক্ষুধার্ত। এ সাপের সাথে আমি পারবোনা। তুমিএই পাহাড়ের ডানে উঠে যাও। পাহাড়ে উঠেই দেখি দাউদাউ আগুন জ্বলছে। আর পেছনেই এগিয়ে আসছে সাপ।
বৃদ্ধের কথা মতো ডানে ছুটলাম। দেখলাম সুন্দর এক বাগান। বাচ্চারা খেলছে। গেটে দারোয়ান।দারোয়ান বললো, বাচ্চারা দেখতো এ লোকটি কে? একে সাপটা খেয়ে ফেলবে নয়তো আগুনে ফেলে দেবে। দারোয়ানের কথায় বাচ্চারা ছুটে এলো। তার মাঝে আমার মেয়েটাও আছে। মেয়েটা আমায় ডান হাত জড়িয়ে রেখে তার বাম হাতে সাপটা কে থাপ্পর দিলো। অমনি সাপ চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে বললাম, মা তুমি কত ছোট আর এত বড় সাপ তোমায় ভয় পায়? মেয়ে বললো, আমি জান্নাতি মেয়ে, জাহান্নামের সাপ আমাদের ভয় পায়।

বাবা ঐ সাপকে তুমি চিনতে পেরেছো? আমি বললাম না মা। আমার মেয়ে বললো বাবা ওতো তোমার নফস। নফসকে এতো বেশী খাবার দিয়েছো যে সে এমন বড় আর শক্তিশালী হয়েছে। সে তোমাকে জাহান্নাম পর্যন্ত তাড়িয়ে এনেছে। বললাম, পথে এক দুর্বল বৃদ্ধ তোমাকে এখানে আসার পথ বলে দিয়েছে। সে কে? মেয়ে বললো, তাকেও চেনোনি? সে তোমার রুহ। তাকেতো কোনদিন খেতে দাওনি। তাই না খেয়ে দুর্বল হয়ে কোনো মতে বেঁচে আছে। আমার  ঘুম ভেঙে গেলো।

সেইদিন থেকে আমার রূহকে খাদ্য দিয়ে যাচ্ছি আর নফসের খাদ্য একদম বন্ধ করে দিয়েছি। চোখ বুঝলেই নফসের সেই ভয়াল রূপ দেখতে পাই।আর দেখি রূহকে।
আহা কতো দুর্বল হাঁটতে পারেনা।ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন মালিক বিন দীনার ।

তাই আসুন, নিজের নফস কে হেফাজত করি । নয়তো চিরস্থায়ী ঠিকানা হবে জাহান্নাম।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুন....আমিন।
collected
দয়া করে ঘটনাটি শেয়ার করতে ভূলবেন না ।

যে ধরনের মেয়ে বিয়ে করতে বলেছেন মহানবী (সা.)

যে ধরনের মেয়ে বিয়ে করতে বলেছেন মহানবী (সা.)
মুসলমানদের বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। পাত্রী নির্বাচনের শর্ত এবং মৌলিক গুণাবলী বাতিয়ে সতর্ক করেছে প্রতিটি বিবাহযোহগ্য আগ্রহী পুরুষকে। বরপক্ষের প্রতি রাসুলুল্লাহর (সা.) দিকনির্দেশনার প্রতি আমরা তাকালে দেখতে পাব সেখানে তিনি ধর্মপরায়ণ নারী নির্বাচনের পরামর্শ দিয়েছেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন যে, রূপ-সৌন্দর্য, ধন-সম্পদ, বংশমর্যাদা ও ধর্মভীরুতা- সাধারণত এ চার গুণের দিকে লক্ষ করে কোনো নারীকে বিয়ে করা হয়। শ্রোতা! তুমি ধার্মিককে গ্রহণ করে সাফল্যমণ্ডিত হও। আর নিরুৎসাহিত হইও না। (বোখারি, মুসলিম)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) এই হাদিসে স্বাভাবিক অবস্থার প্রতি খেয়াল করে কনের সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ ধর্মপরায়ণতাকে সবশেষে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু পরেই বরের সফলতা ওই গুণটির মধ্যেই নিহিত, তা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়, সবশেষে এ উদ্দেশ্যে উৎসাহব্যঞ্জক আরও একটি বাক্য জুড়ে দিয়েছেন। (শরহে নববি: ৩/২১২)।
আদর্শ গৃহ গড়ার প্রথম সোপান হলো, এ গৃহের জন্য আদর্শময়ী সতী-সাধ্বী স্ত্রী নির্বাচন করা। তাই দাম্পত্য জীবন আরম্ভের শুরুতেই সহধর্মিণীর দ্বীনদারিতা ও ধার্মিকতা দেখে নেয়া একান্ত জরুরি। আল্লাহর রাসূল [সা.] বলেন, এমন সতী-সাধ্বী স্ত্রী বরণ করা উচিত, যে তোমাকে তোমার দ্বীন ও দুনিয়ার বিষয়ে সাহায্য করে; যা সব সম্পদ অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।
রাসূল [সা.] অন্যত্র বলেন, পুণ্যময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসূ নারীকে বিয়ে করো। কেয়ামতে তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে সব আম্বিয়ার কাছে আমি গর্ব করব। (মুসনাদে আহমাদ: ৩/২৪৫)।
রাসূল [সা.] বলেন, সতী স্ত্রী এক সৌভাগ্যের সম্পদ; যাকে তুমি দেখে পছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করে, আর তোমার অবর্তমানে তার ব্যাপারে ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত থাকে। পক্ষান্তরে অসতী স্ত্রী দুর্ভাগ্যের আপদ; যাকে দেখে তুমি অপছন্দ করো এবং যে তোমার মন মুগ্ধ করতে পারে না। যে তোমার ওপর মানুষের হামলা চালায়। আর তোমার অনুপস্থিতিতে তার ও তোমার সম্পদের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হতে পারে না। (সিলসিলা সহিহা ১৮২, ইবনে হিব্বান)।
রাসুলুল্লাহ [সা.] বলেছেন যখন তোমাদের কেউ নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় তখন সে যেন তার এমন কিছু দেখে যা তাকে তার সাথে বিয়েতে উৎসাহিত করে (আবু দাউদ: ২০৮২)। কনেকে একবার দেখে পছন্দ করা গেলে একবার দেখাই বিধান। কোনো কোনো নারীকে একবার দেখে তার সাথে বিয়ের মতো গুরত্বপূর্ণ চুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়া য়ায় না।
এ ক্ষেত্রে তাকে একাধিকবার দেখা বিহিত। ফিকহের ভাষ্য হচ্ছে পাত্রের জন্য বিহিত পাত্রীকে বারবার দেখা এমনকি যদি সে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনবারের বেশিও দেখে- যাতে তার সামগ্রিক বিষয়টি পাত্রের কাছে সুস্পষ্ট প্রতিভাত হয়। (আর-রামলি, নেহায়া: ৬/১৮৬)।
যদি পাত্র পাত্রীকে একবার দেখেই পরিতৃপ্ত হয়ে যায় তবে তার জন্য একবারের অতিরিক্ত দেখা হারাম। কারণ এই দেখা হালাল করা হয়েছে অনিবার্য প্রয়োজনে। সুতরাং এখানে অনিবার্য প্রয়োজন বিবেচ্য (রাদ্দুল মুহতার: ৬/৩৭০)।

Thursday, October 4, 2018

পশু-পাখির ডাক শুনলে যা করবেন

#পশু_পাখির_ডাক_শুনলে_যা_করবেন

মোরগ কুকুর কিংবা গাধা সাধারণত ডাক-চিকিৎকার দিয়ে থাকে। এসবের ডাক-চিৎকার সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত অনেক কথা রয়েছে। কিন্তু এসবের ডাক-চিৎকারে করণীয় কী? এ সম্পর্কে হাদিসের সুস্পষ্ট নির্দেশনাও রয়েছে।

যদি কোনো লোক ভোর, দিন কিংবা রাতে মোরগের ডাক শুনে তবে তাকে আল্লাহর অনুগ্রহ চাইতে হবে। আর যদি গাধার ডাক-চিৎকার কিংবা কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকার শুনে তবে তাকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। এ সম্পর্কে হাদিসে এসেছে-

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে তখন আল্লাহর অনুগ্রহ প্রার্থনা করবে। কেননা মোরগ ফেরেশতাদের দেখতে পায়।
আর যখন গাধার ডাক শুনবে তখন শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। কারণ গাধা শয়তানকে দেখতে পায়।’
(মুসলিম)

> অন্য হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘যখন তোমরা কুকুর ও গাধার চিৎকার শুনতে পাও, তখন সেসব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা কর। কেননা তারা এমন কিছু দেখে থাকে, যা তোমরা দেখতে পাও না।’
(আবু দাউদ,
মিশকাত)

মোরগের ডাকে আল্লাহর অনুগ্রহ চাওয়ার ক্ষেত্রে বলতে হবে-
ﺍَﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺍِﻧِّﻰْ ﺃَﺳْﺌَﻠُﻚَ ﻣِﻦْ ﻓَﻀْﻠِﻚَ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিং ফাদলিকা।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার রহমত কামনা করছি।’

গাধা ও কুকুরের ডাকে আশ্রয় প্রার্থনার সময় বলতে হবে-
ﺍَﻋْﻮْﺫُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥِ ﺍﻟﺮَّﺟِﻴْﻢِ
উচ্চারণ : ‘আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’
অর্থ : ‘আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।’

হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী মোরগের ডাকের অর্থ হলো ফেরেশতা মানুষের জন্য কল্যাণের সুসংবাদ নিয়ে আসে কিংবা জমিনে বিচরণ করে। তাই মোরগের ডাক শুনলে রহমত ও কল্যাণ লাভের প্রার্থনা করা।

পক্ষান্তরে যদি কুকুরের ঘেউ ঘেউ চিৎকার কিংবা গাধার ডাক শোনা যায় তবে বুঝতে হবে শয়তানের বিচরণ সন্নিকটে। তাই শয়তানের কুমন্ত্রণা ও ক্ষতি হেফাজত থাকতে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করা জরুরি।

জমজমের পানির ফজিলত ও খাওয়ার আদব

জমজম মসজিদে হারামের কাছে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ কূপ। পবিত্র কাবা ও এই কূপের মধ্যে দূরত্ব হলো মাত্র ৩৮ গজের। জমজম নবী ইবরাহিম (আ.)-এর ছেলে নবী ইসমাঈল (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত কূপ।

হজ ও ওমরাহ আদায়কারীর জন্য বিশেষভাবে এবং পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য সাধারণভাবে জমজমের পানি পান করা মুস্তাহাব। সহিহ হাদিসে বিধৃত হয়েছে যে নবীজি (সা.) নিজে জমজম থেকে পানি পান করেছেন।
(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫৫৬)

হজরত আবু জর (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, জমজমের পানি বরকতময়, স্বাদ অন্বেষণকারীর খাদ্য।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৭৩)

মুসনাদে তায়ালুসিতে এই হাদিসের একটি বর্ধিত অংশ উদ্ধৃত হয়েছেএবং রোগীর ঔষধ। আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের সঙ্গে পাত্রে ও মশকে করে জমজমের পানি বহন করতেন। তা অসুস্থদের ওপর ছিটিয়ে দিতেন এবং তাদের পান করাতেন। (সুনানে তিরমিজি)।
এ বর্ণনা থেকে এ কথাও জানা যায় যে জমজমের পানি বহন করা জায়েজ। আর যারা জমজম কূপের কাছে নয়, তাদের পান করানো নববী সুন্নত।

জমজম থেকে পানি পানকারী ব্যক্তির জন্য সুন্নত হলো পুরোপুরিভাবে পরিতৃপ্ত হয়ে পান করা। ফকিহগণ জমজমের পানি পানের কিছু আদব উল্লেখ করেছেন, যেমনকিবলামুখী হওয়া, বিসমিল্লাহ বলা, তিন শ্বাসে পান করা, পরিতৃপ্ত হওয়া, শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলা ইত্যাদি। জমজমের পানি ইবাদত মনে করে পান করা উচিত। জমজমের পানি পান করার সময় একটি বড় কাজ হলো দোয়া করা।

জাবির (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, জমজমের পানি যে উদ্দেশ্য নিয়ে পান করবে তা পূরণ হবে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩০৬২)
এ জন্য আমরা পূর্বসূরি মনীষীদের জীবনেতিহাসে দেখতে পাই যে তাঁরা জমজমের পানি পানের সময় বিভিন্ন দোয়া করতেন। এখানে কয়েকজন মনীষীর উদ্ধৃতি দেওয়া হলো

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) বলেন, হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জমজমের পানি পান করেছিলাম স্মৃতিশক্তিতে হাফিজ শামসুদ্দিন জাহাবি (রহ.)-এর স্তরে পৌঁছার নিয়তে। সুয়ুতি বলেন, ইবনে হাজার ওই স্তরে পৌঁছেছিলেন; বরং তাঁর স্মৃতিশক্তি আরো অধিক প্রখর হয়েছিল।
(তাবাকাতুল হুফফাজ : ১/৫২২)

হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) নিজে বলেন, আমার হাদিস শিক্ষাজীবনের প্রথম দিকে একবার আমি জমজমের পানি পান করলাম এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম যে তিনি যেন আমাকে হাদিস মুখস্থ করার ক্ষেত্রে হাফিজ জাহাবি (রহ.)-এর অবস্থা দান করেন। তারপর যখন আমি ২০ বছর পর আবার জমজমের পানি পান করলাম এবং ওই স্তর থেকে বেশি কিছুর জন্য প্রার্থনা করতে মন চাইল, তখন আমি আরো উঁচু স্তরের জন্য দোয়া করলাম। আমি আশাবাদী যে আল্লাহ তা-ও আমাকে দান করবেন।
(মাওয়াহিবুল জালিল : ৩/১১৬)

আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি (রহ.) জমজমের পানি পান করেন এই নিয়তে যে আল্লাহ তাআলা যেন তাঁকে ফিকহশাস্ত্রে ইমাম সিরাজুদ্দিন আল বুলকিনি (রহ.)-এর স্তরে এবং হাদিসশাস্ত্রে হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.)-এর স্তরে পৌঁছে দেন।
প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা ইবনুল আরাবি (রহ.) বলেন, ৪৮৯ হিজরির জিলহজ মাসে আমি মক্কায় অবস্থান করছিলাম। আমি খুব বেশি করে জমজমের পানি পান করতাম। প্রতিবার পানের সময় আমি ইলম ও ঈমানের নিয়ত করতাম। ফলে আল্লাহ তাআলা এর বরকত আমাকে দান করেন এবং আমি যথাসাধ্য ইলম হাসিল করলাম। কিন্তু আমলের নিয়তে জমজমের পানি পান করতে ভুলে গেলাম। হায়! যদি আমলের নিয়তেও পান করতাম, তবে আল্লাহ আমাকে ইলম ও আমল উভয়টির বরকত নসিব করতেন। কিন্তু তা হলো না।
(আহকামুল কোরআন : ৩/৯৮)

আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে জাফর বলেন, হাদিসশাস্ত্রের প্রসিদ্ধ ইমাম ইবনে খুজায়মা (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, এত ইলম আপনি কিভাবে অর্জন করলেন? প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, নবীজি (সা.) ইরশাদ করেছেন, জমজমের পানি যে নিয়তে পান করা হয় তা-ই কবুল হয়। আর আমি যখন জমজমের পানি পান করেছিলাম, তখন আল্লাহর কাছে উপকারী ইলম প্রার্থনা করেছিলাম।
(সিয়ারু আলামিন নুবালা : ১৪/৩৭০)

শায়খ ইয়াহইয়া ইবনে আহমাদ আল আনসারি (রহ.) কোরআন হিফজের নিয়তে জমজমের পানি পান করেন। ফলে তিনি খুবই স্বল্প মেয়াদে কোরআন হিফজ করতে সক্ষম হন।
হাকিম আবু আবদুল্লাহ (রহ.) জমজমের পানি পান করেন উত্কৃষ্ট রচনা সংকলনের নিয়তে। ফলে তিনি ছিলেন স্বীয় যুগের সবচেয়ে ভালো মানের লেখক ও সংকলক।
(ফাতহুল কাদির : ২/৩৯৮-৪০০)

কখনো আলেমরা বড় বড় উদ্দেশ্য সামনে রেখে জমজমের পানি পান করতেন। যেমনহাফিজ ইবনে হাজার (রহ.) বর্ণনা করেন, ইমাম শাফেয়ি (রহ.) তীর নিক্ষেপে পারদর্শিতা অর্জনের নিয়তে জমজমের পানি পান করেন। ফলে প্রতি ১০টি তীরের ৯টিই তিনি লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে দিতে পারতেন। (ফায়জুল কাদির : ২/৫০৭)
হাফিজ সাখাওয়ি (রহ.) ইবনুল জাজারি (রহ.)-এর জীবনালোচনায় লেখেন, তাঁর পিতা ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ৪০ বছর পর্যন্ত কোনো সন্তান লাভ করেননি। এরপর তিনি হজে গেলেন এবং পুণ্যবান সন্তান পাওয়ার নিয়তে জমজমের পানি পান করলেন। পরে এক রাতে সালাতুত তারাবির পর মুহাম্মাদ আল জাজারির জন্ম হয়। আর জ্ঞান-গরিমায়, বিশেষত কিরাতশাস্ত্রে ইবনুল জাজারি (রহ.)-এর যে শীর্ষ অবস্থান ছিল, তা তো বিজ্ঞজনের জানাই আছে। (আল গায়াহ : ১/৫৮)
কোনো কোনো আলেমের ব্যাপারে বর্ণনা পাওয়া যায় যে যখন তিনি জমজমের পানি পান করেন, দোয়া করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনার নবী আমাদের বলে গেছেনজমজমের পানি যে নিয়তে পান করা হয় তা-ই কবুল হয়। ইয়া আল্লাহ! আমি এই জমজমের পানি পান করছি, যেন কিয়ামত দিবসে তৃষ্ণার্ত না হই। (আখবারু মক্কা : ২/৩২)
লেখক : আলোচক, ইকরা টিভি, লন্ডন
______________________________________

জমজমের পানি দাঁড়িয়ে পান করতে হয় কেন?

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এবং সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার পর দিন শেষে আবার ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত গোটা জীবনের সব ধরনের কাজের দিক-নির্দেশনা ইসলামে প্রদত্ত হয়েছে।

ইসলামের কিছু বিধান এসেছে সরাসরি আল্লাহ মহানের পক্ষ থেকে। যাকে আমরা পবিত্র কুরআনের মাঝে পেয়ে থাকি। এছাড়া ইসলামের আরো কিছু বিধান সাব্যস্ত হয়েছে ইসলামের নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর জীবন যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে।
তবে জেনে রাখার বিষয় হলো- রাসূলের (সা.) জীবন যাপন প্রক্রিয়াও মূলত আল্লাহ মহানের নির্দশনায় বাস্তবায়িত হয়েছে।
মুসলিম সমাজে এখন পবিত্র হজের পবিত্র আবহ বিরাজ করছে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ থেকে হজব্রত পালনের উদ্দেশ্যে অনেকেই সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেছেন।
পবিত্র হজ পালনের মৌসুমে কিছু বিষয় বা বস্তু নিয়ে বিশ্বব্যাপি আলোচনা হয়। তার মাঝে জমজমের কূপের পানির বিষয়টি অন্যতম। এমন কোনো হাজি সাহেব পাওয়া যাবে না, যিনি হজ শেষে পবিত্র এই কূপের পানি সঙ্গে করে না নিয়ে আসেন।
জমজম কূপের পানি আল্লাহ মহান প্রদত্ত একটি নেয়া্মত। আমরা জানি, সাধারণত পানি বসে পান করা সুন্নাত। কিন্তু জমজমের পানি দাঁড়িয়ে খাওয়ার বিধান রয়েছে ইসলামে। এটা কেন? এই বিধান কতটুকু কোরআন-হাদিস সম্মত?
সাধারণত বা স্বাভাবিক নিয়মে পানি বসে পান সুন্নাত। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.)-এর হাদিস রয়েছে এবং এ বিষয়টির প্রতি রাসূল (সা.) গুরুত্বারোপও করেছেন।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) দাঁড়ানো অবস্থায় পানি পান করাকে তিরস্কার করেছেন।
(মুসলিম শরীফ ৫১১৩, বাংলা, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত)

এছাড়া হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- তোমাদের কেউ যেন দাঁড়িয়ে পান না করে। (মুসলিম শরীফ ৫১১৮, বাংলা, ইসলামিক ফাউণ্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত)
সুতরাং পানি বসে খাওয়া সুন্নাত এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ বা সমস্যা নেই।

এখন প্রশ্ন হলো জমজমরে কূপের পানি বসে পান করতে হবে নাকি দাঁড়িয়ে পান করতে হবে- এ ব্যাপারে ইসলামি দিক-নির্দেশনা কী?
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলকে (সা.) জমজমের পানি পান করিয়েছি। তিনি তা দাঁড়িয়ে পান করেছেন।
[বুখারি ১৬৩৭, ৫৬১৭,
মুসলিম ২০২৭,
তিরমিযি ১৮৮২]

এছাড়া রাসূল (সা.) থেকে আরো আলোচনা পাওয়া যায়। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন- জমজমের পানি যে জন্য পান করা হয়ে থাকে; তা সে জন্যই হবে। অর্থ্যাৎ জমজমের পানি পান যে উদ্দেশ্যে পান করা হবে তাই পূর্ণ হতে পারে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩০৬২;
মুসনাদে আহমাদ, ১৪৮৪৯)

Wednesday, October 3, 2018

সিদ্ধান্ত সাহায্য নিতে যে নামাজ পড়বেন

প্রতিনিয়ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব। তাই নিতে যাওয়া সিদ্ধান্তটি সঠিক না বেঠিক- এটা মানুষকে ভাবিয়ে তোলে। সিদ্ধান্তের প্রকারভেদে স্বস্তি ও অস্বস্তি হয়। আবার সিদ্ধান্তকৃত কাজটি করতে গিয়ে মানুষ সহজতা ও সাহায্যও কামনা করে। চাই কাজটি গৌণ হোক কিংবা বৃহৎ। এটি পৃথিবীর মানুষের নিত্যনৈমত্তিক নিয়ম।

মানুষ কীভাবে সিদ্ধান্ত নেবে ও কোন সিদ্ধান্ত তার জন্য কল্যাণকর হবে এবং কীভাবে বিষয় নির্বাচন করবে- এ ব্যাপারে ইসলামের সুন্দর দিক নির্দেশনা রয়েছে। যেন মানুষ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সহজতা ও সাহায্য লাভে ধন্য হয়। এ জন্য রাসুল (সা.) ‘ইস্তেখারা’র নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন।

ইস্তেখারা বিষয়টি কী এবং ইস্তেখারার নামাজ পড়ার পদ্ধতি কী- এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।

প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ ইবনে হাজার (রহ.) হাদিসটির ব্যাখ্যায় বলেন, ইস্তিখারা করা মানে কোনো বিষয় বাছাই ও নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র সাহায্য চাওয়া। উদ্দেশ্য হচ্ছে, যে ব্যক্তিকে দুটো বিষয়ের মধ্যে একটি বিষয় বাছাই করে নিতে হবে, সে যেন উত্তমটি বাছাই করে নিতে পারে, সে প্রার্থনা করা।

ইস্তিখারার নামাযের দোয়া জাবের বিন আব্দুল্লাহ্‌ আল-সুলামি (রা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তার সাহাবিদের সব বিষয়ে ইস্তিখারা করার শিক্ষা দিতেন; যেভাবে তিনি তাদের কোরআনের সুরা শিক্ষা দিতেন।

তিনি বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যখন কোনো কাজের উদ্যোগ নেয়, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে। অতঃপর বলে,
 اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَخِيرُكَ بِعِلمِكَ وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ، وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ، فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ وَأَنْتَ عَلاَّمُ الغُيُوبِ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّ هَذَا الأَمْرَ ثم تسميه بعينه خَيْرا لِي في عَاجِلِ أَمْرِي وَآجِلِهِ قال أو فِي دِينِي وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي فَاقْدُرْهُ لي وَيَسِّرْهُ لي ثُمَّ بَارِكْ لي فِيهِ، اللهم وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنَّه شَرٌّ لي في ديني وَمَعَاشِي وَعَاقِبَةِ أَمْرِي أَوْ قَالَ في عَاجِلِ أمري وَآجِلِهِ، فَاصْرِفْنِي عَنْهُ [واصْرِفْهُ عَنِّى]، وَاقْدُرْ لِي الخَيْرَ حَيْثُ كَانَ ثُمَّ رضِّنِي به،
অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার জ্ঞানের সাহায্যে আপনার কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আমি আপনার শক্তির সাহায্যে শক্তি ও আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি। কেননা আপনিই ক্ষমতাবান; আমি ক্ষমতা রাখি না। আপনি জ্ঞান রাখেন, আমার জ্ঞান নেই এবং আপনি অদৃশ্য বিষয়ে সম্পূর্ণ পরিজ্ঞাত।

হে আল্লাহ! আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ (নিজের প্রয়োজনের নামোল্লেখ করবে অথবা মনে মনে স্মরণ করবে) আমার বর্তমান ও ভবিষ্যত জীবনের জন্য (কিংবা বলবে আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে) কল্যাণকর হলে, আপনি তা আমার জন্য নির্ধারণ করে দিন। সেটা আমার জন্য সহজ করে দিন এবং তাতে বরকত দিন।

হে আল্লাহ্‌! আর যদি আপনার জ্ঞানে আমার এ কাজ আমার দ্বীনদারি, জীবন-জীবিকা ও কর্মের পরিণামে (কিংবা বলবে, আমার বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য) অকল্যাণকর হয়, তবে আপনি আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে দিন এবং সেটাকেও আমার থেকে ফিরিয়ে রাখুন। আমার জন্য সর্বক্ষেত্রে কল্যাণ নির্ধারণ করে রাখুন এবং আমাকে সেটার প্রতি সন্তুষ্ট করে দিন।’

(সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৬৮৪১, তিরমিজি, হাদিস নং : ৬৪৮)।

ইস্তিখারার দোয়ার আগে নামাজ পড়ার রহস্য হল, ইস্তিখারার উদ্দেশ্য হচ্ছে, একসঙ্গে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ লাভ করা। আর এটি পেতে হলে রাজাধিরাজ মহান আল্লাহর দরজায় কড়া নাড়া প্রয়োজন। আল্লাহ্‌র প্রতি সম্মান প্রদর্শন, তার স্তুতি জ্ঞাপন ও তার কাছে ধর্ণা দেয়ার ক্ষেত্রে নামাযের চেয়ে কার্যকর ও সফল আর কিছু নেই। মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহকে বলা আপনি আমার জন্য সেটা সহজ করে দেন।

মোদ্দাকথা, যেকোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে আল্লাহর সাহায্য পেতে এবং কল্যাণকর কাজ নির্বাচন করতে ইস্তেখারার নামাজ পড়তে হয়। এ নামাজ পড়ার নিয়ম হলো, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে উল্লেখিত দোয়া পড়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য ও সহজতা প্রার্থনা করা।

Tuesday, October 2, 2018

সৌদি_রাজ_পরিবারের_ইতিহাস

সৌদি_রাজ_পরিবারের_ইতিহাসঃ

সৌদি আরব হলো কোনো ব্যক্তির নামে
প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম দেশ।
অন্য কোনো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ
কোনো ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রিয়াদের নিকটস্থ দিরিয়া নামের একটি
কৃষিবসতির প্রধান ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ।
এই উচ্চাভিলাষী মরুযোদ্ধা ১৭৪৪ সালে
আরবের বিখ্যাত ধর্মীয় নেতা মুহাম্মদ বিন
ওয়াহাব [ওয়াহাবী মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা]-
এর সাথে মৈত্রী চুক্তি করে “দিরিয়া
আমিরাত” গঠন করেন। তুরস্কের উসমানিয়া
খিলাফতের বিরুদ্ধে শিরক-বিদাত পালনের
অভিযোগে এই দুজন ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু
করেন। ওই “দিরিয়া আমিরাত”-ই বিশ্বের
প্রথম সৌদি রাজ্য/আমিরাত। মুহাম্মদ বিন
সৌদ তার পুত্র আবদুল আজিজের সাথে
মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মেয়ের বিয়ে দেন।
এভাবেই সৌদ পরিবার ও ওয়াহাবী মতবাদের
মিলনযাত্রা শুরু হয়। ১৭৬৫ সালে মুহাম্মদ বিন
সৌদ-এর মৃত্যু হলে তার ছেলে আবদুল আজিজ
দিরিয়ায় ক্ষমতাসীন হয়।
এই আবদুল আজিজ তত্কালীন বিশ্বের
সাম্রাজ্যবাদী মোড়ল ব্রিটেনের সাথে হাত
মিলিয়ে তুরস্কের খলিফাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
চালাতে থাকে। শ্বশুর ইবনে ওয়াহাবের
ধর্মীয় মতবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে
তথাকথিত শিরক-বিদাত উচ্ছেদের নামে
ব্রিটিশদের সাথে তুর্কি খিলাফত ধ্বংসের
কাজে লিপ্ত হয় আবদুল আজিজ। ১৭৯২ সালে
মুহাম্মদ বিন ওয়াহাবের মৃত্যু হয়। ১৮০১/২
সালে আবদুল আজিজ তুর্কি খিলাফতের কাছ
থেকে ইরাক দখল করে হজরত আলী (রা.) ও
হজরত হুসেন (রা.)-এর মাজার শরিফ ভেঙে
ফেলে। এর প্রেক্ষিতে ১৮০৩ সালে একজন
শিয়া মুসলিম আজিজকে দিরিয়ায় আসরের
নামাজরত অবস্থায় হত্যা করে।
এর পর আবদুল আজিজের ছেলে সৌদ বিন
আবদুল আজিজ ক্ষমতায় এসে তুর্কিদের
পরাজিত করে ১৮০৩ সালে মক্কা ও ১৮০৪
সালে মদিনা দখল করে নেয়। দুই পবিত্র নগরী
দখল করে তারা ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায়।
তারা মক্কা-মদিনার বহু মুসলিমকে হত্যা
করে। সবই করা হয় সেই শিরক-বিদাত
উচ্ছেদের নামে! ওয়াহাবী মতবাদের ধর্মীয়
শুদ্ধি অভিযানের অজুহাতে তারা বহু
সাহাবীর কবরস্থান ধ্বংস করে। এমনকি খোদ
মহানবী (সা.)-এর পবিত্র কবরে
ছায়াদানকারী মিম্বরগুলোও এরা ভেঙে
ফেলে! এসবই চলে ব্রিটিশদের অস্ত্র ও অর্থ
সহায়তা নিয়ে।
খলিফা ২য় মাহমুদ
ইরাক-মক্কা-মদিনায় সৌদিদের এই
ধ্বংসযজ্ঞে তত্কালীন তুর্কি খলিফাগণ
ভীষণ রুষ্ট হন। ১৮০৮ সালে খলিফা ২য় মাহমুদ
ক্ষমতাসীন হয়ে সৌদিদের দমনে শক্তিশালী
সেনাদল পাঠান। ষড়যন্ত্রকারী ব্রিটিশরা
এবার আর সৌদিদের বাঁচাতে পারেনি। ১৮১৮
সালে সৌদের ছেলে, তত্কালীন সৌদি শাসক
আবদুল্লাহ বিন সৌদ তুর্কিদের কাছে
আত্মসমর্পণ করে।
আবদুল্লাহ বিন সৌদকে বন্দী করে
ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই পবিত্র নগরী
ও বহু মসজিদ ধ্বংসের শাস্তি হিসেবে
খলিফা ২য় মাহমুদ-এর নির্দেশে আবদুল্লাহ
বিন সৌদ ও তার দুই ছেলেকে ইস্তাম্বুলে
প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ করা হয়।
এভাবেই প্রথম সৌদি আমিরাত (১৭৪৪-১৮১৮)-
এর পতন হয় ও পবিত্র মক্কা-মদিনাসহ আরবে
উসমানিয়া খিলাফতের শাসনকর্তৃত্ব ফিরে
আসে।
সৌদ পরিবারের দিরিয়ার আখড়া ১৮১৮
সালে ধ্বংস হয়ে গেলে প্রথম সৌদি
আমিরাতের শেষ আমীর আবদুল্লাহর তুর্কি
নামের এক পুত্র মরুভূমিতে পালিয়ে যায়। এই
তুর্কি বিন আবদুল্লাহ পালিয়ে বনু তামিম
গোত্রে আশ্রয় নেয়। পরে ১৮২১ সালে সে
আত্মগোপন থেকে প্রকাশ্যে এসে উসমানিয়া
খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
১৮২৪ সালে তুর্কি বিন আবদুল্লাহ
উসমানিয়াদের নিয়োজিত মিশরীয়দের
হটিয়ে দিরিয়া ও রিয়াদ দখল করে নেয়।
রিয়াদকে রাজধানী করে গঠিত এই “নজদ
আমিরাত” ইতিহাসে দ্বিতীয় সৌদি রাজ্য
নামে পরিচিত। দ্বিতীয় সৌদি রাজ্যটি
অবশ্য খুব কম এলাকাই দখলে নিতে
পেরেছিল। এটি বেশিদিন টিকেওনি। এই
নজদ আমিরাতের প্রধানকে “ইমাম” বলা হত
এবং ওয়াহাবী মতাবলম্বীরাই ধর্মীয় বিষয়ে
কর্তৃত্বশীল ছিল।
তবে এবার সৌদ পরিবারে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু
হয়। কথিত ইমাম তুর্কি বিন আবদুল্লাহকে তাঁর
এক জ্ঞাতি ভাই মুশারি বিন আবদুর রহমান
বিদ্রোহ করে ১৮৩৪ সালে হত্যা করে। তবে
ক্ষমতা পায়নি মুশারি। তুর্কির ছেলে ফয়সাল
এরপর নজদ আমিরাতের ইমাম হয়।
আবদুর রহমান বিন ফয়সাল
সৌদ পরিবারের অন্তর্দ্বন্দ্ব চলতেই থাকে।
অবশেষে ১৮৯১ সালে মুলায়দার যুদ্ধে
উসমানিয়াদের অনুগত রাশিদী বাহিনীর
হাতে দ্বিতীয় সৌদি আমিরাতের পতন ঘটে।
সৌদিদের শেষ ইমাম আবদুর রহমান বিন
ফয়সাল তার সাঙ্গোপাঙ্গসহ পালিয়ে যায়।
বিশাল বালুকাময় রুব আল খালি মরুভূমি পাড়ি
দিয়ে আবদুর রহমান তার পুত্র আবদুল
আজিজকে নিয়ে দক্ষিণপূর্বে মুররা বেদুইন
গোত্রে গিয়ে পালায়। সেখান থেকে তারা
বাহরাইনের রাজপরিবারের কাছে গিয়ে
কিছুদিন আশ্রয় নেয়। তার পর ১৮৯৩ সালে
আবদুর রহমান ও তার পুত্র শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ
দালাল কুয়েতি আল-সাবাহ রাজপরিবারের
আশ্রয় পায়।
কুয়েতি রাজপরিবারের সহায়তায় সৌদিরা
উসমানিয়া খিলাফতের কর্তৃত্বাধীন নজদে
একের পর এক চোরাগুপ্তা হামলা চালাতে
থাকে। ওয়াহাবী মতবাদের আলোকে পরিশুদ্ধ
ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে উসমানিয়া
খিলাফতের বিরুদ্ধে এসব হামলা চলতে
থাকে। কিন্তু এসব হামলায় সৌদিরা তেমন
কোনো বড় সাফল্য পায়নি। ১৯০১ সালে
সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে আবদুর
রহমান তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধারের সব
উদ্যম হারায়।
১৮৯৯ সালের জানুয়ারিতে কুয়েতের আমির
মুবারক আল সাবাহ ব্রিটেনের সাথে একটি
প্রতিরক্ষা চুক্তি করে কুয়েতকে ব্রিটেনের
করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত করেন।
তুরস্কের উসমানিয়া খিলাফতের প্রভাবের
বিরুদ্ধেই কুয়েত এই চুক্তি করে ব্রিটেনের
সাথে।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ – বর্তমান
সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা
সৌদ পরিবারের লড়াইটিও ছিল উসমানিয়া
খিলাফতের বিরুদ্ধেই। তাই ১৯০১ সালে
সারিফের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে পিতা আবদুর
রহমান হতোদ্যম হলেও পুত্র আবদুল আজিজ
ইবনে সৌদ আবারও আশার আলো দেখে।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ ১৯০১ সালের
শেষের দিকে কুয়েতের আমির মুবারকের
কাছে উসমানিয়াদের নিয়ন্ত্রিত রিয়াদ
আক্রমণের জন্য সাহায্য চায়। ব্রিটিশ
মদদপুষ্ট কুয়েত সানন্দে ইবনে সৌদকে ঘোড়া
ও অস্ত্র সরবরাহ করে।
১৯০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইবনে সৌদ
সৈন্যসহ রিয়াদের মাসমাক দুর্গ আক্রমণ
করে। মাসমাকের উসমানিয়া অনুগত রাশিদী
প্রশাসক ইবনে আজলানকে হত্যা করে
সৌদিরা। ইবনে সৌদ যুদ্ধজয় শেষে ইবনে
আজলানের ছিন্নমস্তকটি নিয়ে দুর্গশীর্ষে
আসে এবং নিচে সমবেত উদ্বিগ্ন
রিয়াদবাসীর দিকে ছুঁড়ে মারে ।[1]
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের রিয়াদ আমিরাত
প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইতিহাসে তৃতীয় সৌদি
রাজ্যের সূচনা হয়।
এর পর সৌদিরা একে একে রাশিদীদের
নজদের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে
থাকে। ১৯০৭ সালের মধ্যে সৌদিরা নজদের
বিরাট এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
William Henry Irvine Shakespear
১৯০৯ সালে ব্রিটিশরা সামরিক অফিসার
William Henry Irvine Shakespear-কে কুয়েতে
নিয়োগ দিলে সৌদ পরিবার আরো
শক্তিশালী হয়ে উঠে। শেক্সপিয়ারকে ইবনে
সৌদ সামরিক উপদেষ্টা বানিয়ে নেয়।[2]
১৯১৩ সালে সৌদিরা উসমানিয়া সৈন্যদের
কাছ থেকে পূর্ব আরবের গুরুত্বপূর্ণ মরুদ্যান
হাসা শহর দখল করে নেয়। এর পর পার্শ্ববর্তী
কাতিফ শহরও সৌদিরা দখলে নেয়।
পরের বছর ১৯১৪ সালে বিশ্বজুড়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধ
শুরু হয়। ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার মিত্রশক্তি
জার্মানি-উসমানিয়া খিলাফতের বিরুদ্ধে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়। রিয়াদে ব্রিটিশরা
শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে সৌদিদের সাথে
উসমানিয়া অনুগত রাশিদীদের যুদ্ধ লাগায়। [3]
১৯১৫ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত এই যুদ্ধে
রাশিদীরা জয়ী হয় ও শেক্সপিয়ারকে হত্যা
করে। রাশিদীরা শেক্সপিয়ারের শিরশ্ছেদ
করে ও তার হেলমেট উসমানিয়াদের কাছে
হস্তান্তর করে। উসমানিয়ারা সৌদিদের
সাথে ব্রিটিশদের সম্পর্কের প্রমাণস্বরূপ
শেক্সপিয়ারের হেলমেট মদিনার প্রধান
ফটকে ঝুলিয়ে দেখায়।
শেক্সপিয়ারকে হারিয়ে বিপর্যস্ত ইবনে
সৌদ ১৯১৫ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশদের
সাথে দারিন চুক্তি স্বাক্ষর করে।
ব্রিটিশদের পক্ষে ব্রিটেনের মধ্যপ্রাচ্য
প্রধান মেজর জেনারেল স্যার পার্সি কক্স
ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি
মোতাবেক সৌদি রাজত্ব ব্রিটিশদের
করদরাজ্য (Protectorate)-এ পরিণত হয়। [4]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেন-ফ্রান্স-রাশিয়ার
মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে জার্মান-উসমানিয়া
খিলাফতের দুর্বল অবস্থা ও আল-সৌদ
পরিবারের সাথে ব্রিটিশদের সখ্য দেখে
চিন্তিত হয়ে ওঠেন মক্কার উসমানিয়া
সমর্থিত শাসক হুসাইন বিন আলী।
১৯১৫ সালের ১৪ জুলাই থেকে হুসাইন মিশরের
ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার হেনরি
ম্যাকম্যাহনের গোপনে পত্র যোগাযোগ শুরু
করেন। ৩০ জানুয়ারি ১৯১৬ পর্যন্ত এই পত্র
আদান-প্রদান চলতে থাকে। উসমানিয়া
খিলাফতের অন্তর্ভুক্ত বিশাল আরব ভূ-খণ্ডের
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা মতবিনিময়
করে। [5]
ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মদদে মক্কার শাসক
সেই হুসাইন বিন আলী উসমানিয়াদের
বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ তৈরি করে। ব্রিটিশ
সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্সের প্রত্যক্ষ
পরিচালনায় বিশ্বাসঘাতক হুসাইন মিডল-
ইস্টার্ন ফ্রন্টে উসমানিয়াদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে
শুরু করলে বহু উসমানিয়া সৈন্য বন্দী হয় ও
অবশেষে উসমানিয়ারা ১ম বিশ্বযুদ্ধে
পরাজিত হয়।
ব্রিটিশ সামরিক অফিসার টি.ই. লরেন্স
– আরববিশ্বে আরব জাতীয়তাবাদের
স্রষ্টা – হলিউডের বিখ্যাত “Lawrence
of Arabia” (১৯৬২) মুভিটি একে নিয়েই
নির্মিত
১৩০০ বছর পর মধ্যপ্রাচ্য মুসলিম খিলাফতের
হাতছাড়া হয়ে যায়।
পুরস্কার হিসেবে ব্রিটিশরা ১ম বিশ্বযুদ্ধের
পর হুসাইন বিন আলীর দ্বিতীয় ছেলে
আব্দুল্লাহকে জর্ডানের রাজত্ব ও তৃতীয়
ছেলে ফয়সালকে ইরাকের রাজত্ব দেয়।
হুসাইনকে রাখা হয় হেজাজ (পবিত্র মক্কা-
মদিনা ও তাবুক অঞ্চল)-এর শাসক হিসেবে।
হুসাইন বিন আলী
এভাবে ১ম বিশ্বযুদ্ধ আল-সৌদ পরিবারকে
কিছুটা বেকায়দায় ফেলে। কেননা
ব্রিটিশদের লেজুরবৃত্তির ক্ষেত্রে তাদের
প্রতিপক্ষ হুসাইন পরিবার এগিয়ে যায় এবং
যুদ্ধ শেষে হুসাইন ও তার দুই ছেলে মিলে তিন
দেশের রাজত্ব পায়। তবে নজদ (রিয়াদ ও
তদসংলগ্ন অঞ্চল)-এর শাসক সৌদিরাই থেকে
যায়।
দারিন চুক্তির আওতায় আবদুল আজিজ ইবনে
সৌদ ব্রিটিশদের কাছ থেকে বহু অস্ত্র ও
মাসে ৫,০০০ পাউন্ড ভাতা (দালালির
পুরস্কার) পেতে থাকে।
[6]
যুদ্ধের পর ব্রিটিশরা ইবনে সৌদকে ১ম
বিশ্বযুদ্ধের উদ্বৃত্ত বিপুল গোলাবারুদ দিয়ে
দেয়। ওই ব্রিটিশ অস্ত্র ও গোলাবারুদের
সম্ভার নিয়ে সৌদিরা ক্রমধ্বংসমান
উসমানিয়া খিলাফতের অনুগত রাশিদীদের
ওপর দক্ষিণ-পশ্চিম আরব অঞ্চলে আক্রমণ শুরু
করে। ১৯২০ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত লড়ে
রাশিদীরা শেষ পর্যন্ত সৌদিদের হাতে
পুরোপুরি পরাজিত হয়। ফলে আরবে আল-সৌদ
পরিবার নিয়ন্ত্রিত ভূ-খণ্ডের পরিমাণ দ্বিগুণ
হয়ে ওঠে। ইরাকে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত
Percy Cox-এর মধ্যস্থতায় ১৯২২ সালের ২
ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত Uqair Protocol-এর
আওতায় ওই বিশাল অঞ্চলে সৌদি রাজত্ব
স্বীকৃতি লাভ করে। [7]
এ-সময় পর্যন্ত আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ
কখনোই ব্রিটিশ অনুগত হেজাজের শাসক
হুসাইনের সাথে সংঘাতে জড়ায়নি।
১৯২৪ সালের ৩ মার্চ আরেক ব্রিটিশ দালাল
মুস্তাফা কামাল পাশা তুরস্কে অফিসিয়ালি
খিলাফত বিলুপ্ত করে। সারা বিশ্বের
মুসলিমদের সাথে মক্কার হুসাইন বিন আলীও
মহানবী (সা.) আমল থেকে ১৩০০ বছর পর্যন্ত
চলমান মুসলিমদের রাষ্ট্র খিলাফতের পতনে
ব্যথিত হন। পৃথিবী থেকে খিলাফত মুছে
গেছে, এটা হুসাইনের চেতনায় আঘাত করে।
ব্রিটিশদের ক্ষিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা
সত্ত্বেও ৫ মার্চ হুসাইন নিজেকে মুসলিমদের
খলিফা ঘোষণা করেন।
ব্যস, এ-সুযোগটিই কাজে লাগায় খিলাফতের
দীর্ঘদিনের শত্রু আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ।
ব্রিটিশরা স্বাভাবিকভাবেই হুসাইনের
নিজেকে খলিফা ঘোষণা করা মেনে নেয়নি
এবং হেজাজের শাসক হিসেবে হুসাইনের
ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।
আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ কালবিলম্ব না
করে হেজাজ আক্রমণ করে এবং ১৯২৫ সালের
শেষ নাগাদ পুরো হেজাজ দখলে নিয়ে নেয়।
১৯২৬ সালের ৮ জানুয়ারি আবদুল আজিজ
ইবনে সৌদ মক্কা-মদিনা-জেদ্দার গোত্রীয়
নেতাদের সমর্থনে নিজেকে হেজাজের
“সুলতান” ঘোষণা করে। ১৯২৭ সালের ২৭
জানুয়ারি ইবনে সৌদ আগের নজদ ও বর্তমান
হেজাজ মিলিয়ে Kingdom of Nejd and Hejaz
ঘোষণা করে। ৪ মাস পর সেই বছরের ২৭ মে
জেদ্দা চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা Kingdom
of Nejd and Hejaz-কে স্বাধীন হিসেবে
স্বীকৃতি প্রদান করে। [8]
নতুন জেদ্দা চুক্তি, ১৯২৭-এর মাধ্যমে ব্রিটিশ-
সৌদের “Protectorate” স্ট্যাটাসের দারিন
চুক্তি, ১৯১৫-এর সমাপ্তি ঘটে।
পরবর্তী ৫ বছর আবদুল আজিজ ইবনে সৌদ তার
দুই রাজত্বকে আলাদা রেখেই শাসন করে।
অবশেষে ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ইবনে
সৌদ তার দুই রাজত্বকে একত্রিত করে তার
নিজের ও বংশের পদবি অনুসারে দেশের নাম
“Kingdom of Saudi Arabia” (আরবি: ﺍﻟﻤﻤﻠﻜﺔ
ﺍﻟﻌﺮﺑﻴﺔ ﺍﻟﺴﻌﻮﺩﻳﺔ al-Mamlakah al-‘Arabiyyah as-
Su‘ūdiyyah) ঘোষণা করে।
এভাবেই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির
উসমানিয়া খিলাফতবিরোধী নীতির প্রকাশ্য
সমর্থক হিসেবে, পদে পদে ব্রিটিশদের মদদ
নিয়ে, দালাল আল-সৌদ পরিবার ১৯৩২ সাল
থেকে Kingdom of Saudi Arabia নামে
মুসলিমদের পবিত্র ভূমি দখলে রেখে শাসন
করে যাচ্ছে।
১. মিশরের মুরসি সরকারের পতনের পর সৌদি
সরকারের ভূমিকায় মুসলিম উম্মাহর মধ্যে
ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এই দালাল
রাজপরিবারের ইতিহাস তাই মুসলিম উম্মাহর
জেনে রাখা প্রয়োজন।
২. সৌদ পরিবার মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের
প্রতীক উসমানিয়া খিলাফত ভাঙতে
ওয়াহাবী মতবাদকে ব্যবহার করেছিল। আর
সৌদ পরিবার জেনে-বুঝে দালালি করেছে
তত্কালীন বিশ্বমোড়ল ও খিলাফতের শত্রু
ব্রিটেনের।
৩. মাজারকেন্দ্রিক শিরকের চর্চা আর কবর
জিয়ারত এক কথা নয়। মাজারকেন্দ্রিক শিরক
পরিত্যাজ্য, কিন্তু কবর জিয়ারত একটি
প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ।
৪. এই নোটে বহু বই থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে
– তবে তথ্যগুলো এতই ব্যাপকভাবে স্বীকৃত
যে, কম-বেশি সব তথ্যই Wikipedia-য় আছে। এমন
কি, সৌদি দূতাবাসের ওয়েব সাইটেও আছে
[অবশ্যই ব্রিটিশদের দালালির বিষয়টি বাদ
দিয়ে][9]
৫. যারা সৌদি আরবের ইতিহাস
সামগ্রিকভাবে একটি বই থেকেই জানতে
চান, তারা Cambridge University Press থেকে
২০০২ সালে প্রকাশিত Madawi al-Rasheed-এর
লেখা A History of Saudi Arabia বইটি পড়তে
পারেন।
৬. প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সিন্দি
রচিত ২২ পৃষ্ঠার নিবন্ধ/বুকলেট “The Direct
Instruments of Western Control over the Arabs:
The Shining Example of the House of Saud” এ-
বিষয়ে একটি অনবদ্য রচনা।
তথ্যসূত্র
1. ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Battle_of_Riyadh_
(1902)
2. ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/
William_Henry_Irvine_Shakespear
3. ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/
Battle_of_Jarrab
4. ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Treaty_of_Darin
5. ↑ https://en.wikipedia.org/wiki/Hussein-
McMahon_Correspondence
6. ↑ Abdullah Mohammad Sindi, “The Direct
Instruments of Western Control over the Arabs:
The Shining Example of the House of Saud”
7. ↑ http://en.wikipedia.org/wiki/
Uqair_Protocol_of_1922
8. ↑ http://en.wikipedia.org/wiki/Treaty_of_Jeddah_
(1927)#1927
9. ↑ http://www.saudiembassy.net/about/country-
information/history.aspx
বহিঃসংযোগ
সৌদিদের ভণ্ডামি: https://
www.facebook.com/meghnawa/
posts/218599681623127
A History of Saudi Arabia(লেখক Madawi al-
Rasheed) DOWNLOAD
প্রফেসর ড. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ সিন্দি রচিত
“The Direct Instruments of Western Control over
the Arabs: The Shining Example of the House of
Saud”: DOWNLOAD
aurnabarc.wordpress.com
Retrieved from " http://www.sunnipediabd.com/
mediawiki/index.php?
title=সৌদি_রাজপরিবারের_ইতিহাস&oldid=5987 "
Category:
ইতিহাস

Friday, September 28, 2018

দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরিফের পীর জামেয়া ও আঞ্জুমানের প্রতিস্টাতা আওলাদে রাসুল, কুতুবে জামান, হাফেজ ক্বারি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ ) এবং উনার আওলাদ গনের ঐতিহাসিক মাইজভান্ডার দরবার জিয়ারত.........

দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরিফের পীর জামেয়া ও আঞ্জুমানের প্রতিস্টাতা আওলাদে রাসুল, কুতুবে জামান, হাফেজ ক্বারি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ ) এবং উনার আওলাদ গনের ঐতিহাসিক মাইজভান্ডার দরবার জিয়ারত.........

হযরত গাউছুল আজম আহম্মদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী ওফাত প্রাপ্ত হন ১৯০৬ সালে ও হযরত গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী ওফাত প্রাপ্ত হন ১৯৩৭ সালে।
জামেয়া এবং আঞ্জুমানের প্রতিস্টাতা আওলাদে রাসুল, কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ ) বাংলাদেশের বার আউলিয়া পুন্যভুমি চট্টগ্রামে আসেন ১৯৪২ সালে। তৎকালীন দৈইনিক আজাদির প্রতিস্টাতা আলহাজ্ব আব্দুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের আমন্ত্রনে। দ্বীন ও তরিকতের প্রচার প্রসার এবং মানুষের আত্নিক উন্নয়ন সাধনে ব্রতি হযরত ছিরিকোটি (রহঃ ) ছিলেন সদা নিবেদিত প্রান।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের শহরস্থ বাসা -অফিস কুহিনুর ইলেক্ট্রনিক এর দুতলায় ছিল হযরত ছিরিকোটির আস্তানা ও খানকা শরিফ। এখান থেকে তিনি পরিক্ষল্পনা করেন এই দেশের পবিত্র মাটিতে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিস্টান গড়ে তোলার। তখন এখানে যারা আসতেন তাদের মধ্যে রাংগুনিয়ার বুড়ো মওলানা সামসুদ্দিন আহমদ চাটগামি ও আন্দরকিল্লা বাসি শেখ বজলুর রহমান। এই দুই পুরুষ জানান  শাহেন শাহ ছিরিকোট আঞ্জুমান -এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া  দ্বীনি সংঘটন করার পর থেকে একটা দ্বীনি প্রতিস্টান গড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেন।
এসময় তিনি স্বপ্নে আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর থেকে মাইজভাণ্ডার দরবার জিয়ারতের ইশারা পান, এবং তার মহান মিশনের সাফল্যের ইংগিত লাভ করেন।
স্বপ্নে ইশারা লাভের পর হযরত ছিরিকোটি কাল বিলম্ব না করে তার সম্মানিত মুরিদদের নিয়ে ভান্ডার শরিফে যাত্রা করেন। এ সময় তাদের সাথে উপরুক্ত মুরিদরাও ছিলেন।
তাদের ভাস্য মতে নাজিরহাট গিয়েই দরবারের রাস্তারমাথায় যেতেই  হযরত ছিরিকোটি গাড়ি থামিয়ে সবাইকে নেমে যেতে বলেন, সবাই নেমে পরেন। তখন হুজুর কেবলা বলেন সবাই জুতা খুলে ফেলুন। উভয় বুজুর্গ যে সামনে দাড়িয়ে আছেন।
পায়ে হেটে চলুন। উল্লেখ্য নাজিরহাট থেকে দরবার পর্যন্ত তারা পায়ে হেটে যান। এক জ্ঞানী আর এক জ্ঞানী কে চিনেন, এক বুজুর্গ আর এক বুজুর্গ কে চিনেন। সম্মান দেন এবং সম্মান নিতে যানেন।
একবার ছিরিকোটি হুজুরের এক মুরিদ উনাকে বলেন মাইজভাণ্ডার সিলসিলার মুরিদরা গান বাদ্য সহকারে মজলিশ করে এ বিষয়ে আপনি কি বলেন??  উত্তরে তিনি বলেন দেখ তিনি এই জামানার বাদশাহ আউলিয়া, হুকুমত তাহারই আমি কি বলিতে পারি??
অন্য এক মুরিদের মাইজভাণ্ডার বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন খবরদার মাইজভাণ্ডার সমর্পকে কিছু বল না বেয়াদবি হয়ে যাবে।
এখানে মহান আল্লার ওলিগন থাকেন।
হযরত ছিরিকোটি (রহঃ ) ঐ দিন
মাইজভাণ্ডার জিয়ারতের মাধ্যমে যে মর্যাদাময় সুসমর্পকের সুচনা করেন আল্লাহতায়ালার কি শান সেই সমর্পক বংশ পরম্পরায় এখন ও অব্যাহত আছে।
হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটির সুযোগ্য পুত্র মাদারজাত অলি গাউসে জামান, সুলতানুল আউলিয়া আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ ) অনেক বার মাইজভাণ্ডার দরবারে গিয়েছিলেন। একবার হযরত তৈয়্যব শাহ মাইজভাণ্ডার দরবার জিয়ারত শেসে হযরত দেলোয়ার হুসেন মাইজভাণ্ডারীর রওজা জেয়ারত করে বের হতেই ওনার সামনে হযরত শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী এসে দাড়ান এবং তাকে স্বাগত জানিয়ে কুলাকুলি করেন, কথাবার্তা বলেন। ঐ দিন ফেরার পথে হযরত তৈয়্যব শাহ (রহঃ ) মন্তব্য করেন শাহান শাহ বেশক শাহান শাহ হ্যায়।
চট্টগ্রামে তৈয়্যব শাহার শেষ সফর কালে ও হুজুর কেবলা মাইজভাণ্ডার শরিফ গিয়ে শেষ বারের মত জেয়ারত ও সালাম জানিয়ে এসেছিলেন।
## একই দারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন আওলাদে রাসুল গাউসে জামান হুজুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।
আল্লামা তাহের শাহ ১৯৯৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর মাইজভাণ্ডার দরবার জিয়ারত করেন।
তার জিয়ারত নিঃসন্দেহে একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। হুজুর কেবলা আল্লামা তাহের শাহ  মাইজভাণ্ডারের সব মাজার জিয়ারতের পর যান শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর মাজারে। হুজুর কেবলা তিন দফা মাজার ব্যস্টনির অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন, এবং গভীর স্রদ্ধা ও আদবের সাথে মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করেন।
এর পর মাজার প্রদর্শনী বইতে লিখেন সেই ঐতিহাসিক বানী ঃ
আল্লাহ ও রাসুলের প্রসংশায় অতঃপর -
আমি নগন্য মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ দেখলাম।
মাজারে শায়িত প্রত্যেক ছাহেবই  এক এক জন বেলায়তের শাহান শাহ, এবং মাজার থেকে পরিপুরন ফয়েজ প্রাপ্তি ঘটে।
প্রত্যেকই আল্লাহর মনোনিত এবং তারা যা বলে তা অনায়াসে গ্রিহিত হয়।
আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে জিয়ারতের সৌভাগ্যদিন আমিন।
নগন্য
সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ
২৫-১২-৯৫ ইং

Tuesday, September 25, 2018

রাসুলে করিম ﷺ'র রওজা মোবারকের গম্ভুজের উপরে এই জানালার রহস্য!

রাসুলে করিম ﷺ'র রওজা মোবারকের
গম্ভুজের উপরে এই জানালার রহস্য!

হযরত ওমর বিন মালেক (রঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুলে আকরাম ﷺ দুনিয়া থেকে পর্দা করার পরে একবার মদিনা শরীফে দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে অসহনীয় গরম আর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।তাই মদিনাবাসীরা একদিন মুমিনদের মা হযরত মা আয়েশা সিদ্দীকা (রঃ) এর কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা উল্যেখ করে বৃষ্টির জন্য দোয়া কামনা করেন।তখন মা আয়েশা (রঃ) বলেন,"হে মদিনাবাসী তোমরা রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপরে যে খেজুর গাছের ডাল আছে তা সরিয়ে দাও,এবং অপেক্ষা কর"।মদিনাবাসী তখন হযরত মা আয়েশা (রঃ) এর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করল। রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপর থেকে ডাল সরানোর সাথে সাথে হঠাৎ আমরা দেখলাম আকাশ ধীরে ধীরে কালো মেঘে ডাকা শুরু করেছে,এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ থেকে এমনভাবে ভারী বর্ষণ হতে শুরু করেছে যে, আমাদের পথচলা কষ্টদায়ক হয়ে পড়লো।
দীর্ঘ এক সপ্তাহ অনবরত আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হতে থাকে যা কিছুক্ষণের জন্যেও বন্ধ হয়নি।যা আমাদের ফসল ফলাদির জন্য পর্যাপ্ত ছিল। এক সপ্তাহ পরে, মদিনাবাসীরা আবার মা আয়েশা সিদ্দীকা (রঃ) এর কাছে গিয়ে বৃষ্টি বন্ধের জন্য দোয়া চাই।তখন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রঃ) বলেন,"রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপরে খেজুর পাতার ডাল পূর্বের মত দিয়ে দাও,বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে। মদিনাবাসীরা তাই করল সাথে সাথে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল।
সুবহানআল্লাহ!
(সূত্রঃ-ইবনে মাজাঃ-৬০২, দারেমীঃ-৯২৭)
এখনও পর্যন্ত হাদিসের এই ধারাবাহিকতাই যখনি কঠিন অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তখন রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপরে এই জানালা খুলে দিলে আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি হতে থাকে।
সুবহানআল্লাহ!

আস্তিক ছাত্র বনাম নাস্তিক শিক্ষক

নাস্তিক শিক্ষক ক্লাসে ঢুকেই
প্রশ্ন করল:
আচ্ছা তোমরা তো আল্লাহ তে
বিশ্বাস কর তাইনা?
:
ছাত্রছাত্রী সমস্বরে:
হ্যাঁ আমরা বিশ্বাস করি।
:
শিক্ষক: আল্লাহ তো পৃথিবীর সকল
ভালমন্দ সৃষ্টি করেছেন তাইনা?
:
ছাত্রছাত্রী: হ্যাঁ তিনিই.
সৃষ্টি করেছেন।
:
শিক্ষক: আল্লাহ যদি ভাল
হয়ে থাকেন তাহলে মন্দসমূহ
সৃষ্টি করলেন কেন?
:
ছাত্র ছাত্রী: সবাই চুপ।
কেউ কোন উত্তর দিলনা।
:
শিক্ষক: আচ্ছা তোমরা কি কেউ
কখনো আল্লাহকে দেখেছ?
:
ছাত্রছাত্রী: না।
:
শিক্ষক: বিজ্ঞান বলে যে জিনিস
কোন যন্ত্র বা পঞ্চ ইন্দ্রিয়
দ্বারা দেখা যায়না, ছোঁয়া যায়
না, অনুভব করা যায় না, তার
কোন অস্তিত্ব নেই! সুতরাং
আল্লাহর অস্তিত্ব নেই--!!
:
সৃষ্টিকর্তার ধারণা অলীক কল্পনা
মাত্র। ক্লাসে পিনপতন নিরবতা,
কেউ কথা বলছেনা। একজন ছাত্র
উঠে দাড়ালো:
স্যার আমি কিছু বলতে চাই।
:
শিক্ষক: বল
:
ছাত্র: স্যার পৃথিবীতে ঠান্ডা
বলতে কিছু আছে?
:
শিক্ষক: আছে।
:
ছাত্র: না স্যার, ঠান্ডা বলতে
কোন পদার্থ নেই। তাপমাত্রার
অনপুস্থিতিকেই ঠান্ডা বলে।
ঠান্ডা পরিমাপ করা যায়না।
তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ তাপের অনুপস্থিতিকে
ঠান্ডা বলে থাকি।
:
ছাত্র: স্যার অন্ধকার
বলতে কিছু আছে?
:
শিক্ষক: না।
:
ছাত্র: হ্যাঁ, অন্ধকার বলতে কিছু
নেই৷ অন্ধকার পরিমাপ করা যায়না।
আলোর অনুপস্থিতিকেই অন্ধকার
বলা হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহ
মন্দ সৃষ্টি করেননি। ভালোর
অনুপস্থিতিকেই মন্দ বলে।
ছাত্র সকল ছাত্রছাত্রীদের
:
উদ্দেশ্যে করে: আচ্ছা আপনারা কেউ
স্যারের মস্তিষ্ক দেখেছেন?
:
ছাত্রছাত্রী:
দেখিনি তবে স্ক্যানারের
মাধ্যমে দেখা সম্ভব।
:
ছাত্র: পৃথিবীর কোন যন্ত্র দিয়ে কি
স্যারের জ্ঞান পরিমাপ করা সম্ভব?
স্যার যে এত এত ডিগ্রী এতসব
জ্ঞান অর্জন করেছেন তা কি পঞ্চ
ইন্দ্রিয় দ্বারাঅনুভব বা
পরিমাপ করা যায়?
:
ছাত্রছাত্রী: না
:
ছাত্র: তাহলে আমি ঘোষণা দিচ্ছি
যেহেতু কোন অত্যাধুনিক যন্ত্র
বা মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়
দ্বারা স্যারের জ্ঞান অনুভব বা
পরিমাপ করা যায় না সুতরাং
স্যারের কোন জ্ঞান নেই।
তিনি একটা মূর্খ।
-----------------

Monday, September 24, 2018

হযরত আব্বাস আলমদার (রহঃ) এর মাজারে অলৌকিক পানি

হযরত আব্বাস আলমদার (রহঃ) এর মাজারে অলৌকিক পানি
=============
ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺳﻴﺪﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ
[লেখাটি কপি করে নিজ নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করুন।]
কারবালা প্রান্তরে আহলে বায়েতের সদস্যগণ, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, এমনকি দুধের শিশু পর্যন্ত পানির পিপাসায় ছটফট করছিলেন। ইয়াজিদের বাহিনী ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা'লা আনহুর দলের লোকজনদের জন্য ফোরাতের পানি বন্ধ করে দিয়েছে। এক ফোটা পানিও যাতে আহলে বায়েত এবং নবী পরিবারের কেউ না পায় তার সব রকমের ব্যবস্থা করে রেখেছে হানাদার মুসলিম নামধারী নরাধমরা। রাসুল ﷺ এর আওলাদ, ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর নয়নের মনি শিশু আলী আজগরের জন্য পানি আনতে গিয়ে কারবালার প্রান্তরে কুখ্যাত এয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হলেন হযরত আব্বাস আলামদার রহঃ।
রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) এর আওলাদের তাঁবুতে একফোঁটা পানিও নেই। কচি কচি শিশুরা পানির জন্য ছটফট করছে। পানি নেই, এমনকি পিপাসার্ত মায়েদের বুকের দুধও শুকিয়ে গেছে। শিশু আলী আজগর পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছেন। কেউবা পিপাসার যন্ত্রণায় বেহুঁশ হয়ে পড়ছেন। এ করুণ দৃশ্য দেখে হযরত আব্বাস রহঃ আর বরদাশত করতে পারলেননা। পানির মশক হাতে নিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে চললেন তিনি। ইয়াজিদ বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ফোরাত নদী থেকে পানি ভরে কাঁধে নিলেন। নিজে কিছুটা পানি পান করতে চেয়েও শিশু আজগরের তৃষ্ণার্ত চেহারা এবং ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)'র তৃষ্ণার্ত চেহারা মনে পড়ায় হাতের পানি পান না করে ফেলে দিলেন। এমন সময় তাঁকে হঠাৎ করেই ঘিরে ফেলল জালিম ইয়াজিদের দল। তিনি ইয়াজিদের বূহ্য ভেদ করে কিছুদূর অগ্রসর হলে পেছন থেকে তাঁর উপর অনবরত তীর নিক্ষেপ করতে থাকে ইয়াজিদ বাহিনী। আরো কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর এয়াজিদ বাহিনীর একজন হযরত আব্বাসের ডান হাত কেটে ফেলে। তিনি ঐ অবস্থায় মশক বাঁচিয়ে বাম হাতে নিলেন। কিন্তু ঐ জালিম তাঁর বাম হাতও কেটে ফেলল। তারপরও তিনি মশকের ফিতা চরম কষ্টে দাঁতে কামড়ে ধরে ছুটে চললেন ইমামের শিবিরের দিকে। মহাবীর আব্বাসের এই বীরত্ব দেখে জালিম ইয়াজিদীদের আর সহ্য হলোনা। তারা এক সাথে ঝাঁপিয়ে পরে হযরত আব্বাসকে শহীদ করে দিলো। এদিকে পানির জন্য ছটফট করতে থাকা দুধের শিশু হযরত আজগর এবং সাকীনার জন্য আর পানি নিয়ে যাওয়া হলোনা।
কে ছিলেন এই হযরত আব্বাস?
-------
হযরত আব্বাস আলামদার রহঃ ছিলেন মওলা আলী বিন আবি ত্বালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা'লা আনহুমার পুত্র এবং ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)'র বৈমাত্রেয় ভ্রাতা। তাঁর জন্ম ২৬ হিজরীতে। হযরত আলী (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে সবার সাথে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন, "এই হচ্ছে আব্বাস, হাশেমী বংশের চাঁদ!" তিনি দেখতে ছিলেন অতীব সুদর্শন। জ্ঞানে এবং যুদ্ধ বিদ্যায় ছিলেন পারদর্শী। মওলা আলী রাঃ নিজে তাঁকে যুদ্ধ কলাকৌশল এবং ধর্মীয় শিক্ষায় পূর্ণতা দিয়েছিলেন। হযরত আলী রাঃ ছোটবেলায়ই এই মহাবীরের অনেক নিদর্শন লক্ষ্য করে নাম রেখেছিলেন আব্বাস, যার অর্থ সাহসী এবং বীর। পুরো নাম আবুল ফজল আব্বাস আলমদার ইবনে আলী রহঃ।
কারবালার যুদ্ধে মহরমের ১০ তারিখ শুক্রবার পবিত্র আশুরার দিনে তিনি ইয়াজিদী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন। ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এবং তাঁর পরিবারের প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং ভালোবাসা এতই প্রবল ছিল যে ফোরাত নদীতে নিজ হাতের তালুতে পানি ধরেও পিপাসার্ত নারী ও শিশুদের কথা মনে করে এবং বড় ভাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর কথা ভেবে হাতের পানি ফেলে দেন। যে পানির অভাবে নবী ﷺ পরিবারের ছোটো মাসুম বাচ্চারা, নারী এবং যোদ্ধাগণ পিপাসায় ছটফট করে একে একে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছিলেন, তিনি কীভাবে নিজে সেই পানি পান করবেন?
মাজারে অনবরত পানির ফোয়ারা - মহান আল্লাহ পাকের এক মহা কুদরত
----
কারবালা প্রান্তরে যে স্থানে এই মহান বীর শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। ফোরাত নদীর তীরে তাঁর মাজারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মাসজিদে আব্বাস। যা আজো কোটি কোটি নবী-প্রেমিকের জিয়ারতের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যে পানির জন্যে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন, যে পানি ইয়াজিদী নরাধমরা পশুপাখির জন্য বৈধ করলেও নবী ﷺ পরিবারের জন্য নিষিদ্ধ করেছিলো, আল্লাহ পাক চাইলেই ইমাম শিবিরে সে পানি পৌঁছে দিতে পারতেন। যেমনটি তিনি করেছিলেন শিশু ইসমাইল আঃ এর পদতলে পবিত্র জমজমের ফোয়ারা প্রবাহিত করে। যেমনটি করেছিলেন তাবুক অভিযান সহ অসংখ্য ঘটনায়। পানির কষ্ট এবং নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে ইমাম পরিবার একমাত্র ইসলামের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের সামনে প্রমাণ রেখে গেলেন, "শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!" আল্লাহ পাক যদি সেদিন এভাবে নবী-পরিবারের জীবন এবং ইজ্জতের বিনিময়ে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত না করতেন, তাহলে আজ অনেকেই নবী-পরিবারকে নিয়ে কটাক্ষ করতে দ্বিধা করতোনা। কিন্তু আল্লাহ পাক আমাদের জন্য তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ এর পরিবারের আত্মত্যাগের মাধ্যমে শিক্ষা দান করলেন, নবী ﷺ এবং আহলে বায়তের ভালোবাসাই হল ঈমানের মূল। এরপরও কিছু নরাধম কারবালার নির্মম ঘটনার নায়কদের শহীদ এবং জান্নাতী হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের কাছে ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হলেন রাজনীতির শিকার আর কুখ্যাত ইয়াজিদ হল সত্যের মাপকাঠি। নাউজুবিল্লাহ!
কারবালার প্রান্তরে আল্লাহ পাক পানিবঞ্চিত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নবী-পরিবারকে যন্ত্রণা ভোগ করতে দিলেও পানি আহরণে শহীদ আবুল ফজল আব্বাস ইবনে আলী (রহঃ) এর পবিত্র মাজারে নিরন্তর পানির ফোয়ারা প্রবাহিত রেখেছেন। তৃষ্ণার্ত আবুল ফজল আব্বাস ইবনে আলী (রহঃ) এর পিপাসা মিটানোর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা'লার পক্ষে থেকে এ এক নিয়ামত। আল্লাহ এভাবেই তাঁর প্রিয় বন্ধুদেরকে সম্মানিত করে থাকেন। আহলে বায়েতের ভালোবাসার প্রতিদান আলাহ পাক এভাবেই দিয়ে থাকেন। সমগ্র জগতবাসীর জন্য এ এক অসীম কারামত এবং নবীদুশমনদের জন্য এ এক বড় শিক্ষণীয় ব্যাপার যদিও তারা কোন কিছু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে না। কারণ আল্লাহ পাক তাদের অন্তরকে হেদায়েত থেকে দূরে রেখেছেন। তাদেরকে করে দিয়েছেন অন্ধ এবং বধির। ফলে তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না।

ইয়াজিদ_কাফের_ছিল_তার_দলিল

# ইয়াজিদ_কাফের_ছিল_তার_দলিল......

খাদেমে সুন্নীয়ত ওয়াত তরীকত আলহাজ্ব মুফতী এস এম সাকীউল কাউছার।
সাজ্জাদানশীন, ঘিলাতলা দরবার শরীফ কুমিল্লা। ।

# বুখারী শরীফের এক হাদীছে রয়েছে কোন মুমিনকে কতল করা কুফুরী। ইমামা হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বড় মুমিন আর কে? যিনি জান্নাতে যুবকদের সর্দার।

# ইয়াজিদকে অধিকাংশ ইমামই ফাসেক বলেছেন। কারো কারো মতে সে কাফের ছিল কিন্তু কেউই ভাল বলে নাই। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল,
ইবনুল হুমাম,জালালুদ্দিন সুয়ুতী,নাসিরুদ্দিন
আলুছীসহ ২৭ জন মুজতাহিদ কাফের বলেছেন।
বিশেষ করে মাহমুদ আলুসী-تفسیر روح المعانی
৯ম খন্ডে لعنة اللہ علی الکاذبين এই আয়াতের ব্যাখ্যয় তিনিও বলেছেন ইয়াজিদ কাফের ছিল।
হানাফি মাযহাবের সবচেয়ে বিখ্যাত কিতাব تفسیر روح المعانی দারুল হাদিস,আল-কাহেরা মিশরের ছাপা-২৫তম খন্ড-৩১০পৃ: দীর্ঘ ২  পৃষ্টা ব্যাপী আলোচনার পর তিনি বলেছেন-    مانقول الذی يغلق علی ان الخبث لم يکن مصدقا برسالة النبی صلی اللہ عليه وسلم
ইমাম আলুসী বলেন-আমি ব্যাপক যাচাই বাচাই করার পর আমি আলুসীর মতামত হলো-
খবিস ইয়াজিদ আল্লাহর রাসুল  صلی اللہ  عليه وسلم এর রিসালাতকেই বিশ্বাস করতনা। সুতরাং যে আল্লাহর রাসুলের রিসালাতকে বিশ্বাস করেনা,সে মুসলমানই
থাকতে পারেনা।
# ইমাম_আহমাদ_ইবনে_হাম্বাল (রহ) বলেন:
ইয়াজিদ কাফের কারণ সে মদকে হালাল মনে করতেন। شرح الفقه الاکبر দারুন নাফায়েস-
বৈরুতের ছাপা-১৭৫ পৃষ্টা।

ইয়াজিদকে জিজ্ঞাসা করা হলো মদ হালাল কেন?
সে বললো হযরত মুহাম্মাদصلی اللہ  عليه وسلم এর শরিয়তে হারাম কিন্তু ঈসার শরিয়তে তো হালাল (নাউজুবিল্লাহ)
# আমাদের প্রশ্ন, তাহলে সে কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা'র শরিয়তকে বিশ্বাস করতো?

# পাপিষ্ট  ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন (রা) কে হত্যা করে বদর দিবসের প্রতিশোধ নিয়েছে। ইমাম হোসাইন (রা) এর লাস যখন ইরাকে উপস্থিত করা হলো পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ তখন কবিতা পড়ল। যা روح المعانی -২৫,তম খন্ড ৩১০পৃষ্টা। সে বলেছে আজকে আমি,মুহাম্মাদ صلی  اللہ  وسلم যে বদর যুদ্ধে আমাদের পূর্ব পুরুষদের হত্যা করেছিলেন সেই প্রতিশোধ নিলাম।
আবার তা شرح الفقه الاکبر কিতাবে ১৫৮ পৃষ্টায় এসেছে-    انی جازيتهم فعلو باشياخ قريش وضاديدهم فی بدر সে অহংকার করে বলেছে-
মুহাম্মাদصلی اللہ وسلم আমাদের পূর্ব পুরুষদের হত্যার প্রতিশোধ নিলাম হোসাইনকে কতল করে।

# অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) তো কাফের বলেনি,আমরা কেন বলব?

$ হযরত ইমাম আযম রাহমাতুল্লাহ, বড় ফাসেক বলেছেন। এটা ফিকার মাসয়ালা নয়,এটা আকিদা ও ইতিহাসের মাসয়ালা,তাই এক্ষেত্রে ইমাম আযমের অনুসরন ওয়াজিব নয়।ইমাম অাযমের অনুসরন ফিকহের ক্ষেত্রে। আমরা তাফছিরের ক্ষেত্রে অন্য ইমামকে মানি হাদীসের ক্ষেত্রে অন্য ইমামকে মানি,পীর-মুরিদের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামকে মানি।

# সুতরাং এ ক্ষেত্রে মানতে সমস্যা কি?

শানে রেসালত অবমাননাকারীদের শরয়ী বিধান

শানে রেসালত অবমাননাকারীদের শরয়ী বিধান
নিশ্চয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁকে কেন্দ্র করেই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি জগতের সকল কিছুর আয়োজন করেছেন। আল্লাহ তায়ালাই তাঁকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমুন্নত করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে -
ﻭَﺭَﻓَﻌْﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺫِﻛْﺮَﻙَ
‘‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।”(৯৪/৪)
তিনিই সেই সত্ত্বা যাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা মাকামে মাহমূদ দান করা হয়েছে। তিনিই শাফায়াতে কুবরার অধিকারী। তিনিই হাউযে কাউছারের পানি বন্টনকারী। রিসালাতের পুর্ণতা দানকারী। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাব বিস্তারকারী। সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামীনের পরেই তাঁর স্থান। কবির ভাষায় -
ﺑﻌﺪ ﺍﺯ ﺧﺪﺍ ﺑﺰﺭﮒ ﺗﻮﺋﯽ ﻗﺼﮧ ﻣﺨﺘﺼﺮ
তাঁর মহিমা ও মাহাত্ম সম্পর্কে যা কিছুই লেখা হোক না কেন তা তুলনায় নিতান্তই কম। তাই সর্ব যুগের, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। অতএব তাঁর প্রতি সৃষ্টিকুলের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা এবং স্বতঃস্ফুর্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করা অতীব জরুরী। যে সব কথা ও কাজ আদবের পরিপšী’ কিংবা যদ্বারা তিনি ব্যথিত হন, তা থেকে বেঁচে থাকা সকলের অবশ্য কর্তব্য। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা.) এর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনকে সকলের উপর ওয়াজিব করেদিয়েছেন।
সম্বোধনের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
রাসূল (সা.) কে সম্বোধনের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন -
ﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ ﺩُﻋَﺎﺀَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻛَﺪُﻋَﺎﺀِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ
অর্থাৎ যখন তোমরা রাসূল (সা.) কে কোন প্রয়োজনে আহবান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তাঁর নাম নিয়ে “ইয়া মুহাম্মদ” বলবে না। এটা বেআদবী। বরং সম্মান সূচক উপাধি দ্বারা “ইয়া রাসূলাল্লাহ” অথবা “ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ” বলবে।
(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-পৃঃ-৯৫৫)
স্বয়ং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সর্বত্রই রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের নমুনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পবিত্র কুরআনে যত নবীকে সম্বোধন করা হয়েছে তা তাঁদের আসল নাম ধরেই করা হয়েছে। যেমন-
ﻳَﺎ ﺁَﺩَﻡُ ﺍﺳْﻜُﻦْ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺯَﻭْﺟُﻚَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
“হে আদম, তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর।” (২/৩৫)
ﻭَﻣَﺎ ﺗِﻠْﻚَ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻚَ ﻳَﺎ ﻣُﻮﺳَﻰ
“হে মূসা,তোমার ডান হাতে ওটা কি ?” (২০/১৭)
ﻳَﺎ ﺩَﺍﻭُﻭﺩُ ﺇِﻧَّﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻙَ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি।”
সম্বোধনের এ রীতি অনুযায়ী এটাই সঙ্গত ছিল যে, আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা.) কেও “ইয়া মুহাম্মদ” বা “ইয়া আহমদ” নামে ডাকবেন। কিন্তু কুরআনের কোথাও নাম ধরে ডাকেননি। বরং এমনভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, যাতে তাঁর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন হয়। যেমন -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
“হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার করুন।” (৫/৬৭)
এভাবে কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ বলে, কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ বলে, আবার কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ বলে পবিত্র কুরআনে সম্বোধন করা হয়। এভাবে মহা গ্রন্থ আলকুরআনে রাসূল (সা.) কে বিশেষ সম্মানের সাথে সম্বোধন করে তাঁর শানে রেসালতের সুমহান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রাসূল (সা.) এর প্রতি শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺭَﺍﻋِﻨَﺎ ﻭَﻗُﻮﻟُﻮﺍ ﺍﻧْﻈُﺮْﻧَﺎ ﻭَﺍﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻭَﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ
“হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রায়িনা-’ বলো না ‘উনযুরনা-’ বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (২/১০৪)
যেহেতু ‘রায়িনা’ শব্দের দ্বারা সম্বোধন করলে সম্মান প্রদর্শন হয় না তাই আল্লাহ তায়ালা মুমিনগণকে তাঁর রাসূলের শানে ‘উনযুরনা-’ শব্দ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডেকে কষ্ট না দেয়ার নির্দেশ
যখন বনী তামীমের একটি প্রতিনিধিদল মদীনায় উপনিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আপন ঘরে অবস্থান করছিলেন। ঐ লোকেরা দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করে। “হে মুহাম্মদ, তুমি আমাদের দিকে বেরিয়ে এসো।” রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি তাদের এই অশিষ্ট আচরন আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় ঠেকল এবং সঙ্গে সঙ্গে নাযিল হলো-
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨَﺎﺩُﻭﻧَﻚَ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺤُﺠُﺮَﺍﺕِ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻘِﻠُﻮﻥَ، ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺻَﺒَﺮُﻭﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺮُﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻟَﻜَﺎﻥَ ﺧَﻴْﺮًﺍ
“যারা ঘরের পেছন থেকে আপনাকে উচ্চ স্বরে ডাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ, আপনি বের হয়ে ওদের কাছে আসা পর্যন্ত যদি ওরা ধৈর্য ধারণ করত, তাই ওদের জন্য উত্তম হত।” (৪৯/৪-৫)
কথা বলার সময় সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺮْﻓَﻌُﻮﺍ ﺃَﺻْﻮَﺍﺗَﻜُﻢْ ﻓَﻮْﻕَ ﺻَﻮْﺕِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻬَﺮُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﻘَﻮْﻝِ ﻛَﺠَﻬْﺮِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺤْﺒَﻂَ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
“হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেরুপ উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারন এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে।” (৪৯/২)
অতএব উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যে সকল অধিকার অবধারিত এবং তিনি যে মর্যাদা, সম্ভ্রম ও গৌরবের অধিকারী পবিত্র কুরআনের এসব আয়াত দ্বারা তা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। তাই তাঁর অনুসারি, ভক্ত ও অনুরাগীদের দ্বারা তিনি নন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ বা ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা তিনি নিন্দিতও হয়েছেন প্রচুর। মক্কার আবু জাহেল, আবু লাহাব, ওতবা ও শায়বাদের বিভিন্ন রকম গালি-গালাজ ও নির্যাতন থেকে শুরু করে, ইয়াহুদী সাবাঈ গোষ্ঠির আবু রাফে, কা’ব ইবনে আশরাফের বিভিন্ন রকম কটুক্তি সহ আধুনিক বিশ্বের ডেনমার্কের বহুল প্রচলিত “জিল্যান্ড পোষ্টেন” পত্রিকায় মহানবী (সা.) এর ব্যাঙ্গ কার্টুন ছাপানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশে “প্রথম আলো” পত্রিকায় তার পুণরাবৃত্তির ঘটনা, কতিপয় বিকারগ্রস্ত শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক বিভিন্নরূপ কুৎসা রটনা ও সালমান রুশদী, প্রফেসর হেন্স এবং তসলিমা নাসরীনদের বিভিন্ন রকম কটুক্তি সহ এরূপ হাজারো ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। তাই বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও প্রাচ্যবিদ ডব্লিউ ডব্লিউ মন্টগোমারী ওয়াট তাঁর "সঁযধসসধফ ধঃ সবফরহধ" শিরোনামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন-“পৃথিবীর ইতিহাসে মুহাম্মদ অপেক্ষা অন্য কোন মহামানবকে অধিকতর নিন্দা বা কলুষিত করা হয় নাই।” (সীরাত বিশ্ব কোষ-৪/৮)
অবমাননাকারীর অশুভ পরিণাম
এজন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বীয় গ্রন্থে রাসূল (সা.) কে কষ্ট দেয়া হারাম ঘোষণা করেছেন। এবং উম্মত তাঁর ছিদ্রান্বেষণকারী ও তাঁর প্রতি অশ্লীল বাক্য উচ্চারণকারীর মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছে। পরকালে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তো আছেই দুনিয়াতেও তাদের কঠিন পরিণতি বরণ করতে হয়, অথবা লাঞ্চনার জীবন যাপন করতে হয়। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ
“যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (৩৩/৫৭)
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে -
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ
“যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৯/৬১)
মৃত্যুদন্ডই তার শাস্তি
আবু দাউদ শরীফের এক বর্ণনায় আছে -
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻰٍّ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥَّ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳَّﺔً ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺸْﺘِﻢُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭَﺗَﻘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺨَﻨَﻘَﻬَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﻓَﺄَﺑْﻄَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺩَﻣَﻬَﺎ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ )
“হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন ইয়াহুদী মহিলা রাসূল (সা.) কে গালিগালাজ করত এবং তাঁর ছিদ্রান্বেষণ করত। একারণে এক ব্যক্তি তাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর রাসূল (সা.) তার রক্তকে মূল্যহীন ঘোষণা করলেন।”
অতএব এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শানে রেসালতের অবমাননাকারীর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রহ.) তাঁর আসসারিমুল মাসলুল গ্রন্থে এরূপ আরো অনেক হাদিস নকল করে বলেন-
ﻓﻬﺬﻩ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﻛﻠﻬﺎ ﺗﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺴﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﻳﺆﺫﻳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻓﺈﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺼﺪ ﻗﺘﻠﻪ ﻭ ﻳﺤﺾ ﻋﻠﻴﻪ ﻷﺟﻞ ﺫﻟﻚ ﻭ ﻛﺬﻟﻚ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﺫﻟﻚ
“অতএব এসব হাদিস দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) ঐসব কাফেরদেরকে হত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করতেন যারা তাঁকে গালিগালাজ করত এবং লোকজনকে এজন্য উৎসাহিত করতেন। আর সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূল (সা.) এর নির্দেশে তা বাস্তবায়ন করতেন।”
সুতরাং যে কেহ রাসূলুল্লাহ (সা.) কে হেয় প্রতিপন্ন করে, গালি দেয়, দোষ চর্চা করে অথবা তাঁর সত্তা, বংশধারা বা চরিত্রে কালিমা লেপন করে অথবা তিরষ্কার ও নিন্দা করে মর্যাদা খাটো করে, তাঁর প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উত্থাপন করে এবং তাঁর দোষ সাব্যস্ত করার জন্য কোন কিছুর সঙ্গে তাঁকে উপমা দেয় বা ব্যাঙ্গ কার্টুন করে ইত্যাদীর যে কোন ভাবে রাসূল (সা.) কে কষ্ট দেয়া সুস্পষ্ট কুফরী, এ ধরনের কুফরীর কারণে ঐ ব্যাক্তিকে চাই সে পূর্ব থেকে মুসলমান থাকুক বা কাফের থাকুক হত্যা করা ইসলামী শরীয়তের বিধান।
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭ : ‏[ ﺃﺟﻤﻊ ﻋﻮﺍﻡ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺣﺪ ﻣﻦ ﺳﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﻘﺘﻞ ]
“আল্লামা আবূ বকর ইবনুল মুনযির বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গালমন্দকারীর মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে সমস্ত ফকীহ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।” (আশ শিফা -২/৪৭৪)
ﻭ ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﺤﻨﻮﻥ : ‏[ ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺷﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﺍﻟﻤﺘﻨﻘﺺ ﻟﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﻭ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪ ﺟﺎﺭ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻌﺬﺍﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻭ ﺣﻜﻤﻪ ﻋﻨﺪ ﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﻭ ﻣﻦ ﺷﻚ ﻓﻲ ﻛﻔﺮﻩ ﻭ ﻋﺬﺍﺑﻪ ﻛﻔﺮ ]
“মুহাম্মদ ইবনে সাহনূন বলেন, আলিমগণ এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গালমন্দকারী ও তাঁর ছিদ্রান্বেষণকারী কাফির। তাঁর জন্য আল্লাহর শাস্তিবিধানের সতর্কবাণী অবধারিত এবং উম্মতের নিকট তার শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। আর যে ব্যক্তি তার কুফরী ও শাস্তি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে সেও কাফির।”(আশ্ শিফা-২/৪৭৬, সীরাত বিশ্বকোষ-৪/৫০৫-৫০৭)
নবীগণের অবমাননাকরীর তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়
নবীগণের শানে বেআদবী করলে তার শাস্তি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড। এরূপ জঘন্যতম অপরাধের পর যদি ঐ ব্যক্তি তাওবাও করে তবে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ দুনিয়ার শাস্তি তার জন্যে অবধারিত। কেননা নবী-রাসূলের অবমাননা সমস্ত কুফরির মূল। (কামূসুল ফিকহ : ৪/১৯৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৩৮৬)
অতএব নবী-রাসূলগণের অবমাননাকারীরা জঘন্যতম কাফের। তাদেরকে যারা কাফের বলবে না তারাও কাফের। (ইকফারুল মুলহিদীন : ৫৪)

আহলে বাইতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মর্যাদা

আহলে বাইতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মর্যাদা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আওলাদগণকে আহলে বাইতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলা হয়। ইসলামী দুনিয়ার আকাশে তাঁরা যেন সু-উজ্জল নক্ষত্ররাজি। তাঁরা সকল মানুষের আদর্শ। তাঁদের অনুসরনই ইসলাম, তাঁদের প্রতি ভালবাসাই ঈমান। কুরআন-সুন্নাহ্তে তাঁদের মান-মর্যাদার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা মুমিন মাত্রই ওয়াজিব। তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা তাঁদেরকে মহব্বত করা মানেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মহব্বত করা। তাঁরাই সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে আল্লাহর বানী পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জান-মাল, ধন-সম্পদ, আওলাদ-পরিজন কুরবাণী দিতে দ্বিধা করেননি। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা তার উজ্জল প্রমাণ। যেখানে হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু স্ব-পরিবারে শাহাদাত বরণ করেছেন। তাই মুসলিম জগত তাঁদের কাছে ঋণী। আল্লাহ এবং রাসূলেরও নির্দেশ তাঁদেরকে মহব্বত করা, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
ﻗُﻞْ ﻻ ﺍَٔﺳْﺎٔﻟُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍَٔﺟْﺮﺍً ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻤﻮﺩّﺓ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑﻰ
অর্থাৎ হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি বলুন, আমি তোমাদের কাছে আমার দাওয়াতের জন্য (দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে) আমার আহ্লে বাইতের মহব্বত ব্যতীত কোন কিছুই চাই না।
    (সূরা শুরা : ২৩)

আন্তরিকতাপূর্ণ নিষ্কলুষ ভালবাসার এই দাবী মুমিনদের উপর কেবল মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটআত্মীয়দের জন্যই রাখা হয়েছে। উক্ত আয়াতের আলোকে ঈমানদারের উপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল এর পরে আহ্লে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করা একান্ত অপরিহার্য।

আহলে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা মানবতার কল্যাণকামী, পূত পবিত্র তাঁদের ব্যক্তিসত্ত্বা, নিষ্কলুষ তাঁদের জীবন চরিত। আল্লাহ তাঁদের থেকে সব রকমের নাপাকী ও পঙ্কিলতা দূর করেছেন। এই মর্মে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
ﺇﻧّﻤﺎ ﻳُﺮﻳﺪُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻴُﺬْﻫِﺐَ ﻋَﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﺍٔﻫْﻞَ ﺍﻟﺒَﻴْﺖِ ﻭﻳُﻄَﻬِّﺮَﻛُﻢْ ﺗَﻄْﻬِﻴﺮﺍً
অর্থাৎ হে নবী পরিবারগণ! আল্লাহ তো তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সর্বোত্তমভাবে পবিত্র রাখতে চান। (সূরা আহজাব: ৩৩)

প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আহলে বাইত, তাঁর পূণ্যবতী স্ত্রীগণ, তাঁর নূরানী বংশধরগণ সর্বোত্তভাবে পবিত্র এবং আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। অত্র আয়াতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিবারবর্গের ফজিলত ও মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। অত্র আয়াতে আহলে বাইত শব্দটি পরিবারবর্গের সদস্য ও বংশধরদেরকে শামিল করে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিবিগণ তাঁর পরিবারের সদস্য হিসেবে আহলে বাইত। আর তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আত্মীয় স্বজন বংশধর হিসেবে আহলে বাইত।
ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর প্রসঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
ﻓﺪﻋﺎ ﻋﻠﻲ ﻭﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻫﻮٔﻻﺀ ﺍٔﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ ﻓﺎٔﺫﻫﺐ ﻋﻨﻬـﻢ ﺍﻟﺮﺟﺲ ﻭﻃﻬـــﺮﻫﻢ ﺗﻄﻬﻴﺮﺍ ﻭ ﻧﺰﻟﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻻٓﻳﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍٓﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ‏( ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳُﺮﻳﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﺬْﻫِﺐَ ﻋَﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﺍَٔﻫْﻞَ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻭَﻳُﻄَﻬِّﺮَﻛُﻢْ ﺗَﻄْﻬﻴﺮﺍً ‏) : ﻓﻲ ﺑﻴﺖ ﺍٔﻡ ﺳﻠﻤﺔﻗﺎﻟﺖ ﺍٔﻡ ﺳﻠﻤﺔ : ﻭﺍٔﻧﺎ ﻣﻌﻬﻢ ﻳﺎ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍٔﻧﺖ ﻋﻠﻰ ﻣﻜﺎﻧﻚ، ﻭﺍٔﻧﻚ ﻋﻠﻰ ﺧﻴﺮ
অর্থাৎ (উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর) দয়াল নবীজি, হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) কে একত্রিত করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এরা সব আমার আহ্লে বাইত। তাঁদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন এবং তাঁদেরকে খুব পরিচ্ছন্ন করুন।

উক্ত আয়াাতখানা হযরাত উম্মে সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর ঘরে অবতীর্ণ হল। ঐ সময় হযরত উম্মে সালমা এসে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিও তাঁদের সাথে আছি? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্থানে, তুমি কল্যাণের উপর আছ।

এ প্রসঙ্গে তাফসীরে ইবনে আরাবীর মধ্যে এসেছে-
ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺑﺘﻚ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻭﺟﺒﺖ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﻮﺩﺗﻬﻢ ﻓﺎﺟﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻲ ﻭﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﺑﻨﻬﻤﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ * ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺑﺘﻚ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻧﺰﻟﺖ ﺍﻻﻳﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﻭﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﺑﻨﻬﻤﺎ
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামগণ জানতে চাইলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঐ সব নিকটআত্মীয় কারা, যাঁদের প্রতি আমাদের ভালবাসা ফরজ বা যাদের ভালবাসার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে? তদুত্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং তাঁদের সন্তানগণ। (যথাক্রমে তাফসীর ইবনে আরাবী, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২১২ ও তাফসীরে মাদারিক, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৫৫)

অন্য হাদীসে এসেছে-
ﻋﻦ ﺍٔﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ : ﺳُﺌﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍٓﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ﺍٔﻱ ﺍٔﻫﻞ ﺑﻴﺘﻚ ﺍٔﺣﺐّ ﺇﻟﻴﻚ؟ ﻗﺎﻝ : ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍٓﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ
অর্থাৎ, হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আপনার আহ্লে বাইতে মধ্যে কে আপনার অধিক প্রিয়? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা। (আল ইসতি‘আব, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৮০)

ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﻣَﻦْ ﺍَٔﺣَﺒَّﻬُﻤَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺍَٔﺣَﺒَّﻨِﻲ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺍَٔﺑْﻐَﻀَﻬُﻤَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺍَٔﺑْﻐَﻀَﻨِﻲ ” . ﻳَﻌْﻨِﻲ : ﺣَﺴَﻨًﺎ ، ﻭَﺣُﺴَﻴْﻨًﺎ
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি উভয়কে ভালবাসে, নিশ্চয়ই সে আমাকে ভালবাসে এবং যে উভয়ের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করল সে বস্তুত আমার সাথেই ঈর্ষা করল (অর্থাৎ হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)। (মিশকাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪৪; আহমাদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৮; তিরমিযি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪১)

হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত-
ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍٔﺷﺒﻪ ﺑﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﻭﺍﻟﺮﺍٔﺱ ، ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍٔﺷﺒﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍٔﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ
অর্থাৎ, আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বক্ষ থেকে মাথা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাদৃশ্য এবং হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বক্ষ থেকে নিচের দিকে পরিপূর্ণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাদৃশ্য। (মিশকাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৪০; তিরমিযি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৪৩; আহমদ)

অন্য হাদীসে এসেছে-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻫﻤﺎ ﺭﻳﺤﺎﻧﺘﺎﻱ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ
অর্থাৎ, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা দুনিয়াতে আমার বেহেশতী দু’টি ফুল। (মিশকাত)
ফুলের রূপ, বর্ণ, গন্ধ প্রভৃতি মূল থেকে উৎসরিত। ঐ মূলই হচ্ছেন হুজুর সাইয়্যিদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যিনি এই বেহেশতি দুই ফুলকে কাঁধে উঠাতেন, নামাযরত অবস্থায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাঁধে চড়ে বসলে রুকু-সিজদা বিলম্বিত করতেন, যাঁদের কান্না হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একেবারে অসহ্য ছিল। যাঁদেরকে বেহেশতি যুবকদের সর্দার বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যাঁদের স্মরণ আল্লাহর যিকির।
(সূরা রাদ : ২৮)
আহলে বাইতের প্রকৃত গোলামীতেই বেলায়ত অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁদের প্রতি প্রকৃত ভালবাসা প্রদর্শনের এবং শ্রদ্ধাভরে তাঁদের গোলামীতে আত্মনিয়োগ করার তৌফিক দান করুন। আমীন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।

নবীজীর গোলাম বলা যাবে কি না?

“নবিজীর গোলাম” বলা যাবে কি এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা আছে কিনা!! আবার অনেক সময়ে দেখা যায় যে, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি ( ﷺ) -এঁর গোলাম বললে কেউ কেউ তাতে কটাক্ষ করে।আজকে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো:
গোলাম ( ﻏﻼﻡ ) শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হল, ﺧﺎﺩﻡ (সেবক), ﻋﺎﻣﻞ (কর্মচারী) প্রভৃতি। অতএব রাসূলের গোলাম বা পীরের গোলাম বা খাদেম, কর্মচারী, সেবক বলাতে কোন আপত্তি নেই।যেমন,মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻻﻟﻔﺎﻅ ﻣﻦ ﺍﻻﺩﺏ -এ বর্ণিত হয়েছে যে-
ﻻﻳﻘﻮﻟﻦ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﻋﺒﺪﻱ ﻭﺍﻣﺘﻲ ﻛﻠﻜﻢ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻛﻞ ﻧﺴﺎﺀﻛﻢ ﺍﻣﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻟﻜﻦ ﻟﻴﻘﻞ ﻏﻼﻣﻲ ﻭﺟﺎﺭﻳﺘﻲ
অর্থাৎ, নবীজী ( ﷺ ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ ﻋﺒﺪﻱ (আঁমার বান্দাহ) বলোনা।তোমরা সবাই আল্লাহ’র বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ’র বান্দী।কিন্তু আঁমার গোলাম আঁমার চাকরানী বলতে পার।
(মুসলিম শরীফ)
এবার দেখুন: সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : ৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার :৫৬৮১।ইফাঃ অনুবাদ থেকে।
*মুহাম্মদ ইবনু রাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রা:) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদিস উল্লেখ করেছেন। (সে সবের একখানি হল) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রবকে পান করাও, তোমার রবকে খাবার দাও,তোমার রবকে উযু করাও। তিঁনি আরও বলেনঃ “তোমাদের কেউ (নিজেও) বলেছেনঃ আমার রব বলবেনা বরং বলবে আমার সায়্যিদ-সরদার বা নেতা,আমার মাওলা-মনিব।আর তোমাদের কেউ বলবে না,আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, আমার সেবক আমার সেবিকা।”
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)
এখানে সরাসরি গোলাম শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে এবং তা ব্যবহারের বৈধতাও দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজেকে খাদেম বা চাকর বা কর্মচারী অর্থে পীরের গোলাম বলে তা অবশ্যই জায়িয।প্রসংগত, হাদীস শরীফে ﻋﺒﺪﻱ (আমার বান্দাহ) বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
কাজেই শরয়ী পরিভাষায় ইবাদাতকারী হিসেবে কেউ তার গোলামকে বা কর্মচারীকে বা খাদেমকে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে হক্কানী পীরের ﻋﺒﺪ (আবদ তথা বান্দাহ) বলতে পারবে না। কেননা ইবাদতের একমাত্র মালিক আল্লাহ পাকই; এতে সন্দেহ নেই। অন্য যে কাউকেই হোক না কেন, ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য বা ইলাহ মনে করলে শিরক হবে; তবে এ অর্থ ছাড়া গোলাম অর্থে যদি ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) শব্দটি কেউ তার কর্মচারী বা খাদেমকে বলে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে গোলাম অর্থে পীরের ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) বলে এতে সমস্যা নেই। বরং তা হক্কানী পীরের প্রতি তা মুরীদের আদব ও ভক্তিরই বহিঃপ্রকাশ।
আর কোন সহীহ মুসলমান যখন নিজেকে নবীর বা পীরের ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) বা গোলাম বলে, নিশ্চয় সে কখনো এটা মনে করে না যে, নবীজি ﷺ বা হক্কানী পীর ইবাদাতের মালিক বা আল্লাহ হয়ে গেছেন।গোলাম অর্থে আব্দ এর ব্যবহারের বৈধতার ব্যাপারে স্বয়ং কুরআন শরীফেই এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
ﻗﻞ ﻳﺎﻋﺒﺎﺩﻱ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺳﺮﻓﻮﺍ ﻋﻠﻲ ﺍﻧﻔﺴﻬﻢ ﻻﺗﻘﻨﻄﻮﺍ ﻣﻦ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
অর্থাৎ, হে নবী!আঁপনি তাদেরকে সম্বোধন করুন,হে আঁমার বান্দাহগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ,আল্লাহ’র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না।
এ আয়াতে ﻗﻞ ﻳﺎﻋﺒﺎﺩﻱ (হে আঁমার বান্দাগণ) এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়।
*এক,আল্লাহ বলেন- ওহে আঁমার বান্দাহগণ;
*দুই,হুযুর পাক ﷺ কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,হে নবী আঁপনি বলুন,হে আঁমার (অর্থাৎ,আঁপনার) বান্দাহগণ।এ দ্বিতীয় অর্থে রাসূলুল্লাহ’র বান্দাহ বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজীর গোলাম এবং উম্মত।
অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন। আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন –
ﺑﻨﺪﮦ ﺧﻮﺩ ﺧﻮﺍﻧﺪ ﺍﺣﻤﺪ ﺩﺭ ﺭﺷﺎﺩ * ﺟﻤﻠﮧ ﻋﺎﻟﻢ ﺭﺍ ﺑﺨﻮﺍﻥ ﻗﻞ ﯾﺎ ﻋﺒﺎﺩ
অর্থাৎ, সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর স্বীয় বান্দাহ বলেছেন। কুরআন শরীফে দেখুন ﻗﻞ ﻳﺎﻋﺒﺎﺩﻱ বলা হয়েছে।
ইযালাতুল খফা গ্রন্থে শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ আর রিয়াযুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদৃতি দিয়ে বলেছেন যে, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
ﻗﺪ ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻜﻨﺖ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺧﺎﺩﻣﻪ
অর্থাৎ,আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর বান্দাহ ও খাদেম ছিলাম।
অতএব,প্রমাণিত হল যে, ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) শব্দটি গোলাম অর্থে আল্লাহকে ছাড়াও ব্যবহার করা যায়।
আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের ৪ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ‘মাওলা’ শব্দটি নিজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেন।যেমন,আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন…
ﻓَﺎِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻫُﻮَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻩُ ﻭَﺟِﺒْﺮِﻳْﻞُ ﻭَﺻَﺎﻟِﺢُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤَﻠَﺎ ﺋِﻜَﺔُ ﺑَﻌْﺪَ ﺫٰﻟِﻚَ ﻇَﻬِﻴْﺮ -
অবশ্যই মহান আল্লাহ তাঁর [প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র] ‘মাওলা’।হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামও তাঁর ‘মাওলা’ এবং নেককার ঈমানদারগণও তাঁর ‘মাওলা’।এছাড়া ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। হাদিস শরীফেও রয়েছে,রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ফযিলত বর্ণানা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন,আমি যার ‘মাওলা’ আলীও তার ‘মাওলা’। মাওলানা’ বা ‘মওলানা’ শব্দটি আরবি। এটি ‘মাওলা’ ও ‘না’ দুটি শব্দে ঘটিত। ‘না’ একটি সর্বনাম। এর অর্থ আমরা বা আমাদের। আর ‘মাওলা’ শব্দের প্রায় ৩০টি অর্থ আছে। যেমন—প্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনিব, দাস, চাচাতো ভাই, প্রতিনিধি, অভিভাবক, নিকটবর্তী, আত্মীয়, নেতা, গুরু, প্রতিপালক, সর্দার, প্রেমিক, প্রতিবেশী, আনুগত্য, প্রার্থনা, নীরবতা, ইবাদত,দণ্ডায়মান ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র
*১. বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ : ৪/৯৭৮ *২. ফাতাওয়ায়ে আশরাফিয়া,পৃ: ৭০
*৩. উমদাতুর রিআয়াহ : ২/৩২৮
*৪. লিছানুল আরব : ৮/৪৫২
*৫. আল-মিসবাহুল মুনির,পৃ: ৫৯১
এখানে মাওলা বা মাওলানা শব্দটি কি শুধু মূল অর্থেই (আল্লাহকে বুঝাতে) বসে নাকি আরও অনেক অর্থে বসে আপনারাই ভাবুন।
হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর একটা উক্তি দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।খোলাফায়ে রাশেদিনে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর যুগ চলছে।একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম হোসাইন ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মধ্যে কোনো এক ইস্যু নিয়ে শিশুসুলভ তর্ক হয়েছে। তর্কের এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন ‘তুমি হচ্ছ আঁমার নানাজানের গোলামের বাচ্চা’।
এতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত হলেন এবং স্বীয় পিতা আমীরুল মো’মিনীন হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাষ্ট্রীয় বিচারের আয়োজন করলেন। সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সবাই উপস্থিত।রাষ্ট্রীয় প্রধানের ছেলেকে এত বড় কথা বলে ফেললেন হযরত
ইমাম হুছাইন (রাঃ)! এটা বিনা বিচারে ছাড়া যায়না। তাই তাঁর বিচার হতে হবে,কিন্তু এতে সবাই হতবম্ভ। ইমাম হুসাইন (রা:) বিচারের সম্মুখীন! এই বিচারে সবাই অবাক
নয়নে থাকিয়ে রইলেন,কিযে হয় সেই অপেক্ষায়। হযরত ইমাম হুছাইন (রাঃ) বিচার- আদালতে হাজির।
বিচারপতি স্বয়ং ওমর ফারুক (রাঃ)।
হযরত ওমর ফারুক (রা:),হয়রত ইমাম হুসাইন (রা:) কে জিজ্ঞেস
করলেন,আঁপনি কি আমার ছেলে কে গোলামের বাচ্ছা গোলাম বলেছেন।দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ইমাম,হ্যাঁ আমি বলেছি, “।হযরত ওমর ফারুক (রা:) জিজ্ঞেস করলেন,আঁপনি এই কথা কেন বলেছেন,তখন হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন,আমি ভুল কি বললাম,আঁপনিতো,আঁমার নানাজানের গোলাম,তাই আপনার
ছেলে,গোলামের বাচ্ছা গোলাম।
এই উত্তর শুনে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বললেন,আঁপনি কি এইটা লিখে দিতে পারবেন? হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন, হাঁ পারবো।
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এ
লিখা নিয়ে উপস্থিত সকলকে স্বাক্ষী রেখে বললেন,আপনারা সবাই স্বাক্ষী থাকুন রাসূলের নাতী, জান্নাতের
যুবকগনের সর্দার আমাকে “রাসূলের গোলাম” বলেছেন।সুতরাং এটাই আমার নাজাতের উছিলা। অতএব
আপনারা আমার ইন্তিকালের পর কাফনের ভেতর এ লেখাটি দিয়ে দেবেন। এটাই আমার আরজী।
[আল কউলুল বদী -৮৬৫ ]
লক্ষ্য করুন: একই শব্দ উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হল।এখন কেন ব্যবহৃত হল? কোন কারনে ব্যবহৃত হল? তা আগে বুঝতে হবে? কোন কিছু না জেনে বুঝে শিরকের ফতোয়া দিলে হয় না।যেমন কেউ বললেন আমি এ জায়গার মালিক।এখন এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি কি নাস্তিক হয়ে গেল বা শিরক করলো বা আল্লাহর সাথে নিজেকে মালিক বলে ঘোষনা দিল।আর এখানে মালিক কথাটি কোন অর্থে ব্যবহার হল? তা বুঝতে হবে? অথবা ঐ ব্যক্তির মনে আদৌ এ ধরনের খেয়াল ছিল কি না? তাও জানা দরকার।আর আমাদের আপত্তি টা এখানেই।
আমরা তো নিজেদের “নবিজীর গোলাম বলি ” নবিজীকে খোদা হিসেবে নয় বরং আমরা এটা মনে করি যে,বরং আমরা এটাই বিশ্বাস করি যে,নবীপ্রেমই খোদা প্রাপ্তির পুর্বশর্ত ।কারন আল্লাহ পাক স্বয়ং কোরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন।আঁমাকে কেউ ভালবাসতে চাইলে কিংবা আঁমার ভালবাসা পেতে চাইলে,সে যেন আঁমার হাবীবের আনুগত্য করে,এক কথায় আঁমার নবীর গোলামী করে (অর্থাৎ,আল্লাহর বন্দেগী করা,এবং নবীর গোলামী করা)।আর এজন্য আল্লাহর হাবীব ইরশাদ করেছেন, ” ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ পরিপূর্ন ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত আঁমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার মাতাপিতা,সন্তান-সন্তুতি, মানুষ ও সবকিছুর চেয়ে।
[বুখরী শরীফ ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা]
সুতরাং “নবিজীর গোলাম” বলা যাবে এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা নেই।

আল্লাহকে ভালবাসতে চাইলে নবী পাককে সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে।

কোর’আনে কারীমের আয়াতঃ _______________ আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর। সূরাহ আল ইমরান-৩১
এখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ নিয়ে প্রশ্ন। এ অনুসরণের ফলাফল কি? এর পেছনে কী কারণ থাকে?
ইমাম আযহারীর তাফসীরঃ ______________
ইমাম আযহারী বলেন, ﻣﺤﺒﺔ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻃﺎﻋﺘﻪ ﻟﻬﻤﺎ ﻭﺍﺗﺒﺎﻋﻪ ﺃﻣﺮﻫﻤﺎ ; ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ :ﻗﻞ ﺇﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﺤﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻧﻲ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বান্দার ভালবাসা হচ্ছে তাদের উভয়ের আনুগত্য করা এবং তাদের নির্দেশ অনুসরণ করা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﻗﻞ ﺇﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﺤﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻧﻲ রেফারেন্সঃ আল জামিউ লি আহকামিল কোর’আন লিল কুরতুবী, সুরা আল ইমরানঃ ৩১
প্রকৃত ভালবাসা তখনই প্রকাশ পায় যখন হাবীব তার মাহবুবকে অনুসরণ করে। এই অনুসরণ ই হচ্ছে তার ভালবাসার প্রমাণ।
হাফিয ইবনুল কায়্যিমের আন্ডারস্ট্যান্ডিং _____
হাফিয ইবনুল কায়্যিম বলেন, ভালবাসার শর্ত হচ্ছে তুমি যাকে ভালবাস, কোনরূপ অবাধ্যতা ছাড়া তুমি তাকে মেনে চলবে , অনুসরণ করবে। রেফারেন্সঃ শারহুন নূনিয়্যাহঃ ২/১৩৪
ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যা আরো বলেন, ﻓﺈﻥ ﺃﻣﺘﻪ ﻳﺤﺒﻮﻧﻪ ﻟﻤﺤﺒﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ অর্থাৎ তাঁর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উম্মতগণ তাঁকে ভালবাসবে তাঁর প্রতি আল্লাহর ভালবাসার কারণে। এরপর তিনি বলেছেন, ﻓﻬﻲ ﻣﺤﺒﺔ ﻣﻦ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﻣﺤﺒﺔ ﺍﻟﻠﻪ অর্থাৎ এমন ভালবাসাই আল্লাহর ভালবাসাকে আবশ্যক করে দেয়। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসলে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে অবশ্যই ভালবাসেন। রেফারেন্সঃ জালা উল আফহাম লি ইবনিল কায়্যিম- ২০৫ এখন সূরা আল ইমরানের ঐ আয়াতটি পড়ুন আর হাফিয ইবনুল কায়্যিমের কথাগুলো চিন্তা করুন। যা পাবেন তা হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ এর অর্থ হচ্ছে তাঁকে ভালবাসা। এ গেল সুরা আল ইমরান এর আয়াত সম্পর্কে আলোচনা।
এবার চলুন, কোর’আনে কারীমের অন্য একটি আয়াত, যে আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরূনে কেরাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা ওয়াজিব বলেছেনঃ
কোর’আনে কারীমের আয়াতঃ _______________ ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺁَﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺃَﺑْﻨَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺇِﺧْﻮَﺍﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺸِﻴﺮَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻝٌ ﺍﻗْﺘَﺮَﻓْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗِﺠَﺎﺭَﺓٌ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻥَ ﻛَﺴَﺎﺩَﻫَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺎﻛِﻦُ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻧَﻬَﺎ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺟِﻬَﺎﺩٍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻓَﺘَﺮَﺑَّﺼُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘِﻴﻦَ বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান- যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। সূরা তাওবাহ ২৪
আয়াতের তাফসীরঃ ___________ ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ﻭﻓﻲ ﺍﻵﻳﺔ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻮﺏ ﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ، ﻭﻻ ﺧﻼﻑ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺑﻴﻦ ﺍﻷﻣﺔ
অর্থাৎ এ আয়াতের মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা যে ওয়াজিব, তার দলীল বিদ্যমান। আর উম্মতের মধ্যে এ নিয়ে কোন এখতেলাফ নেই। রেফারেন্সঃ আল জামিউ লি আহকামিল কোর’আন, সূরা তাওবাহঃ ২৪
ইবনু তাইমিয়্যাহ এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং __________________ হাফিয ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন, ﻭﻣﻦ ﺣﻘِّﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺃﺣﺐَّ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻣﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻭﻭﻟﺪﻩ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺨﻠﻖ؛ ﻛﻤﺎ ﺩﻝَّ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ – ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ -: }ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺁَﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺃَﺑْﻨَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺇِﺧْﻮَﺍﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺸِﻴﺮَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻝٌ ﺍﻗْﺘَﺮَﻓْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗِﺠَﺎﺭَﺓٌ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻥَ ﻛَﺴَﺎﺩَﻫَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺎﻛِﻦُ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻧَﻬَﺎ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺟِﻬَﺎﺩٍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻓَﺘَﺮَﺑَّﺼُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘِﻴﻦَ
(উম্মতের উপর) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হক হচ্ছে, মুমিনের নিকট তার নিজ থেকে, তার সন্তান থেকে এবং সমগ্র সৃষ্টি থেকে তিনি অধিকতর প্রিয় হবেন। দলীল হচ্ছে কোর’আনের আয়াত- (অনুবাদ) বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। সূরা তাওবাহ ২৪
রেফারেন্সঃ তাকরীবুস সারিমিল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল লি ইবনি তাইমিয়্যাহঃ ১/২৫৯
সারকথাঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার নির্দেশনা কোর’আনে কারীমে বিদ্যমান। এ উম্মতের কেউ তা কখনো অস্বীকার করেনি। এখন এই ফেতনার যামানায় কেউ যদি তা অস্বীকার করে, তবে হয়তঃ সেটা তার না জানার কারণে হতে পারে, নতুবা জেনে শুনে রাসুল সাল্লামের ভালবাসার বিরুদ্ধে এই কমবখত দুশমনি করছে। আর মুমিন অবস্থায় রাসুল সাল্লামকে অনুসরণ করাই হচ্ছে তাঁকে ভালবাসা।আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত ভালবাসার নজীর। ______________________________
তো, বক্তা সাহেব, আমীর হামযা যে বলিয়া উঠিলেন , “কোর’আনে কারীমে আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে বলেছেন, ভালবাসতে বলেন নি”———–!!!! সাজিয়া গুজিয়া ইস্টেজে (স্ট্যাজে) বসিয়া মাইকিং, সাউন্ড হাইকিং আর জনতার লাইকিং লইয়া যদি এমন তক্তা মার্কা বক্তা এই সকল অপপ্রচার করিতে থাকেন, তাহা হইলে তো মুসলমান সমাজের একদম সাড়ে ১২টা বাজাইয়া দিবেন। আর মুসলমান তখন জিন্দা লাশ হইয়া বাঁচিতে বাঁচিতে কোন রকম কবর পর্যন্ত গিয়া পৌঁছিবে। অপপ্রচার বিনাশে লেখাটি কপি / শেয়ার করিবেন।