শানে রেসালত অবমাননাকারীদের শরয়ী বিধান
নিশ্চয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁকে কেন্দ্র করেই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি জগতের সকল কিছুর আয়োজন করেছেন। আল্লাহ তায়ালাই তাঁকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমুন্নত করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে -
ﻭَﺭَﻓَﻌْﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺫِﻛْﺮَﻙَ
‘‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।”(৯৪/৪)
তিনিই সেই সত্ত্বা যাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা মাকামে মাহমূদ দান করা হয়েছে। তিনিই শাফায়াতে কুবরার অধিকারী। তিনিই হাউযে কাউছারের পানি বন্টনকারী। রিসালাতের পুর্ণতা দানকারী। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাব বিস্তারকারী। সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামীনের পরেই তাঁর স্থান। কবির ভাষায় -
ﺑﻌﺪ ﺍﺯ ﺧﺪﺍ ﺑﺰﺭﮒ ﺗﻮﺋﯽ ﻗﺼﮧ ﻣﺨﺘﺼﺮ
তাঁর মহিমা ও মাহাত্ম সম্পর্কে যা কিছুই লেখা হোক না কেন তা তুলনায় নিতান্তই কম। তাই সর্ব যুগের, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। অতএব তাঁর প্রতি সৃষ্টিকুলের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা এবং স্বতঃস্ফুর্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করা অতীব জরুরী। যে সব কথা ও কাজ আদবের পরিপšী’ কিংবা যদ্বারা তিনি ব্যথিত হন, তা থেকে বেঁচে থাকা সকলের অবশ্য কর্তব্য। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা.) এর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনকে সকলের উপর ওয়াজিব করেদিয়েছেন।
সম্বোধনের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
রাসূল (সা.) কে সম্বোধনের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন -
ﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ ﺩُﻋَﺎﺀَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻛَﺪُﻋَﺎﺀِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ
অর্থাৎ যখন তোমরা রাসূল (সা.) কে কোন প্রয়োজনে আহবান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তাঁর নাম নিয়ে “ইয়া মুহাম্মদ” বলবে না। এটা বেআদবী। বরং সম্মান সূচক উপাধি দ্বারা “ইয়া রাসূলাল্লাহ” অথবা “ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ” বলবে।
(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-পৃঃ-৯৫৫)
স্বয়ং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সর্বত্রই রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের নমুনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পবিত্র কুরআনে যত নবীকে সম্বোধন করা হয়েছে তা তাঁদের আসল নাম ধরেই করা হয়েছে। যেমন-
ﻳَﺎ ﺁَﺩَﻡُ ﺍﺳْﻜُﻦْ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺯَﻭْﺟُﻚَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
“হে আদম, তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর।” (২/৩৫)
ﻭَﻣَﺎ ﺗِﻠْﻚَ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻚَ ﻳَﺎ ﻣُﻮﺳَﻰ
“হে মূসা,তোমার ডান হাতে ওটা কি ?” (২০/১৭)
ﻳَﺎ ﺩَﺍﻭُﻭﺩُ ﺇِﻧَّﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻙَ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি।”
সম্বোধনের এ রীতি অনুযায়ী এটাই সঙ্গত ছিল যে, আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা.) কেও “ইয়া মুহাম্মদ” বা “ইয়া আহমদ” নামে ডাকবেন। কিন্তু কুরআনের কোথাও নাম ধরে ডাকেননি। বরং এমনভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, যাতে তাঁর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন হয়। যেমন -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
“হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার করুন।” (৫/৬৭)
এভাবে কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ বলে, কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ বলে, আবার কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ বলে পবিত্র কুরআনে সম্বোধন করা হয়। এভাবে মহা গ্রন্থ আলকুরআনে রাসূল (সা.) কে বিশেষ সম্মানের সাথে সম্বোধন করে তাঁর শানে রেসালতের সুমহান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রাসূল (সা.) এর প্রতি শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺭَﺍﻋِﻨَﺎ ﻭَﻗُﻮﻟُﻮﺍ ﺍﻧْﻈُﺮْﻧَﺎ ﻭَﺍﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻭَﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ
“হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রায়িনা-’ বলো না ‘উনযুরনা-’ বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (২/১০৪)
যেহেতু ‘রায়িনা’ শব্দের দ্বারা সম্বোধন করলে সম্মান প্রদর্শন হয় না তাই আল্লাহ তায়ালা মুমিনগণকে তাঁর রাসূলের শানে ‘উনযুরনা-’ শব্দ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডেকে কষ্ট না দেয়ার নির্দেশ
যখন বনী তামীমের একটি প্রতিনিধিদল মদীনায় উপনিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আপন ঘরে অবস্থান করছিলেন। ঐ লোকেরা দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করে। “হে মুহাম্মদ, তুমি আমাদের দিকে বেরিয়ে এসো।” রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি তাদের এই অশিষ্ট আচরন আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় ঠেকল এবং সঙ্গে সঙ্গে নাযিল হলো-
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨَﺎﺩُﻭﻧَﻚَ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺤُﺠُﺮَﺍﺕِ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻘِﻠُﻮﻥَ، ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺻَﺒَﺮُﻭﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺮُﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻟَﻜَﺎﻥَ ﺧَﻴْﺮًﺍ
“যারা ঘরের পেছন থেকে আপনাকে উচ্চ স্বরে ডাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ, আপনি বের হয়ে ওদের কাছে আসা পর্যন্ত যদি ওরা ধৈর্য ধারণ করত, তাই ওদের জন্য উত্তম হত।” (৪৯/৪-৫)
কথা বলার সময় সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺮْﻓَﻌُﻮﺍ ﺃَﺻْﻮَﺍﺗَﻜُﻢْ ﻓَﻮْﻕَ ﺻَﻮْﺕِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻬَﺮُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﻘَﻮْﻝِ ﻛَﺠَﻬْﺮِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺤْﺒَﻂَ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
“হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেরুপ উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারন এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে।” (৪৯/২)
অতএব উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যে সকল অধিকার অবধারিত এবং তিনি যে মর্যাদা, সম্ভ্রম ও গৌরবের অধিকারী পবিত্র কুরআনের এসব আয়াত দ্বারা তা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। তাই তাঁর অনুসারি, ভক্ত ও অনুরাগীদের দ্বারা তিনি নন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ বা ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা তিনি নিন্দিতও হয়েছেন প্রচুর। মক্কার আবু জাহেল, আবু লাহাব, ওতবা ও শায়বাদের বিভিন্ন রকম গালি-গালাজ ও নির্যাতন থেকে শুরু করে, ইয়াহুদী সাবাঈ গোষ্ঠির আবু রাফে, কা’ব ইবনে আশরাফের বিভিন্ন রকম কটুক্তি সহ আধুনিক বিশ্বের ডেনমার্কের বহুল প্রচলিত “জিল্যান্ড পোষ্টেন” পত্রিকায় মহানবী (সা.) এর ব্যাঙ্গ কার্টুন ছাপানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশে “প্রথম আলো” পত্রিকায় তার পুণরাবৃত্তির ঘটনা, কতিপয় বিকারগ্রস্ত শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক বিভিন্নরূপ কুৎসা রটনা ও সালমান রুশদী, প্রফেসর হেন্স এবং তসলিমা নাসরীনদের বিভিন্ন রকম কটুক্তি সহ এরূপ হাজারো ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। তাই বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও প্রাচ্যবিদ ডব্লিউ ডব্লিউ মন্টগোমারী ওয়াট তাঁর "সঁযধসসধফ ধঃ সবফরহধ" শিরোনামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন-“পৃথিবীর ইতিহাসে মুহাম্মদ অপেক্ষা অন্য কোন মহামানবকে অধিকতর নিন্দা বা কলুষিত করা হয় নাই।” (সীরাত বিশ্ব কোষ-৪/৮)
অবমাননাকারীর অশুভ পরিণাম
এজন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বীয় গ্রন্থে রাসূল (সা.) কে কষ্ট দেয়া হারাম ঘোষণা করেছেন। এবং উম্মত তাঁর ছিদ্রান্বেষণকারী ও তাঁর প্রতি অশ্লীল বাক্য উচ্চারণকারীর মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছে। পরকালে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তো আছেই দুনিয়াতেও তাদের কঠিন পরিণতি বরণ করতে হয়, অথবা লাঞ্চনার জীবন যাপন করতে হয়। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ
“যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (৩৩/৫৭)
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে -
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ
“যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৯/৬১)
মৃত্যুদন্ডই তার শাস্তি
আবু দাউদ শরীফের এক বর্ণনায় আছে -
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻰٍّ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥَّ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳَّﺔً ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺸْﺘِﻢُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭَﺗَﻘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺨَﻨَﻘَﻬَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﻓَﺄَﺑْﻄَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺩَﻣَﻬَﺎ . ( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ )
“হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন ইয়াহুদী মহিলা রাসূল (সা.) কে গালিগালাজ করত এবং তাঁর ছিদ্রান্বেষণ করত। একারণে এক ব্যক্তি তাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর রাসূল (সা.) তার রক্তকে মূল্যহীন ঘোষণা করলেন।”
অতএব এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শানে রেসালতের অবমাননাকারীর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রহ.) তাঁর আসসারিমুল মাসলুল গ্রন্থে এরূপ আরো অনেক হাদিস নকল করে বলেন-
ﻓﻬﺬﻩ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﻛﻠﻬﺎ ﺗﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺴﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﻳﺆﺫﻳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻓﺈﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺼﺪ ﻗﺘﻠﻪ ﻭ ﻳﺤﺾ ﻋﻠﻴﻪ ﻷﺟﻞ ﺫﻟﻚ ﻭ ﻛﺬﻟﻚ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﺫﻟﻚ
“অতএব এসব হাদিস দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) ঐসব কাফেরদেরকে হত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করতেন যারা তাঁকে গালিগালাজ করত এবং লোকজনকে এজন্য উৎসাহিত করতেন। আর সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূল (সা.) এর নির্দেশে তা বাস্তবায়ন করতেন।”
সুতরাং যে কেহ রাসূলুল্লাহ (সা.) কে হেয় প্রতিপন্ন করে, গালি দেয়, দোষ চর্চা করে অথবা তাঁর সত্তা, বংশধারা বা চরিত্রে কালিমা লেপন করে অথবা তিরষ্কার ও নিন্দা করে মর্যাদা খাটো করে, তাঁর প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উত্থাপন করে এবং তাঁর দোষ সাব্যস্ত করার জন্য কোন কিছুর সঙ্গে তাঁকে উপমা দেয় বা ব্যাঙ্গ কার্টুন করে ইত্যাদীর যে কোন ভাবে রাসূল (সা.) কে কষ্ট দেয়া সুস্পষ্ট কুফরী, এ ধরনের কুফরীর কারণে ঐ ব্যাক্তিকে চাই সে পূর্ব থেকে মুসলমান থাকুক বা কাফের থাকুক হত্যা করা ইসলামী শরীয়তের বিধান।
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭ : [ ﺃﺟﻤﻊ ﻋﻮﺍﻡ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺣﺪ ﻣﻦ ﺳﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﻘﺘﻞ ]
“আল্লামা আবূ বকর ইবনুল মুনযির বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গালমন্দকারীর মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে সমস্ত ফকীহ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।” (আশ শিফা -২/৪৭৪)
ﻭ ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﺤﻨﻮﻥ : [ ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺷﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﺍﻟﻤﺘﻨﻘﺺ ﻟﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﻭ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪ ﺟﺎﺭ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻌﺬﺍﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻭ ﺣﻜﻤﻪ ﻋﻨﺪ ﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﻭ ﻣﻦ ﺷﻚ ﻓﻲ ﻛﻔﺮﻩ ﻭ ﻋﺬﺍﺑﻪ ﻛﻔﺮ ]
“মুহাম্মদ ইবনে সাহনূন বলেন, আলিমগণ এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গালমন্দকারী ও তাঁর ছিদ্রান্বেষণকারী কাফির। তাঁর জন্য আল্লাহর শাস্তিবিধানের সতর্কবাণী অবধারিত এবং উম্মতের নিকট তার শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। আর যে ব্যক্তি তার কুফরী ও শাস্তি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে সেও কাফির।”(আশ্ শিফা-২/৪৭৬, সীরাত বিশ্বকোষ-৪/৫০৫-৫০৭)
নবীগণের অবমাননাকরীর তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়
নবীগণের শানে বেআদবী করলে তার শাস্তি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড। এরূপ জঘন্যতম অপরাধের পর যদি ঐ ব্যক্তি তাওবাও করে তবে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ দুনিয়ার শাস্তি তার জন্যে অবধারিত। কেননা নবী-রাসূলের অবমাননা সমস্ত কুফরির মূল। (কামূসুল ফিকহ : ৪/১৯৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৩৮৬)
অতএব নবী-রাসূলগণের অবমাননাকারীরা জঘন্যতম কাফের। তাদেরকে যারা কাফের বলবে না তারাও কাফের। (ইকফারুল মুলহিদীন : ৫৪)
No comments:
Post a Comment