কোর’আনে কারীমের আয়াতঃ _______________ আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর। সূরাহ আল ইমরান-৩১
এখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ নিয়ে প্রশ্ন। এ অনুসরণের ফলাফল কি? এর পেছনে কী কারণ থাকে?
ইমাম আযহারীর তাফসীরঃ ______________
ইমাম আযহারী বলেন, ﻣﺤﺒﺔ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻃﺎﻋﺘﻪ ﻟﻬﻤﺎ ﻭﺍﺗﺒﺎﻋﻪ ﺃﻣﺮﻫﻤﺎ ; ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ :ﻗﻞ ﺇﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﺤﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻧﻲ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বান্দার ভালবাসা হচ্ছে তাদের উভয়ের আনুগত্য করা এবং তাদের নির্দেশ অনুসরণ করা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﻗﻞ ﺇﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﺤﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻧﻲ রেফারেন্সঃ আল জামিউ লি আহকামিল কোর’আন লিল কুরতুবী, সুরা আল ইমরানঃ ৩১
প্রকৃত ভালবাসা তখনই প্রকাশ পায় যখন হাবীব তার মাহবুবকে অনুসরণ করে। এই অনুসরণ ই হচ্ছে তার ভালবাসার প্রমাণ।
হাফিয ইবনুল কায়্যিমের আন্ডারস্ট্যান্ডিং _____
হাফিয ইবনুল কায়্যিম বলেন, ভালবাসার শর্ত হচ্ছে তুমি যাকে ভালবাস, কোনরূপ অবাধ্যতা ছাড়া তুমি তাকে মেনে চলবে , অনুসরণ করবে। রেফারেন্সঃ শারহুন নূনিয়্যাহঃ ২/১৩৪
ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যা আরো বলেন, ﻓﺈﻥ ﺃﻣﺘﻪ ﻳﺤﺒﻮﻧﻪ ﻟﻤﺤﺒﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ অর্থাৎ তাঁর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উম্মতগণ তাঁকে ভালবাসবে তাঁর প্রতি আল্লাহর ভালবাসার কারণে। এরপর তিনি বলেছেন, ﻓﻬﻲ ﻣﺤﺒﺔ ﻣﻦ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﻣﺤﺒﺔ ﺍﻟﻠﻪ অর্থাৎ এমন ভালবাসাই আল্লাহর ভালবাসাকে আবশ্যক করে দেয়। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসলে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে অবশ্যই ভালবাসেন। রেফারেন্সঃ জালা উল আফহাম লি ইবনিল কায়্যিম- ২০৫ এখন সূরা আল ইমরানের ঐ আয়াতটি পড়ুন আর হাফিয ইবনুল কায়্যিমের কথাগুলো চিন্তা করুন। যা পাবেন তা হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ এর অর্থ হচ্ছে তাঁকে ভালবাসা। এ গেল সুরা আল ইমরান এর আয়াত সম্পর্কে আলোচনা।
এবার চলুন, কোর’আনে কারীমের অন্য একটি আয়াত, যে আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরূনে কেরাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা ওয়াজিব বলেছেনঃ
কোর’আনে কারীমের আয়াতঃ _______________ ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺁَﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺃَﺑْﻨَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺇِﺧْﻮَﺍﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺸِﻴﺮَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻝٌ ﺍﻗْﺘَﺮَﻓْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗِﺠَﺎﺭَﺓٌ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻥَ ﻛَﺴَﺎﺩَﻫَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺎﻛِﻦُ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻧَﻬَﺎ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺟِﻬَﺎﺩٍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻓَﺘَﺮَﺑَّﺼُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘِﻴﻦَ বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান- যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। সূরা তাওবাহ ২৪
আয়াতের তাফসীরঃ ___________ ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ﻭﻓﻲ ﺍﻵﻳﺔ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻮﺏ ﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ، ﻭﻻ ﺧﻼﻑ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺑﻴﻦ ﺍﻷﻣﺔ
অর্থাৎ এ আয়াতের মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা যে ওয়াজিব, তার দলীল বিদ্যমান। আর উম্মতের মধ্যে এ নিয়ে কোন এখতেলাফ নেই। রেফারেন্সঃ আল জামিউ লি আহকামিল কোর’আন, সূরা তাওবাহঃ ২৪
ইবনু তাইমিয়্যাহ এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং __________________ হাফিয ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন, ﻭﻣﻦ ﺣﻘِّﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺃﺣﺐَّ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻣﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻭﻭﻟﺪﻩ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺨﻠﻖ؛ ﻛﻤﺎ ﺩﻝَّ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ – ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ -: }ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺁَﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺃَﺑْﻨَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺇِﺧْﻮَﺍﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺸِﻴﺮَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻝٌ ﺍﻗْﺘَﺮَﻓْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗِﺠَﺎﺭَﺓٌ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻥَ ﻛَﺴَﺎﺩَﻫَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺎﻛِﻦُ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻧَﻬَﺎ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺟِﻬَﺎﺩٍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻓَﺘَﺮَﺑَّﺼُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘِﻴﻦَ
(উম্মতের উপর) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হক হচ্ছে, মুমিনের নিকট তার নিজ থেকে, তার সন্তান থেকে এবং সমগ্র সৃষ্টি থেকে তিনি অধিকতর প্রিয় হবেন। দলীল হচ্ছে কোর’আনের আয়াত- (অনুবাদ) বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। সূরা তাওবাহ ২৪
রেফারেন্সঃ তাকরীবুস সারিমিল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল লি ইবনি তাইমিয়্যাহঃ ১/২৫৯
সারকথাঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার নির্দেশনা কোর’আনে কারীমে বিদ্যমান। এ উম্মতের কেউ তা কখনো অস্বীকার করেনি। এখন এই ফেতনার যামানায় কেউ যদি তা অস্বীকার করে, তবে হয়তঃ সেটা তার না জানার কারণে হতে পারে, নতুবা জেনে শুনে রাসুল সাল্লামের ভালবাসার বিরুদ্ধে এই কমবখত দুশমনি করছে। আর মুমিন অবস্থায় রাসুল সাল্লামকে অনুসরণ করাই হচ্ছে তাঁকে ভালবাসা।আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত ভালবাসার নজীর। ______________________________
তো, বক্তা সাহেব, আমীর হামযা যে বলিয়া উঠিলেন , “কোর’আনে কারীমে আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে বলেছেন, ভালবাসতে বলেন নি”———–!!!! সাজিয়া গুজিয়া ইস্টেজে (স্ট্যাজে) বসিয়া মাইকিং, সাউন্ড হাইকিং আর জনতার লাইকিং লইয়া যদি এমন তক্তা মার্কা বক্তা এই সকল অপপ্রচার করিতে থাকেন, তাহা হইলে তো মুসলমান সমাজের একদম সাড়ে ১২টা বাজাইয়া দিবেন। আর মুসলমান তখন জিন্দা লাশ হইয়া বাঁচিতে বাঁচিতে কোন রকম কবর পর্যন্ত গিয়া পৌঁছিবে। অপপ্রচার বিনাশে লেখাটি কপি / শেয়ার করিবেন।
No comments:
Post a Comment