Saturday, September 15, 2018

হজরত শাহ পরান (র)

হযরত শাহ পরান (রঃ) এর জীবনী

 –বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) প্রবর্তিত ইসলাম। ধর্মেও বান্দাকে সমুন্নত রেখে সমকালীন মুসলমান সমাজেও গোষ্ঠীর তৌহিদ ও রেছালত এর ঈমানকে পূর্বজাগ্রত সমুজ্জল করতে যুগে যুগে অসংখ্য মুসলমান আধ্যাত্মিক ব্যক্তির আগমন ঘটেছে এ বিশ্বে। বিভিন্ন অভিধায় তাঁরা বিশেম্বিত, পরিচিত। এ শ্রেনীর পূন্যাত্মাদের মধ্যে আউলিয়া দরবেশগণ অন্যতম। পথভ্রষ্ট নির্জীব মুসলমানদেরকে তাঁরা দিয়েছেন নতুন করে ঈমানী শক্তি যুগিয়েছেন। নব তৌহিদী আত্ম পরিচয়ে জীবন গঠনের প্রেরণা। অন্য দিকে অসহায় মুসলমান সমাজ ও নব বলে বলীয়ান হয়েছে এসব মহান ধার্মিক ব্যক্তিদেও সান্নিধ্য, শিক্ষা ও দীক্ষা লাভে।

দেখা গেছে, যুগে যুগে যেখানে মুসলমানগণ হয়েছে নির্যাতিত অথবা ইসলাম ধর্ম হয়েছে দূর্বল, কুলষিত কিংবা আক্রান্ত, পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছেতে সেখানেই আর্বিভূত হয়েছেন এসব আউলিয়া দরবেশগণ। তাঁদের পবিত্র সাধনা ও আধ্যাত্মিকগণ। তাঁদের পবিত্র সাধনা ও আধ্যাত্মিক কর্মে মুসলমানরা লাভ করেছেন আবার নতুনভাবে আত্মপরিচিতি। বলীয়ান হয়েছে নতুন করে তৌহিদ ও রেছালতের তেজে। তাঁদের হাতেই সমৃদ্ধ প্রসার ঘটেছে ইসলাম প্রচারের পরিসীমার। তাঁরাই সবাই ছিলেন যুগ নকীব। কিন্তু এটাই সর্বশেষ কথা নয়। তাঁদের অবদানের পরিসীমারে ব্যাপ্তি ওখানেই শেষ হয়ে যায়নি। তাঁদের কওে বিশ্ব মুসলিম সমাজকে। করবে অনন্তকাল ধরে। সেদিন আপন সাধনা কর্ম দিয়ে তাঁদের সে জীবনধারা এবং কর্মকীর্তি আজ ও উজ্জীবিত করে বিশ্বেও সর্ব ভূখন্ডের সকল মুসলমানকে। ওই মহৎ পবিত্র জীবন যাপনকারী ব্যক্তিদেরকে বিশেষ ভাবে জানার আগ্রহ ও আছে সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অন্তরে।
তাঁদেরই অন্যতম একজন হযরত শাহপরান (রাঃ)। তিনি ছিলেন শাহজালাল (রাঃ) এর আপন ভাগিনেয়। হযরত শাহজালালের (রাঃ) সঙ্গী হয়ে তিনিও সিলেটে এসেছিলেন।
হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর পূর্ব পুরুষ রোখারা থেকে প্রথমে সমরখন্দ এবং পরবর্তীতে তুর্কীস্তানে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁর পিতা মাতা উভয়েই অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ছিলেন। সব সময় তাঁরা তাসবিহ তেলাওয়াত ও আল্লাহর জেকেওে নিমগ্ন থাকতেন।

হযরত শাহ পরান (রাঃ)জন্মেও পূর্বে এক অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়। একদিন তাঁর মা সারারাত তসবিহ তেলাওয়াতের পর শেষ রাতে হালকাভাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তিনি স্বপ্নে দেখলেন পূর্বের ্আকাশে একটা উজ্জল তারাকা উদিত হয়ে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে। ধীরে ধীরে তার আলোক রশ্মি বি¯তৃত হয়ে পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্তে পর্যন্ত আলোকিত করে ফেলছে। এসময় তাঁর সন্মুখে আর্বিভূত হলেন একজন ঐশী পুরুষ। তাঁর সামনে এসে দাঁড়িয়ে তাঁকে বললেন, ওই তারকাটিকে তুমি হাত দিয়ে ধরো। হযরত শাহ পরান (রাঃ) মাতা কম্পিতকন্ঠে বললেন, তা কি করে সম্ভব? আকাশের তারকা আমি কেমন করে ধরবো? বুজর্গব্য ব্যক্তিটি বললেন, হ্যাঁ তোমার পক্ষেই সম্ভব। তারকাটি তুমিই ধরতে পারবে। একথা বলে তিনি তাঁর ডান হাতের শাহাদত অঙ্গুলি দিয়ে ইশারা করতেই তারকাটি হযরত শাহ পরানের (রাঃ) মায়ের কাছে নেমে এলো। তখন বুজর্গ ব্যক্তিটি তারকাটি ধরে হযরত শাহ পরানের (রাঃ) মাকে দিয়ে বললেন নাও। এটা আমি তোমাকেই দিলাম। একথা বলে উক্ত মহাপুরুষ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেল। মসজিদ থেকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ফজরের আযান ধ্বনি ভেসে এলো। তিনি উঠে নামায পড়ে তসবিহ তেলাওয়াতে বসলেন। একটু পর তাঁর স্বামী মসজিদ থেকে নামায পড়ে ফিরে এলে স্বামী মসজিদ থেকে নামায পড়ে ফিরে এলে স্বামীকে তাঁর স্বপ্নের বৃত্তান্ত খুলে বললেন। শুনে স্বামী বললেন, তিনিও আজ রাতে একই স্বপ্ন দেখেছেন। দু’জনে আনন্দ প্রকাশ করে আল্লাহর দরবারে শোকের গোজার বরলেন। স্বামী বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদেরকে কিছু একটা আমানত প্রদান করবেন। এসো আমরা এক সাথে দোয়া করি। সে আমানত সংরক্ষণ ও প্রতিপালনের ক্ষমতা আল্লাহ যেন আমাদেরকে দেন। একথা বলার পর উভয়ে এক সাথে হাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন। স্বপ্নের কথা আর কাউকে না বলার জন্য উভয়ে সিদ্ধান্ত নিলেন। এর পর দিন পরেই হযরত শাহ পরানের মাতা গর্ভবর্তী হলেন। গর্ভাবস্থায়ই তিনি বিভিন্ন ধরনের অলৌকিক স্বপ্ন দেখতেন। সে সব স্বপ্ন দেখে তিনি আনন্দিত হতেন। প্রভূও দরবাওে শোকর করলেন। একদিন মধ্যরাতে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল। একটু পর তাঁর প্রসব বেদনা শুরু হলো। সোবেহ সাদেকের সময় হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর জন্ম হলো। ভূমিষ্ট হওয়ার সময় শিশু হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর কন্ঠ থেকে আল্লাহু আল্লাহু জিকির ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছিল। ধীরে ধীওে অলৌকিক ঘটনা প্রবহ মধ্যে দিয়ে বড় হতে লাগলেন। তাঁর বয়স যখন দশ বছর তখন তাঁর পিতাকে হারান। স্বামী হারা হয়ে তাঁর মাতা একমাত্র পুত্রকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়লেন। কিভাবে কি করবেন ইত্যাদি সাত পাঁচ র্দূভাবনা তাঁকে অস্থিও করে তুললো। কিন্তু এ অবস্থায় বালক পুত্রই সান্তনা দিলেন তাঁর মাকে। বললেন, আসুন আম্মা আমরা আল্লাহর ওপর আস্থা রেখে ধৈর্য ধরে থাকি তারওপরে আস্থা শীল কোন ব্যক্তিকেই তিনি নিরাশ করেন না।

তৎকালীন বিনিষ্ট ওলীয়ে কামেল হযরত সৈয়দ কামাল উদ্দীনের (রাঃ) কাছে তাঁর মাতা তাঁর ইসলামী আলিমের ব্যবস্থা করেন। হযরত শাহ পরান (রাঃ) প্রখর মেধাশক্তিতে অল্প দিনের মধ্যেই তাঁর ওস্তাদের কাছ থেকে তফসির, ফেকাহ, হাদিস সহ ইসলামের বিভিন্ন বিধয়ে জ্ঞানার্জন করেন। এরপর কিছুদিনের মধ্যে ধর্ম চিন্তার উচ্চস্তর মারেফত তওে ব্যুপত্তি লাভ করেন। তারপর নিশাপুরের একজন জবরদস্ত বুজর্গ ব্যক্তি আর্বিভাব ও তার সাথে সাক্ষাৎ তাঁর কাছে থেকে আর কামালিয়ত অর্জন করেন। কিন্তু কোলাহলময় লোকালয় তার পছন্দ নয়। আল্লাহর একদা এবাদতের জন্য তাঁর পছন্দ নির্জন নিরালাভূমি। তাই তিনি চলে গেলেন নিশাপুরের এক গহীন জঙ্গলে। সেখানে যেয়ে আল্লাহর এবাদতে মগ্ন হলেন। এমনিভাবে কেটে গেল কয়েকটি বছর।

একদিন তিনি জানতে পারলেন তাঁর মামা হযরত শাহ জালাল (রাঃ) এর হিন্দু স্থান অভিযানের কথা। তখন জঙ্গল থেকে বের হয়ে তিনি যোগ দিলেন মামার কাফেলায়। মামার সাথেই বিভিন্ন দেশ পরিভ্রমনের পর সিলেটে এসে পৌছালেন। সিলেট বিজয়ের পর হযরত শাহ জালাল (রাঃ) তাঁকে তফর, হবিগঞ্জ, ইট প্রভূতি স্থানে ইসলাম প্রচারের দায়িত্ব দিলেন। এ দায়িত্ব পালন কালে অধিকাংশ সময় তিনি মামার সান্নিধ্যে অবস্থান করতেন।

হিন্দুস্থান যাত্রাপথে হযরত শাহজালাল (রাঃ) দিল্লীতে হযরত তিনি জাম উদ্দিন আউলিয়ার (রাঃ) আস্তানায় কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন, বিদায়কালে হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া (রাঃ) তাঁকে উপহার হিসেবে একজোড়া কবুতর প্রদান করেছিলেন। সিলেটে এসে হযরত শাহজালাল (রাঃ) অতি যতেœর সাথে উক্ত কবুতর জোড়া পালন করতে থাকেন। ধীরে ধীওে এ কবুতরের বংশ বৃদ্ধি হতে থাকে। এ কবুতর জালালী কবুতর নামে এখনো সিলেটে সহ দেশের সর্বত্র পরিচিত। হযরত শাহজালালের (রাঃ) প্রিয় মনে করে এ কবুতরের মাংস কেউ খায়না।
কিন্তু হযরত শাহ পরান এ কবুতর ধরে রান্না করে খাওয়া শুরু করলেন। প্রতিদিন অন্তত একটা কবুতর জবেহ কওে তার মাংস দিয়ে আহার করেন। হযরত শাহ জালাল (রাঃ) লক্ষ্য করলেন, তার কবুতরের সংখ্যা দিনের পর না বেড়ে বরং কমে যাচ্ছে। তিনি খবর নিয়ে জানতে পারলেন তাঁর ভাগিনা হযরত শাহ পরান (রাঃ) এগুলো খাচ্ছেন এবং ইতোমধ্যে অনেক গুলো কবুতর খেয়ে ফেলেছেন।

একথা জেনে হযরত শাহ জালাল (রাঃ) ভীষণ দুৃঃখ পেলেন। সাথে সাথেই একজন খাদেমের মাধ্যমে তিনি হযরত শাহ পরান (রাঃ) কে তাঁর সাথে সাক্ষাত করার জন্য খবর পাঠালেন। খাদেম যখন হযরত শাহ পরান (রাঃ) এর কাছে পৌছালেন তখন তিনি মোরাকাবায় রত ছিলেন। খাদেম তাঁকে হযরত শাহজালাল (রাঃ) এখনই দেখা করতে করতে বলেছেন, একথা বললে তিনি তার কারন জিজ্ঞাসা করলে খাদেম বিস্তারিত ঘটনা তাঁর কাছে খুলে বললেন। তখন তিনি বললেন, চিন্তার কোন কারন নেই। একটু অপেক্ষা করুন। আপনাদেও সবগুলো কবুতর আমি এখনই ফিরিয়ে দিচ্ছি।

একথা বলে খাদেম সহ তিনি তাঁর এবাদত খানার পার্শ্বে গমন করলেন। এতদিন তিনি যতগুলো কবুতর জবেহ কওে তার মাংস খেয়েছেন সবগুলোর পালক সেখানে স্তুপ করে জমা হয়ে আছে। পালকগুলো দুহাতে উঠায়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়ে তিনি বললেন, হে কবুতর সকল যাও। এখনই জিন্দা হয়ে তোমরা সবাই হরত শাহ জালালের (রাঃ) দরবারে চলে যাও। সাথে সাথে উক্ত পালকের স্তুপ হতে সাত আটশ কবুতর তৈরী হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যেয়ে হযরত শাহ জালাল (রাঃ) দরবারে হাজির হলো। এ ঘটনা দেখে হযরত শাহ জালাল (রাঃ) আনন্দিত হয়ে ভাগিনাকে ডেকে নিয়ে বললেন, বাবা পরান আধ্যাত্মিক শক্তিতে তুমি উচ্চস্তরে পৌছে গেছো অতএব আস্তানা থেকে একটু দুরে যেয়ে তুমি আস্তানা স্থাপন  করে সেখানে অবস্থান করে তুমি আধ্যাত্মিক সাধনা ও ইসলাম প্রচারের কাজে নিজকে ব্যাপৃত রাখো। মামার এ নির্দেশ মত সেখানেই প্রায় নয় কিলোমিটার দুরে খাদিম নগরে একটা টিলার উপর তিনি আস্তানা স্থাপন করলেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেই তিনি আধ্যাত্মিক সাধনা, ইসলাম প্রচার ও ভক্তদেও সাক্ষাৎ দান করে গেছেন । উক্ত টিলার উপরেই তাঁর মাজার অবস্থিত।

No comments:

Post a Comment