প্রকৃতপক্ষে, খোদার দিদার ও ওলীর ছোহবত লাভে ধন্য হতে হলে একজন খোদাপাগল কামেল পীরের হাতে বায়াত গ্রহণ করতে হবে। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে, সকল অবস্থায় কামেল পীরকে স্মরণ রাখতে হবে। কামেল পীরের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সকল অবস্থায় মিথ্যাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। হারাম খাদ্য ভক্ষণ ও অবৈধ রুচি চিরতরে বর্জন করতে হবে। হালার রুজির তালাশ করতে হবে। কারো প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি পোষণ করা কিংবা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপব্যয়কে বর্জন করতে হবে এবং কার্পণ্য করা চলবে না। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে সমূলে পরিত্যাগ করতে হবে। মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে হবে এবং মৃত্যুকে নিকটবর্তী জানতে হবে। মাতা-পিতার ভালবাসা অর্জন করতে হবে। প্রতিদিন রাত্রে শয়নের প্রাক্কালে আত্ম-সমালোচনা করতে হবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ‘তওবা’ করতে হবে। সকল প্রকার লোভকে হারাম করতে হবে।
পরমুখাপেক্ষীতা বর্জন করতে হবে এবং স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালাতে হবে। সকল বিপদে আপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং খোদার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। পূরণ করা যাবে না এরূপ প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সত্যিকারের জ্ঞাণ আহরণ করতে হবে এবং গোঁড়ামীর উর্ধ্বে উঠতে হবে। ন্যায়ের প্রতি দৃঢ় থাকতে হবে। খোদার খানের কাছে নিজের অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে “ঐ ব্যক্তিই সফলকাম যার জ্ঞান বিশ্বাস পর্যন্ত, বিশ্বাস আল্লাহর ভয় ভীতি পর্যন্ত এবং আল্লাহর ভয় আমল পর্যন্ত, আমল পরহেজগারী পর্যন্ত, পরহেজগারী খোদার নৈকট্য লাভ পর্যন্ত এবং খোদার নৈকট্য লাভ প্রত্যক্ষ দর্শন পর্যন্ত” {হযরত জোনায়েদী বাগদাদী (রঃ)}। হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে নিজেকে চিনেছে, নিশ্চয়ই সে খোদাকে চিনেছে”। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য হলো কামেল ওলীকে পীর ধরা, তাঁর আদেশ উপদেশ মেনে চলা এবং মৃত্যুর কথা স্মরণপূর্বক মুরশিদের সাহচর্যে থেকে এবাদত, রেয়াজত, জিকির, মোরাকেবা, মোশাহেদা করা, তজকিয়ায়ে নফছ ও তজকিয়ায়ে কলব হাসেল করতঃ খোদা প্রাপ্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। কারণ ‘এছলাহে নফছ’ বা নফছের সংশোধনপূর্বক ‘হুজুরী’ কলব হাসেল করতঃ আল্লাহতালার সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভ করাই প্রত্যেক মানুষের একান্ত কর্তব্য।
আজ মূল্যবোধের অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। ইহার পরিণাম অতীব ভয়াবহ। অপ্রয়োজনীয় ও কুরুচিপূর্ণ ভূষণকে ফ্যাশন মনে করে চরিত্র বিনষ্টকারী আমোদ প্রমোদ এবং স্বাস্থ্য হানিকর পানীয়তে অভ্যস্থ হয়ে সমাজের এক বৃহৎ অংশ আজ কলুষিত। এ সকল নোংরা আচার ব্যবহার ও রীতিনীতির ফলে মানুষের কোমল মন বিলুপ্ত হয়ে মানবমন কঠোর ও নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে এবং পশু সুলভ কামনা বাসনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের জন্য অনন্ত শান্তির ফোয়ারা হযরত রসূল করিম (সঃ)-এর সুন্নাহর অনুসরণকারী কামেল ওলীর ছোহবত ও সান্নিধ্য একন্ত প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে, ধর্ম হচ্ছে শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মারফতের একটি সমন্বিত রূপ। মারফত হচ্ছে একটি অনন্য মহাসাগর। এ মহাসাগরে ডুব দিতে হলে অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং প্রেম ও ভক্তির রসে সিক্ত করতে হবে। শরীয়ত, তরিকত ও হাকিকতকে মহাসাগর মুখী সাগরের সাথে তুলনা করা যায়। মারফতের মহাসাগরে পৌছতে হলে সমূদ্রগুলোকে প্রেম ও ভক্তির বারিধারা দিয়ে পরিপূর্ণ রাখতে হবে। অন্তর পরিচ্ছন্ন না হলে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভক্তি আসবে না। আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভক্তি না থাকলে ঈমান হবে অসার, নামায হবে ব্যায়াম, রোজা হবে নিছক উপবাস, হজ্জ্ব হবে বিদেশ ভ্রমণ, যাকাত হবে অহংকারের নিদর্শন এবং বিদ্যা হবে নারীদের অলঙ্কারের ন্যায় অনুৎপাদনশীল। মনে যদি পবিত্র প্রেমের স্পর্শ না থাকে, উহা যদি কুটিলতা ও শঠামিতে পরিপূর্ণ থাকে তাহলে ঐ মানুষকে দোযখে টেনে নেবে। আল্লাহ আমাদের ভন্ড ও কপ পরিচয়ধারীদের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং সুফী দর্শনের সত্যিকার ভাবধারায় উজ্জ্বীবিত হবার তওফিক দিন। আমিন!
No comments:
Post a Comment