Friday, September 28, 2018

দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরিফের পীর জামেয়া ও আঞ্জুমানের প্রতিস্টাতা আওলাদে রাসুল, কুতুবে জামান, হাফেজ ক্বারি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ ) এবং উনার আওলাদ গনের ঐতিহাসিক মাইজভান্ডার দরবার জিয়ারত.........

দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া ছিরিকোট শরিফের পীর জামেয়া ও আঞ্জুমানের প্রতিস্টাতা আওলাদে রাসুল, কুতুবে জামান, হাফেজ ক্বারি হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ ) এবং উনার আওলাদ গনের ঐতিহাসিক মাইজভান্ডার দরবার জিয়ারত.........

হযরত গাউছুল আজম আহম্মদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী ওফাত প্রাপ্ত হন ১৯০৬ সালে ও হযরত গোলামুর রহমান মাইজভাণ্ডারী ওফাত প্রাপ্ত হন ১৯৩৭ সালে।
জামেয়া এবং আঞ্জুমানের প্রতিস্টাতা আওলাদে রাসুল, কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (রহঃ ) বাংলাদেশের বার আউলিয়া পুন্যভুমি চট্টগ্রামে আসেন ১৯৪২ সালে। তৎকালীন দৈইনিক আজাদির প্রতিস্টাতা আলহাজ্ব আব্দুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের আমন্ত্রনে। দ্বীন ও তরিকতের প্রচার প্রসার এবং মানুষের আত্নিক উন্নয়ন সাধনে ব্রতি হযরত ছিরিকোটি (রহঃ ) ছিলেন সদা নিবেদিত প্রান।
ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের শহরস্থ বাসা -অফিস কুহিনুর ইলেক্ট্রনিক এর দুতলায় ছিল হযরত ছিরিকোটির আস্তানা ও খানকা শরিফ। এখান থেকে তিনি পরিক্ষল্পনা করেন এই দেশের পবিত্র মাটিতে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিস্টান গড়ে তোলার। তখন এখানে যারা আসতেন তাদের মধ্যে রাংগুনিয়ার বুড়ো মওলানা সামসুদ্দিন আহমদ চাটগামি ও আন্দরকিল্লা বাসি শেখ বজলুর রহমান। এই দুই পুরুষ জানান  শাহেন শাহ ছিরিকোট আঞ্জুমান -এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া  দ্বীনি সংঘটন করার পর থেকে একটা দ্বীনি প্রতিস্টান গড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে উঠেন।
এসময় তিনি স্বপ্নে আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারীর থেকে মাইজভাণ্ডার দরবার জিয়ারতের ইশারা পান, এবং তার মহান মিশনের সাফল্যের ইংগিত লাভ করেন।
স্বপ্নে ইশারা লাভের পর হযরত ছিরিকোটি কাল বিলম্ব না করে তার সম্মানিত মুরিদদের নিয়ে ভান্ডার শরিফে যাত্রা করেন। এ সময় তাদের সাথে উপরুক্ত মুরিদরাও ছিলেন।
তাদের ভাস্য মতে নাজিরহাট গিয়েই দরবারের রাস্তারমাথায় যেতেই  হযরত ছিরিকোটি গাড়ি থামিয়ে সবাইকে নেমে যেতে বলেন, সবাই নেমে পরেন। তখন হুজুর কেবলা বলেন সবাই জুতা খুলে ফেলুন। উভয় বুজুর্গ যে সামনে দাড়িয়ে আছেন।
পায়ে হেটে চলুন। উল্লেখ্য নাজিরহাট থেকে দরবার পর্যন্ত তারা পায়ে হেটে যান। এক জ্ঞানী আর এক জ্ঞানী কে চিনেন, এক বুজুর্গ আর এক বুজুর্গ কে চিনেন। সম্মান দেন এবং সম্মান নিতে যানেন।
একবার ছিরিকোটি হুজুরের এক মুরিদ উনাকে বলেন মাইজভাণ্ডার সিলসিলার মুরিদরা গান বাদ্য সহকারে মজলিশ করে এ বিষয়ে আপনি কি বলেন??  উত্তরে তিনি বলেন দেখ তিনি এই জামানার বাদশাহ আউলিয়া, হুকুমত তাহারই আমি কি বলিতে পারি??
অন্য এক মুরিদের মাইজভাণ্ডার বিষয়ক প্রশ্নে তিনি বলেন খবরদার মাইজভাণ্ডার সমর্পকে কিছু বল না বেয়াদবি হয়ে যাবে।
এখানে মহান আল্লার ওলিগন থাকেন।
হযরত ছিরিকোটি (রহঃ ) ঐ দিন
মাইজভাণ্ডার জিয়ারতের মাধ্যমে যে মর্যাদাময় সুসমর্পকের সুচনা করেন আল্লাহতায়ালার কি শান সেই সমর্পক বংশ পরম্পরায় এখন ও অব্যাহত আছে।
হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ ছিরিকোটির সুযোগ্য পুত্র মাদারজাত অলি গাউসে জামান, সুলতানুল আউলিয়া আল্লামা হাফেজ ক্বারি সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ (রহঃ ) অনেক বার মাইজভাণ্ডার দরবারে গিয়েছিলেন। একবার হযরত তৈয়্যব শাহ মাইজভাণ্ডার দরবার জিয়ারত শেসে হযরত দেলোয়ার হুসেন মাইজভাণ্ডারীর রওজা জেয়ারত করে বের হতেই ওনার সামনে হযরত শাহানশাহ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী এসে দাড়ান এবং তাকে স্বাগত জানিয়ে কুলাকুলি করেন, কথাবার্তা বলেন। ঐ দিন ফেরার পথে হযরত তৈয়্যব শাহ (রহঃ ) মন্তব্য করেন শাহান শাহ বেশক শাহান শাহ হ্যায়।
চট্টগ্রামে তৈয়্যব শাহার শেষ সফর কালে ও হুজুর কেবলা মাইজভাণ্ডার শরিফ গিয়ে শেষ বারের মত জেয়ারত ও সালাম জানিয়ে এসেছিলেন।
## একই দারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন আওলাদে রাসুল গাউসে জামান হুজুর কেবলা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।
আল্লামা তাহের শাহ ১৯৯৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর মাইজভাণ্ডার দরবার জিয়ারত করেন।
তার জিয়ারত নিঃসন্দেহে একটা ঐতিহাসিক ব্যাপার। হুজুর কেবলা আল্লামা তাহের শাহ  মাইজভাণ্ডারের সব মাজার জিয়ারতের পর যান শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারীর মাজারে। হুজুর কেবলা তিন দফা মাজার ব্যস্টনির অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন, এবং গভীর স্রদ্ধা ও আদবের সাথে মাজার জিয়ারত ও মোনাজাত করেন।
এর পর মাজার প্রদর্শনী বইতে লিখেন সেই ঐতিহাসিক বানী ঃ
আল্লাহ ও রাসুলের প্রসংশায় অতঃপর -
আমি নগন্য মাইজভাণ্ডার দরবার শরিফ দেখলাম।
মাজারে শায়িত প্রত্যেক ছাহেবই  এক এক জন বেলায়তের শাহান শাহ, এবং মাজার থেকে পরিপুরন ফয়েজ প্রাপ্তি ঘটে।
প্রত্যেকই আল্লাহর মনোনিত এবং তারা যা বলে তা অনায়াসে গ্রিহিত হয়।
আল্লাহতায়ালা প্রত্যেককে জিয়ারতের সৌভাগ্যদিন আমিন।
নগন্য
সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ
২৫-১২-৯৫ ইং

Tuesday, September 25, 2018

রাসুলে করিম ﷺ'র রওজা মোবারকের গম্ভুজের উপরে এই জানালার রহস্য!

রাসুলে করিম ﷺ'র রওজা মোবারকের
গম্ভুজের উপরে এই জানালার রহস্য!

হযরত ওমর বিন মালেক (রঃ) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,রাসুলে আকরাম ﷺ দুনিয়া থেকে পর্দা করার পরে একবার মদিনা শরীফে দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির কারণে অসহনীয় গরম আর দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।তাই মদিনাবাসীরা একদিন মুমিনদের মা হযরত মা আয়েশা সিদ্দীকা (রঃ) এর কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা উল্যেখ করে বৃষ্টির জন্য দোয়া কামনা করেন।তখন মা আয়েশা (রঃ) বলেন,"হে মদিনাবাসী তোমরা রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপরে যে খেজুর গাছের ডাল আছে তা সরিয়ে দাও,এবং অপেক্ষা কর"।মদিনাবাসী তখন হযরত মা আয়েশা (রঃ) এর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করল। রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপর থেকে ডাল সরানোর সাথে সাথে হঠাৎ আমরা দেখলাম আকাশ ধীরে ধীরে কালো মেঘে ডাকা শুরু করেছে,এবং অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আকাশ থেকে এমনভাবে ভারী বর্ষণ হতে শুরু করেছে যে, আমাদের পথচলা কষ্টদায়ক হয়ে পড়লো।
দীর্ঘ এক সপ্তাহ অনবরত আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হতে থাকে যা কিছুক্ষণের জন্যেও বন্ধ হয়নি।যা আমাদের ফসল ফলাদির জন্য পর্যাপ্ত ছিল। এক সপ্তাহ পরে, মদিনাবাসীরা আবার মা আয়েশা সিদ্দীকা (রঃ) এর কাছে গিয়ে বৃষ্টি বন্ধের জন্য দোয়া চাই।তখন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রঃ) বলেন,"রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপরে খেজুর পাতার ডাল পূর্বের মত দিয়ে দাও,বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যাবে। মদিনাবাসীরা তাই করল সাথে সাথে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল।
সুবহানআল্লাহ!
(সূত্রঃ-ইবনে মাজাঃ-৬০২, দারেমীঃ-৯২৭)
এখনও পর্যন্ত হাদিসের এই ধারাবাহিকতাই যখনি কঠিন অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তখন রাসুলে আকরাম ﷺ এর রওজা মোবারকের উপরে এই জানালা খুলে দিলে আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি হতে থাকে।
সুবহানআল্লাহ!

আস্তিক ছাত্র বনাম নাস্তিক শিক্ষক

নাস্তিক শিক্ষক ক্লাসে ঢুকেই
প্রশ্ন করল:
আচ্ছা তোমরা তো আল্লাহ তে
বিশ্বাস কর তাইনা?
:
ছাত্রছাত্রী সমস্বরে:
হ্যাঁ আমরা বিশ্বাস করি।
:
শিক্ষক: আল্লাহ তো পৃথিবীর সকল
ভালমন্দ সৃষ্টি করেছেন তাইনা?
:
ছাত্রছাত্রী: হ্যাঁ তিনিই.
সৃষ্টি করেছেন।
:
শিক্ষক: আল্লাহ যদি ভাল
হয়ে থাকেন তাহলে মন্দসমূহ
সৃষ্টি করলেন কেন?
:
ছাত্র ছাত্রী: সবাই চুপ।
কেউ কোন উত্তর দিলনা।
:
শিক্ষক: আচ্ছা তোমরা কি কেউ
কখনো আল্লাহকে দেখেছ?
:
ছাত্রছাত্রী: না।
:
শিক্ষক: বিজ্ঞান বলে যে জিনিস
কোন যন্ত্র বা পঞ্চ ইন্দ্রিয়
দ্বারা দেখা যায়না, ছোঁয়া যায়
না, অনুভব করা যায় না, তার
কোন অস্তিত্ব নেই! সুতরাং
আল্লাহর অস্তিত্ব নেই--!!
:
সৃষ্টিকর্তার ধারণা অলীক কল্পনা
মাত্র। ক্লাসে পিনপতন নিরবতা,
কেউ কথা বলছেনা। একজন ছাত্র
উঠে দাড়ালো:
স্যার আমি কিছু বলতে চাই।
:
শিক্ষক: বল
:
ছাত্র: স্যার পৃথিবীতে ঠান্ডা
বলতে কিছু আছে?
:
শিক্ষক: আছে।
:
ছাত্র: না স্যার, ঠান্ডা বলতে
কোন পদার্থ নেই। তাপমাত্রার
অনপুস্থিতিকেই ঠান্ডা বলে।
ঠান্ডা পরিমাপ করা যায়না।
তাপমাত্রা পরিমাপ করা হয়।
অর্থাৎ তাপের অনুপস্থিতিকে
ঠান্ডা বলে থাকি।
:
ছাত্র: স্যার অন্ধকার
বলতে কিছু আছে?
:
শিক্ষক: না।
:
ছাত্র: হ্যাঁ, অন্ধকার বলতে কিছু
নেই৷ অন্ধকার পরিমাপ করা যায়না।
আলোর অনুপস্থিতিকেই অন্ধকার
বলা হয়। ঠিক তেমনি আল্লাহ
মন্দ সৃষ্টি করেননি। ভালোর
অনুপস্থিতিকেই মন্দ বলে।
ছাত্র সকল ছাত্রছাত্রীদের
:
উদ্দেশ্যে করে: আচ্ছা আপনারা কেউ
স্যারের মস্তিষ্ক দেখেছেন?
:
ছাত্রছাত্রী:
দেখিনি তবে স্ক্যানারের
মাধ্যমে দেখা সম্ভব।
:
ছাত্র: পৃথিবীর কোন যন্ত্র দিয়ে কি
স্যারের জ্ঞান পরিমাপ করা সম্ভব?
স্যার যে এত এত ডিগ্রী এতসব
জ্ঞান অর্জন করেছেন তা কি পঞ্চ
ইন্দ্রিয় দ্বারাঅনুভব বা
পরিমাপ করা যায়?
:
ছাত্রছাত্রী: না
:
ছাত্র: তাহলে আমি ঘোষণা দিচ্ছি
যেহেতু কোন অত্যাধুনিক যন্ত্র
বা মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়
দ্বারা স্যারের জ্ঞান অনুভব বা
পরিমাপ করা যায় না সুতরাং
স্যারের কোন জ্ঞান নেই।
তিনি একটা মূর্খ।
-----------------

Monday, September 24, 2018

হযরত আব্বাস আলমদার (রহঃ) এর মাজারে অলৌকিক পানি

হযরত আব্বাস আলমদার (রহঃ) এর মাজারে অলৌকিক পানি
=============
ﺍﻟﺤﻤﺪﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ ﻭﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻋﻠﻰ ﺳﻴﺪﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﻟﻜﺮﻳﻢ
[লেখাটি কপি করে নিজ নিজ টাইমলাইনে শেয়ার করুন।]
কারবালা প্রান্তরে আহলে বায়েতের সদস্যগণ, নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ, এমনকি দুধের শিশু পর্যন্ত পানির পিপাসায় ছটফট করছিলেন। ইয়াজিদের বাহিনী ইবনে জিয়াদের নেতৃত্বে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা'লা আনহুর দলের লোকজনদের জন্য ফোরাতের পানি বন্ধ করে দিয়েছে। এক ফোটা পানিও যাতে আহলে বায়েত এবং নবী পরিবারের কেউ না পায় তার সব রকমের ব্যবস্থা করে রেখেছে হানাদার মুসলিম নামধারী নরাধমরা। রাসুল ﷺ এর আওলাদ, ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর নয়নের মনি শিশু আলী আজগরের জন্য পানি আনতে গিয়ে কারবালার প্রান্তরে কুখ্যাত এয়াজিদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহীদ হলেন হযরত আব্বাস আলামদার রহঃ।
রাসূলে পাক (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াআলিহী ওয়াসাল্লাম) এর আওলাদের তাঁবুতে একফোঁটা পানিও নেই। কচি কচি শিশুরা পানির জন্য ছটফট করছে। পানি নেই, এমনকি পিপাসার্ত মায়েদের বুকের দুধও শুকিয়ে গেছে। শিশু আলী আজগর পানির পিপাসায় কাতরাচ্ছেন। কেউবা পিপাসার যন্ত্রণায় বেহুঁশ হয়ে পড়ছেন। এ করুণ দৃশ্য দেখে হযরত আব্বাস রহঃ আর বরদাশত করতে পারলেননা। পানির মশক হাতে নিয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে চললেন তিনি। ইয়াজিদ বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে ফোরাত নদী থেকে পানি ভরে কাঁধে নিলেন। নিজে কিছুটা পানি পান করতে চেয়েও শিশু আজগরের তৃষ্ণার্ত চেহারা এবং ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)'র তৃষ্ণার্ত চেহারা মনে পড়ায় হাতের পানি পান না করে ফেলে দিলেন। এমন সময় তাঁকে হঠাৎ করেই ঘিরে ফেলল জালিম ইয়াজিদের দল। তিনি ইয়াজিদের বূহ্য ভেদ করে কিছুদূর অগ্রসর হলে পেছন থেকে তাঁর উপর অনবরত তীর নিক্ষেপ করতে থাকে ইয়াজিদ বাহিনী। আরো কিছুদূর অগ্রসর হওয়ার পর এয়াজিদ বাহিনীর একজন হযরত আব্বাসের ডান হাত কেটে ফেলে। তিনি ঐ অবস্থায় মশক বাঁচিয়ে বাম হাতে নিলেন। কিন্তু ঐ জালিম তাঁর বাম হাতও কেটে ফেলল। তারপরও তিনি মশকের ফিতা চরম কষ্টে দাঁতে কামড়ে ধরে ছুটে চললেন ইমামের শিবিরের দিকে। মহাবীর আব্বাসের এই বীরত্ব দেখে জালিম ইয়াজিদীদের আর সহ্য হলোনা। তারা এক সাথে ঝাঁপিয়ে পরে হযরত আব্বাসকে শহীদ করে দিলো। এদিকে পানির জন্য ছটফট করতে থাকা দুধের শিশু হযরত আজগর এবং সাকীনার জন্য আর পানি নিয়ে যাওয়া হলোনা।
কে ছিলেন এই হযরত আব্বাস?
-------
হযরত আব্বাস আলামদার রহঃ ছিলেন মওলা আলী বিন আবি ত্বালিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা'লা আনহুমার পুত্র এবং ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)'র বৈমাত্রেয় ভ্রাতা। তাঁর জন্ম ২৬ হিজরীতে। হযরত আলী (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তাঁকে সবার সাথে পরিচয় করে দিয়ে বলেছিলেন, "এই হচ্ছে আব্বাস, হাশেমী বংশের চাঁদ!" তিনি দেখতে ছিলেন অতীব সুদর্শন। জ্ঞানে এবং যুদ্ধ বিদ্যায় ছিলেন পারদর্শী। মওলা আলী রাঃ নিজে তাঁকে যুদ্ধ কলাকৌশল এবং ধর্মীয় শিক্ষায় পূর্ণতা দিয়েছিলেন। হযরত আলী রাঃ ছোটবেলায়ই এই মহাবীরের অনেক নিদর্শন লক্ষ্য করে নাম রেখেছিলেন আব্বাস, যার অর্থ সাহসী এবং বীর। পুরো নাম আবুল ফজল আব্বাস আলমদার ইবনে আলী রহঃ।
কারবালার যুদ্ধে মহরমের ১০ তারিখ শুক্রবার পবিত্র আশুরার দিনে তিনি ইয়াজিদী বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণ করেন। ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এবং তাঁর পরিবারের প্রতি তাঁর আনুগত্য এবং ভালোবাসা এতই প্রবল ছিল যে ফোরাত নদীতে নিজ হাতের তালুতে পানি ধরেও পিপাসার্ত নারী ও শিশুদের কথা মনে করে এবং বড় ভাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর কথা ভেবে হাতের পানি ফেলে দেন। যে পানির অভাবে নবী ﷺ পরিবারের ছোটো মাসুম বাচ্চারা, নারী এবং যোদ্ধাগণ পিপাসায় ছটফট করে একে একে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছিলেন, তিনি কীভাবে নিজে সেই পানি পান করবেন?
মাজারে অনবরত পানির ফোয়ারা - মহান আল্লাহ পাকের এক মহা কুদরত
----
কারবালা প্রান্তরে যে স্থানে এই মহান বীর শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন, সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়। ফোরাত নদীর তীরে তাঁর মাজারকে ঘিরে তৈরি হয়েছে মাসজিদে আব্বাস। যা আজো কোটি কোটি নবী-প্রেমিকের জিয়ারতের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। যে পানির জন্যে তিনি প্রাণ দিয়েছিলেন, যে পানি ইয়াজিদী নরাধমরা পশুপাখির জন্য বৈধ করলেও নবী ﷺ পরিবারের জন্য নিষিদ্ধ করেছিলো, আল্লাহ পাক চাইলেই ইমাম শিবিরে সে পানি পৌঁছে দিতে পারতেন। যেমনটি তিনি করেছিলেন শিশু ইসমাইল আঃ এর পদতলে পবিত্র জমজমের ফোয়ারা প্রবাহিত করে। যেমনটি করেছিলেন তাবুক অভিযান সহ অসংখ্য ঘটনায়। পানির কষ্ট এবং নিষ্ঠুরতার মধ্য দিয়ে ইমাম পরিবার একমাত্র ইসলামের সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেদের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে আমাদের সামনে প্রমাণ রেখে গেলেন, "শির দেগা, নেহি দেগা আমামা!" আল্লাহ পাক যদি সেদিন এভাবে নবী-পরিবারের জীবন এবং ইজ্জতের বিনিময়ে ইসলামকে পুনরুজ্জীবিত না করতেন, তাহলে আজ অনেকেই নবী-পরিবারকে নিয়ে কটাক্ষ করতে দ্বিধা করতোনা। কিন্তু আল্লাহ পাক আমাদের জন্য তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ এর পরিবারের আত্মত্যাগের মাধ্যমে শিক্ষা দান করলেন, নবী ﷺ এবং আহলে বায়তের ভালোবাসাই হল ঈমানের মূল। এরপরও কিছু নরাধম কারবালার নির্মম ঘটনার নায়কদের শহীদ এবং জান্নাতী হিসেবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তাদের কাছে ইমাম হুসাইন (আলাইহিস সালাম ওয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হলেন রাজনীতির শিকার আর কুখ্যাত ইয়াজিদ হল সত্যের মাপকাঠি। নাউজুবিল্লাহ!
কারবালার প্রান্তরে আল্লাহ পাক পানিবঞ্চিত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় নবী-পরিবারকে যন্ত্রণা ভোগ করতে দিলেও পানি আহরণে শহীদ আবুল ফজল আব্বাস ইবনে আলী (রহঃ) এর পবিত্র মাজারে নিরন্তর পানির ফোয়ারা প্রবাহিত রেখেছেন। তৃষ্ণার্ত আবুল ফজল আব্বাস ইবনে আলী (রহঃ) এর পিপাসা মিটানোর জন্য আল্লাহ সুবহানাহু তা'লার পক্ষে থেকে এ এক নিয়ামত। আল্লাহ এভাবেই তাঁর প্রিয় বন্ধুদেরকে সম্মানিত করে থাকেন। আহলে বায়েতের ভালোবাসার প্রতিদান আলাহ পাক এভাবেই দিয়ে থাকেন। সমগ্র জগতবাসীর জন্য এ এক অসীম কারামত এবং নবীদুশমনদের জন্য এ এক বড় শিক্ষণীয় ব্যাপার যদিও তারা কোন কিছু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করে না। কারণ আল্লাহ পাক তাদের অন্তরকে হেদায়েত থেকে দূরে রেখেছেন। তাদেরকে করে দিয়েছেন অন্ধ এবং বধির। ফলে তারা দেখেও দেখে না, শুনেও শুনে না।

ইয়াজিদ_কাফের_ছিল_তার_দলিল

# ইয়াজিদ_কাফের_ছিল_তার_দলিল......

খাদেমে সুন্নীয়ত ওয়াত তরীকত আলহাজ্ব মুফতী এস এম সাকীউল কাউছার।
সাজ্জাদানশীন, ঘিলাতলা দরবার শরীফ কুমিল্লা। ।

# বুখারী শরীফের এক হাদীছে রয়েছে কোন মুমিনকে কতল করা কুফুরী। ইমামা হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বড় মুমিন আর কে? যিনি জান্নাতে যুবকদের সর্দার।

# ইয়াজিদকে অধিকাংশ ইমামই ফাসেক বলেছেন। কারো কারো মতে সে কাফের ছিল কিন্তু কেউই ভাল বলে নাই। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল,
ইবনুল হুমাম,জালালুদ্দিন সুয়ুতী,নাসিরুদ্দিন
আলুছীসহ ২৭ জন মুজতাহিদ কাফের বলেছেন।
বিশেষ করে মাহমুদ আলুসী-تفسیر روح المعانی
৯ম খন্ডে لعنة اللہ علی الکاذبين এই আয়াতের ব্যাখ্যয় তিনিও বলেছেন ইয়াজিদ কাফের ছিল।
হানাফি মাযহাবের সবচেয়ে বিখ্যাত কিতাব تفسیر روح المعانی দারুল হাদিস,আল-কাহেরা মিশরের ছাপা-২৫তম খন্ড-৩১০পৃ: দীর্ঘ ২  পৃষ্টা ব্যাপী আলোচনার পর তিনি বলেছেন-    مانقول الذی يغلق علی ان الخبث لم يکن مصدقا برسالة النبی صلی اللہ عليه وسلم
ইমাম আলুসী বলেন-আমি ব্যাপক যাচাই বাচাই করার পর আমি আলুসীর মতামত হলো-
খবিস ইয়াজিদ আল্লাহর রাসুল  صلی اللہ  عليه وسلم এর রিসালাতকেই বিশ্বাস করতনা। সুতরাং যে আল্লাহর রাসুলের রিসালাতকে বিশ্বাস করেনা,সে মুসলমানই
থাকতে পারেনা।
# ইমাম_আহমাদ_ইবনে_হাম্বাল (রহ) বলেন:
ইয়াজিদ কাফের কারণ সে মদকে হালাল মনে করতেন। شرح الفقه الاکبر দারুন নাফায়েস-
বৈরুতের ছাপা-১৭৫ পৃষ্টা।

ইয়াজিদকে জিজ্ঞাসা করা হলো মদ হালাল কেন?
সে বললো হযরত মুহাম্মাদصلی اللہ  عليه وسلم এর শরিয়তে হারাম কিন্তু ঈসার শরিয়তে তো হালাল (নাউজুবিল্লাহ)
# আমাদের প্রশ্ন, তাহলে সে কি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা'র শরিয়তকে বিশ্বাস করতো?

# পাপিষ্ট  ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন (রা) কে হত্যা করে বদর দিবসের প্রতিশোধ নিয়েছে। ইমাম হোসাইন (রা) এর লাস যখন ইরাকে উপস্থিত করা হলো পাপিষ্ঠ ইয়াজিদ তখন কবিতা পড়ল। যা روح المعانی -২৫,তম খন্ড ৩১০পৃষ্টা। সে বলেছে আজকে আমি,মুহাম্মাদ صلی  اللہ  وسلم যে বদর যুদ্ধে আমাদের পূর্ব পুরুষদের হত্যা করেছিলেন সেই প্রতিশোধ নিলাম।
আবার তা شرح الفقه الاکبر কিতাবে ১৫৮ পৃষ্টায় এসেছে-    انی جازيتهم فعلو باشياخ قريش وضاديدهم فی بدر সে অহংকার করে বলেছে-
মুহাম্মাদصلی اللہ وسلم আমাদের পূর্ব পুরুষদের হত্যার প্রতিশোধ নিলাম হোসাইনকে কতল করে।

# অনেকে প্রশ্ন করে থাকেন ইমাম আযম আবু হানিফা (রহ) তো কাফের বলেনি,আমরা কেন বলব?

$ হযরত ইমাম আযম রাহমাতুল্লাহ, বড় ফাসেক বলেছেন। এটা ফিকার মাসয়ালা নয়,এটা আকিদা ও ইতিহাসের মাসয়ালা,তাই এক্ষেত্রে ইমাম আযমের অনুসরন ওয়াজিব নয়।ইমাম অাযমের অনুসরন ফিকহের ক্ষেত্রে। আমরা তাফছিরের ক্ষেত্রে অন্য ইমামকে মানি হাদীসের ক্ষেত্রে অন্য ইমামকে মানি,পীর-মুরিদের ক্ষেত্রে অন্য মাযহাবের ইমামকে মানি।

# সুতরাং এ ক্ষেত্রে মানতে সমস্যা কি?

শানে রেসালত অবমাননাকারীদের শরয়ী বিধান

শানে রেসালত অবমাননাকারীদের শরয়ী বিধান
নিশ্চয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তাঁকে কেন্দ্র করেই আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন সৃষ্টি জগতের সকল কিছুর আয়োজন করেছেন। আল্লাহ তায়ালাই তাঁকে মর্যাদার সর্বোচ্চ আসনে সমুন্নত করেছেন। ইরশাদ হচ্ছে -
ﻭَﺭَﻓَﻌْﻨَﺎ ﻟَﻚَ ﺫِﻛْﺮَﻙَ
‘‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।”(৯৪/৪)
তিনিই সেই সত্ত্বা যাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা মাকামে মাহমূদ দান করা হয়েছে। তিনিই শাফায়াতে কুবরার অধিকারী। তিনিই হাউযে কাউছারের পানি বন্টনকারী। রিসালাতের পুর্ণতা দানকারী। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রভাব বিস্তারকারী। সম্মান ও মর্যাদার ক্ষেত্রে বিশ্বজাহানের সৃষ্টিকর্তা মহান রাব্বুল আলামীনের পরেই তাঁর স্থান। কবির ভাষায় -
ﺑﻌﺪ ﺍﺯ ﺧﺪﺍ ﺑﺰﺭﮒ ﺗﻮﺋﯽ ﻗﺼﮧ ﻣﺨﺘﺼﺮ
তাঁর মহিমা ও মাহাত্ম সম্পর্কে যা কিছুই লেখা হোক না কেন তা তুলনায় নিতান্তই কম। তাই সর্ব যুগের, সর্বকালের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সা.)। অতএব তাঁর প্রতি সৃষ্টিকুলের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন করা এবং স্বতঃস্ফুর্ত শ্রদ্ধা নিবেদন করা অতীব জরুরী। যে সব কথা ও কাজ আদবের পরিপšী’ কিংবা যদ্বারা তিনি ব্যথিত হন, তা থেকে বেঁচে থাকা সকলের অবশ্য কর্তব্য। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন রাসূল (সা.) এর প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনকে সকলের উপর ওয়াজিব করেদিয়েছেন।
সম্বোধনের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
রাসূল (সা.) কে সম্বোধনের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন -
ﻟَﺎ ﺗَﺠْﻌَﻠُﻮﺍ ﺩُﻋَﺎﺀَ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝِ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﻛَﺪُﻋَﺎﺀِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﺑَﻌْﻀًﺎ
অর্থাৎ যখন তোমরা রাসূল (সা.) কে কোন প্রয়োজনে আহবান কর অথবা সম্বোধন কর, তখন সাধারণ লোকের ন্যায় তাঁর নাম নিয়ে “ইয়া মুহাম্মদ” বলবে না। এটা বেআদবী। বরং সম্মান সূচক উপাধি দ্বারা “ইয়া রাসূলাল্লাহ” অথবা “ইয়া নাবিয়্যাল্লাহ” বলবে।
(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন-পৃঃ-৯৫৫)
স্বয়ং আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনের সর্বত্রই রাসূলুল্লাহ (সা.) কে সম্বোধন করার ক্ষেত্রে বিশেষ সম্মান প্রদর্শনের নমুনা প্রতিষ্ঠা করেছেন। পবিত্র কুরআনে যত নবীকে সম্বোধন করা হয়েছে তা তাঁদের আসল নাম ধরেই করা হয়েছে। যেমন-
ﻳَﺎ ﺁَﺩَﻡُ ﺍﺳْﻜُﻦْ ﺃَﻧْﺖَ ﻭَﺯَﻭْﺟُﻚَ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔَ
“হে আদম, তুমি ও তোমার সঙ্গিনী জান্নাতে বসবাস কর।” (২/৩৫)
ﻭَﻣَﺎ ﺗِﻠْﻚَ ﺑِﻴَﻤِﻴﻨِﻚَ ﻳَﺎ ﻣُﻮﺳَﻰ
“হে মূসা,তোমার ডান হাতে ওটা কি ?” (২০/১৭)
ﻳَﺎ ﺩَﺍﻭُﻭﺩُ ﺇِﻧَّﺎ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎﻙَ ﺧَﻠِﻴﻔَﺔً ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ
“হে দাউদ, আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি।”
সম্বোধনের এ রীতি অনুযায়ী এটাই সঙ্গত ছিল যে, আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহ (সা.) কেও “ইয়া মুহাম্মদ” বা “ইয়া আহমদ” নামে ডাকবেন। কিন্তু কুরআনের কোথাও নাম ধরে ডাকেননি। বরং এমনভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, যাতে তাঁর প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন হয়। যেমন -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﺑَﻠِّﻎْ ﻣَﺎ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻚَ
“হে রাসূল, আপনার প্রতিপালকের নিকট হতে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তা প্রচার করুন।” (৫/৬৭)
এভাবে কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻨﺒﻰ বলে, কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻤﺰﻣﻞ বলে, আবার কোথাও ﻳﺎﺍﻳﻬﺎ ﺍﻟﻤﺪﺛﺮ বলে পবিত্র কুরআনে সম্বোধন করা হয়। এভাবে মহা গ্রন্থ আলকুরআনে রাসূল (সা.) কে বিশেষ সম্মানের সাথে সম্বোধন করে তাঁর শানে রেসালতের সুমহান মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রাসূল (সা.) এর প্রতি শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হচ্ছে -
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ ﺭَﺍﻋِﻨَﺎ ﻭَﻗُﻮﻟُﻮﺍ ﺍﻧْﻈُﺮْﻧَﺎ ﻭَﺍﺳْﻤَﻌُﻮﺍ ﻭَﻟِﻠْﻜَﺎﻓِﺮِﻳﻦَ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ
“হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রায়িনা-’ বলো না ‘উনযুরনা-’ বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি। (২/১০৪)
যেহেতু ‘রায়িনা’ শব্দের দ্বারা সম্বোধন করলে সম্মান প্রদর্শন হয় না তাই আল্লাহ তায়ালা মুমিনগণকে তাঁর রাসূলের শানে ‘উনযুরনা-’ শব্দ ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
ডেকে কষ্ট না দেয়ার নির্দেশ
যখন বনী তামীমের একটি প্রতিনিধিদল মদীনায় উপনিত হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আপন ঘরে অবস্থান করছিলেন। ঐ লোকেরা দরজার পিছনে দাঁড়িয়ে তাঁকে নাম ধরে ডাকতে শুরু করে। “হে মুহাম্মদ, তুমি আমাদের দিকে বেরিয়ে এসো।” রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি তাদের এই অশিষ্ট আচরন আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় ঠেকল এবং সঙ্গে সঙ্গে নাযিল হলো-
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﻨَﺎﺩُﻭﻧَﻚَ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺍﻟْﺤُﺠُﺮَﺍﺕِ ﺃَﻛْﺜَﺮُﻫُﻢْ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻘِﻠُﻮﻥَ، ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﺻَﺒَﺮُﻭﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﺗَﺨْﺮُﺝَ ﺇِﻟَﻴْﻬِﻢْ ﻟَﻜَﺎﻥَ ﺧَﻴْﺮًﺍ
“যারা ঘরের পেছন থেকে আপনাকে উচ্চ স্বরে ডাকে তাদের অধিকাংশই নির্বোধ, আপনি বের হয়ে ওদের কাছে আসা পর্যন্ত যদি ওরা ধৈর্য ধারণ করত, তাই ওদের জন্য উত্তম হত।” (৪৯/৪-৫)
কথা বলার সময় সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন-
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁَﻣَﻨُﻮﺍ ﻟَﺎ ﺗَﺮْﻓَﻌُﻮﺍ ﺃَﺻْﻮَﺍﺗَﻜُﻢْ ﻓَﻮْﻕَ ﺻَﻮْﺕِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺠْﻬَﺮُﻭﺍ ﻟَﻪُ ﺑِﺎﻟْﻘَﻮْﻝِ ﻛَﺠَﻬْﺮِ ﺑَﻌْﻀِﻜُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺃَﻥْ ﺗَﺤْﺒَﻂَ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻧْﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ
“হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বর উচু করো না এবং নিজেদের মধ্যে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেরুপ উচ্চস্বরে কথা বলো না। কারন এতে তোমাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যাবে তোমাদের অজ্ঞাতসারে।” (৪৯/২)
অতএব উম্মতের উপর রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যে সকল অধিকার অবধারিত এবং তিনি যে মর্যাদা, সম্ভ্রম ও গৌরবের অধিকারী পবিত্র কুরআনের এসব আয়াত দ্বারা তা পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত। তাই তাঁর অনুসারি, ভক্ত ও অনুরাগীদের দ্বারা তিনি নন্দিত ও প্রশংসিত হয়েছেন। কিন্তু ক্ষুব্ধ বা ইসলাম বিদ্বেষীদের দ্বারা তিনি নিন্দিতও হয়েছেন প্রচুর। মক্কার আবু জাহেল, আবু লাহাব, ওতবা ও শায়বাদের বিভিন্ন রকম গালি-গালাজ ও নির্যাতন থেকে শুরু করে, ইয়াহুদী সাবাঈ গোষ্ঠির আবু রাফে, কা’ব ইবনে আশরাফের বিভিন্ন রকম কটুক্তি সহ আধুনিক বিশ্বের ডেনমার্কের বহুল প্রচলিত “জিল্যান্ড পোষ্টেন” পত্রিকায় মহানবী (সা.) এর ব্যাঙ্গ কার্টুন ছাপানো ও ডিজিটাল বাংলাদেশে “প্রথম আলো” পত্রিকায় তার পুণরাবৃত্তির ঘটনা, কতিপয় বিকারগ্রস্ত শাহবাগী নাস্তিক ব্লগার কর্তৃক বিভিন্নরূপ কুৎসা রটনা ও সালমান রুশদী, প্রফেসর হেন্স এবং তসলিমা নাসরীনদের বিভিন্ন রকম কটুক্তি সহ এরূপ হাজারো ঘটনা এটাই প্রমাণ করে। তাই বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহাসিক ও প্রাচ্যবিদ ডব্লিউ ডব্লিউ মন্টগোমারী ওয়াট তাঁর "সঁযধসসধফ ধঃ সবফরহধ" শিরোনামীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেন-“পৃথিবীর ইতিহাসে মুহাম্মদ অপেক্ষা অন্য কোন মহামানবকে অধিকতর নিন্দা বা কলুষিত করা হয় নাই।” (সীরাত বিশ্ব কোষ-৪/৮)
অবমাননাকারীর অশুভ পরিণাম
এজন্যই আল্লাহ তায়ালা স্বীয় গ্রন্থে রাসূল (সা.) কে কষ্ট দেয়া হারাম ঘোষণা করেছেন। এবং উম্মত তাঁর ছিদ্রান্বেষণকারী ও তাঁর প্রতি অশ্লীল বাক্য উচ্চারণকারীর মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছে। পরকালে জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তো আছেই দুনিয়াতেও তাদের কঠিন পরিণতি বরণ করতে হয়, অথবা লাঞ্চনার জীবন যাপন করতে হয়। এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ ﻭَﺍﻟْﺂَﺧِﺮَﺓِ ﻭَﺃَﻋَﺪَّ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ ﻣُﻬِﻴﻨًﺎ
“যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (৩৩/৫৭)
অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে -
ﻭَﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳُﺆْﺫُﻭﻥَ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻟَﻬُﻢْ ﻋَﺬَﺍﺏٌ ﺃَﻟِﻴﻢٌ
“যারা আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আছে মর্মন্তুদ শাস্তি।” (৯/৬১)
মৃত্যুদন্ডই তার শাস্তি
আবু দাউদ শরীফের এক বর্ণনায় আছে -
ﻋَﻦْ ﻋَﻠِﻰٍّ ﺭَﺿِﻰَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻨْﻪُ ﺃَﻥَّ ﻳَﻬُﻮﺩِﻳَّﺔً ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺗَﺸْﺘِﻢُ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰَّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻭَﺗَﻘَﻊُ ﻓِﻴﻪِ ﻓَﺨَﻨَﻘَﻬَﺎ ﺭَﺟُﻞٌ ﺣَﺘَّﻰ ﻣَﺎﺗَﺖْ ﻓَﺄَﺑْﻄَﻞَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺩَﻣَﻬَﺎ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻓﻲ ﺳﻨﻨﻪ )
“হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একজন ইয়াহুদী মহিলা রাসূল (সা.) কে গালিগালাজ করত এবং তাঁর ছিদ্রান্বেষণ করত। একারণে এক ব্যক্তি তাকে গলা টিপে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর রাসূল (সা.) তার রক্তকে মূল্যহীন ঘোষণা করলেন।”
অতএব এ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শানে রেসালতের অবমাননাকারীর শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। তাই শাইখুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়া (রহ.) তাঁর আসসারিমুল মাসলুল গ্রন্থে এরূপ আরো অনেক হাদিস নকল করে বলেন-
ﻓﻬﺬﻩ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﻛﻠﻬﺎ ﺗﺪﻝ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﻳﺴﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﻳﺆﺫﻳﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻓﺈﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﻘﺼﺪ ﻗﺘﻠﻪ ﻭ ﻳﺤﺾ ﻋﻠﻴﻪ ﻷﺟﻞ ﺫﻟﻚ ﻭ ﻛﺬﻟﻚ ﺃﺻﺤﺎﺑﻪ ﺑﺄﻣﺮﻩ ﻳﻔﻌﻠﻮﻥ ﺫﻟﻚ
“অতএব এসব হাদিস দ্বারা একথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (সা.) ঐসব কাফেরদেরকে হত্যা করার ইচ্ছা পোষণ করতেন যারা তাঁকে গালিগালাজ করত এবং লোকজনকে এজন্য উৎসাহিত করতেন। আর সাহাবায়ে কেরাম (রা.) রাসূল (সা.) এর নির্দেশে তা বাস্তবায়ন করতেন।”
সুতরাং যে কেহ রাসূলুল্লাহ (সা.) কে হেয় প্রতিপন্ন করে, গালি দেয়, দোষ চর্চা করে অথবা তাঁর সত্তা, বংশধারা বা চরিত্রে কালিমা লেপন করে অথবা তিরষ্কার ও নিন্দা করে মর্যাদা খাটো করে, তাঁর প্রতি দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ উত্থাপন করে এবং তাঁর দোষ সাব্যস্ত করার জন্য কোন কিছুর সঙ্গে তাঁকে উপমা দেয় বা ব্যাঙ্গ কার্টুন করে ইত্যাদীর যে কোন ভাবে রাসূল (সা.) কে কষ্ট দেয়া সুস্পষ্ট কুফরী, এ ধরনের কুফরীর কারণে ঐ ব্যাক্তিকে চাই সে পূর্ব থেকে মুসলমান থাকুক বা কাফের থাকুক হত্যা করা ইসলামী শরীয়তের বিধান।
ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﻤﻨﺬﺭ : ‏[ ﺃﺟﻤﻊ ﻋﻮﺍﻡ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺣﺪ ﻣﻦ ﺳﺐ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﻘﺘﻞ ]
“আল্লামা আবূ বকর ইবনুল মুনযির বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গালমন্দকারীর মৃত্যুদন্ডের ব্যাপারে সমস্ত ফকীহ ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন।” (আশ শিফা -২/৪৭৪)
ﻭ ﻗﺎﻝ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺳﺤﻨﻮﻥ : ‏[ ﺃﺟﻤﻊ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﺷﺎﺗﻢ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭ ﺍﻟﻤﺘﻨﻘﺺ ﻟﻪ ﻛﺎﻓﺮ ﻭ ﺍﻟﻮﻋﻴﺪ ﺟﺎﺭ ﻋﻠﻴﻪ ﺑﻌﺬﺍﺏ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ ﻭ ﺣﻜﻤﻪ ﻋﻨﺪ ﺍﻷﻣﺔ ﺍﻟﻘﺘﻞ ﻭ ﻣﻦ ﺷﻚ ﻓﻲ ﻛﻔﺮﻩ ﻭ ﻋﺬﺍﺑﻪ ﻛﻔﺮ ]
“মুহাম্মদ ইবনে সাহনূন বলেন, আলিমগণ এব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গালমন্দকারী ও তাঁর ছিদ্রান্বেষণকারী কাফির। তাঁর জন্য আল্লাহর শাস্তিবিধানের সতর্কবাণী অবধারিত এবং উম্মতের নিকট তার শাস্তি হল মৃত্যুদন্ড। আর যে ব্যক্তি তার কুফরী ও শাস্তি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করবে সেও কাফির।”(আশ্ শিফা-২/৪৭৬, সীরাত বিশ্বকোষ-৪/৫০৫-৫০৭)
নবীগণের অবমাননাকরীর তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়
নবীগণের শানে বেআদবী করলে তার শাস্তি ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী মৃত্যুদন্ড। এরূপ জঘন্যতম অপরাধের পর যদি ঐ ব্যক্তি তাওবাও করে তবে তার তাওবা গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ দুনিয়ার শাস্তি তার জন্যে অবধারিত। কেননা নবী-রাসূলের অবমাননা সমস্ত কুফরির মূল। (কামূসুল ফিকহ : ৪/১৯৫, খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৩৮৬)
অতএব নবী-রাসূলগণের অবমাননাকারীরা জঘন্যতম কাফের। তাদেরকে যারা কাফের বলবে না তারাও কাফের। (ইকফারুল মুলহিদীন : ৫৪)

আহলে বাইতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মর্যাদা

আহলে বাইতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর মর্যাদা

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আওলাদগণকে আহলে বাইতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলা হয়। ইসলামী দুনিয়ার আকাশে তাঁরা যেন সু-উজ্জল নক্ষত্ররাজি। তাঁরা সকল মানুষের আদর্শ। তাঁদের অনুসরনই ইসলাম, তাঁদের প্রতি ভালবাসাই ঈমান। কুরআন-সুন্নাহ্তে তাঁদের মান-মর্যাদার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করা মুমিন মাত্রই ওয়াজিব। তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা তাঁদেরকে মহব্বত করা মানেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মহব্বত করা। তাঁরাই সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে আল্লাহর বানী পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁরা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠায় জান-মাল, ধন-সম্পদ, আওলাদ-পরিজন কুরবাণী দিতে দ্বিধা করেননি। কারবালার হৃদয়বিদারক ঘটনা তার উজ্জল প্রমাণ। যেখানে হযরত ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু স্ব-পরিবারে শাহাদাত বরণ করেছেন। তাই মুসলিম জগত তাঁদের কাছে ঋণী। আল্লাহ এবং রাসূলেরও নির্দেশ তাঁদেরকে মহব্বত করা, তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা।

আল্লাহ তা‘আলার বাণী-
ﻗُﻞْ ﻻ ﺍَٔﺳْﺎٔﻟُﻜُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍَٔﺟْﺮﺍً ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻤﻮﺩّﺓ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻘُﺮْﺑﻰ
অর্থাৎ হে হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনি বলুন, আমি তোমাদের কাছে আমার দাওয়াতের জন্য (দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে) আমার আহ্লে বাইতের মহব্বত ব্যতীত কোন কিছুই চাই না।
    (সূরা শুরা : ২৩)

আন্তরিকতাপূর্ণ নিষ্কলুষ ভালবাসার এই দাবী মুমিনদের উপর কেবল মাহবুবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকটআত্মীয়দের জন্যই রাখা হয়েছে। উক্ত আয়াতের আলোকে ঈমানদারের উপর আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল এর পরে আহ্লে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করা একান্ত অপরিহার্য।

আহলে বাইতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদা মানবতার কল্যাণকামী, পূত পবিত্র তাঁদের ব্যক্তিসত্ত্বা, নিষ্কলুষ তাঁদের জীবন চরিত। আল্লাহ তাঁদের থেকে সব রকমের নাপাকী ও পঙ্কিলতা দূর করেছেন। এই মর্মে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
ﺇﻧّﻤﺎ ﻳُﺮﻳﺪُ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟِﻴُﺬْﻫِﺐَ ﻋَﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﺍٔﻫْﻞَ ﺍﻟﺒَﻴْﺖِ ﻭﻳُﻄَﻬِّﺮَﻛُﻢْ ﺗَﻄْﻬِﻴﺮﺍً
অর্থাৎ হে নবী পরিবারগণ! আল্লাহ তো তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সর্বোত্তমভাবে পবিত্র রাখতে চান। (সূরা আহজাব: ৩৩)

প্রিয়তম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আহলে বাইত, তাঁর পূণ্যবতী স্ত্রীগণ, তাঁর নূরানী বংশধরগণ সর্বোত্তভাবে পবিত্র এবং আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয়। অত্র আয়াতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরিবারবর্গের ফজিলত ও মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। অত্র আয়াতে আহলে বাইত শব্দটি পরিবারবর্গের সদস্য ও বংশধরদেরকে শামিল করে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিবিগণ তাঁর পরিবারের সদস্য হিসেবে আহলে বাইত। আর তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আত্মীয় স্বজন বংশধর হিসেবে আহলে বাইত।
ইমাম আহম্মদ বিন হাম্বল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ত আয়াতটি নাযিল হয়েছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর প্রসঙ্গে। এ প্রসঙ্গে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ডের ২২৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে-
ﻓﺪﻋﺎ ﻋﻠﻲ ﻭﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻓﻘﺎﻝ : ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻫﻮٔﻻﺀ ﺍٔﻫﻞ ﺑﻴﺘﻲ ﻓﺎٔﺫﻫﺐ ﻋﻨﻬـﻢ ﺍﻟﺮﺟﺲ ﻭﻃﻬـــﺮﻫﻢ ﺗﻄﻬﻴﺮﺍ ﻭ ﻧﺰﻟﺖ ﻫﺬﻩ ﺍﻻٓﻳﺔ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻲ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍٓﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ‏( ﺇِﻧَّﻤﺎ ﻳُﺮﻳﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﺬْﻫِﺐَ ﻋَﻨْﻜُﻢُ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﺍَٔﻫْﻞَ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻭَﻳُﻄَﻬِّﺮَﻛُﻢْ ﺗَﻄْﻬﻴﺮﺍً ‏) : ﻓﻲ ﺑﻴﺖ ﺍٔﻡ ﺳﻠﻤﺔﻗﺎﻟﺖ ﺍٔﻡ ﺳﻠﻤﺔ : ﻭﺍٔﻧﺎ ﻣﻌﻬﻢ ﻳﺎ ﻧﺒﻲ ﺍﻟﻠﻪ؟ ﻗﺎﻝ : ﺍٔﻧﺖ ﻋﻠﻰ ﻣﻜﺎﻧﻚ، ﻭﺍٔﻧﻚ ﻋﻠﻰ ﺧﻴﺮ
অর্থাৎ (উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর) দয়াল নবীজি, হযরত আলী, হযরত ফাতেমা, হযরত ইমাম হাসান ও হুসাইন (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) কে একত্রিত করলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! এরা সব আমার আহ্লে বাইত। তাঁদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন এবং তাঁদেরকে খুব পরিচ্ছন্ন করুন।

উক্ত আয়াাতখানা হযরাত উম্মে সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা-এর ঘরে অবতীর্ণ হল। ঐ সময় হযরত উম্মে সালমা এসে হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দরবারে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমিও তাঁদের সাথে আছি? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি তোমার স্থানে, তুমি কল্যাণের উপর আছ।

এ প্রসঙ্গে তাফসীরে ইবনে আরাবীর মধ্যে এসেছে-
ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺑﺘﻚ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻭﺟﺒﺖ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﻣﻮﺩﺗﻬﻢ ﻓﺎﺟﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻲ ﻭﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﺑﻨﻬﻤﺎ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ * ﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻦ ﻗﺮﺍﺑﺘﻚ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﻧﺰﻟﺖ ﺍﻻﻳﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻲ ﻭﻓﺎﻃﻤﺔ ﻭﺍﺑﻨﻬﻤﺎ
অর্থাৎ সাহাবায়ে কেরামগণ জানতে চাইলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার ঐ সব নিকটআত্মীয় কারা, যাঁদের প্রতি আমাদের ভালবাসা ফরজ বা যাদের ভালবাসার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে? তদুত্তরে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন- আলী, ফাতেমা, হাসান, হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম এবং তাঁদের সন্তানগণ। (যথাক্রমে তাফসীর ইবনে আরাবী, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২১২ ও তাফসীরে মাদারিক, খন্ড-৪, পৃষ্ঠা-১৫৫)

অন্য হাদীসে এসেছে-
ﻋﻦ ﺍٔﻧﺲ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﻗﺎﻝ : ﺳُﺌﻞ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍٓﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ﺍٔﻱ ﺍٔﻫﻞ ﺑﻴﺘﻚ ﺍٔﺣﺐّ ﺇﻟﻴﻚ؟ ﻗﺎﻝ : ‏( ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺍٓﻟﻪ ﻭﺳﻠﻢ ‏) ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ
অর্থাৎ, হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আপনার আহ্লে বাইতে মধ্যে কে আপনার অধিক প্রিয়? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা। (আল ইসতি‘আব, খন্ড-১, পৃষ্ঠা-৩৮০)

ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﻣَﻦْ ﺍَٔﺣَﺒَّﻬُﻤَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺍَٔﺣَﺒَّﻨِﻲ ، ﻭَﻣَﻦْ ﺍَٔﺑْﻐَﻀَﻬُﻤَﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺍَٔﺑْﻐَﻀَﻨِﻲ ” . ﻳَﻌْﻨِﻲ : ﺣَﺴَﻨًﺎ ، ﻭَﺣُﺴَﻴْﻨًﺎ
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি উভয়কে ভালবাসে, নিশ্চয়ই সে আমাকে ভালবাসে এবং যে উভয়ের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করল সে বস্তুত আমার সাথেই ঈর্ষা করল (অর্থাৎ হাসান ও হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা)। (মিশকাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪৪; আহমাদ, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮৮; তিরমিযি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৪১)

হযরত আলী (রা) হতে বর্ণিত-
ﻋﻦ ﻋﻠﻲ ﻗﺎﻝ : ﺍﻟﺤﺴﻦ ﺍٔﺷﺒﻪ ﺑﺮﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺼﺪﺭ ﻭﺍﻟﺮﺍٔﺱ ، ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍٔﺷﺒﻪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﺍٔﺳﻔﻞ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ
অর্থাৎ, আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বক্ষ থেকে মাথা পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাদৃশ্য এবং হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বক্ষ থেকে নিচের দিকে পরিপূর্ণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাদৃশ্য। (মিশকাত, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৬৪০; তিরমিযি, খন্ড-২, পৃষ্ঠা-৩৪৩; আহমদ)

অন্য হাদীসে এসেছে-
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺇﻥ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻭﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﻫﻤﺎ ﺭﻳﺤﺎﻧﺘﺎﻱ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﻴﺎ
অর্থাৎ, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিঃসন্দেহে হাসান ও হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা দুনিয়াতে আমার বেহেশতী দু’টি ফুল। (মিশকাত)
ফুলের রূপ, বর্ণ, গন্ধ প্রভৃতি মূল থেকে উৎসরিত। ঐ মূলই হচ্ছেন হুজুর সাইয়্যিদে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যিনি এই বেহেশতি দুই ফুলকে কাঁধে উঠাতেন, নামাযরত অবস্থায় হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাঁধে চড়ে বসলে রুকু-সিজদা বিলম্বিত করতেন, যাঁদের কান্না হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একেবারে অসহ্য ছিল। যাঁদেরকে বেহেশতি যুবকদের সর্দার বলে ঘোষণা দিয়েছেন। যাঁদের স্মরণ আল্লাহর যিকির।
(সূরা রাদ : ২৮)
আহলে বাইতের প্রকৃত গোলামীতেই বেলায়ত অর্জিত হয়। আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য অর্জন করা যায়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁদের প্রতি প্রকৃত ভালবাসা প্রদর্শনের এবং শ্রদ্ধাভরে তাঁদের গোলামীতে আত্মনিয়োগ করার তৌফিক দান করুন। আমীন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন।

নবীজীর গোলাম বলা যাবে কি না?

“নবিজীর গোলাম” বলা যাবে কি এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা আছে কিনা!! আবার অনেক সময়ে দেখা যায় যে, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি ( ﷺ) -এঁর গোলাম বললে কেউ কেউ তাতে কটাক্ষ করে।আজকে ইনশাআল্লাহ এ বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো:
গোলাম ( ﻏﻼﻡ ) শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হল, ﺧﺎﺩﻡ (সেবক), ﻋﺎﻣﻞ (কর্মচারী) প্রভৃতি। অতএব রাসূলের গোলাম বা পীরের গোলাম বা খাদেম, কর্মচারী, সেবক বলাতে কোন আপত্তি নেই।যেমন,মুসলিম শরীফের ২য় খন্ডের ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻻﻟﻔﺎﻅ ﻣﻦ ﺍﻻﺩﺏ -এ বর্ণিত হয়েছে যে-
ﻻﻳﻘﻮﻟﻦ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﻋﺒﺪﻱ ﻭﺍﻣﺘﻲ ﻛﻠﻜﻢ ﻋﺒﻴﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻛﻞ ﻧﺴﺎﺀﻛﻢ ﺍﻣﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻟﻜﻦ ﻟﻴﻘﻞ ﻏﻼﻣﻲ ﻭﺟﺎﺭﻳﺘﻲ
অর্থাৎ, নবীজী ( ﷺ ) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ ﻋﺒﺪﻱ (আঁমার বান্দাহ) বলোনা।তোমরা সবাই আল্লাহ’র বান্দাহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহ’র বান্দী।কিন্তু আঁমার গোলাম আঁমার চাকরানী বলতে পার।
(মুসলিম শরীফ)
এবার দেখুন: সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : ৪১ : শব্দচয়ণ ও শব্দ প্রয়োগে শিষ্টাচার :৫৬৮১।ইফাঃ অনুবাদ থেকে।
*মুহাম্মদ ইবনু রাফি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাম্মাম ইবনু মুনাব্বিহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ এ হল সে সব হাদীস, যা আবূ হুরায়রা (রা:) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আমাদের কাছে রিওয়ায়াত করেছেন। একথা বলে তিনি কয়েকখানি হাদিস উল্লেখ করেছেন। (সে সবের একখানি হল) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ (মনিব সমন্ধে এভাবে) বলবে না যে, তোমার রবকে পান করাও, তোমার রবকে খাবার দাও,তোমার রবকে উযু করাও। তিঁনি আরও বলেনঃ “তোমাদের কেউ (নিজেও) বলেছেনঃ আমার রব বলবেনা বরং বলবে আমার সায়্যিদ-সরদার বা নেতা,আমার মাওলা-মনিব।আর তোমাদের কেউ বলবে না,আমার বান্দা আমার বাঁদী, বরং বলবে, আমার সেবক আমার সেবিকা।”
(ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত)
এখানে সরাসরি গোলাম শব্দটিই ব্যবহার হয়েছে এবং তা ব্যবহারের বৈধতাও দেয়া হয়েছে। সুতরাং কেউ যদি নিজেকে খাদেম বা চাকর বা কর্মচারী অর্থে পীরের গোলাম বলে তা অবশ্যই জায়িয।প্রসংগত, হাদীস শরীফে ﻋﺒﺪﻱ (আমার বান্দাহ) বলতে নিষেধ করা হয়েছে।
কাজেই শরয়ী পরিভাষায় ইবাদাতকারী হিসেবে কেউ তার গোলামকে বা কর্মচারীকে বা খাদেমকে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে হক্কানী পীরের ﻋﺒﺪ (আবদ তথা বান্দাহ) বলতে পারবে না। কেননা ইবাদতের একমাত্র মালিক আল্লাহ পাকই; এতে সন্দেহ নেই। অন্য যে কাউকেই হোক না কেন, ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য বা ইলাহ মনে করলে শিরক হবে; তবে এ অর্থ ছাড়া গোলাম অর্থে যদি ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) শব্দটি কেউ তার কর্মচারী বা খাদেমকে বলে কিংবা কোন মুরীদ নিজেকে গোলাম অর্থে পীরের ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) বলে এতে সমস্যা নেই। বরং তা হক্কানী পীরের প্রতি তা মুরীদের আদব ও ভক্তিরই বহিঃপ্রকাশ।
আর কোন সহীহ মুসলমান যখন নিজেকে নবীর বা পীরের ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) বা গোলাম বলে, নিশ্চয় সে কখনো এটা মনে করে না যে, নবীজি ﷺ বা হক্কানী পীর ইবাদাতের মালিক বা আল্লাহ হয়ে গেছেন।গোলাম অর্থে আব্দ এর ব্যবহারের বৈধতার ব্যাপারে স্বয়ং কুরআন শরীফেই এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
ﻗﻞ ﻳﺎﻋﺒﺎﺩﻱ ﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺳﺮﻓﻮﺍ ﻋﻠﻲ ﺍﻧﻔﺴﻬﻢ ﻻﺗﻘﻨﻄﻮﺍ ﻣﻦ ﺭﺣﻤﺔ ﺍﻟﻠﻪ
অর্থাৎ, হে নবী!আঁপনি তাদেরকে সম্বোধন করুন,হে আঁমার বান্দাহগণ, তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ,আল্লাহ’র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না।
এ আয়াতে ﻗﻞ ﻳﺎﻋﺒﺎﺩﻱ (হে আঁমার বান্দাগণ) এর দু’টি অর্থ প্রকাশ পায়।
*এক,আল্লাহ বলেন- ওহে আঁমার বান্দাহগণ;
*দুই,হুযুর পাক ﷺ কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে,হে নবী আঁপনি বলুন,হে আঁমার (অর্থাৎ,আঁপনার) বান্দাহগণ।এ দ্বিতীয় অর্থে রাসূলুল্লাহ’র বান্দাহ বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজীর গোলাম এবং উম্মত।
অনেক বুযুর্গানে দ্বীন দ্বিতীয় অর্থটি গ্রহণ করেছেন। আল্লামা রুমী মসনবী শরীফে বলেছেন –
ﺑﻨﺪﮦ ﺧﻮﺩ ﺧﻮﺍﻧﺪ ﺍﺣﻤﺪ ﺩﺭ ﺭﺷﺎﺩ * ﺟﻤﻠﮧ ﻋﺎﻟﻢ ﺭﺍ ﺑﺨﻮﺍﻥ ﻗﻞ ﯾﺎ ﻋﺒﺎﺩ
অর্থাৎ, সমগ্র জগতবাসীকে হুযুর স্বীয় বান্দাহ বলেছেন। কুরআন শরীফে দেখুন ﻗﻞ ﻳﺎﻋﺒﺎﺩﻱ বলা হয়েছে।
ইযালাতুল খফা গ্রন্থে শাহ ওলী উল্লাহ সাহেব রাহিমাহুল্লাহ আর রিয়াযুন নফরা ইত্যাদি কিতাবের উদৃতি দিয়ে বলেছেন যে, হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে গিয়ে বলেছিলেন-
ﻗﺪ ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻜﻨﺖ ﻋﺒﺪﻩ ﻭﺧﺎﺩﻣﻪ
অর্থাৎ,আমি হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এঁর সাথে ছিলাম। তখন আমি তাঁর বান্দাহ ও খাদেম ছিলাম।
অতএব,প্রমাণিত হল যে, ﻋﺒﺪ (বান্দাহ) শব্দটি গোলাম অর্থে আল্লাহকে ছাড়াও ব্যবহার করা যায়।
আল্লাহ পাক সুরা তাহরীমের ৪ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ‘মাওলা’ শব্দটি নিজেই অন্যদের জন্য ব্যবহার করেছেন।যেমন,আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন…
ﻓَﺎِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻫُﻮَ ﻣَﻮْﻟَﺎﻩُ ﻭَﺟِﺒْﺮِﻳْﻞُ ﻭَﺻَﺎﻟِﺢُ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴْﻦَ ﻭَﺍﻟْﻤَﻠَﺎ ﺋِﻜَﺔُ ﺑَﻌْﺪَ ﺫٰﻟِﻚَ ﻇَﻬِﻴْﺮ -
অবশ্যই মহান আল্লাহ তাঁর [প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা’র] ‘মাওলা’।হযরত জিব্রাঈল আলাইহিস সালামও তাঁর ‘মাওলা’ এবং নেককার ঈমানদারগণও তাঁর ‘মাওলা’।এছাড়া ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। হাদিস শরীফেও রয়েছে,রাসুলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াছাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু এর ফযিলত বর্ণানা করতে গিয়ে ইরশাদ করেছেন,আমি যার ‘মাওলা’ আলীও তার ‘মাওলা’। মাওলানা’ বা ‘মওলানা’ শব্দটি আরবি। এটি ‘মাওলা’ ও ‘না’ দুটি শব্দে ঘটিত। ‘না’ একটি সর্বনাম। এর অর্থ আমরা বা আমাদের। আর ‘মাওলা’ শব্দের প্রায় ৩০টি অর্থ আছে। যেমন—প্রভু, বন্ধু, সাহায্যকারী, মনিব, দাস, চাচাতো ভাই, প্রতিনিধি, অভিভাবক, নিকটবর্তী, আত্মীয়, নেতা, গুরু, প্রতিপালক, সর্দার, প্রেমিক, প্রতিবেশী, আনুগত্য, প্রার্থনা, নীরবতা, ইবাদত,দণ্ডায়মান ইত্যাদি।
তথ্যসূত্র
*১. বাদায়িউল ফাওয়ায়িদ : ৪/৯৭৮ *২. ফাতাওয়ায়ে আশরাফিয়া,পৃ: ৭০
*৩. উমদাতুর রিআয়াহ : ২/৩২৮
*৪. লিছানুল আরব : ৮/৪৫২
*৫. আল-মিসবাহুল মুনির,পৃ: ৫৯১
এখানে মাওলা বা মাওলানা শব্দটি কি শুধু মূল অর্থেই (আল্লাহকে বুঝাতে) বসে নাকি আরও অনেক অর্থে বসে আপনারাই ভাবুন।
হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর একটা উক্তি দিয়ে লেখাটি শেষ করছি।খোলাফায়ে রাশেদিনে হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর যুগ চলছে।একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ইমাম হোসাইন ইবনে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর মধ্যে কোনো এক ইস্যু নিয়ে শিশুসুলভ তর্ক হয়েছে। তর্কের এক পর্যায়ে ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন ‘তুমি হচ্ছ আঁমার নানাজানের গোলামের বাচ্চা’।
এতে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাগান্বিত হলেন এবং স্বীয় পিতা আমীরুল মো’মিনীন হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু রাষ্ট্রীয় বিচারের আয়োজন করলেন। সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সবাই উপস্থিত।রাষ্ট্রীয় প্রধানের ছেলেকে এত বড় কথা বলে ফেললেন হযরত
ইমাম হুছাইন (রাঃ)! এটা বিনা বিচারে ছাড়া যায়না। তাই তাঁর বিচার হতে হবে,কিন্তু এতে সবাই হতবম্ভ। ইমাম হুসাইন (রা:) বিচারের সম্মুখীন! এই বিচারে সবাই অবাক
নয়নে থাকিয়ে রইলেন,কিযে হয় সেই অপেক্ষায়। হযরত ইমাম হুছাইন (রাঃ) বিচার- আদালতে হাজির।
বিচারপতি স্বয়ং ওমর ফারুক (রাঃ)।
হযরত ওমর ফারুক (রা:),হয়রত ইমাম হুসাইন (রা:) কে জিজ্ঞেস
করলেন,আঁপনি কি আমার ছেলে কে গোলামের বাচ্ছা গোলাম বলেছেন।দৃঢ় কণ্ঠে বললেন ইমাম,হ্যাঁ আমি বলেছি, “।হযরত ওমর ফারুক (রা:) জিজ্ঞেস করলেন,আঁপনি এই কথা কেন বলেছেন,তখন হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন,আমি ভুল কি বললাম,আঁপনিতো,আঁমার নানাজানের গোলাম,তাই আপনার
ছেলে,গোলামের বাচ্ছা গোলাম।
এই উত্তর শুনে হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) বললেন,আঁপনি কি এইটা লিখে দিতে পারবেন? হযরত ইমাম হুসাইন (রা:) বললেন, হাঁ পারবো।
হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এ
লিখা নিয়ে উপস্থিত সকলকে স্বাক্ষী রেখে বললেন,আপনারা সবাই স্বাক্ষী থাকুন রাসূলের নাতী, জান্নাতের
যুবকগনের সর্দার আমাকে “রাসূলের গোলাম” বলেছেন।সুতরাং এটাই আমার নাজাতের উছিলা। অতএব
আপনারা আমার ইন্তিকালের পর কাফনের ভেতর এ লেখাটি দিয়ে দেবেন। এটাই আমার আরজী।
[আল কউলুল বদী -৮৬৫ ]
লক্ষ্য করুন: একই শব্দ উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হল।এখন কেন ব্যবহৃত হল? কোন কারনে ব্যবহৃত হল? তা আগে বুঝতে হবে? কোন কিছু না জেনে বুঝে শিরকের ফতোয়া দিলে হয় না।যেমন কেউ বললেন আমি এ জায়গার মালিক।এখন এক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি কি নাস্তিক হয়ে গেল বা শিরক করলো বা আল্লাহর সাথে নিজেকে মালিক বলে ঘোষনা দিল।আর এখানে মালিক কথাটি কোন অর্থে ব্যবহার হল? তা বুঝতে হবে? অথবা ঐ ব্যক্তির মনে আদৌ এ ধরনের খেয়াল ছিল কি না? তাও জানা দরকার।আর আমাদের আপত্তি টা এখানেই।
আমরা তো নিজেদের “নবিজীর গোলাম বলি ” নবিজীকে খোদা হিসেবে নয় বরং আমরা এটা মনে করি যে,বরং আমরা এটাই বিশ্বাস করি যে,নবীপ্রেমই খোদা প্রাপ্তির পুর্বশর্ত ।কারন আল্লাহ পাক স্বয়ং কোরআনে ইঙ্গিত দিয়েছেন।আঁমাকে কেউ ভালবাসতে চাইলে কিংবা আঁমার ভালবাসা পেতে চাইলে,সে যেন আঁমার হাবীবের আনুগত্য করে,এক কথায় আঁমার নবীর গোলামী করে (অর্থাৎ,আল্লাহর বন্দেগী করা,এবং নবীর গোলামী করা)।আর এজন্য আল্লাহর হাবীব ইরশাদ করেছেন, ” ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের কেউ পরিপূর্ন ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষন পর্যন্ত আঁমি তার কাছে বেশি প্রিয় হব তার মাতাপিতা,সন্তান-সন্তুতি, মানুষ ও সবকিছুর চেয়ে।
[বুখরী শরীফ ১ম খন্ড ৭১ পৃষ্ঠা]
সুতরাং “নবিজীর গোলাম” বলা যাবে এবং এতে কোন প্রকার শিরকের সম্ভাবনা নেই।

আল্লাহকে ভালবাসতে চাইলে নবী পাককে সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করতে হবে।

কোর’আনে কারীমের আয়াতঃ _______________ আল্লাহ তা’আলা এরশাদ করেন, হে নবী, আপনি বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাসতে চাও, তবে আমাকে অনুসরণ কর। সূরাহ আল ইমরান-৩১
এখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ নিয়ে প্রশ্ন। এ অনুসরণের ফলাফল কি? এর পেছনে কী কারণ থাকে?
ইমাম আযহারীর তাফসীরঃ ______________
ইমাম আযহারী বলেন, ﻣﺤﺒﺔ ﺍﻟﻌﺒﺪ ﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﻃﺎﻋﺘﻪ ﻟﻬﻤﺎ ﻭﺍﺗﺒﺎﻋﻪ ﺃﻣﺮﻫﻤﺎ ; ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ :ﻗﻞ ﺇﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﺤﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻧﻲ আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য বান্দার ভালবাসা হচ্ছে তাদের উভয়ের আনুগত্য করা এবং তাদের নির্দেশ অনুসরণ করা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﻗﻞ ﺇﻥ ﻛﻨﺘﻢ ﺗﺤﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﺎﺗﺒﻌﻮﻧﻲ রেফারেন্সঃ আল জামিউ লি আহকামিল কোর’আন লিল কুরতুবী, সুরা আল ইমরানঃ ৩১
প্রকৃত ভালবাসা তখনই প্রকাশ পায় যখন হাবীব তার মাহবুবকে অনুসরণ করে। এই অনুসরণ ই হচ্ছে তার ভালবাসার প্রমাণ।
হাফিয ইবনুল কায়্যিমের আন্ডারস্ট্যান্ডিং _____
হাফিয ইবনুল কায়্যিম বলেন, ভালবাসার শর্ত হচ্ছে তুমি যাকে ভালবাস, কোনরূপ অবাধ্যতা ছাড়া তুমি তাকে মেনে চলবে , অনুসরণ করবে। রেফারেন্সঃ শারহুন নূনিয়্যাহঃ ২/১৩৪
ইবনুল কায়্যিম আল জাওযিয়্যা আরো বলেন, ﻓﺈﻥ ﺃﻣﺘﻪ ﻳﺤﺒﻮﻧﻪ ﻟﻤﺤﺒﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻪ অর্থাৎ তাঁর (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উম্মতগণ তাঁকে ভালবাসবে তাঁর প্রতি আল্লাহর ভালবাসার কারণে। এরপর তিনি বলেছেন, ﻓﻬﻲ ﻣﺤﺒﺔ ﻣﻦ ﻣﻮﺟﺒﺎﺕ ﻣﺤﺒﺔ ﺍﻟﻠﻪ অর্থাৎ এমন ভালবাসাই আল্লাহর ভালবাসাকে আবশ্যক করে দেয়। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসলে আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তিকে অবশ্যই ভালবাসেন। রেফারেন্সঃ জালা উল আফহাম লি ইবনিল কায়্যিম- ২০৫ এখন সূরা আল ইমরানের ঐ আয়াতটি পড়ুন আর হাফিয ইবনুল কায়্যিমের কথাগুলো চিন্তা করুন। যা পাবেন তা হলো, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ এর অর্থ হচ্ছে তাঁকে ভালবাসা। এ গেল সুরা আল ইমরান এর আয়াত সম্পর্কে আলোচনা।
এবার চলুন, কোর’আনে কারীমের অন্য একটি আয়াত, যে আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরূনে কেরাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা ওয়াজিব বলেছেনঃ
কোর’আনে কারীমের আয়াতঃ _______________ ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺁَﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺃَﺑْﻨَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺇِﺧْﻮَﺍﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺸِﻴﺮَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻝٌ ﺍﻗْﺘَﺮَﻓْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗِﺠَﺎﺭَﺓٌ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻥَ ﻛَﺴَﺎﺩَﻫَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺎﻛِﻦُ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻧَﻬَﺎ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺟِﻬَﺎﺩٍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻓَﺘَﺮَﺑَّﺼُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘِﻴﻦَ বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান- যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। সূরা তাওবাহ ২৪
আয়াতের তাফসীরঃ ___________ ইমাম কুরতুবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ﻭﻓﻲ ﺍﻵﻳﺔ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﻭﺟﻮﺏ ﺣﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ، ﻭﻻ ﺧﻼﻑ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺑﻴﻦ ﺍﻷﻣﺔ
অর্থাৎ এ আয়াতের মধ্যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালবাসা যে ওয়াজিব, তার দলীল বিদ্যমান। আর উম্মতের মধ্যে এ নিয়ে কোন এখতেলাফ নেই। রেফারেন্সঃ আল জামিউ লি আহকামিল কোর’আন, সূরা তাওবাহঃ ২৪
ইবনু তাইমিয়্যাহ এর আন্ডারস্ট্যান্ডিং __________________ হাফিয ইবনু তাইমিয়্যাহ বলেন, ﻭﻣﻦ ﺣﻘِّﻪ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﺃﻥ ﻳﻜﻮﻥ ﺃﺣﺐَّ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻤﺆﻣﻦ ﻣﻦ ﻧﻔﺴﻪ ﻭﻭﻟﺪﻩ ﻭﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﺨﻠﻖ؛ ﻛﻤﺎ ﺩﻝَّ ﻋﻠﻰ ﺫﻟﻚ ﻗﻮﻟﻪ – ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ -: }ﻗُﻞْ ﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺁَﺑَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺃَﺑْﻨَﺎﺅُﻛُﻢْ ﻭَﺇِﺧْﻮَﺍﻧُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻜُﻢْ ﻭَﻋَﺸِﻴﺮَﺗُﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻣْﻮَﺍﻝٌ ﺍﻗْﺘَﺮَﻓْﺘُﻤُﻮﻫَﺎ ﻭَﺗِﺠَﺎﺭَﺓٌ ﺗَﺨْﺸَﻮْﻥَ ﻛَﺴَﺎﺩَﻫَﺎ ﻭَﻣَﺴَﺎﻛِﻦُ ﺗَﺮْﺿَﻮْﻧَﻬَﺎ ﺃَﺣَﺐَّ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢْ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﻭَﺟِﻬَﺎﺩٍ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻠِﻪِ ﻓَﺘَﺮَﺑَّﺼُﻮﺍ ﺣَﺘَّﻰ ﻳَﺄْﺗِﻲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﻣْﺮِﻩِ ﻭَﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻬْﺪِﻱ ﺍﻟْﻘَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻔَﺎﺳِﻘِﻴﻦَ
(উম্মতের উপর) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হক হচ্ছে, মুমিনের নিকট তার নিজ থেকে, তার সন্তান থেকে এবং সমগ্র সৃষ্টি থেকে তিনি অধিকতর প্রিয় হবেন। দলীল হচ্ছে কোর’আনের আয়াত- (অনুবাদ) বলুন, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই তোমাদের পত্নী, তোমাদের গোত্র তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জেহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত, আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। সূরা তাওবাহ ২৪
রেফারেন্সঃ তাকরীবুস সারিমিল মাসলূল আলা শাতিমির রাসূল লি ইবনি তাইমিয়্যাহঃ ১/২৫৯
সারকথাঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিও ওয়া সাল্লামকে ভালবাসার নির্দেশনা কোর’আনে কারীমে বিদ্যমান। এ উম্মতের কেউ তা কখনো অস্বীকার করেনি। এখন এই ফেতনার যামানায় কেউ যদি তা অস্বীকার করে, তবে হয়তঃ সেটা তার না জানার কারণে হতে পারে, নতুবা জেনে শুনে রাসুল সাল্লামের ভালবাসার বিরুদ্ধে এই কমবখত দুশমনি করছে। আর মুমিন অবস্থায় রাসুল সাল্লামকে অনুসরণ করাই হচ্ছে তাঁকে ভালবাসা।আর এটাই হচ্ছে প্রকৃত ভালবাসার নজীর। ______________________________
তো, বক্তা সাহেব, আমীর হামযা যে বলিয়া উঠিলেন , “কোর’আনে কারীমে আল্লাহ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ করতে বলেছেন, ভালবাসতে বলেন নি”———–!!!! সাজিয়া গুজিয়া ইস্টেজে (স্ট্যাজে) বসিয়া মাইকিং, সাউন্ড হাইকিং আর জনতার লাইকিং লইয়া যদি এমন তক্তা মার্কা বক্তা এই সকল অপপ্রচার করিতে থাকেন, তাহা হইলে তো মুসলমান সমাজের একদম সাড়ে ১২টা বাজাইয়া দিবেন। আর মুসলমান তখন জিন্দা লাশ হইয়া বাঁচিতে বাঁচিতে কোন রকম কবর পর্যন্ত গিয়া পৌঁছিবে। অপপ্রচার বিনাশে লেখাটি কপি / শেয়ার করিবেন।

Sunday, September 23, 2018

কামেল ওলীর অনুগ্রহ লাভে ধন্য হবার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী

প্রকৃতপক্ষে, খোদার দিদার ও ওলীর ছোহবত লাভে ধন্য হতে হলে একজন খোদাপাগল কামেল পীরের হাতে বায়াত গ্রহণ করতে হবে। শয়নে, স্বপনে, জাগরণে, সকল অবস্থায় কামেল পীরকে স্মরণ রাখতে হবে। কামেল পীরের প্রতি আনুগত্য থাকতে হবে। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে সকল অবস্থায় মিথ্যাকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করতে হবে। হারাম খাদ্য ভক্ষণ ও অবৈধ রুচি চিরতরে বর্জন করতে হবে। হালার রুজির তালাশ করতে হবে। কারো প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি পোষণ করা কিংবা ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অপব্যয়কে বর্জন করতে হবে এবং কার্পণ্য করা চলবে না। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে সমূলে পরিত্যাগ করতে হবে। মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে হবে এবং মৃত্যুকে নিকটবর্তী জানতে হবে। মাতা-পিতার ভালবাসা অর্জন করতে হবে। প্রতিদিন রাত্রে শয়নের প্রাক্কালে আত্ম-সমালোচনা করতে হবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য ‘তওবা’ করতে হবে। সকল প্রকার লোভকে হারাম করতে হবে।
পরমুখাপেক্ষীতা বর্জন করতে হবে এবং স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা চালাতে হবে। সকল বিপদে আপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে এবং খোদার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। পূরণ করা যাবে না এরূপ প্রতিশ্রুতি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সত্যিকারের জ্ঞাণ আহরণ করতে হবে এবং গোঁড়ামীর উর্ধ্বে উঠতে হবে। ন্যায়ের প্রতি দৃঢ় থাকতে হবে। খোদার খানের কাছে নিজের অস্তিত্বকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে দিতে হবে। প্রকৃতপক্ষে “ঐ ব্যক্তিই সফলকাম যার জ্ঞান বিশ্বাস পর্যন্ত, বিশ্বাস আল্লাহর ভয় ভীতি পর্যন্ত এবং আল্লাহর ভয় আমল পর্যন্ত, আমল পরহেজগারী পর্যন্ত, পরহেজগারী খোদার নৈকট্য লাভ পর্যন্ত এবং খোদার নৈকট্য লাভ প্রত্যক্ষ দর্শন পর্যন্ত” {হযরত জোনায়েদী বাগদাদী (রঃ)}। হযরত রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “যে নিজেকে চিনেছে, নিশ্চয়ই সে খোদাকে চিনেছে”। সুতরাং প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য হলো কামেল ওলীকে পীর ধরা, তাঁর আদেশ উপদেশ মেনে চলা এবং মৃত্যুর কথা স্মরণপূর্বক মুরশিদের সাহচর্যে থেকে এবাদত, রেয়াজত, জিকির, মোরাকেবা, মোশাহেদা করা, তজকিয়ায়ে নফছ ও তজকিয়ায়ে কলব হাসেল করতঃ খোদা প্রাপ্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা। কারণ ‘এছলাহে নফছ’ বা নফছের সংশোধনপূর্বক ‘হুজুরী’ কলব হাসেল করতঃ আল্লাহতালার সন্তুষ্টি বা নৈকট্য লাভ করাই প্রত্যেক মানুষের একান্ত কর্তব্য।
আজ মূল্যবোধের অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করেছে। ইহার পরিণাম অতীব ভয়াবহ। অপ্রয়োজনীয় ও কুরুচিপূর্ণ ভূষণকে ফ্যাশন মনে করে চরিত্র বিনষ্টকারী আমোদ প্রমোদ এবং স্বাস্থ্য হানিকর পানীয়তে অভ্যস্থ হয়ে সমাজের এক বৃহৎ অংশ আজ কলুষিত। এ সকল নোংরা আচার ব্যবহার ও রীতিনীতির ফলে মানুষের কোমল মন বিলুপ্ত হয়ে মানবমন কঠোর ও নিষ্ঠুর হয়ে পড়ে এবং পশু সুলভ কামনা বাসনায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। তাই একটি সুখী সমৃদ্ধ সমাজ বিনির্মাণের জন্য অনন্ত শান্তির ফোয়ারা হযরত রসূল করিম (সঃ)-এর সুন্নাহর অনুসরণকারী কামেল ওলীর ছোহবত ও সান্নিধ্য একন্ত প্রয়োজন। প্রকৃতপক্ষে, ধর্ম হচ্ছে শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মারফতের একটি সমন্বিত রূপ। মারফত হচ্ছে একটি অনন্য মহাসাগর। এ মহাসাগরে ডুব দিতে হলে অন্তর পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং প্রেম ও ভক্তির রসে সিক্ত করতে হবে। শরীয়ত, তরিকত ও হাকিকতকে মহাসাগর মুখী সাগরের সাথে তুলনা করা যায়। মারফতের মহাসাগরে পৌছতে হলে সমূদ্রগুলোকে প্রেম ও ভক্তির বারিধারা দিয়ে পরিপূর্ণ রাখতে হবে। অন্তর পরিচ্ছন্ন না হলে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভক্তি আসবে না। আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভক্তি না থাকলে ঈমান হবে অসার, নামায হবে ব্যায়াম, রোজা হবে নিছক উপবাস, হজ্জ্ব হবে বিদেশ ভ্রমণ, যাকাত হবে অহংকারের নিদর্শন এবং বিদ্যা হবে নারীদের অলঙ্কারের ন্যায় অনুৎপাদনশীল। মনে যদি পবিত্র প্রেমের স্পর্শ না থাকে, উহা যদি কুটিলতা ও শঠামিতে পরিপূর্ণ থাকে তাহলে ঐ মানুষকে দোযখে টেনে নেবে। আল্লাহ আমাদের ভন্ড ও কপ পরিচয়ধারীদের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং সুফী দর্শনের সত্যিকার ভাবধারায় উজ্জ্বীবিত হবার তওফিক দিন। আমিন!

মাইজভান্ডারী তরিকার বৈশিষ্ট্য

মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের উল্লেখযোগ্য দিকসমূহ

মানব মুক্তি ও স্রষ্টার নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) কর্তৃক প্রবর্তিত ও তাঁর মহান জীবন ধারায় প্রতিফলিত মাইজবান্ডার দরবার শরীফের মহান উল্লেখযোগ্য দিকগুলোকে নিম্নোক্তভাবে শ্রেণীবিভাগ করা যায়:
(ক) অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ কিংবা তৌহিদী শরাফত (Unchained divine love or total commitment to the oneness of almighty Allah)
(খ) আধ্যাত্মিকতা বা আধ্যাত্মক শরাফত (Spiritualism)
(গ) স্রষ্টার অস্তিত্বে বিলীনতা বা আত্ম সমর্পণের শরাফত (Total surrender to the Almighty Allah)
(ঘ) পীরের অস্তিত্বে বিলীনতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Total Dedication to the spiritual guide)
(ঙ) শরীয়তের প্রতি আস্থাশীলতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Adherence to the Principles of Shariah)
(চ) সপ্ত পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ বা নৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধির শরাফত (Practical Application of the Seven Methods or Moral Control and Self-Purification)
(ছ) নির্বিলাস সভ্যতার শরাফত (Simplicity of Life)
(জ) বৈষম্যহীনতা বা বিচার সাম্যের শরাফত (Lack of Discrimination or Judicial Equality)
(ঝ) সার্বজনিনতা বা বিশ্বমানবতার শরাফত (Universality of Global Humanity)
(ঞ) সমাজ সংগঠন বা প্রাতিষ্ঠানিক শরাফত (Social Organization or Institutional Structure)
(ট) সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড বা সামাজিক শরাফত (Social Welfare-Oriented Activities)
(ঠ) রাজনীতি নিরপেক্ষতা বা অরাজনৈতিক শরাফত (Political Neutrality)
(ড) জ্ঞান-চর্চা বা শিক্ষামূলক শরাফত (Knowledge and Education)
(ঢ) কলূষমুক্ত সঙ্গীত বা স্বর্গীয় সুরের শরাফত (Divine Melody)
(ণ) প্রগতিশীলতা বা প্রগতিশীল শরাফত (Progressiveness)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের সুরক্ষায় খাদেমুল ফোকরার অবদান
এখন আমরা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতের উপরোক্ত দিকগুলোর ক্ষেত্রে অছি-এ-গাউছুল আজম মুর্শিদে বরহক খাদেমুল ফোকরা হযরত মাওলানা শাহ সুফী সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (রঃ)-এর মহান অবদান সম্পর্কে মূল্যায়ন করার কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা চালাব :
(ক) অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ কিংবা তৌহিদী শরাফত (Unchained divine love or total commitment to the oneness of almighty Allah)
অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ বিশ্বমানবতার জন্য হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী(কঃ)-এর একটি দূর্লভ অবদান। নবী করিম (দঃ)-এর নবুয়তের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছির খোদার একত্ব প্রকাশ করা। প্রভূর একত্বে সম্মিলিত হওয়াই হচ্ছে সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। নবী করিম (দঃ) তাঁর আহম্মদী বেলায়তী শক্তি বলে মহা প্রভূর একত্বে মিলনের পথ আবিস্কার করেছিলেন এবং সে পথ অর্জনের পন্থা নির্দেশ করেছিলেন। মহা প্রভুর এ একত্বে মিলনের পথ হচ্ছে অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদের পথ। অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদ হচ্ছে পবিত্র কোরআন ও হাদীসের মেরুদন্ড ও সুক্ষ্ম উদ্দেশ্য। কলেমা তৈয়বা ও খোদাতলার রহস্য জড়িত আহমদী বেলায়ত পদ্ধতি যা চিরন্তন ও সার্বজনীন। হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) এর পূর্ববর্তী ওলীগণ ধর্মীয় বিধি-নিষেধের মধ্যস্থতায় সম্প্রদায়গতভাবে উক্ত রহস্য আংশিকভাবে উদঘাটন করতে সক্ষম হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ধর্মীয় বিরোধ পরিহার পূর্বক বাধাহীন মুক্তির দ্বার উদঘাটন করতে সক্ষম হননি। হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)ই উক্ত বাধাহীন বেলায়তের একমাত্র দ্বার উন্মোচক ও বাধ্যবাধকতার পরিণতিকারী নিরপেক্ষ তৌহিদবাদ তথা সকল ধর্ম ও তরিকতের গন্তব্য স্থানে পৌছাবার একমাত্র সহজতম উপায়। ইহা যগসম্মত খোদার তৌহিদালোক যা নিরপেক্ষ ও সার্বজনীন এবং আহম্মদী বেলায়তী শক্তির স্বরূপ যা আভ্যন্তরীন ভক্তি-বিশ্বাস ও স্বীকৃতিকে অধিকতর গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।
অছি-এ-গাউছুল আজম এ অর্গলমুক্ত ঐশী প্রেমবাদের সত্যিকার স্বরূপ জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য সুপ্রসিদ্ধ “বেলায়তে মোতলাকা” গ্রন্থ রচনা করেছেন এবং নিরপেক্ষ তৌহিদের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন। সকল মানুষকে নিরপেক্ষ তৌহিদের সামিয়ানা তলে সমবেত হবার জন্য তিনি আহবান জানান।
(খ) আধ্যাত্মিকতা বা আধ্যাত্মক শরাফত (Spiritualism)
খোদার একত্বে মিশতে হলে আধ্যাত্মিক প্রেরণা শক্তির একান্ত প্রয়োজন। ইহা বেলায়ত শক্তি অর্জনের একমাত্র অমূল্য সম্পদ। এ দুর্লভ সম্পদ ও শক্তি অর্জনের জন্য রেয়াজন ও কঠোর সাধনা একান্ত প্রয়োজন। সূফী পরিভাষঅ মতে ইহাকে নেছবতে ছকিনা বা স্থায়ী খোদা-সম্পর্ক নামে আখ্যায়িত করা যায়। এই স্থায়ী খোদা সম্পর্কের অভাবে নাছুত মোকামের পার্থিব স্বভাবপ্রবণ মানুষ স্রষ্টার প্রভুত্ব ভুলতে বাধ্য হয়। খোদা-সম্পর্ক স্থাপনের জন্য সৎ জ্ঞান ও প্রেরণা শক্তির প্রয়োজন। সৎ জ্ঞান ও প্রেরণা শক্তির অভাবে মানব হুদয়ে খোদার প্রতি বিশ্বাস, অনুরাগ ও ভীতির সঞ্চার হয়না এবং সত্যিকার ইসলাম থেমে মানুষ দূরে সরে পড়ে। এই প্রেম-প্রেরণা ও সৎ জ্ঞানের অভাবে মানুষ বিচার বুদ্ধি হারিয়ে অতি বিলাসী হয়ে উঠে এবং অহঙ্কারী ও অত্যাচারী হয়ে নিজেকে ধ্বংসের পথে টেনে নেয়। তাই হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) বিশ্ববাসীকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে খোদায়ী প্রেম প্রেরণায় বেলায়তী শক্তি অর্জনপূর্বক খোদার সাথে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রেম-প্রেরণা (হাল ও জজবা) উন্মুক্তভাবে দান করতেন। তাঁর কাছে যে কেউ উপস্থিত হতো, সে তাঁর আধ্যাত্মিক প্রেরণা বা ফয়েজ রহমত থেকে কখনও বঞ্চিত হত না। অনেকের এত্তেহাদী ফয়েজ অর্জনের সাথে সাথে কাশফ ও জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হয়ে যেত এবং খোদার গোপন রহস্য জ্ঞান অর্জনপূর্বক বহু ওলীগণে উৎপত্তি ও বিকাশ সাধিত হয়।
অছি-এ-গউছুল আজম ছিলেন এ জজবাতি প্রেম-প্রেরণার ধারক ও বাহক। তিনি কঠোর সংযম ও রেয়জত সাধনা করতেন এবং জজবাতি প্রেম-প্রেরণায় বিভোর হয়ে গভীর রাতে খোদার জিকিরে মশগুল থাকতেন।
(গ) স্রষ্টার অস্তিত্বে বিলীনতা বা আত্ম সমর্পণের শরাফত (Total surrender to the Almighty Allah)
স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন, চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ এবং সৃষ্টার নৈকট্য অর্জনই হচ্ছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতের প্রধান লক্ষ্য। স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করতে হলে স্রষ্টা কর্তৃক নির্ধারিত পন্থায় জীবন যাপন করা উচিৎ এবং লাগামহীনভাবে দুনিয়ার প্রতি মোহান্ধ না হয়ে খোদার ইবাদত বন্দেগী করা উচিৎ। বস্তুতঃ পক্ষে স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির মিলনই হচ্ছে সৃষ্টির মূল লক্ষ্য। স্রষ্টার ইবাদতের মাধ্যমেই এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব, যেহেতু ইবাদত বা স্রষ্টার আরাধনা হচ্ছে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সংযোগ তথা সেতু বন্ধনের প্রধান চাবিকাঠি। প্রকৃতপক্ষে, পীরের চেহারা মোবারক স্মরণে রেখে অন্তরের মধ্যে সন্তোষ সৃষ্টির মাধ্যমে খোদার ইচ্ছাশক্তির উপর নির্ভরশীল হওয়া এবং প্রতিনিয়ত খোদা-স্মরণে মশগুল থাকা প্রতিটি ওলী-প্রেমিক জনগণের একান্ত কর্তব্য। মানুষের জীবন সংকীর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী। সুতরাং সময়মত স্রষ্টা-প্রেম জাগ্রত না হলে জীবনে সিদ্ধিলাভ করা সম্ভব হয় না। উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত সাধনা সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় জীবন নদী এক পর্যায়ে স্রোতহীন হয়ে অজস্র শৈবালধামে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে।
খাদেমুল ফোকরা (গরীবের বন্ধু, বা ফকিরের খাদেম) অছ-এ-গাউছুল আজম হযরত দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (রঃ) কারও নিকট কোন কিছুর জন্য মুখাপেক্ষী না হয়ে স্রষ্টা প্রদত্ত আত্মশক্তিতে নির্ভর করে নিজ সামর্থ ও বিচারবুদ্ধি মোতাবেক সমস্ত সমস্যার সমাধান করতেন। তিনি খোদার ইচ্ছার নিকট নিজ স্বার্থ ও বুদ্ধিকে নত করে ধৈর্য্যের সাথে সকল ব্যাপারে প্রতীক্ষা করতেন।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, একবার তাঁর দোকানের জন্য শহর থেকে ক্রয় করা মালামাল নৌকাসহ ডুবে যাওয়ার সংবাদ শুনে তিনি এতটুকু বিচলিত না হয়ে বলেছিলেন, “আল-হামদু-লিল্লাহ”। সুফী পরিভাষায় এরূপ অভ্যাসকে ফানা আনিল এরাদা বলা হয় এবং এই গুনজ প্রকৃতিকে তছলিম বা রজা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে কোরআন পাকের বাণী প্রণিধানযোগ্য-
“তুমি বল, নিশ্চয় আমার আরাধনা ও আমার উৎসর্গ এবং আমার জীবন ও আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য”। (সুরা-আনয়াম, আয়াত-১৬২)। কোরআন পাকে আরও বলা হয়েছে-“এবং আমরা কেন আল্লাহর প্রতি নির্ভর করব না? এবং নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে আমাদের পথসমূহ প্রদর্শন করেছেন এবং তোমরা আমাদেরকে যে যন্ত্রণা দেবে তা অবশ্যই আমরা সহ্য করব এবং আল্লাহর উপরই নির্ভরশীলগণের নির্ভর করা উচিৎ”।(সূরা-ইবরাহিম, আয়াত-১২)।
স্রষ্টার প্রতি তাঁর ছিল প্রগাঢ় আস্থা। যে কোন বিপদে আপদে ধৈর্য্য না হারিয়ে খোদার ইচ্ছার উপরই তিনি সম্পূর্ণরূপে নির্ভরশীল ছিলেন। ১৯৬১ সনে চট্টগ্রাম রেলওয়ে হাসপাতালে উপর্যপুরি দু’বার অপারেশনে জীবনাশঙ্কা দেখা দিলেও তাঁর দুঃখ-বেদনা, ভয়-ভীতি না দেখে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকগণ বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে বলেছিলেন, “আপনার কোন মহাশক্তি আছে, না হলে এরকম লোক বাঁচতে পারে না”। প্রকৃতপক্ষে, ধৈর্য্য, সহিষ্ণুতা ও আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতা হচ্ছে হযরত রাসূল করিম (সঃ)-এর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শত নির্যাতনের মাঝ দিয়ে মদিনার পথে হিজরতের সময় সওর পর্বত গুহার মধ্যে শত্রুবেষ্টিত অবস্থার সেই চরম সঙ্কটের মুখেও দয়াল নবী হযরত আবু বকর (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেছিলেন, “আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়োনা। আমরা মাত্র দু’জন নই, সর্বশক্তিমান আল্লাহতালা আমাদের সাথে আছেন”।
(ঘ) পীরের অস্তিত্বে বিলীনতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Total Dedication to the spiritual guide)
হযরত খিজির (আঃ)-এর রহস্যময় জ্ঞান, হযরত দাউদ (আঃ)-এর অবলুপ্ত সুরের মোহিনী প্রকাশ, হযরত সোলায়মান (আঃ)-এর রাজকীয় ঐশ্বর্য, হযরত ঈসা (আঃ)-এর প্রেমের বাণী, বিশ্বনবী হযরত মোহাম্মদ মোস্তফা (দঃ)-এর বেলায়তী শান আহমদী নামের যুগোপযোগী পদচারণা, প্রখ্যাত ছাহাবী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ)-এর অনেক না-বলা কথা ও মহর্ষি বিপ্লবী মনুসর হাল্লাজ (রাঃ)-এর প্রেমের আবেশে তৌহিদী চিৎকার এবং সালমান (রাঃ)-এর বিদ্রোহী ভাষাকে অবলম্বন করেই হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) মাইজভান্ডারী শরাফতের বীজ বপর করেছেন। মাইজভান্ডারী শরাফতের মূল কথা হল প্রেম। প্রেমের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য অর্জন করতে হবে। মাশুকের জন্য আশেকের হৃদয়ে প্রেমের অগ্নিমিখা প্রজ্জ্বলিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
“আমি রহস্যময় ছিলাম, ভারবাসাতে আত্মপ্রকাশ করলাম”। (হাদিসে-কুদসি)।
অছি-এ-গউছুল আজম কেবলমাত্র হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর অছি ছিলেন না, তিনি ছিলেন হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর রহস্য এবং হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) নামক মহাশক্তির প্রতিনিধি বা ছায়ামাত্র ছিলেন। প্রথম জীবনের এতিম অবস্থা, জাগতিক জীবনে নানা বাধা-বিপত্তি, দ্বন্ধ-সংঘাত সবকিছুর মুখোমুখি তিনি হয়েছেন এক মহা সত্যকে (মাইজভান্ডারী শরাফত) প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তিনি তাঁর সকল জ্ঞান সম্পদ হযরত ছিদ্দিকে আকবর আবু বকর (রাঃ)-এর ন্যায় হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। হযরত গউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর ধারক, বাহক ও অছি হিসেবে তিনি তাঁর (হযরত আকদাছে (কঃ)-এর ) জাহের ও বাতেন বাণী সমূহের সিন্দুক বা দরজা স্বরূপ ছিলেন, যেরূপ হযরত আলী (রঃ) হযরত রসূল করিম (দঃ)-এর জাহেরী ও বাতেনী এলেমের দরজা স্বরূপ ছিলেন। কিন্তু তাঁর জীবনের দিকে আলোকপাত করলে দেখা যাবে যে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোথাও নেই। অথচ হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ)-এর প্রকাশ, প্রচার, কাজকর্ম, রীতিনীতি সবকিছুর মধ্যেই তাঁর অস্তিত্ব এক উজ্জ্বল সূর্যের ন্যায় দেদীপ্যমান।
(ঙ) শরীয়তের প্রতি আস্থাশীলতা বা বিধান ধর্মের শরাফত (Adherence to the Principles of Shariah)
কোরআন, হাদীস ও সুন্নাহর সাথে পরিপূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং শরীয়তের বিধান মোতাবেক স্রষ্টার হুকুম আহকাম (যথা: কলেমা, নামায, রোজা, হজ্জ্ব, জাকাত ও অন্যান্য বিধি নিষেধ) মেনে চলা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। উল্লেখ্য যে, হযরত আকদাছ (কঃ) নিয়মিত নামাযে পাঞ্জেগানা আদায় করতেন এবং নফল নামায, কোরআন শরীফ তেলাওয়াত, রোজা পালন ও মোরাকাবা মোশাহেদাতে থাকতেন। নামায ও খোদা-স্মরণ মানুষকে আলোর সন্ধান দেয়। অন্তরের কালিমা বিদূরিত করে। লোভ ও মোহ থেকে বাঁচায়। পর নির্ভরতা দূরীভূত করে খোদা-নির্ভরতা জাগ্রত করে। আত্ম-সন্তুষ্টি এনে দেয়। খোদায়ী ইচ্ছার উপর সবকিছু সমর্পণ করার মনোভাব সৃষ্টি করে। ফলে আর কোন সমস্যাই তখন সমস্যা মনে হয় না। মহান আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্বাস স্থাপনকারী, তোমরা আল্লাহকে অধিকতর স্মরণে রাখ ও স্মরণ করবে; প্রভাতে ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা কর। তিনিও তাঁর ফেরশতাগণ তোমাদের উপর আশীর্বাদ করে থাকেন যেন তিনি তোমাদেরকে আলোকের দিকে বহির্গত করেন এবং তিনি বিশ্বাসীগণের প্রতি অনুগ্রহকারী”। (সুরা – আহজাব, আয়াত: ৪১-৪৩)
মহান আল্লাহ আরো বলেন,
“অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণে রাখব এবং তোমরা আমার নিকট কৃতজ্ঞ হও এবং অবিশ্বাসী হয়োনা”। (সুর – বাকারা, আয়াত: ১৫২) ।
আজকাল কিছু কিছু তথাকথিত মাইজভান্ডারী শরাফতের অনুসারীদেরকে বলতে শোনা যায় যে, মাইজভান্ডারীদের জন্য নামাজ রোজার দরকার হয় না। নাউজু বিল্লাহ। ওরা হচ্ছে ভন্ড ও শয়তানের বংশধর। মাইজভান্ডারী শরাফতের আসল শত্রু। তাদের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার।
বিধান ধর্মের শরাফত প্রতিষ্ঠার ক্ষত্রে অছ-এ-গাউছুল আজমের অবদান অপরিসীম। অছি-এ-গাউছুল আজম ছিলেন আদর্শ নামাজী ও দ্বীনদার। সুফী মতবাদের ধারক ও বাহক হিসেবে তিনি আজীবন কোরআন ও সুন্নাহ তথা শরার পা’বন্দ ছিলেন। ছোটবেলা থেকে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়া ও তাহাজ্জুদ নামাজসহ অন্যান্য নফল এবাদতে নিজেকে সর্বদা মশগুল রাখতেন। তিনি প্রায়সঃ রোজা রাখতেন। মুরীদের প্রতি তাঁর প্রথম উপদেশ ছিল-
“নামাজ পড়, রোজা রাখ, মিথ্যে বলনা, চুরি করনা, জ্বেনা করনা”।
সকলের নামায পড়ার সুবিধার্থে তিনি দরবার শরীফ মসজিদ, এবাদতখানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। কোরআন তেলাওয়াত তাঁর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল।
(চ) সপ্ত পদ্ধতির বাস্তব প্রয়োগ বা নৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও আত্মশুদ্ধির শরাফত (Practical Application of the Seven Methods or Moral Control and Self-Purification)
নৈতিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য উসূলে ছাবআ বা সপ্ত পদ্ধতির অনুশীলন হচ্ছে মাইজভান্ডারী শরাফতের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। আত্ম-নির্ভরশীলতা, অনর্থ পরিহার, স্রষ্টার ইচ্ছায় সন্তোষ, সংযম, পরদোষ পরিহার ও নিজ-দোষ ধ্যান, লোভ-লালসা থেকে মুক্তি, নির্বিলাস জীবন যাপন প্রভৃতি কর্ম পদ্ধতি অনুশীলনের মাধ্যমে ষড়রিপু থেকে মুক্তিলাভ হচ্ছে মানব মুক্তির অন্যতম প্রধান উপায়।
সপ্ত-পদ্ধতির প্রসার ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অছি-এ-গাউছুল আজমের ভূমিকা অতুলনীয়। তিনিই সর্ব প্রথম সপ্ত-পদ্ধতির রূপরেখা লিখিত আকারে প্রকাশ করেন এবং উহার খুঁটিনাটি ব্যাখ্যা করেন। তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমেই সপ্ত-পদ্ধতি সাধারণের মাঝে পরিচিতি ও বিকাশ লাভ করে। তিনি হচ্ছেন সপ্ত-পদ্ধতির বাস্তব মডেল বিশেষ। সপ্ত-পদ্ধতির প্রতিটি কর্ম প্রণালী তিনি বাস্তবে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছেন। স্রষ্টার প্রতি তাঁর ছিল প্রগাঢ় ভক্তি। তিনি পান, চা, তামাক ইত্যাদি অনাবশ্যকীয় দ্রব্যাদি বর্জন করতেন। তিনি কঠোর সংযম সাধনা করতেন এবং সারা বৎসর নফল রোজা রাখতেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ। তোমাদের উপর রোজা বিধিবদ্ধ হলো যেরূপ তোমাদের পূর্ববর্তীগণের জন্য বিধিবদ্ধ হয়েছিল-যেন তোমরা সংযত হও”।(সুরা – বাকারা, আয়াত-১৮৩)।
তিনি চরম শত্রুকেও উদারতার সাথে গ্রহণ করতেন এবং শত্রু মিত্র নির্বিশেষে জীবনে কাউকে দুর্ব্যবহার করেননি। বিপুল ধন সম্পত্তির অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন সকল প্রকার লোভ লালসামুক্ত। তাঁর অন্তরে স্রষ্টার প্রেম ভালবাসা ছাড়া কোন প্রকার কামনা বাসনা ছিলনা যাহা বেলায়তে খিজরীর অন্তর্গত। মহান আল্লাহ বলেন,
“জেনে রাখ, তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের সন্তান-সন্ততি বিড়ম্বনা ব্যতিত নহে এবং নিশ্চয় আল্লাহরই নিকট মহান প্রতিদান রয়েছে”। (সুরা-আনফাল, আয়াত:২৮)
তিনি ছিলেন সৎ কর্মানুরাগী। কর্মঠ ও সঞ্চয়ী লোকদেরকে তিনি ভালবাসতেন। তিনি মিতব্যয়ী ছিলেন এবং যে কোন সম্পদকে খোদার রহমত মনে করতেন এবং উহার সর্বাধিক ব্যবহার ও সংরক্ষণ সুনিশ্চিত করতেন। তিনি পরিবার পরিজন ছেড়ে মনে জঙ্গলে গিয়ে বৈরাগ্য সাধনার মাধ্যমে মুক্তি তালাশ করাকে অপছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন অতীব দয়ালু ও সহমর্মী। পশুপাখীদের প্রতিও তাঁর দয়া অবারিত ছিল। মোট কথা, সপ্ত-পদ্ধতির পরিপূর্ণ অনুশীলনের মাধ্যমে তিনি নৈতিকতার সকল দিক দিয়ে চরম উৎকর্ষ অর্জনে সক্ষম হয়েছিলেন। নবী করিম (দঃ) তাই যথার্থাই বলেছেন, “আমার উম্মতের মধ্যে এমন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন লোকও আছেন যিনি গুণে, হিম্মতে, হেকমতে আমার সমকক্ষ”। হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) তাই যথার্থই তাঁর আদরের পৌত্র ‘দেলা ময়নাকে’ উপলক্ষ করে বলেছিলেন, “নবাব হামারা দেলা ময়না হ্যায়। ফের আওর কোন নবাব হ্যায়?” অর্থাৎ “হযরত দেলাও হোসাইন মাইজভান্ডারী (রঃ) নবাব। আর নবাব কে আছে?”
(ছ) নির্বিলাস সভ্যতার শরাফত (Simplicity of Life)
নির্বিলাস জীবন যাপন মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) আচারে ব্যবহারে, আহারে-বিহারে, এমনকি প্রত্যেক কাজের ভেতর দিয়ে নর্বিলাস সভ্যতা শিক্ষা দিয়ে গেছেন। নির্বিলাস জীবন যাপন সপ্ত-পদ্ধতির একটি অপরিহার্য অঙ্গ। বিলাসিতা মানুষের মধ্যে অনর্থকতা সৃষ্টি করে। বিলাসিতা মানুষর মধ্যে অতি ব্যয়ের অভ্যাস সৃষ্টি করে এবং অবিচার, জুলুম, প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্ধিতি, দলাদলি, প্রভৃতির জন্ম দেয় যা মানুষকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়। খোদা প্রেম প্রেরণা থেকে বিচ্যূত হয়ে একজন অতি বিলাসী মানুষ জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে দুর্ণীতিকে আঁকড়ে ধরে। নির্বিলাস সুফী সভ্যতা হচ্ছে সনাতন ইসলামী সভ্যতা যা মানুষকে নিষ্প্রয়োজনীয় অতিব্যয় ও অপচয় থেকে রক্ষা করে এবং লোভ থেকে বাঁচায়। নির্বিলাস সভ্যতা মানুষের মধ্যে খোদায়ী প্রেরণা সৃষ্টি করে এবং মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি থেকে বাঁচায়।
অছি-এ-গাউছুল আজম ছিলেন নির্বিলাস জীবন যাপনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি কনুইর নিম্ন পর্যন্ত লম্বিত সাদা কাপড়ের জামা, সেলাই বিহীন সাদা লুঙ্গি, সাদা টুপী, শীত ও গ্রীষ্মের উপযোগী চাদর এবং পায়ে কাঠের খড়ম ব্যবহার করতেন। তিনি মাটির উপর বিছানায় শয়ন করতে ভালবাসতেন। তিনি আড়ম্বর মোটেও পছন্দ করতেন না। চিঠি পত্রে তিনি ‘খাদেমুল ফোকরা’ বা ‘গরীবের সেবক’ পরিচিতি ব্যবহার করতেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমরা জেনে রাখ যে, এ পার্থিব জীবন ক্রীড় ও কৌতুক ভিন্ন নহে এবং এ সাজ-সজ্জ্বা ও পরস্পরের মধ্যে অহংকার এবং ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততির আধিক্য; ইহা বৃষ্টিধারা সদৃশ সব্জী উৎপাদনকারীকে আনন্দ দান করে, তৎপর উহা বিচুর্ণিত হয়ে যায় এবং পরকালে কঠোর শাস্তি এবং আল্লাহর সান্নিধান থেকে মার্জ্জ্বনা ও পরিতুষ্টি রয়েছে এবং এ পার্থিব জীবন প্রতারণার ভান্ডার ব্যতিত নহে”। (সূরা – হাদিদ, আয়াত : ২০)।
(জ) বৈষম্যহীনতা বা বিচার সাম্যের শরাফত (Lack of Discrimination or Judicial Equality)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বশেষে যে কোন স্তরের লোক সুবিচার পাওয়ার যোগ্য। উঁচু-নিচু, আশরাফ-আতরাফ, ধনী-দরিদ্র এরূপ কোন ভেদাভেদ মাইজভান্ডারী শরাফতে নেই। অছি-এ-গউছুল আজম বিচার সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন লড়েছেন। সত্য ও ন্যায়ের পথে অটল থাকার কারণে কোন অন্যায় তাঁর সময়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলার মুখোমুখি হতেও তিনি কুন্ঠাবোধ করেননি। তাঁর কোন পক্ষপাতদুষ্টতা ছিল না।
(ঝ) সার্বজনিনতা বা বিশ্বমানবতার শরাফত (Universality of Global Humanity)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিশ্বমানবতা বা মানবতার কল্যাণ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে ধর্মসাম্য প্রতিষ্ঠিত করা হলো মাইজভান্ডারী দর্শনের বিশেষ একটি তাৎপর্যময় দিক। মাইজভান্ডারী দর্শনের ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনা সব কিছুরই ব্যাপ্তি হলো বিশ্বব্যপী। সারা বিশ্বের মানুষের কল্যাণ ও ঐক্যে মাইজভান্ডারী দর্শন বিশ্বাসী। আজ মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে যে অশান্তি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে তার প্রধান কারণ হলো অনৈক্য। যদিও সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ইসলামের অন্যতম প্রধান আদর্শ, তা আজ মুসলিম দেশসমূহে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। পরস্পরের মধ্যে ভ্রাতৃপ্রতিম সহযোগিতা, সৌহার্দ পূর্ণ সম্পর্ক এবং ঐক্যই কেবল এনে দিতে পারে সারা বিশ্বে স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়ন।
অছি-এ-গাউছুল আজম ছিলেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিরপেক্ষ। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর লোকের তাঁর কাছে অবাধ গমনের অনুমতি ছিল। তাঁর কাছে উচ্চ-নীচ, ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলিম এরূপ কোন ভেদাভেদ ছিল না। সকল প্রকারের চরিত্রবান লোককে তিনি আদর যত্ন করতেন এবং মনোযোগ সহকারে তাদের দুঃখের কথা শ্রবণ করতেন। তিনি ছিলেন দুর্গত মানবতার অকৃত্রিম সেবক। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি নানুপুর, লেলাং প্রভৃতি ইউনিয়নের দুর্গত লোকদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করেন। খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার দ্বারা তিনি অনেক দুর্গতকে নিজের প্রত্যক্ষ সেবায় সুস্থ করে তোলেন। অনেক অনাথ বালক-বালিকা ও ভবঘুরে তাঁর আস্তানায় লালিত পালিত হয়ে ও শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গরীব ও দুঃখী জনকে তিনি মুক্ত হস্তে দান করতেন। বাজারে যখন চড়াদামে দ্রব্য বিক্রয় হতো, তখন তিনি দরবার ষ্টোর থেকে ন্যায্য মূল্যে জনসাধারণের কাছে পণ্য বিক্রয়ের জন্য নির্দেশ দিতেন। আতিথেয়তায় তিনি ছিলেন অনন্য সাধারণ। তাঁর অপূর্ব আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে ১৯৫৯ সালে মার্কিন কৃষি উপদেষ্টা রবার্ট ডব্লিউ ফাউলার (Robert W. Fawler) লিখেছেন, “I am extremely happy to have been a guest in this home of the religious leader and to view the activities of a great festival as is taking place. We are appreciative of your wonderful hospitality.”
অর্থাৎ ‘আমি একজন ধর্মগুরুর বাড়ীর অতিথি হয়ে এবং একটি মহান উৎসবের কর্মকান্ড দেখে অতিশয় খুশী। আমি আপনার অভূতপূর্ব আতিথেয়তায় কৃতজ্ঞ’।
মানবতার কল্যাণের ক্ষেত্রে অছি-এ-গাউছুল আজমের ভূমিকা পর্যালোচনা করলে ইহা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ছিলেন মাইজভান্ডারী শরাফতের মহান ধারক ও বিকাশধারী। সূর্য যেরূপ চিরভাস্বর, সারা বিশ্বের আনাচে কানাচে আলো ছড়িয়ে দেয়, অছি-এ-গাউছুল আজমও সেরূপ স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সকল মানুষের কাছে মাইজভান্ডারী শরাফতের মহান শ্লোগান ‘মানবতার জয়গান’কে ছড়িয়ে দিয়েছেন।
(ঞ) সমাজ সংগঠন বা প্রাতিষ্ঠানিক শরাফত (Social Organization or Institutional Structure)
সমাজকে সংগঠিত করা বা সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো সৃষ্টি করা একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য অপরিহার্য। মাইজভান্ডারী শরাফত তাই সমান সংগঠনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। সমাজ গঠনের জন্য প্রধানতঃ তিনটি উপাদান প্রয়োজনঃ (১) একটি আদর্শ, (২) সে আদর্শভিত্তিক মজবুত সংগঠন এবং (৩) সে আদর্শ বাস্তবায়নের উপযোগী নেতৃত্ব। অছি-এ-গাউছুল আজম স্রষ্টার মহান ইচ্ছাশক্তিতে বলীয়ান হয়ে সকল বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সমাজের ঈপ্সিত সংস্কার সাধন করে গেছেন এবং মাইজভান্ডারী শরাফত সুরক্ষার লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো বিনির্মাণ করে গেছেন। মনগড়া, ভূয়া রীতিনীতি ও আচার পদ্ধতিতে কুসংস্কারাচ্ছন্ন তরিকতপন্থীদেরকে কলূষ মুক্ত করে সত্যিকারের ইসলাম ও সুফীবাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে এবং পরস্পরের মধ্যে সদ্ভাব ও ঐক্য সৃষ্টির মানসে তিনি গ্রামে গঞ্জে “আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী” নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে গেছে যা তরিকতপন্থী ভাইবোনদের আত্মিক-আধ্যাত্মিক ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
(ট) সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ড বা সামাজিক শরাফত (Social Welfare-Oriented Activities)
সমাজ কল্যাণমূলক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করা একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য অপরিহার্য কর্তব্য। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের ইহাও একটি বিশেষ দিক। সমাজ ব্যবস্থাকে অধিকতর সুন্দর করার মহান অভিপ্রায়ে যাঁরা জীবন বাজী রেখে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়েছেন অছি-এ-গাউছুল আজম তাদের মধ্যে বিশেষ স্থান অধিকার করে আছেন। তিনি সমাজের জন্য আজীবন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন এবং বহু জনহিতকর প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে মাইজভান্ডার আহমদীয় উচ্চ বিদ্যালয়, ভান্ডার শরীফ আহমদীয় প্রাইমারী স্কুল, নাজিরহাদ আহমদিয়া আলীয়া মাদ্রাসা, নানুপুর গাউছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা, তফাজ্জ্বল মেমোরিয়ল লাইব্রেরী (সেখানে হযরত আলি (কঃ)-এর রচিত দীওয়ানে আলী, ইবনে আরবী (রঃ)-এর তফছির ও ‘ফছছুল হেকম’, মাওলানা তোরাব আলি কলন্দর রচিত ‘মতালেবে রশীদি’, মাওলানা রুমী (রঃ)-এর মছনবী শরীফ, পীরানে পীর দস্তগীর (রঃ) রচিত কছিদায়ে গাউছে চকলাইন প্রভৃতি অনেক দুষ্প্রাপ্য ও মহামূল্যবান গ্রন্থ সুরক্ষিত আছে) নাজিরহাট রেলওয়ে ষ্টেশনে ওরশ শরীফের যাত্রী ও ট্রেনের সাধারণ যাত্রীদের সুবিধার্থে স্থায়ী শেড, এলাকার জনগণ ও দরবার শরীফের চিঠিপত্র আদান প্রদানের সুবিধার্থে ভান্ডার শরীফ পোস্ট অফিস, চৌমুহনী নতুন বাজার (ফটিকছড়ি), নাজিরহাট-মাইজভান্ডার শরীফ পাকা রাস্তা, শাহ আহমদ উল্লাহ (রঃ) নামের সাথে ‘শরীফ’ শব্দ সংযোজন করে মাইজভান্ডার শরীফ নামকরণের সরকারী অনুমোদন লাভ, গামারী তলা, মাইজভান্ডার শরীফ, কিফায়েত নগর, দক্ষিণ গোপালঘাট্টা, রায়পুর, দমদমা, পূর্ব আজিমনগার গ্রামসমূহের জমির মালিক-চাষীদের সমন্বয়ে ‘সর্ত্তা লেলাং প্রবাহন এলাকায় কৃষ্টি সমিতি প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ সকল প্রতিষ্ঠানসমুহ তাঁর প্রত্যক্ষ প্রচেষ্ট, উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শ্রীবৃদ্ধিকল্পে এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্যে শৃঙ্খলা বিধানের জন্যও তিনি মূল্যবান অবদান রেখে গেছেন। হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (রঃ) রওজা শরীফের সংস্কার, দরগাহ-এ-গাউছিয়া আহমদিয়া, মেহমানখানা, মঞ্চিলে হোসাইনী, বাগ-এ-হোসাইনী প্রভৃতিও তাঁর উল্লেখযোগ্য কীর্তি। এসব দৃষ্টান্ত থেকে ইহা সুপ্রমানণিত হয় যে, আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি অছি-এ-গাউছুল আজম একজন উচ্চ মার্গের সমাজ সেবক ও সংস্কারক ছিলেন।
(ঠ) রাজনীতি নিরপেক্ষতা বা অরাজনৈতিক শরাফত (Political Neutrality)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফ রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে মুক্ত। কোন প্রকার দলীয় রাজনীতি কিংবা রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কর্মকান্ড আবর্তিত হয় না। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সকল কর্মকান্ড আবর্তিত হয় মহান স্রষ্টা কর্তৃক নির্দেশিত এবং নবী করিম (দঃ) কর্তৃক প্রদর্শিত ও হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (রঃ)-এর জীবন ধারায় প্রতিফলিত পথে। অছি-এ-গাউছুল আজমের জীবনধারায় এ নীতির পূর্ণাঙ্গ প্রতিফলন ছিল।
(ড) জ্ঞান-চর্চা বা শিক্ষামূলক শরাফত (Knowledge and Education)
জ্ঞা-চর্চা মাইজভান্ডারী শরাফতের একটি উল্লেখযোগ্য দিক। হাদিস শরীফে আছে-
“বিজ্ঞান ও জ্ঞানের তথ্যাদি ঘন্টাখানের স্মর্ণ করা এক হাজার শহীদের জানাজা থেকেও অধিকতর পূণ্যের, এক হাজার রাত্রিতে নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়েও পূন্যতর”।
নবী করিম (দঃ) বলেছেন,
“জ্ঞান অর্জন করো; জ্ঞান তোমাকে মন্দের মাঝে ভালোর সঙ্গে পরিচিত করে তুলবে। জ্ঞান স্বর্গীয় আনন্দ দেবে। মরুভূমিতে জ্ঞান তোমাদের বন্ধু, নির্জনতায় তোমাদের সঙ্গী, পরিত্যক্ত অবস্থায় সে নির্ভরযোগ্য সহচর। জ্ঞান দুঃখে শান্তনাদাতা, সুখের দিক-নির্দেশক বন্ধু, জন সমাগমে অলংকার ও শত্রুর বিরুদ্ধে বর্ম। সুতরাং দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর। কারণ যে জ্ঞান অন্বেষণ করে, তার অতীতের কৃত পাপ মোচন হয়ে যায়”।
মহান আল্লাহতালার নিকট থেকে ওহী মারফত রসূল (দঃ)-এর প্রতি নাযিলকৃত প্রথম বাণী হচ্ছে “পড়ুন” অর্থাৎ শিক্ষা লাভ করুন। ইহা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, জ্ঞান চর্চা মানুষের জন্য অপরিহার্য। মার্জিত রুচি, পরিচ্ছন্ন ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা, আদর্শ রাষ্ট্র গঠন, অসৎ ও অসামাজিক কার্যাবলী বর্জন, ব্যক্তি চরিত্রের পুনর্গঠন, স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়, দায়িত্ব ও কর্তব্য পরায়ণতা সম্পর্কে সচেতনতা, ইহকালের কল্যাণ ও পরকালে পরিত্রাণ লাভ, চরিত্র গঠন প্রভৃতির জন্য জ্ঞানচর্চা মানুষের অপরিহার্য। ধর্মীয় জ্ঞানহীনতার কারণেই আজ প্রায় অঞ্চলে দুর্ণীতির বন্যা ও চরিত্রহীনতার করাল গ্রাস জনজীবনকে অতীষ্ট করে তুলেছে। সত্যিকার ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে আজ আমরা হারামকে বলি লাভ, ঘুষকে বলি বখশিষ, অন্যায়কে বলি সুবিচার, জুয়াকে বলি লটারী। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত তাই জ্ঞানচর্চার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
অছি-এ-গাউছুল আজম ছিলেন জ্ঞানচর্চার অগ্রনায়ক। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের অন্য কোন অলী বা ব্যক্তিত্ব তাঁর মত এত বেশী জ্ঞান চর্চা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তিনি ছিলেন একাধারে গবেষক, সাহিত্যিক সমালোচক ও উঁচুদরের লেখক। তিনিই মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের বিভিন্ন দিক লিখিত আকারে লিপিবদ্ধ করেন এবং পাঠক সমাজের কাছে তুলে ধরেন। তাঁর লেখনিতেই মাইজভান্ডার শরীফের দর্শন পরিস্ফুট হয়ে উঠে। তাঁর প্রকাশনার পূর্বে মাইজভান্ডারী দর্শন সম্পর্কে মানুষের কোন ধারনাই ছিল না। তাঁর রচিত ‘বেলায়তে মোতলাকা’। মূলতত্ত্ব বা তজকিয়ায়ে মুখতাচার, ‘মানব সভ্যতা’, ‘বিশ্ব মানবতায় বেলায়তের স্বরূপ’, ‘রেঁনেসা যুগের একটি দিক’, ‘মিলাদে নববী ও তাওয়াল্লাদে গাউছিয়া’ প্রভৃতি মাইজভান্ডারী দর্শন ও মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত সুরক্ষায় মূল্যবান অবদান রেখেছে। মাইজভান্ডারী দর্শনের বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁর এ অবদার চির ভাস্বর হয়ে থাকবে।
(ঢ) কলূষমুক্ত সঙ্গীত বা স্বর্গীয় সুরের শরাফত (Divine Melody)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফে স্বর্গীয়সুরের মূর্চ্ছনায় ও ছন্দের বাজনার তালে তালে আধ্যাত্মিক সঙ্গীত গেয়ে খোদার ভাবে বিভোর হয়ে নৃত্যের মাধ্যমে জিকির করার রেয়াজ আছে। কিন্তু বাদ্যযন্ত্রসহ গান গেয়ে নেচে নেচে জিকির করতে হবে এমন কোন কথা নেই। ইহা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের অপরিহার্য অঙ্গ নয়, প্রয়োজনীয় শর্তও নয়। যুগ সংস্কারক ওলীয়ে কামেলগণ মানবজাতিকে নানা প্রকার হেকমত প্রয়োগে খোদার প্রতি আহবান করে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমরা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে বা যে কোন অবস্থায় খোদাকে স্মরণ করো”।
হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (কঃ) আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুগের বিভিন্ন মজাকীয় বৈজ্ঞানিক রুচি সম্পন্ন বিভিন্ন জাতির ও ধর্মের সমাবেশ ও সংমিশ্রণ স্থলে আবির্ভূত মোজাদ্দেদ ওলী বিধায় তিনি আল্লাহ, রাসুল ও ওলীর শানে গান-বাজনা ও গজল গীতিকে স্থান, কাল, পাত্র ভেদে জিকিরী উপাদান বা হুজুরী কলব (একাগ্রচিত্ততা) সৃষ্টির হেকমত বা কৌশল হিসেবে অনুমোদন দিয়েছেন। তবে এরূপ গান-বাজনা শর্ত সাপেক্ষ।
শর্তগুলো নিম্নরূপ:
(১) গান-বাজনা খোদার জিকিরের নিয়তে হতে হবে।
(২) গানে কোন অশ্লীলতা থাকবে না। উহা সম্পূর্ণরূপে আধ্যাত্মিক বা খোদা, রসূল কিংবা ওলী-প্রেমের সঙ্গীত হতে হবে।
(৩) গান-বাজনাসহ জিকিরকারীদের শরীর পাক হতে হবে এবং অজু থাকতে হবে।
(৪) জিকির-মাহফিল ভ্রাম্যমান হবে না। উহা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় হতে হবে।
(৫) কোন উন্মাদ কিংবা অপ্রাপ্ত বয়স্ক লোক জিকির মাহফিলে থাকতে পারবে না।
(৬) গান-বাজনাসহ জিকির আরম্ভের পূর্বে মিলাদ শরীফ ও তাওল্লাদে গাওছিয়া পড়তে হবে এবং জিকির শেষে মুনাজাত করতে হবে।
(৭) খোদার ভাবে নাচ করার সময় কারো গায়ে পড়ে অন্যের ধ্যান ভঙ্গ করা যাবে না।
(৮) জিকিরের সাথে গাঁজা, আফিম, ভাঙ্গ ইত্যাদি খাওয়া যাবে না।
(৯) পথে ঘাটে চাঁদা তোলার কাজ হেঁটে হেঁটে বিনা অজুতে গান বাজনা করা যাবে না।
(১০) কারো লেখাপড়া, ঘুম কিংবা রোগীর শান্তিপূর্ণ অবকাশ যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
(১১) গান-বাজনাসহ জিকির একটি নফল এবাদত। নামাজ, রোজা বাদ দিয়ে শুধু জিকির করা চলবে না।
উপরোক্ত নিয়মকানুন মেনে গান বাজনাসহ জিকির করা হচ্ছে মাইজভান্ডার দরবার শরীফের একটি শরাফত। এর অন্যথা মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের পরিপন্থী। অছি-এ-গাউছুল আজম তাঁর “মিলাদে নবী ও তাওয়াল্লাদে গাউছিয়া” বইতে গান-বাজনাসহ জিকিরের উপরোক্ত নিয়ম কানুন বর্ণনা করে গেছেন। উল্লেখ্য যে, গাউছিয়া আহমদীয়া মঞ্জিলে গান-বাজনাসহ জিকিরের উপরোক্ত নিয়মকানুন অদ্যাবধি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়। গান-বাজনাসহ জিকিরের পবিত্রতা রক্ষার ক্ষেত্রে অছি-এ-গাউছুল আজমের এ মহান অবদান প্রশংসনীয়।
(ণ) প্রগতিশীলতা বা প্রগতিশীল শরাফত (Progressiveness)
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফত সকল প্রকার কুসংস্কার এবং গোঁড়ামীর উর্ধ্বে। একজন কামেল ওলীর সত্যিকার খেদমত ও ছোহবত থেকে যারা বঞ্চিত, তারা বেলায়ত সম্বন্ধে অজ্ঞতার দরুণ মনগড়া কাজকর্ম ও কথাবার্তা বলে থাকে। এরূপ শরীয়ত গর্হিত কাজকর্ম ও কথাবর্তা মাইজভান্ডারী শরাফতের সম্পূর্ণ বিরোধী। মহান আল্লাহ বলেন,
“বহু পবিত্র লোকদের পরবর্তী এ রকম লোকও থাকে যারা নামাজ (জাহের ও বাতেন) পড়ে না বা তর্ক করে এবং কামনার বশবর্তী হয়ে অতি শীঘ্র নরকের নিম্নস্তরে পতিত হয়”। (সূরা – মরিয়ম, আয়াত:৫৯) ।
সমাজে কুসংস্কারাচ্ছন্ন লোকদের আধিক্যের দরুণ সমাজের সত্যিকার স্বরূপ ক্রমশঃ বিকৃত হতে থাকে। বিশ্ব বরেণ্য মনীষী মহাত্মা বার্ণাড শ’কে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন,
“আমি কোথায় যাব? যাদেরকে লোকে মুসলমান বলে, মুসলমান ও ইসলাম সেরূপ নহে। ইসলামের সত্যিকার ও মৌলিক সমাজ ব্যবস্থা থাকলে আমি নিশ্চয়ই সে সমাজে যেতাম”।
কুসংস্কার মানুষকে নৈতিক দিক দিয়ে পঙ্গু করে দেয় এবং পাপের পথে ঠেলে দেয়।
উদাহরণ স্বরূপ, কোন কোন তথাকথিত মাইজভান্ডারী (নিজেদেরকে মাইজভান্ডার (রঃ)-এর অনুসারী বলে পরিচয় দেয়, অথচ মাইজভান্ডারী (রঃ)-এর কোন আদর্শ তাদের মধ্যে নেই) কে বলতে শুনা যায়, “মাইজভান্ডারে সত্য, মিথ্যা, আচার, ধর্মের বালাই নেই, বাবার প্রতি ভক্তি রাখলেই মুক্তি নিশ্চিত”। নাউজুবিল্লাহ! এরূপ ভন্ড মাইজভান্ডারী, মাইজভান্ডারী শরাফতের শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে মাইজভান্ডারী শরাফত একটি প্রতিবাদী কন্ঠস্বর। কোরআন-হাদীস-সুন্নাহ বহির্ভূত ও বিবেক বর্জিত কোন কিছুর স্থান মাইজভান্ডারী শরাফতে নেই। ব্যাঙের ছাতার মত যত্র-তত্র এবং যার-তার মাজার গৃহ নির্মাণ ও মাইজভান্ডারী শরাফতের পরিপন্থী, মানুষের দৈহিক সুস্থতা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সুস্থতা যেমন প্রয়োজনীয় ও মূল্যবাদ, মানসিক সুস্থতা ও দৃষ্টিভঙ্গীর সুস্থতাও তেমনি প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান।
অছি-এ-গাউছুল আজম ছিলেন সকল প্রকার গোঁড়ামীমুক্ত ও প্রগতিশীল। গণ সভ্যতা ও সমাজ জীবনে ধর্মীয় প্রভাবের প্রকৃতি সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভের জন্য ১৯২১ ও ১৯৯২ সনে তিনি বার্মা, কলিকাতা, পন্ডিচেরী, দিল্লি, আগ্রা ও আজমীর ভ্রমন করেন ও বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। তিনি বেলায়তের মিরাজহীন কোন লোকের মাজার করার বিরুদ্ধে মত পোষণ করেন। তিনি ভক্তের বাড়ী বাড়ী গিয়ে মুরীদ বানানো ও নজরানা নেয়ার কাজকে ঘৃণা করতেন। তিনি গাউছিয়ত নীতি বিরুদ্ধ ছায়র (সফর) পীরি করেননি। তিনি বলতেন পরিস্কার হওয়ার জন্য মানুষ পুকুরের কাছে যায়, পুকুর মানুষের নিকট যায় না। তিনি বলতেন, “যে বালি জল শোষণ করে তাতে কোন উদ্ভিদ জন্মে না”। প্রকৃতপক্ষে, অর্থলিপ্সু পীরের নিকট থেকে মুরীদ মুক্তির দিশা পেতে পারে না। অছি-এ-গাউছুল আজম ছিলেন রেছালত ও রসুল করিম (সঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসারী এবং গাউছিয়ত নীতির ধারক, বাহক ও পরিপূরক হিসেবে পূর্ণ মানবতা প্রাপ্ত মহান ওলী। তিনি ভূয়া পীরি, মুরীদি ও ফকিরীর বিরুদ্ধে কঠোর ও প্রতিবাদ মুখর ছিলেন। উল্লেখ্য, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের তাঁর পবিত্র মাজার একমাত্র ব্যতিক্রম হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে আছে এবং মাইজভান্ডার দরবার শরীফের শরাফতের আসল স্বরূপ ঘোষণা করছে।
তিনি প্রায়শঃ বলতেন, মাইজভান্ডার দরবার শরীফের কোন মাজারের বাহ্যিক শোভা যেন তাঁর মুনিবের (অর্থাৎ হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (রঃ)-এর) মাজারের শোভার চাইতে বেশী না হয়।
মাইজভান্ডার দরবার শরীফের সুরক্ষায় খাদেমুল ফোকরার অবদান পর্যালোচনার মাধ্যমে যে সত্যকে জানতে ও বুঝতে পেরেছি তা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে তুলে ধরে সকলকে কুসংস্কার বর্জিত মহাসত্যের দিকে অনুপ্রাণিত করতে হবে। তিনি গ্রামে ও গঞ্জে আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী নামে যে সংগঠন ও তৎসংলগ্ন জ্ঞানভান্ডার নামে যে পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করে গেছেন উহার মাধ্যমে আমরা এ মহান কাজ সমাধা করতে পারি। এ প্রতিষ্ঠানটির বিকাশে ও সুরক্ষায় আমাদের সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সভা, আলাপ, আলোচনা, পত্র-পত্রিকা, সাময়িকী, গবেষণা ও তাঁর রচিত কেতাবাদির মাধ্যমে মুক্তিকামী মানব সমাজের দোর গোড়ায় মহান সত্যকে পৌছিয়ে দেয়া সম্ভবপর হবে। আসুন সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আজ আমরা এ মহান আদর্শ ও প্রেরণায় উদ্ভুদ্ধ হই। তাঁর মহান আদর্শকে বাস্তবায়িত করে তাঁর প্রতি যোগ্য সম্মান প্রদর্শন করি। মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মহান শরাফতকে জগৎ ও জীবনে, জীবনধারা ও কর্মপদ্ধতিতে সুপ্রতিষ্ঠিত করি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের এ মহৎ প্রচেষ্টায় সহায় হউন। আমিন

অলি আল্লাহর দরবার এবং মহান ক্ষমা পাওয়ার জায়গা

অলি আল্লাহর দরবার এবং মহান ক্ষমা পাওয়ার জায়গা

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন আমার বান্দা নফল ইবাদাত (সাধনা)র মাধ্যমে আমার এতই নিকটবর্তী হয়ে যায় এক পর্যায়ে আমি নিজেই তাকে ভালবাসি। আর আমি যখন কাউকে ভালবাসি তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে আমি তার চক্ষু হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে আমি তার হাত হয়ে যাই যা দ্বারা সে ধরে তার পা আমার কুদরতী দ্বারা শক্তিশালী হয়ে যাই যা দ্বারা সে চলে। এমতাবস্থায় সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তা অবশ্যই দান করি। (বুখারি শরীফ ২য় খন্ড,
মেশকাত শরীফ-১৯৭ পৃষ্ঠা)।

প্রাসঙ্গিক আলোচনাঃ বিশ্ব বিখ্যাত দার্শনিক মাওলানা জালালুদ্দীন রুমি (রহঃ) বলেছেন অলি আল্লাহর দরবার, আল্লাহর দরবার। কেউ যদি আল্লাহর সান্নিধ্যে বসতে চায়, সে যেন অলি আল্লাহর দরবারে হাজির হয়ে যায়। অধিকন্তু অলি আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার এবং বসার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহই দিয়েছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে- হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সাদেকিনদের (অলি আল্লাহ) সঙ্গী হয়ে যাও।
(সুরা তাওবা আয়াত-১১৯)
সূরা মায়িদা ৩৫ নং আয়াতে আরো এরশাদ হয়েছে- হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং আল্লাহর পথে উসিলা তালাশ কর।
অলি আল্লাহ অর্থ হল আল্লাহর বন্ধু। আল্লাহ পাক স্বীয় বান্দাদের মধ্যে হতে কতিপয় সৌভাগ্যবান লোক নির্বাচন করে নেন। তারাই অলি আল্লাহ। যুগে যুগে নবী রাসুলগণ যেমন স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করেছেন অনুরূপ তাদের সঙ্গপ্রাপ্ত এবং পরবর্তীতে তাদের ফয়েজ প্রাপ্ত আউলিয়া কেরাম ও দ্বীন ধর্ম প্রচারে রেখেছেন অসামাণ্য অবদান। আউলিয়া কেরাম আল্লাহর বন্ধু যাদের জন্য সুসংবাদ ঘোষিত হয়েছে পবিত্র কুরআনে- মনে রেখো! নিশ্চয়ই আল্লাহর অলিদের কোন ভয়ভীতি নেই এবং তারা চিন্তিত হবেন না তারা হলেন সে সব ব্যক্তি যারা ঈমান এনছেন এবং যাদের আল্লাহ ভীতি রয়েছে তাদের জন্য সু সংবাদ হচ্ছে পার্থিব জীবনে ও পারলৌকিক জীবনে আল্লাহর বাক্য সমূহের কোন পরিবর্তন হয় না। এটাই হলো মহান সফলতা। (সুরা ইউনুস আয়াত ৬২-৬৪)
উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয় আউলিয়া কেরামের মর্তবা মহান আল্লাহর দরবারে কত বেশী। তাদের দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। তাদের সংস্পর্শে আসলে মানুষ হয় ধন্য। গুনাহগার আসলে নেককারে পরিণত হয় আর জাহান্নামী আসলে পেয়ে যায় জান্নাতের রাস্তা। সহীহ বুখারী শরীফের একটি হাদীস প্রণিধানযোগ্য। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন বনী ইসরাঈলের ১জন পাষন্ড খুনী। কথায় কথায় মানুষ খুন করে ফেলা যার নেশা। ৯৯ জন মানুষ হত্যা করে একদিন মনে মনে চিন্তা করলো আমি যেভাবে মানুষ মেরে দুনিয়া থেকে
্থ ফাযিল স্নাতক তৃতীয় বর্ষ, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসা।
বিদায় করে দিচ্ছি। ঠিক এভাবে একদিন আমাকেও তো যেতে হবে। পরকালের কঠিন শাস্তির কথা ভেবে সে একদিন ঘর থেকে বেড়িয়ে পড়ল কোন এক অজানা পথে মুক্তির সন্ধানে। পথিমদ্যে দেখা হলো এক লোকের সাথে। এ লোকের নিকট বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো। ৯৯ জন মানুষ খুনের কথা শুনে লোকটি চমকে উঠলো এবং বলে একজন মানুষ খুন করলে যেখানে জাহান্নামের শাস্তি পেতে হয় সেক্ষেত্রে তুমি ৯৯ জন মানুষ খুন করে মুক্তির আশা করছো? অসম্ভব। একথা শুনে খুনি ব্যক্তিটি আরো হতাশ। প্রকারান্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো সে বলে উঠলো। ৯৯ জন খুনের অপরাধে যদি জাহান্নামে যেতেই হবে সুতরাং আর একজন অবশিষ্ট রাখার কোন মানে হয় না। এসো তোমাকে দিয়েই একশত পূর্ণ করি বলেই তরবারী চালিয়ে ঐ লোকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। সর্বশেষ হত্যাকান্ডের পর আবারো তার অন্তর কঁেেপ উঠলো। পরকালের শাস্তির ভয় তাকে তটস্থ করে ফেলল। এবার সে পুনরায় মুক্তির আশায় সম্মুখপানে এগিয়ে চলল। কিছুদুর গিয়ে দেখা হলো আরেক লোকের সাথে। খুনি লোকটি তাকে অতীত জীবনের সমস্ত ঘটনা সহ মুক্তির পথ খোঁজার বিষয়টি খুলে বলে জিজ্ঞাসা করলো আমার মুক্তির পথ আছে কি? লোকটি অনেক চিন্তা ভাবনা করে জবাব দিলেন আমাদের স্রষ্টা মহান রাব্বুল আলামীন অনেক দয়াবান। বান্দার অপরাধ যতবড় হোক না কেন তার রহমতের একটা ফোঁটা তার চাইতে অনেক বড়। সুতরায় একাগ্রচিত্তে তাওবা করলে অনেক বড় বড় গুনাহ আল্লাহ পাক ক্ষমা করে দিতে পারেন। অতএব হতাশ হবার কোনো কারণ নেই। সুতরাং তুমি সামনের দিকে চলো। কিছু দুর গেলে একজন বুযুর্গ (অলি) ব্যক্তির সাক্ষাৎ পাবে। তার হাতে তুমি তওবা কর। একথা শুনার পর তার অন্তরের জানালা দিয়ে যেন এক অনাবিল শান্তির বাতাস বইয়ে গেলো। আবিস্কার করলো নিজেকে পুনরায়। ফিরে পেল হারানো জীবন। বিপদসংকুল সমুদ্র হতে তার তীরটিকে যেন নিয়ে এলো তীরে। কাল বিলম্ব না করে পরামর্শ মোতাবেক এগিয়ে চলে সম্মুখপানে সেই বুযুর্গ ব্যক্তির সাক্ষাতের আশায়। কিন্তু হায় কিছুদুর যেতে না যেতেই মৃত্যুর ফেরেশতা আযরাঈল হাজির। সামনে এক কদম যাওয়ার সুযোগ নেই। নিমিষেই বের হয়ে গেল তার দেহ থেকে প্রাণ বায়ু।নিস্তেজ দেহটি পড়ে রইলো মাটিতে। এদিকে দেহ হতে বিচ্ছিন্ন আত্মাকে নিয়ে ফেরেশতাদের মাঝে দেখা দিল দ্বন্দ্ব। একদল বলে আমরা নিয়ে যাবো বেহেশতে। অন্যদল বলে না আমরা নিয়ে যাবো জাহান্নামে। কারণ সে একশত খুনির আসামি। আর বেহেশতের ফেরেশতাদের দাবী সে গুনাহাগার হতে পারে না। যেহেতু তওবার উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হয়েছে। সেহেতু তাকে আমরা বেহেশতে নিয়ে যাবো। দুজন ফেরেশতার এই বিতর্ক মীমাংসার জন্য মহান রাব্বুল আলামীন পাঠিয়ে দিলেন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালামকে। জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে আর একদল ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করে বললেন-লোকটি অলি আল্লাহর দরবারে যাওয়ার জন্য যেখান থেকে রওয়ানা দিয়েছে সে জায়গা থেকে আল্লাহর অলির দরবারে দূরত্ব কতটুকু মেপে দেখ অতপর দেখ ঐ সম্পুর্ণ জায়গাটুকু দুইভাগ করে কোন ভাগে গিয়ে লোকটির মৃত্যু হয়েছে প্রথমভাগে মৃত্যু হলে সে জাহান্নামী আর দ্বিতীয় ভাগে মৃত্যুবরণ করলে সে বেহেশতী। কারণ সে তওবার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছে এবং বেশীর ভাগ অতিক্রম করে কাছাকাছি পৌছে গেছে। ফেরেশতারা পরিমাপ করে দেখলেন। লোকটি প্রথম ভাগ অতিক্রম করে দ্বিতীয়ভাবে একহাত সামনে তথা দ্বিতীয় ভাগে গিয়েই মৃত্যুবরণ করেছেন। হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম ফয়সালা দিলেন। আল্লাহর এই বান্দা বেহেশতে যাবে। অতএব তার আত্মা বেহেশতের ফেরেশতাদের হাতে সোপর্দ করা হলো আর তারা নিয়ে গেলেন বেহেশতে। সুতরাং বুঝা গেলো একশত খুনের মত এতবড় অপরাধের পরও যদি কেউ আল্লাহর ভয় অন্তরে রেখে তওবা করতে পারে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আরো প্রমাণিত হয়ে গেলো অলি আল্লাহর দরবারে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অশেষ বরকত। সুতরাং আমরা সুন্নি মুসলমানরা ধন্য এজন্য যে আমাদের প্রাণপ্রিয় মুর্শিদ কেবলা জামান গাওস আলহাজ হাফেজ কারী সায়্যেদ মুহাম্মদ তাহের শাহ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী তিনি প্রত্যেক বছর বাংলার জমিনে ২/৩ বার আসেন আর উনার হাতে আমাদের মত নগণ্য ব্যক্তিসহ হাজার হাজার ভক্ত মুরিদ তারা তাদের গুনাহসমূহকে তওবা করে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা পেয়ে যায়। কাজেই মহান আল্লাহর কাছে অপরাধ ক্ষমার জন্য হুজুর কেবলার কাছে আসতে হবে এবং উনার দরবারের সাথে সুসম্পর্ক রাখতে হবে।

সর্দি-কাশি নিরাময়ে অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে মধু অধিক কার্যকর

আল্লাহপাকের বিস্ময়কর নেয়ামত মধুর খাদ্য ও ঔষুধি গুণ সম্পর্কে এর আগে আমরা লিখেছিলাম। ওই লেখায় আমরা বলেছিলাম, ১৪০০ বছরেরও আগে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনকার মতো অগ্রসর ছিল না, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলআমিন পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মানুষকে জানিয়ে দেন : মধুর মধ্যে মানুষের শেফা (আরোগ্য) রয়েছে। সূরা নাহলের ৬৯ নম্বর আয়াতে তিনি এই খোশখবর জানিয়ে বলেন : তাদের (মৌমাছিদের) উদর থেকে নির্গত হয় নানা রঙয়ের পানীয়। তাতে রয়েছে মানুষের জন্য শেফা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একাধিক হাদিস আমরা ওই লেখায় উদ্ধৃত করেছিলাম। যেমন, হজরত আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত একটি হাদিসে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন সকাল বেলায় মধু চেটে পান করে, তার কোনো কঠিন রোগব্যাধি হবে না।’ হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বর্ণিত একটি হাদিসে আল্লাহর হাবীব সা. বলেন, ‘তোমরা দুটি শেফাদানকারী বস্তুকে নিজেদের জন্য আবশ্যকীয় করে নাও। একটি মধু এবং অপরটি কোরআন।’ দৈহিক রোগমুক্তির জন্য মধু যে অব্যর্থ মহৌষধ, এই হাদিসে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
আধুনিককালের চিকিৎসা সম্পর্কিত গবেষণায় আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.-এর বাণীর সত্যতা বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়ে চলেছে। বলতে গেলে মানবদেহের প্রায় এমন কোনো রোগব্যাধি নেই, মধু সেবন ও ব্যবহার করে যার নিরাময় বা উপশম না হয়। কৌষ্ঠকাঠিন্য, বাতব্যথা, সর্দি-কাশি, পক্ষাঘাত, পেটের পীড়া ও ব্যথা, চক্ষুরোগ ইত্যাদি নিরাময়ে মধু খবই কার্যকর। অতি সম্প্রতি ব্রিটেনের স্বাস্থ্য বিষয়ক গাইডলাইনে সর্দি-কাশি নিরাময়ের ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারকে নিরৎসাহিত করে বলা হয়েছে, অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে মধু বেশি কার্যকর। দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিক যতটা কার্যকর বলে মনে করা হয়, আসলে ততটা নয়। এনআইসিই অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রেসক্রাইবিং গাইডলাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান ও জেনারেল প্র্যাক্টিশনার ডা. লুইসের মতে, যদি কারো সর্দি, গলায় খুসখুসে ভাব ও কাশি থাকে, আমরা মনে করি, অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই সেটি দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে দ্রুত নিরাময় চাইলে মধুর সঙ্গে বড়জোর সাধারণ কিছু ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
আমাদের দেশে ঠান্ডা, সর্দি-কাশি হলে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। আমাদের চিকিৎসকরাও এসব রোগে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ প্রেসক্রাইব করেন। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই অনেকে মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করে থাকে। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ক্ষেত্র বিশেষে অকার্যকর প্রমাণিত হয়। আবার এর বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। অধিক ব্যবহারে অ্যান্টিবায়োটিক একসময় অকার্যকর হয়ে পড়ে। এমনকি প্রচলিত সব অ্যান্টিবায়োটিকই জীবানু নাশে ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। অথচ আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর নির্দেশনা মতে, মধু সেবন করলে আমরা অ্যান্টিবায়োটিকের চিরস্থায়ী বিকল্প লাভ করতে পারি। পাশাপাশি পেতে পারি সহজ ও দ্রুত নিরাময়।

সম্পত্তি মেয়েরা অর্ধেক পায় কেন

যে মহিলা তার ভাইসহ তাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে এসেছিলেন তারা নিজেরাই তখন বুঝেছিলেন যে, সবকিছুর মালিক আল্লাহ। আর মানুষের ভাগ্যও তিনিই রচনা করেন। পৈতৃক সম্পত্তি বণ্টনের যে বিধান তিনি দিয়েছেন, তা আল্লাহর প্রজ্ঞা ও কৌশলের বিধান। যার ফলাফল সুষম ও সুমিষ্ট। যারা তা মানে না তারাই বিপদগ্রস্ত হয়।
আগত মহিলার গল্পটি দেখুন, তিনি বিয়ের আগেই বাবার সম্পদ সাশ্রয় করতেন। বিয়ের পর নিজে বাবার সম্পদ ও ব্যবসা দেখাশোনা করেছেন। অনেক আর্থিক সাহায্যও করেছেন। আর ভাইটি সারাজীবনই সম্পদ নষ্ট করেছে। বাবার মৃত্যুর পর সম্পদ তিন ভাগ হলো, একভাগ এই সুকন্যা পেলেন, দুই ভাগ পেলেন বলতে গেলে এই কুপুত্র। আমি যখন মহিলার প্রশ্নের জবাবে বললাম, দ্বীনি শিক্ষার অভাবেই আপনারা এমন ঠকেছেন। কারণ, শরীয়ত বলেছে, পরে কোনো অশান্তির সম্ভাবনা থাকলে এমন ব্যবস্থা নেয়া যায় যে, যখন কোনো সন্তান পিতার ব্যবসায় সময় দেয়, আয় উন্নতি করে, তখন তাদের উচিত এর কোনো বিনিময় নির্ধারিত করে নেয়া।
এই মহিলা যদি পিতার ব্যবসায় পার্টনার, পরিচালক বা বেতনভুক্ত ব্যবস্থাপক হয়ে সময়টুকু দিতেন তাহলে নিজের আর্থিক অংশ লাভসহ তুলে নিতে পারতেন। বেতন হিসাবে ভালো অংক নিতে পারতেন। এরপর বাবার মৃত্যুর পর যা থাকতো তা শরিয়ত মতো আবার পেতেন। এরপরও ভাগ্য দেখুন। আপনার এখনো অনেক টাকা। নিজের টাকা, স্বামীর টাকা, বাবার কাছ থেকে পাওয়া টাকা। আর আপনার দ্বিগুণ সম্পত্তি পাওয়া ভাইটি যাকে আপনি সাথে করে আমার সাক্ষাতে এসেছেন তিনি নিজেই কেমন সুন্দর হাসি দিয়ে স্বীকার করলেন, আগেও আমি টাকা নষ্ট করেছি।
এখনো টাকা পয়সা শেষ করে বোনের সাহায্যেই চলছি। বোন আমার প্রতি রাগ করে না, কারণ আমি ছাড়া তার আর বংশের কোনো আত্মীয় নেই। সে উত্তরাধিকার অংশ অর্ধেক পেলেও আল্লাহ তাকে চারদিক থেকে বরকত দিয়েছেন। আমি দ্বিগুণ টাকা পয়সা পেয়েও দুর্বলই রয়ে গেছি। বোনের সাহায্যেই চলছি। এটিই ভাগ্য। আল্লাহর দেয়া বিধান ঠিকই আছে। মানুষ তা সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিলে ঠকে না।
আল্লাহ যাকে রিযিক দেন, সে তা খেয়ে, সঞ্চয় করে, দান করেও শেষ করতে পারে না। যার বরকত হয় না, তাকে বাবা-মা অনেক দিলেও তার হয় না। এরপর আমি বললাম, আপনারা নিজেরাই দ্বীনের আলোকে বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। তবে উত্তরাধিকার বণ্টনে ইসলামের বিধান শুধু খোদায়ী রহমত বরকত নির্ভর নয়। এতে যুক্তি বিজ্ঞান ও অঙ্কও রয়েছে। শরিয়ত প্রতিটি মুসলিম পুরুষকে কমপক্ষে পাঁচটি দায়িত্ব দিয়েছে। ০১. বিবাহ করে পৈতৃক সংস্কৃতির উপযোগী একটি পরিবার গঠন; ০২. স্ত্রী, পুত্র-কন্যাদের যাবতীয় ব্যয় বহন, ০৩. পিতার সময়ের আত্মীয়তা ও সামাজিকতা ধরে রাখা, ০৪. বোন-ভাগ্নিসহ সব রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়দের হক আদায় করা এবং ০৫. দাদী, ফুফু, বোন, ভাগ্নি, বিধবা, অসহায় বা নিরাশ্রয় হলে তাদের সযত্মে রক্ষণাবেক্ষণ করা। এসব চিন্তায় তাকে দেয়া হয়েছে দুইভাগ। বোনকে এ ধরনের কোনো দায়বদ্ধতাই শরিয়ত দেয়নি। তাকে দিয়েছে একভাগ। এতে সে নিজে চলতে পারবে। পাশাপাশি স্বাভাবিক নিয়মে তার জীবনের সমুদয় ব্যয় স্বামীর ওপর, পুত্রের ওপর।
এখানেও মহিলা নানাভাবে নির্দিষ্ট সম্পত্তির হকদার। তার হজ, জাকাত ফরজ হওয়ার আগে বাধ্যতামূলক কোনো ব্যয় নেই। নিজের সঞ্চয় অক্ষত রেখেই মহিলা জীবন কাটাতে পারে। ঐচ্ছিক দান খয়রাত ও সৌজন্যমূলক ব্যয় ভিন্ন কথা। তারা আমার দেয়া সময়ের চেয়ে বেশি সময় নিয়েছেন বলে দুঃখ প্রকাশ আর জিজ্ঞাসার জবাব পাওয়ার জন্য আনন্দ প্রকাশ দু’টোই করলেন। তারা চলে যাওয়ার পর আমার ভাবনা থেকে নারীদের উত্তরাধিকার সম্পত্তি আমাদের দেশে কোরআন মোতাবেক না দিয়ে তাদের বঞ্চিত করার হাজারও গল্প দূর হতে বেশ সময় লাগল।
এ দেশে মহিলাদের ঠকানো যেন অন্য আত্মীয়দের মজ্জাগত অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে এর বিরুদ্ধে সংস্কারমূলক বহু প্রচারণা খুব দরকার। আলেম, ইমাম, খতিব, মুফতি, মোফাসসির, পীর-মাশায়েখ, মুরব্বি ও ওয়ায়েজদের সমাজের এ বদঅভ্যাসটি পরিবর্তন করে নারীদের খোদাপ্রদত্ত অধিকার আদায়ে মানুষকে সচেতন করার বিকল্প নেই।

নবীজির পোশাক কেমন ছিল

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর কথাই কি শুধু তাঁর উম্মতের জন্য অনুসরণীয়? অনেকে সেটাই মনে করেন। অথচ মুসলিম জাতির জন্য নবীজির কথাবার্তা, চালচলন, উঠাবসা, খাওয়াদাওয়া, ঘুম-নিদ্রা, অজু-ইসতেনজা, হাসি-কান্না, পোশাক-পরিচ্ছেদ ইত্যাদি সবই অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। এজন্য মহানবী (সা.) বলেন, ‘কোনো সামান্যতম বা ছোট নেকের কাজকেও ছোট মনে করবে না। যদিও তা তোমার (মুসলমান) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাতের ব্যাপারটিই হোক না কেন?’
নবীজি এ কথাও বলেছেন, ‘একটি সুন্দর কথা একটি সদকার সমতুল্য।’
(মুসলিম : ২৬২৬; তিরমিজি : ১৮৩৩)।

সুতরাং হাসিমুখে কথা বলাও নেকির কাজ। তাই নবীজি (সা.)-কে অনুসরণ করতে হবে সবক্ষেত্রে। শুধু নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত-ই কোরআন-হাদিস মোতাবেক হবে আর অন্য সব কিছু নিজের ইচ্ছেমতো; ইসলাম এমনটা কখনোই সমর্থন করে না। মুসলমানের মৌলিক একটি সৌন্দর্য হলো লেবাস-পোশাক। এজন্য মহান প্রভু বলেন,
"یٰبَنِیۡۤ  اٰدَمَ  قَدۡ  اَنۡزَلۡنَا عَلَیۡکُمۡ  لِبَاسًا یُّوَارِیۡ سَوۡاٰتِکُمۡ وَ رِیۡشًا ؕ وَ لِبَاسُ التَّقۡوٰی ۙ ذٰلِکَ خَیۡرٌ ؕ ذٰلِکَ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ  لَعَلَّہُمۡ  یَذَّکَّرُوۡنَ
‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের জন্য পোশাক অবতীর্ণ করেছি; যা তোমাদের সতর ঢেকে রাখে এবং সৌন্দর্যেরও উপকরণ।’
(সূরা আরাফ : ২৬)।

নবীজি (সা.) এমন পোশাক পরিধান করতেন যা একদিকে সতর ঢাকা হতো, অন্যদিকে সম্মান-মর্যাদা ও পোশাকে বাদশাহী সৌন্দর্য ফুটে উঠত।
নবীজির পাগড়ি ব্যবহার
হজরত জাবের (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশকালে তাঁর মাথা মোবারকে কালো পাগড়ি শোভা পাচ্ছিল। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘নবী করিম (সা.) মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছিলেন, তখন তাঁর মাথায় ছিল কালো পাগড়ি।’
(মুসলিম : ১/৪৩৯; ইবনে মাজা : ২৮২২)।

নবীজির টুপি ব্যবহার
হজরত আবদুুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সর্বদা সাদা টুপি পরিধান করতেন।
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৮৫০৫)।
সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান যুগ পর্যন্ত সব নেককাররা, আল্লাহর পথের পথিকদের পোশাক; যা মাথা সুরক্ষা করে এবং পাগড়িকে সুদৃঢ় করে। এ টুপি সুন্নতি লেবাসের অন্তর্ভুক্ত।
(ফয়জুল কাদির : ৫/৭১৬৮)।

নবীজির জামা পরিধান
নবীজি (সা.) এর কাছে সবচেয়ে পছন্দনীয় পোশাক ছিল ‘কামিস’ বা লম্বা জামা।
(তিরমিজি : ১৭৬২)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) জামা পরিধান করতেন। সেটি টাখনুর উপর পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিল।
(মুস্তাদরাকে হাকেম : ৭৪২০)।
অন্য বর্ণনায় আছে, নবীজির জামা লম্বা ছিল পায়ের গোছার অর্ধেক অথবা টাখনুর উপর পর্যন্ত। জামার হাতা ছিল কব্জি অথবা আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি : ৫/১৫৪-১৫৫; মীরকাতুল মাফাতিহ : ৮/২৪৫; ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া : ২৭/৪০৮; বাজলুল মাজহুদ : ১৬/৪০৭)।

নবীজির লুঙ্গি ও পায়জামা পরিধান
নবীজি (সা.) বেশি লুঙ্গি পরেছেন এবং তিনি পায়জামাও কিনেছেন ও পরেছেন। একথাও বলেছেন যে, পায়জামা সতর ঢাকার বেশি উপযোগী। সাহাবায়ে কেরামও কিনেছেন ও পরেছেন।
(আহমাদ : ৫/২৬৪; যাদুল মাআদ : ১/৩৯; তাবরানি, মাজমাউয যাওয়ায়েদ : ৫/১২১)।

নবীজির চাদর ব্যবহার
হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাপড় হলো (ইয়ামেনে তৈরি চাদর) হিবারা। হজরত জুহাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি নবীজি (সা.) কে লাল নকশী চাদর পরা অবস্থায় দেখেছি। আজও যেন আমি তার উভয় গোড়ালির ঔজ্জ্ব¦ল্য প্রত্যক্ষ করছি।’
(বোখারি : ৫৮১৩; মুসলিম : ১১৪৭)।

নবীজি সাদা পোশাক বেশি পছন্দ করতেন
হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, তোমরা সাদা কাপড় পরিধান করো। কারণ, তা সর্বাধিক পবিত্র ও উত্তম। আর তা দিয়েই তোমরা মৃতদের কাফন দাও।
(মুজামুল কাবির : ৯৬৪; নাসায়ি : ৫৩২৩; ইবনে মাজাহ : ১৪৭২)।

আধুনিক যুগে নতুন কিছু পোশাকের প্রচলন শুরু হয়েছে। যথাÑ প্যান্ট, শার্ট, টাই, ধুতি, পাঞ্জাবি; যার কিছু পোশাক শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকে, এতে শরীরের আপত্তিকর অঙ্গভঙ্গি স্পষ্ট বোঝা যায়। এগুলো শরিয়ত ও তাকওয়ার খেলাফ। আবার কিছু পোশাক বিজাতীয়-বিধর্মীদের কৃষ্টিকালচারের সঙ্গে মিলে যায়; যা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এ প্রসঙ্গে চূড়ান্ত কথা হলো, প্রত্যেক যুগের মুত্তাকি ও পরহেজগার লোকেরা যে ধরনের পোশাক পরিধান করেন বা পছন্দ করেন সেটিই সুন্নতি পোশাক বলে গণ্য হবে।

নবী প্রেম

একবার সাহাবী হযরত জাবের (রা) প্রিয়নবী (সাঃ)
এর কাছে আরজ করলেনঃ
"ইয়া রাসূলুল্লাহ্ !দয়া করে এই গোলামের
বাড়িতে দাওয়াত কবুল করে নিন"
রাসুল (সাঃ) তাঁর দাওয়াত কবুল করে নিলেন।
জাবের (রা) খুশীতে আত্মহারা হয়ে বাড়িতে
চলে গেলেন । বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী
ও পুত্রদের সুসংবাদ দিলেনঃ আজ আমাদের
ভাগ্য খুলে গেছে "রাহমাতুল্লিল আলামিন"
দয়া করে আমাদের বাড়িতে তশরীফ নিবেন ।
এর চেয়ে আনন্দের ব্যাপার আমাদের জীবনে
আর কি হতে পারে!!! তিনি তাঁদেরকে নিয়ে
মহানন্দে নবীজীকে আপ্যায়ন করার আয়োজনে
লেগে গেলন । বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন
করে সুন্দরভাবে সাজালেন । সুগন্ধী দ্রব্য
ছিটিয়ে ঘরকে সুবাসিত করলেন-ঘরে পালিত
খাসী জবাই করলেন। বড় ছেলে আবদুল্লাহকে
নিয়ে খাসী জবাই করে নিজ হাতে তার
চামড়া ছাড়িয়ে সুন্দর করে মাংস টুকরো টুকরো
করে নিলেন । অত:পর স্ত্রীর কাছে মাংস
নিয়ে বললেন,যত্ন করে মাংসের টুকরোগুলো
ভুনা করে নাও । স্ত্রীকে এ কথা বলে হযরত
জাবের (রা) বাড়ী-ঘর তদারকি করতে
লাগলেন,কোথাও কোন কাজ বাকী রয়ে গেল
কি-না । মাঝে মাঝে রান্না ঘরে গিয়ে
দেখেন-রান্না আর কতদূর হয়েছে; আবার
বাড়ীর সামনের রাস্তায় গিয়ে দেখেন-
নবীজী আসছেন কি-না । ইতিমধ্যে হযরত
জাবের (রা) এর ছোট ছেলে ঘুম থেকে উঠে
খাসী তালাশ করতে লাগলো । তারা দুই ভাই
মিলে খাসীটিকে আদর-যত্ন করে লালন -পালন
করতো ।বড় ভাই তাকে জানাল প্রিয়নবির
মেহমানদারী করার জন্য খাসীটিকে জবাই
করা হয়েছে । ছোট ভাই বায়না ধরলো-খাসী
কিভাবে জবাই করেছে আমাকে দেখাও ।
অগত্যা বড় ভাই ছুরি হাতে করে ঘরের পেছনে
গিয়ে বললো, এখানে খাসী জবাই করা
হয়েছে । ছোট ভাই জানতে চাইলো
কিভাবে ? বর্ণনা করে বোঝতে না পেরে
অবশেষে বড় ভাই বললো,, তাহলে তুমি
মাটিতে শুয়ে পড় । আমি তোমাকে দেখাই ।
ছোট ভাই মাটিতে শোয়ার পর বড় ভাই তার
গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করার নমুনা
দেখাতে গিয়ে ছোট ভাইকে সত্যি সত্যি
জবাই করে ফেললো । বড় ভাই যখন দেখলো,,
ছোট ভাইয়ের গলা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।
সে ছটফট করতে করতে এক সময় নিস্তেজ হয়ে
গেছে, তখন বুঝলো ব্যাপারটি কি ঘটেছে ।
আতঙ্কিত হয়ে সে নিকটবর্তী এক খেজুর গাছের
চূড়ায় উঠে আত্মগোপন করে রইলো। এদিকে হযরত
জাবের (রা) পুত্রদের খোজে বাড়ীর পেছনে
এসে ছোট ছেলের অবস্থা দেখে থমকে
গেলেন । অত:পর তাকে বুকে করে স্ত্রীর কাছে
গিয়ে বললেনঃতাড়াতড়ি একটি কম্বল নিয়ে
এসো, বাচ্চাটিকে শুইয়ে দিই । স্ত্রী
সন্তানের রক্তমাখা লাশ দেখে চিৎকার করে
কাঁদতে লাগলেন। কিন্ত স্বামী তাকে
সান্ত্বনা দিয়ে বললেনঃ আজ আমাদের শোক
প্রকাশ করার দিন নয়।আমাদের দুঃখ দেখলে
নবীজীও দুঃখিত হবেন । অতএব,ধৈর্য ধারণ করো
। মুখে হাসি ফুটিয়ে তোল । তারপর তাঁরা
দু’জনে মিলে ছোট ছেলেকে কম্বল মুড়ে
রান্নঘরের পেছনে রেখে আসলেন । স্ত্রী
রান্নার কাজে মন দিলেন । জাবের (রা) বের
হলেন বড় পুত্র আবদুল্লাহর খোজে । বাড়ীর
পেছনে গিয়ে ছেলের নাম ধরে জোরে হাঁক
দিলেন । গাছের উপর আত্মগোপন করে বড়
ছেলে সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করছিল।আর ভয়ে
কাঁপছিল । পিতার ডাক শুনে ভাবলো,, এখন
পালাতে না পারলে আব্বার হাতে ধরা
পড়তে হবে । ধরা পড়লে আর রক্ষা থাকবেনা ।
পালানোর উদ্দেশ্যে গাছ থেকে লাফিয়ে
পড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সেও মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়লো । পিতা কাছে গিয়ে গায়ে হাত
দিয়ে দেখেন,,আবদুল্লা
হর দেহে প্রাণের স্পন্দন নেই !! বড় ছেলে কে
কোলে তুলে তিনি বাড়ীর ভিতরে আসলেন ।
স্ত্রীকে বললে,, আর একটি কম্বল নিয়ে আসার
জন্যে । বড় ছেলের অবস্থা দেখে মাতা পুনরায়
আর্তনাদ করে উঠলেন । স্বামী তাকে পুনরায়
সান্ত্বনা দিয়ে বললেন,ধৈর্য্য ধরো । আজ
আমাদের দুঃখ প্রকাশের দিন নয় । আজ আমাদের
পরম আনন্দের দিন । তারপর দু’জনে মিলে বড়
ছেলের লাশও কম্বলে মুড়ে ছোট ছেলের
লাশের পাশে রাখলেন ।স্বামী-স্ত্রী তদের
চোখের পানি মুছে মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেন
। যাঁর ”নূরে” সমগ্র মাখলুকাত পয়দা,সেই
রাহমাতাল্লিল আলামীনের সামনে অশ্রু
বিসর্জন দিলে তিনি দুঃখ পাবেন । তাই
আনন্দিত হয়ে তাঁরা নিজেদের কাজ নিয়ে
ব্যস্ত হয়ে পড়লেন । হযরত জাবের (রা) বাড়ীর
সামনে দাড়িয়ে নবীজীর আগমনের অপেক্ষা
করতে লাগলেন । অল্পক্ষণের মধ্যে নবীজীকে
উটের পিঠে করে আসতে দেখা গেলো । হযরত
জাবের (রা) আনন্দে আত্মহারা হয়ে দৌড়ে
গিয়ে স্ত্রীকে নবীজীর আগমনের সংবাদ
দিলেন । পুনরায় তিনি দৌড়ে বাড়ীর সামনে
চলে এলেন । নবীজীর উটের কাছে গিয়ে
তাঁকে বাড়ী পর্যন্ত এগিয়ে আনলেন নবীজী
জাবের (রা) এর ঘরের সামনে উট থামিয়ে তাঁর
ডান পা মোবারক মাটিতে রাখলেন,বাম পা
মোবারক এখনো নামাতে বাকী । এমন সময়
জিব্রাইল (আ) আল্লাহর পক্ষ হতে নির্দেশ
নিয়ে উপস্হিত হয়ে বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ!
আল্লাহ্ আপনাকে জাবেরের ছেলেদেরকে
সংগে নিয়ে খানা খেতে বলেছেন । অতঃপর
নবীজী সাহাবায়েকেরামকে নিয়ে জাবের
(রা) এর ঘরে তশরীফ নিলেন ।তাদের সামনে
জাবের (রা) দস্তরখানা বিছিয়ে দিলেন তার
স্ত্রী খাবার বেরে দিলেন আর তিনি
সেগুলো এনে মেহমানদের সামনে হাজির
করলেন তারপর তিনি নবীজীকে আরজ করলেন,
ইয়া রাসূলুল্লাহ্! বিস্মল্লাহ্ করুন নবীজী বললেন,
হে জাবের ! তোমার ছেলেরা কোথায় ?
তাদেরকে ডাক হযরত জাবের (রা) বললেন, ইয়া
হাবীবাল্লাহ! আপনি দয়া করে খেয়ে নিন।
ছেলেদেরকে আমি পরে ডাকবো। হযরত রাসূল
(সাঃ) পুনরায় বললেন তোমার ছেলেদের ডেকে
নিয়ে এসো তাদেরকে সাথে নিয়ে খানা
খাবো। হযরত জাবের ও তার স্ত্রী হাত জোড়
করে পুনরায় আরজ করলেন ,ইয়া রাসূললুল্লাহ !
আপনি খানা খেয়ে নিন আমরা তাদেরকে
ডেকে দিচ্ছি তখন নবীজী বললেন, হে
জাবের ! এইমাত্র জিব্ররাইল ফেরেশতা
আমাকে আল্লাহর নির্দেশ জানিয়ে
গেলেন,,আমি যেন তোমার ছেলেদেরকে
সাথে নিয়ে খানা খাই নবীজীর একথা শুনে
হযরত জাবের [রা] ও তার স্ত্রী আর ধৈর্য্য ধারণ
করতে পারলেনা ।তারা হাউমাউ করে কেদে
বললেন ইয়া রাসূলূল্লাহ্! ছেলেদেরকে কোথায়
পাবো ? তারা তো জগতে বেঁচে নেই নবীজী
জানতে চাইলেন ,তাদের কি হয়েছে ?তখন
তারা নবীজীকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন
তাদের দুঃখের কাহিনি শুনে
সাহাবায়েকেরামও কাঁদতে শুরু করলেন ।
নবীজীর প্রেমিক হযরত জাবের (রা) ও তার
স্ত্রীর ঘটনা শুনে অনেকে চিল্লাচিল্লি করে
মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকেন তারপর
নবীজী উঠে দাঁড়িয়ে হযরত জাবের (রা) কে
বললেনঃ তাদেরকে কোথায় রেখেছো??
সেখানে আমাকে নিয়ে চলো। হযরত জাবের
(রা) নবীজীকে রান্না ঘরের পেছনে নিয়ে
গেলন।খোদ রাসূল (সাঃ) কম্বলাবৃত দুই ছেলের
মৃতদেহের উপর তাঁর দুই হাত মোবারক রেখে
বললেন, হে জাবেরের ছেলেরা! তোমরা কি
দেখ না, তোমাদের আব্ব-আম্মা আল্লাহর
নবীকে কত ভালোবাসেন!! আমি মনে কষ্ট
পাবো বলে তোমাদের কথা তারা আমাকে
জানায়নি । তোমরা শীঘ্রই ওঠ, তোমাদেরকে
সঙে করে আমি খানা খাবো । এ কথা বলে
নবীজী যখন তাদের. দেহ থেকে কম্বল সরিয়ে
দিলে,, সংগে সংগে তারা দু’জন উঠে
নবীজীর কদম মোবারক জড়িয়ে ধরলো । তখন
নবীজীর প্রেমে কেউ সুস্থীর ছিলেন না ।
সবাই কাঁদতে কাঁদতে বেহুঁশের মতো হয়ে
গেলন। পরিস্থিতি শান্ত হলে নবীজী (সাঃ) হযরত
জাবের (রা) এর দুই ছেলেকে নিয় খানা
খেতে বসলেন ।
সবাইকে বললেন , মাংস খাবার পর হাড়
চিবিয়ে না খেয়ে তা জমা করে রাখার
জন্যে।
এভাবে সবার খাওয়া শেষ হলে নবীজী তাঁর
পবিত্র হাত মোবারক হাড়ের ওপর রেখে
বললেন, ওহে জাবেরের খাসী! তুমি কি
দেখো না তোমার মনিব আল্লাহর নবীকে
কতখানি ভালোবাসেন?? তুমি পুনরায় তোমার
মনিবের হয়ে যাও।
প্রিয়নবি এ কথা বলার সাথে সাথে খাসী
জীন্দা হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে গেলো ।
-সুবহান আল্লাহ -
[মাদারিজুন নাবুওয়াত]